একদিন হঠাৎ করে আমি ইউটিউবে ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর ভিডিও দেখতে পাই।
আসসালামু আলাইকুম।
এই প্ল্যাটফর্মের সকল ভাই ও বোন কে জানাই আমার অন্তরের অন্তস্থল হতে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। আশা রাখি সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি।
আজকে আমার জীবনের কিছু কথা সংক্ষিপ্ত আকারে আপনাদের সাথে শেয়ার করব। দয়া করে এই বোনের লেখাটা একটু পড়বেন প্লিজ।
আমার বাবা একজন কওমি মাদ্রাসার আলেম। আমরা ভাই বোন পাঁচজন। আমি সবার বড় বাকি চারজন আমার ছোট। আমার বাবা স্থানীয় মসজিদের ইমাম। আমাদের কোনো জমিজমা নেই। তাই চাল থেকে নুন সবই কিনে খেতে হয়। পাঁচ ভাই বোনের লেখাপড়ার খরচ খাওয়ার খরচ সংসারের অন্যান্য খরচ সবই বাবার ইমামতির টাকা থেকে করতে হতো। বাবা অনেক কষ্ট করে সংসার চালাত।ইমামতি করে বাবা 5 হাজার টাকা বেতন পেতেন। মাসের 15 দিন যেতে না যেতেই টাকা শেষ হয়ে যেত। বাকি 15 দিন খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্ট করে পাড়ি দিতে হতো। অভাব কাকে বলে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। সাহায্য করার মত কেউ ছিলনা। কারো কাছে ধার পাওয়া যাইতো না। কারণ হলো যখন সে টাকা চাবে তখন আমরা হয়তো দিতে পারব না এই কারণে আমাদের কেউ টাকা ধার দিতে চাইতনা।বছরের দুইটি ঈদের মধ্যে কোন কোন বছর এক ঈদে জামা পেতাম কোন কোন বছর দুই ঈদের এক ঈদেও নতুন জামা পেতাম না। আমার ভিতর কেন যেন আল্লাহ একটা বোঝ তৈরি করে দিয়েছিল মনে হতো আমার দরকার নেই আমার ছোট ভাই বোনেরা নতুন জামা পেলেই আমি খুশি।
আমার মনে আছে আমার খালাতো বোনদের পুরাতন জামা আমাকে দিত পরার জন্য। বাবাকে দেখেছি কষ্ট করতে তাই আমার কোন চাওয়া পাওয়া ছিল না। বাবা পর্যাপ্ত পরিমাণে কোন জিনিস আনতে পারত না তাই যতটুকু আন্ত তা ছোট ভাই বোনদের মাঝে ভাগ করে দিতাম। এই অভ্যাস আমার এখনো আছে।
এখন বলি আমি কিভাবে বেড়ে উঠেছি। এক কথায় বলতে গেলে পড়াশোনা জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিটা সময় আমি অন্দরেই থাকতাম। বাবা কওমি মাদ্রাসার আলেম হওয়াতে পর্দার ব্যাপারটা খুব কড়াকড়ি ছিল আমাদের বাড়িতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বাড়ি ছাড়া আমার অন্য কোন জায়গা চিনা ছিল না। আমি এবং আমার বোন ও মাকে বাইরের কেউ কোনদিন বেপর্দা অবস্থায় দেখে নি। আমার মনে হয় বোরকা ছাড়া যদি কোনদিন বাড়ি থেকে বের হতাম তাহলে মনে হয় কেউ চিনবে না। না চেনা টাই স্বাভাবিক। কারণ আমি তো কোনদিন বোরকা ছাড়া বেরই হয় নাই। আমাদের গ্রামের মানুষ আমাকে বোরকা পরা অবস্থাতেই চিনে দেখেই বলে দিতে পারে এটা মাওলানা সাহেবের মেয়ে। আমাদের বাড়ির কাছে একটা গার্লস স্কুল ছিল আমি সেখানে পড়াশোনা করেছি। আমাদের বাড়ি থেকে মহিলা মাদ্রাসা অনেক দূরে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করা সম্ভব না। আবাসিকের ব্যবস্থা ছিল কিন্তু খরচ দিতে পারব না তাই মাদ্রাসায় পড়া হয়নি। আমি যে স্কুলে পড়তাম সেই স্কুলে পায়ে হেঁটে যেতে পাঁচ মিনিট