আমার বেচে থাকার অনুপ্রেরণা আমার আয়েশা
আমি জন্মগ্রহণ করি মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানায় শ্রীধরপুর গ্রামে
আমরা মোট ৭ভাই বোন,
৪ভাই ৩বোন আর বাবা মা-কে নিয়ে মোট ৯জনের পরিবার।
আমি আমাদের পরিবারের ৬ষ্ঠ তম
আমি আমার পরিবারে অনেক আদরের সাথে বড় হয়েছি,আমি ছোট বেলা থেকেই একটু সহজ সরল টাইপের,তাই আমার ছোট ভাই আমার সাথে অনেক চালাকি করত,ছোট ভাই আমার ভাগের খাবার গুলো লুকিয়ে খেয়ে নিত,আর আমি যখন জানতাম আমার ছোট ভাই আমার খাবার খেয়ে নিয়েছে তখন আমি খুব কান্নাকাটি করতাম,আর আমার ভাইকে খুব মারতাম,
ভাই বোনদের এই মধুর মারামারি প্রায়ই সকল পরিবারে হয়ে থাকে,
অনেক মিস করি সেই সময় গুলোকে,
একই ফ্যামিলিতে সকল ভাই বোন এক সাথেই বেড়ে উঠেছি অথচ বড় হওয়ার পর সবার সাথে সম্পর্কের কতটা দূরত্ব তৈরী হয়ে গিয়েছে মনে পরলে খুব কান্না পায়।
যাই হোক গ্রামের স্কুলেই লেখা পড়া শুরু হলো,ছোট বেলায় লেখা পড়ায় তেমন ভাল ছিলাম না,খেলার প্রতি অনেক নেশা ছিল,সারাদিন কত কি খেলতাম
প্রিয় খেলা ছিল এক্কা দুক্কা, কোনো রকম খাওয়াদাওয়া করতাম না,
মা বাবার মিষ্টি বকুনি এখনো খুব মনে পরে।
যাই হোক প্রাইমারি শেষ করি,আমার বয়স তখন আনুমানিক ১১বছর হবে তখনই আমার খালু আমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়,
আমার খালু বলেন মেয়েদের এতো লেখাপড়া করতে হবে না,এখন ই বিয়ে দিয়ে দাও, কিন্তু আমার বড় দুলাভাই আমাদের ফ্যামিলিতে বড় ভাইয়ের মত ছিলেন,আমার বাবা মা আমার বড় দুলাভাইকে অনেক মান্য করতেন,আমার বড় দুলাভাই যাই বলতেন সবাই তাই করতেন,যাই হোক দুলাভাইয়ের কথায় সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হলো,
পরবর্তীতে দুলাভাই আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন,আমার একটা ভাগ্নি ছিল মানে বড় আপার মেয়ে,নাম ছিল নুরজাহান,আমি আর নুরজাহান খুব বেশি ছোট বড় ছিলাম না।
আমার ৫মাসের ছোট ছিল নুরজাহান,
ওর সাথে আমাকে লালবাগের জামিলা খাতুন স্কুলে ক্লাস সিক্সে ভর্তি করে দেন।
নুরজাহানের সাথে বেশ ভালই দিন কাটছিল, একসঙ্গে খেলাধুলা খাওয়া গোসল,এমনকি আমাদের পোশাকও একই রকমের থাকত সব সময়,
অনেকে আমাদের মনে করত আমরা জমজ দুই বোন,অথচ আমরা খালা ভাগিনি ছিলাম।
দুলাভাই আমাদের দুজনকে অনেক শাসন করতেন,কোন রকম কোনো অন্যায় হলে খুব শাসন করতেন।
যাই হোক সব মিলিয়ে ভালো ই যাচ্ছে।এস, এস, সি পাশ করলাম দ্বিতীয় বিভাগে।
পরবর্তীতে ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি হলাম শেরেবাংলা কলেজে ওখানে দুইটা বছর কাটানোর পর ইন্টারমিডিয়েট পরিক্ষায় ইংরেজিতে ফেল করে বসলাম,
