কুড়িগ্রাম জেলার ১০০০ তম দিন উদযাপন
"নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের
১০০০ তম দিন উদযাপন এবং আমার অভিজ্ঞতা"
গতকাল খুব ভোরে ঘুম ভেঙেছিল। ঘুম থেকে উঠে মনে হচ্ছিল দীর্ঘ ১০ বছর পর মনে হয় এরকম স্নায়ুবিক উত্তেজনা নিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম। আমার স্টুডেন্ট জীবনের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তির পর আমি ঢাকা থেকে স্থায়ীভাবে গ্রামে চলে আসি। এখন কুড়িগ্রামের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করছি। জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেকারত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেছি। ইনশাআল্লাহ ত্রিশটি পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছি। ত্রিশজনের কর্মসংস্থান করার পরও কোথায় যেন অতৃপ্তি। প্রতি মুহূর্তে আমার মনে হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে দারিদ্রসীমার নিছে বাস করছি আমরা। আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন আমাদেরই করতে হবে। হাজার সমস্যা থাকলেও আমাদের লক্ষ-কোটি গুণ সম্ভাবনার দিক আছে। যাইহোক কিছু লিখতে বসলে মনে হয় কুড়িগ্রামের সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো লিখি। যা বলছিলাম, আমার স্টুডেন্ট লাইফ ঢাকায় কাটে। তাই ছুটির সময় যখন বাড়ি আসতাম, বাড়ি আসার আগের রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারতাম না। কি রকম একটা স্নায়ুবিক উত্তেজনা কাজ করতে। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করে রাত অতিক্রম হতো। শেষরাতে ক্লান্তিতে যখন চোখ বুঝে আসতো তখন ফজরের আজান দিতো। আজানের সাথে সাথে আমি বিছানা ছাড়তাম। বাড়িতে আসার আনন্দে ঠিকমতো নাস্তাটুকু করতে পারতাম না। গতকাল ঠিক তাই হয়েছিল। খুব ভোরে ঘুম ভেঙেছিল। ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে ফ্যাক্টরিতে বসি। খুব তাড়াহুড়ো করে ফ্যাক্টরির রুটিন কাজটুকু সেরে সেলিব্রেশনের কেকটি নিয়ে কুড়িগ্রাম সদরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই। পৌঁছে দেখি আলমাস কমিউনিটি সেন্টারে আমার আগেই ডিস্ট্রিক এ্যাম্বেসেডর শফি ভাই চলে এসেছেন। শফি ভাই, রুবেল ভাই, রাজারহাট উপজেলা এ্যাম্বেসেডর নিজাম ভাইসহ আমরা পুরো কার্যক্রমগুলো সাজাই। আমাকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা মুহূর্ত ছিল এটি। কুড়িগ্রাম জেলার সম্ভাবনাময় সকল তরুণ উদ্যোক্তাদের গল্পগুলো শোনার জন্য এবং তাদের গল্প শুনে অন্যরা যে উদ্দীপ্ত হচ্ছিল সে রিএয়েকশন আমি দেখছিলাম স্টেজে বসে। প্রত্যেক উদ্যোক্তার ভিতর আমি যে উচ্ছ্বাস দেখেছি তা সহজ ভাষায় বলতে বললে বলবো "তাদের ভিতর আছে খড়ের আগুন, যা দাউদাউ করে জ্বলে উঠে। এ জ্বলে উঠা আগুন নিয়মিত জ্বালানোর ক্ষেত্রে পিছন থেকে খড় জোগাচ্ছেন আমার সবার প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার।"
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠান কুরআন তেলাওয়াত এর মাধ্যমে শুরু হয়। কুড়িগ্রামের নদীবেষ্টিত ইউনিয়ন নারায়নপুর চর থেকে আগত উদ্যোক্তা শাহনুর আলম কুরআন তেলাওয়াত করেন। এরপর কেক কাটা হয়। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কুড়িগ্রাম জেলার এ্যাম্বেসেডর শফি সরকার ভাই। এরপর বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের প্রশিক্ষণ সমন্বয়ক জনাব জাহাঙ্গীর আলম স্যার ব্লাড গ্রুপিং উদ্বোধন করেন। এরপর আমাদের মূল আকর্ষণ নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের সদস্যদের কাছ থেকে তাদের বক্তব্য শোনার পালা। প্রত্যেক সদস্য তাদের উদ্যোগ গ্রহণের পর যে সংগ্রাম শুরু করে আসছেন তার বর্ণনা দিচ্ছিলেন। তাদের কথাগুলোর মাঝে আমি যে নিদারুণ কষ্টের কথা শুনছিলাম তাতে কারো কারো কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে এসেছিল। বিশেষ করে কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকা অলাকাটার চর থেকে আগত মনির ভাইয়ের সংগ্রামী কথাগুলো আমাদের হৃদয়ে টাচ করেছিল। রৌমারী উপজেলা এ্যাম্বেসেডর আলমগীর ভাই অত্যন্ত চমৎকারভাবে তার গল্প তুলে ধরেছেন। সদর উপজেলা থেকে আগত রাব্বি জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। সত্যি ভীষণ মুগ্ধ করার মতো ছিল তার কথাগুলো। ভুরুঙ্গামারী উপজেলা থেকে আগত রেদওয়ান ভাই অনেক গুছিয়ে কথা বলতে পারেন। তার কথা থেকে অনেককিছু শিখলাম। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা এ্যাম্বেসেডর জাহিদুল ভাই তার উদ্যোক্তা হওয়া, তার স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অত্যন্ত গোছালোভাবে তুলে ধরেছেন। কুড়িগ্রাম জেলার প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতির বক্তব্যও তথ্যপূর্ণ ছিল। কুড়িগ্রাম জেলা এ্যাম্বেসেডর শফি সরকার ভাই নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। তার মোটিভেশনাল কথাগুলোও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। আর আমি যেহেতু সঞ্চালনায় ছিলাম তাই প্রত্যেকের কথার রেশ ধরে কথা বলে গেছি, জানি না কেমন হয়েছে তবে আমার উপলব্ধি এক কথায় প্রকাশ করলে "এটাই ছিল আমার জীবনের এখন পর্যন্ত সবথেকে বড় পাওয়া" যা ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের সৌজন্যে নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন থেকে অর্জন করেছি। প্রধান অতিথি জনাব জাহাঙ্গীর আলম স্যারের মাধ্যমে আমাদের উদ্যোক্তাগণ নতুন লিংকেজ খুঁজে পেলাম। সভাপতি শফি সরকার ভাইয়ের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমাদের আলোচনা সভা সমাপ্তি হয়। হলরুম থেকে বের হয়ে আমরা যখন কুড়িগ্রাম শহর প্রদক্ষিণ করেছিলাম গায়ে ছিল নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের টি শার্ট, সকলে আমাদের দিকে তাকাচ্ছিল, আমরা বুক ফুলিয়ে হাটছিলাম আর ভাবছিলাম আমরা কুড়িগ্রাম জেলার দারিদ্র্য নিরসন করে, একটা বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান তৈরি করে আবার উন্মুক্ত ময়দানে এসে আমাদের নিজের বলার মতো একটা গল্প বলবো।