লাগতো। স্কুল আর বাড়ি এরমধ্যে আমার যাতায়াত ছিল। এস এস সি পাস করেছি গ্রামের স্কুল থেকে। এরপর কলেজে ভর্তি হব বাবাকে বললাম বাবা বলল মহিলা কলেজ ছাড়া ভর্তি হওয়া যাবে না। তাই শহরে গেলাম মানে আমাদের টাঙ্গাইল সদরের সরকারি কুমুদিনী মহিলা কলেজে। কোনো কিছু না ভেবেই ভর্তি হলাম। এখন ক্লাস করব কিভাবে প্রতিদিন বাসে করে কলেজে আসা। চিনি না রাস্তা ঘাট নাই প্রতিদিনের যাতায়াত খরচ। এখন কি করি। আমার মামার বাড়ি কলেজের কাছাকাছি তাই ঠিক করলাম মামার বাসায় থাকব। কিন্তু আমার বাসায় আমার থাকার জায়গা হবেত?এখন বলি কেন মামার বাসায় থাকতে ভয় পাচ্ছি। আমার মায়ের বয়স যখন তিন থেকে চার বছর তখন আমার নানা মারা যান। মারা যাওয়ার আগে আমার নানি কে বলে গিয়েছিল তার ছোট মেয়েকে মানে আমার মাকে যেন ভাল একজন আলেমের কাছে বিয়ে দেন। কিন্তু আমার মামারা রাজি ছিল না তাই আমার নানী নানার কথা রাখতে একার সিদ্ধান্তে আমার মাকে বিয়ে দিয়ে দেন। আমার বাবার আর্থিক অবস্থা খারাপ দেখে আমার মামারা কোনদিন আমার মাকে দেখতে যেত না। নানি যতদিন সুস্থ ছিল ততদিন আমার মাকে দেখতে আসত।নানি যখন ব্রেন স্ট্রোক করল তারপর থেকে নানার বাড়ির কোন আত্মীয়র সাথে আর দেখা হতো না। মাঝে মাঝে মা একাই নানীকে দেখতে যেত।
আমি কলেজে ভর্তির পর মা মামার বাসায় যায়।এবং আমাকে সেখানে রাখার জন্য বলে কিন্তু তারা কিছুতেই রাজি হয়না। অনেক অনুরোধ করার পর রাজি হয় কিন্তু খেতে দিতে পারবেনা। কোন খরচ দিতে পারবে না শুধু থাকতে পারবে তার বিনিময় একটা কাজ করতে হবে। সেটা হলো আমার নানী শয্যাশায়ী পেশাব-পায়খানা সবি বিছানাতে করে। তাই তারা আমাকে নানীর এসব কাজ যদি আমি করে দেই মানে নানির খেদমত যদি আমি করি তাহলে তারা আমাকে থাকতে দেবে। আমি রাজি হয়ে গেলাম কারণ নানীর কোন সেবা-যত্ন তারা করে না। তাদের বুয়া দিনে একবার শুধু পরিষ্কার করে দেয় বাকিটা সময় বিজার মধ্যে শুয়ে থাকে। তাই আমি নানীর খেদমত করার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাচ্ছিলাম না। মা আমাকে নিয়ে গেল এবং সাথে নিয়ে গেল কিছু চাল আলু এবং মাছ কাটার একটি দা। একটি গ্লাস একটি প্লেট দুটি পাতিল একটি কেরোসিন চালিত চুলা। মামা মামি যে পাশে থাকতো সেই পাশে আমার জায়গা হল না। আমার জায়গা হল অন্যপাশে একটি অন্ধকার রুমে যেখানে আমার নানি থাকে। সে রুমের ভিতর দেখি দু'পাশে দুটি খাট ছাড়া আর কিছুই নাই।একখাটে আমার নানী
শোয়া অন্যটি ফাকা।আমাকে সেখানে রেখে আসলো এবং 500 টাকা হাতে দিয়ে মা বলল আমার মন চাইতেছে না তোমাকে এখানে রেখে যাই কিন্তু কি করবো বলো। একটু সাবধানে থাইকো এই বলে মা চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল।