হতাশায় আমার বেশ মন খারাপ,কিছুই ভাল লাগছেনা,কাউকে লজ্জায় মুখ দেখাতে ইচ্ছে করছেনা,আমার বাবা আমাকে নিয়ে অনেক গর্ব করতেন।
কারন আমার ভাই বোনেরা কেউই তেমন লেখাপড়া করতে পারেন নি,তাই বাবা আমাকে একটু বেশিই আদর করতেন।
যাই হোক আমি আবার সাহস করে পরিক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।
এরই মধ্যে অনেক প্রস্তাব আসতেই থাকলো, কিন্তু আমি রাজি না থাকাতে আমার বাবা আমাকে বিয়ের জন্য তেমন চাপ দিতেন না।
এই সময়তে একটা ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক হয়
______রিলেশনশিপ:
যেখানে শুরু সেখানেই শেষ।
আমার রিলেশন থাকা অবস্থায় আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলে আমার বড় দুলাভাই,আর যেই ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করে,সেটা আমার ভাইয়ের শালা।
আমাকে কোনো কিছু না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করেন।
আমার লেখাপড়া ওখানেই থেমে গেলো।
হঠাৎ একদিন আমাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুলাভাই আমাকে ডাকলেন,আমার বড় আপুকে পাশে রেখে আমার দুলাভাই আমাকে বল্লেন,আমরা তোমার বিয়ে ঠিক করেছি তোমাকে গ্রামে যেতে হবে আমাদের সাথে,আমিতো অবাক হয়ে যাই।
আমি অনেক কান্না করি।
কোনো ভাবেই আমাকে আমার পছন্দের ছেলেটির সাথে যোগাযোগ করতে দেওয়া হলো না।আমাকে সারাদিন চেক দিয়ে রাখতেন।আমি একদিন আমার দুলাভাইকে বলেছিলাম যে আমি এই বিয়েতে রাজি না,তখন আমার দুলাভাই আমাকে কি উত্তর দিলেন জানেন?
তুমি যদি এই বিয়েতে রাজি না হও তাহলে তোমার বোনকে আমি ডিভোর্স দিয়ে দিব।
তখন আমার বোন আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করে আর বলে,বোন তোর জন্য কি আমার এতদিনের সংসার ভেঙ্গে যাবে?তুই রাজি হয়ে যা বোন।
আমি আমার বোনের কান্না দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না।
বোনের জন্য বিয়েতে রাজি হয়ে গেলাম।
পরবর্তীতে আমাকে গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়,তারপর একদিনের মধ্যেই আমাকে বিয়ে দিয়ে লিলেন আর আমি চলে গেলাম শশুর বাড়িতে।
________বিবাহ জীবন:🍀
আমার জীবনের এক নতুন ধাপ শুরু হলো
কি আর করব আমরা বাঙ্গালী নারী,
তাই নিজের কষ্ট নিজের মধ্যে রেখেই সংসার শুরু করলাম।
আমার শুনা ওখানেই রয়েগেছে।
আমার সাহেব আমাকে গ্রামের বাড়িতে রেখেই ঢাকায় চলে আসলো,
এদিকে নতুন এক পরিবেশে থাকতে আমার বেশ সমস্যা হলো।
কি আর করব?
আমার স্বামী ২০০০টাকা বেতনে একটা চাকুরী করেন ঢাকাতে।
আমার শশুর সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে গ্রামের বাড়িতে রাখবেন, কিন্তু আমি চিন্তা করলাম একটু অন্য ভাবে,
একদিন আমি আমার শশুর আর কয়েকজন মুরব্বি নিয়ে বসে এক সঙ্গে কথা বললাম,আমার শশুর বাড়ির অবস্থা তেমন ভাল ছিলনা।সংসারে টানাটানি,
আমি সবার সাথে কথা বলে তারপর আমার শশুরকে বললাম,আব্বা আমাকে ঢাকায় যেতে দিন আমি যদি একটা চাকুরী করি তাহলে আপনার ছেলের সাথে আমিও আপনাদের সহযোগিতা করতে পারবো।সবাই এই কথা শুনে রাজি হলো,আর আমি আমার স্বামীর সাথে ঢাকায় চলে আসলাম।
🔸শুরু হলো আমার জীবনের আরো একটা অধ্যায়।
আমি ঢাকায় আমার বোনের বাসায় উঠলাম।আমাদের নেই কোনো টাকা নে কোনো চাকুরী ছিল শুধু মনোবল।
আমি আমার বড় বোনের ঋন কখনোই শোধ করতে পারবোনা।বোনটা আমার আজ দুনিয়াতেই নেই,আমার বোন আমাকে মায়ের মতো আদর করতো আর সব সময় আমাকে সাপোর্ট দিতো।বোন আমাকে তাদের বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন।
আমার স্বামীর বেতন মাত্র ২০০০টাকা বেতন,এতো অল্প টাকায় কিভাবে ঘর ভারা দিব,কিভাবে খাওয়াদাওয়ার খরচ যোগাবো,আবার গ্রামেও শশুর বাড়িতে টাকা পাঠাতে হবে।
সব মিলিয়ে আমি অনেক টেনশনে পরেগেলাম।এরই মধ্যে আমি কনসিভ করলাম,আমি আরো বেশি চিন্তায় পরে গেলাম।
কিন্তু সেই বাচ্চাটি আর দুনিয়াতে আসেনি।
যাই হোক এরপর আমি চাকুরীর জন্য অনেক চেষ্টা করতে থাকলাম।
চাকুরী কোনো ব্যবস্থা না হওয়াতে আমি টিউশনি শুরু করলাম।
টিউশনি যা আসে আর স্বামীর টাকা মিলিয়ে কোনোরকমে সংসার চলছে।
কিছুদিন পরে আমার এক পরিচিত বোনের মাধ্যমে আমার একটা চাকুরীর ব্যবস্থা হলো।
একটা রেস্টুরেন্টে ম্যানেজার পোষ্টের চাকুরী।নতুন রেস্টুরেন্ট বেতন ছিল মাত্র ৩০০০টাকা।
আর ডিউটি ছিল সকাল ৭থেকে রাত ৮টা পযর্ন্ত।এর পর আমি আবার নতুন করে কলেজে ভর্তি হই।ইন্টারে পড়াশুনা আবার শুরু করলাম,পাশাপাশি চাকুরী।
এখন আমরা ছোট একটা ঘর ভারা নিলাম,১০০০টাকার মধ্যে,আবার শশুর বাড়িতেও দিচ্ছি যা পারছি তাই।
বিয়ের প্রাই দুই বছর শেষ এখন মনে হচ্ছে আমাদের জীবনে যদি একটা বেবী আসতো তাহলে অনেক ভাল হতো।
কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন আমি আর কনসিভ করছিনা।
তারপর শুরু করলাম চিকিৎসা
একজন গাইনি ডাক্তার এর পরামর্শ নিলাম,প্রায় ৪মাস পরে কনসিভ করলাম,এর পাশাপাশি আমি রেস্টুরেন্টের চাকুরীটাও করেযাচ্ছি।
ভালই কাটছিলো দিনকাল।
এই চাকুরি করা অবস্থায় আমার আরো একটা চাকুরির ব্যবস্থা হলো,একটা এন জি ও তে।এখানে বেতনটাও ভাল ছিলো,তাই জয়েন করলাম।
এখন আমি ৭মাসের অন্তঃসত্তা।
একদিন অফিসে ডিউটি করা অবস্থায় হঠাৎ খেয়াল করলাম,আমার বাবুটার নরাচরা টের পাচ্ছি না।আমি ভাবলাম হয়তোবা একটু পরে ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু আর ঠিক হচ্ছে না।তারপর আমি বাসায় চলে আসি,বাসায় এসে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে চলে যাই।
ডাক্তার আমাকে আল্ট্রা করতে বলে,এখন আমি খুব ভয় পাচ্ছি জানি না কি হবে?