শুরু হলো আমার অন্যরকম জীবন। সকালে ঘুম থেকে উঠে নানীকে পরিষ্কার করা। নিজের জন্য রান্না করা। ঘর মোছা নানীর কাপড়চোপড় ধোয়া। নানি কে গোসল করানো এবং আমি গোসল করে রেডি হয়ে কলেজে যেতাম। কলেজে যাইতে 10 টাকা আসছে 10 টাকা রিকশা ভাড়া লাগত।প্রতিদিন 20 টাকা খরচ হবে এই ভেবে আমি অর্ধেক রাস্তা পায়ে হেঁটে যেতাম বাকি অর্ধেক রাস্তা 5 টাকা দিয়ে রিক্সায় যেতাম। আবার আসার সময় 5 টাকা দিয়ে অর্ধেক রাস্তায় এসে নেমে যেতাম। বাকিটুকু দুপুরের প্রচণ্ড রোদে পায়ে হেঁটে বাসায় যেতাম। যেয়ে দেখতাম নানি আবার কাপড়চোপড় নষ্ট করে রেখেছে সেগুলো আবার পরিষ্কার করতাম। তারপর পুনরায় আবার গোসল করতাম। দুপুরের খাবার খেতে খেতে চারটা পাঁচটা বেজে যেত। মামার বাসায় ছিলাম প্রায় ছয় মাসের মত এরমধ্যে মামা ভুলেও কোনদিন আমি যে রুমে থাকতাম সেই রুমে আসা কিংবা আমাকে জিজ্ঞেস কর কি খাই? কেমন আছি? আমার কোনো অসুবিধা হয় কিনা? আমার কিছু লাগবে কিনা? এই কথাগুলো কোনদিন জিজ্ঞেস করে নাই। আমার খাবারের মেনুতে ছিল ভাত ডাল আলু ভর্তা কোন কোন দিন ডিম। কিন্তু পাশের রুম থেকে প্রতিদিন সুস্বাদু খাবারের সেন্ট বের হত।তাকিয়ে থাকতাম যদি মামী একটু তরকারী দিত। আমার জন্য কিন্তু কোনদিন এরকম হয়নি। নানীর জন্য ভাত দিত আমার জন্য না। একটা প্লেটে চার থেকে পাঁচবার মুখে দেওয়া যাবে এই পরিমাণ ভাত আর সামান্য একটু তরকারী দিত। ভালো কোন তরকারি নানিকেও দিত না নানীর জন্য খাবার নিয়ে আসতো তাদের বোয়া।আমি নানীর সেবা-যত্ন করে নানীকে আগের চেয়ে সুস্থ করে তোললাম।তাই এখন নানি খাবারের পরিমাণ আগের চেয়ে একটু বেশি খায়। মামি মনে করতো আগে কম খেতে এখন বেশি খায় তারমানে খাবারগুলো আবার আমি খাই না তো? তাই সে তার বোয়াকে বলল খাবার দিয়ে বসে থাকতে খাওয়া শেষ হলে প্লেট নিয়ে যেতে। তাদের এসব কান্ড দেখে আমার খুব লজ্জা লাগত। আমার সেই সময়ের দিনগুলোর কথা মনে পড়লে আজও শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। দ্বিতীয় বর্ষে ওঠার পর আমি বাড়ি ফিরে আসলাম।তার কয়দিন পরে আমার বাবার এক বন্ধু আমার জন্য একটি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে।
ছেলে প্রবাসী। ছেলের বাবা সরকারি অফিসার। শহরে তাদের বিশাল বড় মার্কেট আছে। মোটামুটি উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবার।তাদের কোন দাবি ছিল না তাদের একটাই দাবি আমরা এই পর্দাশীল মেয়েটাকে চাই। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার বিয়ে হয়ে গেল। আমার হাজব্যান্ড অসম্ভব একজন ভালো মানুষ এবং তাদের পরিবারটা অনেক ভালো। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালাম এত ভালো একজন মানুষ আমার কপালে রাখছে সেইসাথে একটা ভালো পরিবারও পেয়েছি।শুরু হলো আমার নতুন জীবন। লেখাপড়া চালিয়ে গেলাম এইচ এস সি পাশ করলাম।এরপর আমার দেড় বছরের ব্যবধানে দুটি বাচচা হলো।ছোট ছোট দুটো বাচ্চা শ্বশুর বাড়ির কাজ সব মিলিয়ে লেখাপড়া কন্টিনিউ চালিয়ে যেতে পারলাম না।
আমার মনে খুব ইচ্ছা কিছু একটা করব। কিন্তু লজ্জা লোকে কি বলবে? তাছাড়া যে পরিবেশে বড় হয়েছি তাতেত সম্ভবই না বাইরে যে কিছু একটা করা তাছাড়া লোকে বলবে মাওলানা সাহেবের মেয়ে রুজি রোজগারের জন্য বাইরে বের হয়েছে।সেটা ভীষণ লজ্জার।এদিকে আমার হাসবেন্ড বিদেশ থেকে চলে এসেছে।
দেশে এসে একটা ব্যবসা শুরু করেছে।আমাদের দিনগুলি খুব ভালই যাচ্ছিল। এরইমধ্যে দেশে মহামারী করোনা আসলো। করোনার কারনে আমার হাজবেন্ডের ব্যবসা মন্দা। আলহামদুলিল্লাহ তবুও অনেকের চেয়ে ভালো আছি।
একদিন হঠাৎ করে আমি ইউটিউবে ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর ভিডিও দেখতে পাই। আমার কাছে খুবই ভালো লাগে স্যারের কথা গুলি।এরপর পরপর স্যারের ভিডিও দেখা শুরু করলাম।আমি আমার স্বামীকে দেখালাম কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না রেজিস্ট্রেশন করতে কারণ আমি ফেসবুকের কোন কিছুই বুঝিনা ফেসবুক চালাতে পারি না। কিভাবে কমেন্ট করতে হয় সেটা জানি না। কিভাবে ফেসবুক পেজ খুলতে হয় সেটাও জানি না। তাই চুপ থাকলাম এভাবে কেটে গেল কিছুদিন। কিন্তু ভিডিও দেখা বাদ দেয়নি ভিডিও দেখতে থাকলাম প্রতিদিন। ভিডিও দেখতে দেখতে একটা জিনিস বুঝে গেছিলাম সেটা হল নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনে মেয়েদের খুব সম্মান দেওয়া হয়। আর সেখানে সবাই ভালো মানুষ। সবাইকে বিশ্বাস করা যায়।
একদিন মোবাইলে একটি লেখা দেখি সেখানে লেখা ছিল রেজিষ্ট্রেশন করুন। এরমধ্যে আমি শিখে ফেলেছি কিভাবে ফেসবুক চালাতে হয় তাই আমি ছোট্ট করে কমেন্ট করলাম আমাকে সাহায্য করুন আমি রেজিস্ট্রেশন করতে চাই। তখন আমাদের গ্রুপে জিয়াউর রহমান ভাই আমাকেসাহায্য করে রেজিষ্ট্রেশন করতে। আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে স্যারের যে কথাটি সেটি হলো
__________________স্বপ্ন দেখুন _____________
_____________________সাহস করোন__________
_______________________শুরু করোন_________
__________________________লেগে থাকুন________
_____________________________সফলতা আসবেই ইনশাল্লাহ ________
সত্যি স্যার আপনার এই কথার বাণীগুলো আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছিল না। আমার বিশ্বাস আপনার প্রত্যেকটা বাণী মেনে চললে যে কেউ তার পায়ের নিচে মাটি শক্ত করে দাঁড়াতে পারবে ইনশাল্লাহ। অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে ব্যবসা করা যায় সেটা আমি আগে জানতাম না। নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে আমি সেটা জানতে পেরেছি। সত্যি স্যার আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের মত মেয়েরা যারা কিছুইজানেনা কিছুই বুঝে না নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে টানা 90 দিন অনলাইন ক্লাস করে একেকজন নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে।
স্যারের জন্য দোয়া ও ভালোবাসা রইলো। শুনেছি স্যারের রিপোর্টে নেগেটিভ আসছে। আলহামদুলিল্লাহ। আশারাখি স্যারকে খুব শীঘ্রই আমাদের মাঝে পাবো ইনশাল্লাহ।
আপনারা যারা মূল্যবান সময় নষ্ট করে আমার লেখাটা পড়বেন তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
আমি কাজ করি মেয়েদের পোশাক নিয়ে
শাড়ি
থ্রি পিচ
হাতের কাজের 1 পিচ 2 পিচ
পেজ লিংক :https://www.facebook.com/Nafiza-Hand-Embroidery-109199124719580/
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৮৫
Date:- ১/০৮/২০২১
আমি নাফিজা আক্তার
ব্যাচ ১৩
রেজিস্ট্রেশন ৬১৭৩৭
জেলা টাংগাইল
বর্তমান অবস্থান গাজিপুর
ব্লাড AB পজেটিব।