ভয়ে ভয়ে আল্ট্রা করলাম আর যেই ভয়টা পাচ্ছিলাম ঠিক সেটাই হলো।
ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আপনার সাথে কে আসছে,আমি বললাম আমার খালা আসছে,তখন ডাক্তার আমাকে বললেন আপনি বাহিরে বসেন আর আপনার খালাকে ভেতরে পাঠিয়ে দিন।আমি কিন্তু অলরেডি বুঝেফেলেছি কি হয়েছে আমার বেবীটার।আমার এতোটাই কষ্ট হচ্ছিলো যে আমি আমার খালাকে কিছু না বলে একাই চলে আসি বাসায়,পেছন পেছন আমার খালাও আসে।বাষায় আসার পরে খালা বললেন বেবটা পেটেই মারা গিয়েছে।
আমিতো কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম,কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা, বিশ্বাস করতে পারছিনা।তারপর আরো দুই জায়গাতে আল্ট্রা করাই,সেখানেও সেম রিপোর্ট আসে।কি আর করবো হাসপাতালে ভর্তি হলাম।সেখানে দেখলাম সবাই বেবী কোলে নিয়ে বের হচ্ছে,এইটা দেখে আমার আর ভাল লাগছিলো না।তাই আমি কাউকে না বলেই ওখান থেকে বের হয়ে চলে আসলাম।তারপর একটা প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হলাম।তারনর যেমন চিকিৎসা দরকার তেমনটাই করলেন।
পরের দিন একটু সুস্থ হয়ে বাসায় চলে আসলাম।যাই হোক দিন কাটছে মোটামুটি।একটু স্বাভাবিক হয়ে আবার চাকুরীতে জয়েন করি। স্বামী স্ত্রী মিলে অল্প আয়ের মধ্যে দিয়ে ভালই আছি।
পরবর্তীতে ১বছর পরে আবার ডাক্তারের পরামর্শে বেবী নেওয়ার ট্রাই করলাম,আল্লাহর রহমতে প্রথম মাসেই কনসিভ করলাম।এবার আমি সিদ্ধান্ত নিলাম,আমি আর রিস্ক নিবনা,
আমি এন জি ওর চাকুরীটা ছেরে দিলাম।
স্বামীর অল্প আয়েই কোনো রকম চলছি।
কনসভ করার প্রথম সাপ্তাহ থেকেই ডাক্তারের পরামর্শে চলছিলাম। ডাক্তার আমাকে দির্ঘ চার মাস ইনজেকশন দিলেন,যেনো বেবীটা নষ্ট না হয়ে যায়।
কিন্তু নিয়তির খেলা,আল্লাহ্ যাকে দুনিয়াত পাঠাবেন না, আমরা শত চেষ্টা করলেও তাকে দুনিয়াতে আনতে পারবো না।আর যে আসার হাজার চেষ্টা করলেও আমরা তাকে আটকাতে পারবোনা, না চাইলেও সে আসবে,কারন আল্লাহ্ তাকে পাঠাবেন।
তারপর কি হলো জানেন?
যখন কনসিভের ৫মাসে পরলো, হঠাৎ একদিন ব্লিডিং শুরু হলো আমার তো অজ্ঞান হওয়া অবস্থা। তাড়াতাড়ি ডাক্তার সাথে যোগাযোগ করি।দেখেন এখানেও ভাগ্য আমাকে সঙ্গ দেয়নি।
ওই দিন শুক্রবার থাকায় ডাক্তার বসবেন না।কি আর করবো বিধাতার লিখন চাইলেই মুছেফেলা যায়না।
তারপর বিকেলে এক ডাক্তার আপার কাছে গিয়ে আল্ট্রা করালাম, ডাক্তার বললেন এই বেবীটা রাখা সম্ভব নয়।
একটা ইনজেকশন দিয়ে বললেন এই চিকিৎসায় বেবীটা থাকার হলে থাকবে২ নাহয়তো নষ্ট হয়ে যাবে।
তারপর এই বেবীটাও রইল না।
এখন আমি পরপর দুইটা বেবী হারিয়ে পাগল পাগল অবস্থা।
আবার একটু একটু স্বাভাবিক হলাম।নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য আবার নতুন করে একটা এন জি ওতে জয়েন করলাম।
শুরু হলো চিকিৎসা কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।আমি আর কনসিভ করছিনা।
২০০৫ শালে দ্বিতীয় বেবীটা নষ্ট হওয়ার পরে দির্ঘদিন কেটেগেলো।
প্রতি রাতেই কান্না করতাম আর আমার স্বামী আমাকে অনেক ভাবেই সান্ত্বনা দিতো।তারপরেও স্বামী সংসার আর চাকুরীর মধ্যে দিয়ে ভালই কেটেছিল দিনকাল।কিন্তু আমি ২০১৪ শালে একেবারেই ঘরে বসে থাকি চাকুরী ছেড়ে,একটা বেবীর জন্য।
হার্ডলি চিকিৎসা চলতে থাকে আমার।
ডাক্তার টি এ চৌধুরীর চিকিৎসাধীন থাকি।
🔸__এবার আমার জীবনের আরো একটি অধ্যায় শুরু হলো :
এখন আমার স্বামী আর আমার সাপোর্ট নিচ্ছে না,এখন সে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য পাগল,তার একটা বাচ্চা লাগবে।
ওনার এই ব্যাবহারে আমি তো খুবই আপসেট।আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা যে আমার স্বামী বিয়ে করতে চায়?
আমার তখন মাস্টারর্স পরিক্ষা ছিলো এরি মধ্যে সে বিয়ের জন্য পাগলামি শুরু করলো। আশেপাশের লোকজন এবং তার বন্ধুদের বলতে লাগলো যেনো ওনারা আমাকে বুঝায় আর আমি যেনো রাজি হয়ে যাই।আমি যেনো ওর দ্বিতীয় বিয়েতে সম্মতি দেই। কিন্তু কোনো নারী কি পারে এই কঠিন একটা ব্যাপার মেনে নিতে?
আমার তো মনে দুনিয়ার কোনো নারীই এইটা মেনে নিয়ে পারেনা।
আমিও পারিনি,আমি কোনো ভাবেই রাজি হলামনা।আমি তাকে বললাম ঠিক আছে প্রয়োজনে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করতে। কিন্তু সে আমাকে ডিভোর্স দিবেনা।যাই হোক এতো কিছুর পরেও আমি কিন্তু থেমে ছিলামনা।
এতো যন্ত্রণার মধ্য দিয়েও আমি আমার পরিক্ষার হলে গিয়ে পরিক্ষা দিয়েছি।
আমি চিন্তা করলাম আমার জীবনটা এখন এক কঠিন মোর নিয়েছে, তাই আমি মনে সাহস নিয়ে সব গুলো পরিক্ষা দিয়েছি,
পরিক্ষা গুলো যদিও কোনো রকমে দিয়েছি।ভেবেছিলাম আমি হয়তো পাশ করবোনা কিন্তু পাশ করি।
যাই হোক আমার অবস্থা খুবই খারাপ হতে লাগলো।
এর মাঝে কিছু কথা বলা হয়নি সেটা হলো।
2015 শালে জানুয়ারিতে আমি আমার স্বামীকে একটা দোকান নিয়ে দেই।
পাঞ্জাবীর আইটেম নিয়ে কাজ করার জন্য।আমার কাছে যা টাকা পয়সা ছিলো সবটা দিয়ে চালু করলো দোকানটা।
এখানে আমার স্বামীর কোনো টাকা ছিলো না সম্পূর্ণ আমার টাকা।তার শুধু কিছু পাঞ্জাবী ছিলো।
যাই হোক আমার স্বামীর সাথে দোকানে আমিও বসতাম।এই দোকান নেওয়ার পরে থেকেই কিন্তু তার বিয়ের প্যারা শুরু হয়েছে।তারপর সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় তার দ্বিতীয় বিয়েটাকে ঠেকালাম।
কিন্তু আসলেইকি বিয়েটাকে ঠেকাতে পেরেছিলাম?এইটা পরে বলি।
ঐ যে বলেছিলাম আমি টি এ চৌধুরীর চিকিৎসাধীন ছিলাম একটা বেবীর জন্য,
তাকে দিয়ে Laparoscopy করিয়েছি কিছু সমস্যা ছিলো তবে মেজর কোনো সমস্যা ছিলোনা।আমার স্বামী কিন্তু এখন চুপ আছে তাই আমরা চিন্তা করলাম ও হয়তো বিয়ের কথা ভুলে গিয়েছে।মাঝেমধ্যেই আমার সাথে তার ঝগড়া হয় এই বিয়ে নিয়ে।ও আমাকে বলতো তোর আর কোনো দিনও বাচ্চা হবেনা,তোর জন্য কি আমি বাবা হতে পারবোনা?
ও আমাকে অনেক কথাই বলতো আমাকে কষ্ট দেওয়ার মতো অনেক কথাই ছিলো তার।আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে কান্না করতাম আর খাওয়া দাওয়া তো ছেড়েই দিলাম।সারাদিন মনের মধ্যে একটা চিন্তাই ঘুরতে থাকতো এখন আমার কি হবে?
যাই হোক আল্লার কি নিলা খেলা,
2016 শালে আমি আবার কনসিভ করি,এবার আমিতো মহা খুশি এবার হয়তো আমার কোল জুড়ে বেবীটা আসবে।আর আমার স্বামী আমারই থাকবে।আমার স্বামীকেও দেখি খুশি কিন্তু কেমন যেনো একটা ঘাপলা লাগছে।
সারাদিন ও কি যেনো চিন্তা করে।
দেখেন আল্লাহ্ আমাকে কোন পরিক্ষায় ফেলেছেন।এবারও কনসিভের দ্বিতীয় মাসের শেষে গিয়ে বেবীটা নষ্ট হয়ে যায়।
এবার কিন্তু আমি সব দিক থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করেছি।
আমি একেবারেই বিশ্রামে ছিলাম।
এবার আমার চিন্তা আরো অনেক গুণ বেড়ে গেলো আমার স্বামীকে নিয়ে।
সে হয়তো দ্বিতীয় বিয়েটা করেই ফেলবে।
আমার দিন যে কিভাবে কাটতো এক মাত্র আল্লাহই ভাল জানেন।
আমার কোলে বাচ্চা দিতে চাইতোনা।
একটা বাচ্চার জন্য জীবনে অনেক কথা শুনতে হয়েছে আমাকে।
🔸____আমার মূল কথা:
2017 শালে জুলাই মাসে আমার কোল জুড়ে আসে একটি কন্যা সন্তান।নাম রেখেছি আয়েশা সিদ্দিকা।
এখন তো মহা খুশি।
এখন আমরা ৩জন এখন আমার স্বামীকে নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই।আমি আমার মেয়েকে নিয়ে সারাদিন খুব ব্যস্ত থাকি।হাসি খুশি আনন্দের মধ্যদিয়েই কেটে যাচ্ছে দিনকাল।
আয়েশার সব কিছু আমিই নিজেই করতাম।আর আয়েশার বাবা ঠিক সময়ে বাসায় ফিরে আসতো।
আমার বলাটা এখানেই শেষ হওয়ার কথা তাইনা?
কিন্তু কপালে সুখ না থাকলে যা হয় আরকি।আরো অনেক কাহিনি আছে।
তাহলে দেখুন মানুষ কতটা সার্থপর হয়,
কতোটা মিথ্যাবাদি হয়।
এরই মাঝে আমার মাস্টার্সের রেজাল্টও দিলো আমি দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করলাম।
এখন আমার মেয়ে আয়েশা বড় হচ্ছে আর ওর বাবার প্রতি ওর ভালবাসা একটু একটু বেড়ে যাচ্ছে।মেয়েটা আমার চেয়ে ওর বাবাকে বেশি ভালবাসে,সব মেয়েরা একটু বেশিই বাবাকে ভালবাসে।
আয়েশার বয়স যখন দুই থেকে আড়াই বছর তখন ওর বাবা ব্যবসার কথা বলে এখানে সেখানে যেতো আমিও তাই বিশ্বাস করতাম,ভাবতাম যেতেই পারে আমিও আর অন্য কিছু চিন্তা করতামনা।
আমার আয়েশাকে পেয়ে আমি সব ভুলে গিয়েছিলাম।কয়েকদিন পর পর যখন একই কাজ বারবার করতে লাগলো,তখন আমার একটু একটু সন্দেহ হতে লাগলো যে মানুষটা কোথায় যায়।
এর পরে শুরু হলো লোকেজনের কথা।
আশেপাশের মানুষরা বলতে লাগলো আয়েশার বাবাকে দেখলাম এই গলিতে অনেকক্ষণ যাবত ফোনে কথা বলছে।
এমন কথা অনেকেই বলতো আয়েশার বাবাকে এমন গলিতে আবার কোনো দুকানের ভেতরে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলছে।
আমি তাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সে আমাকে বলতো তুমি মানুষের কথা কেনো বিশ্বাস করো,আমি আমার কাষ্টমারের সাথে একটু কথা বলছিলাম।
আর বুঝেনইতো মেয়েরা একটু নরম মনের মানুষ হয়েথাকে।একটু সুন্দর করে কথা বললেই আমি সব ভুলে গিয়ে তাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করতাম।
যাই হোক আয়েশার বয়স এখন 4+চলছে আমি একটা অনলাইনে টুকটাক কিছু করার চেষ্টা করি,ভাবলাম মেয়েটা বড় হচ্ছে,বাহিরে যাওয়া যাবেনা তাই অনলাইনটাই বেছে নিলাম।আমার একটা পেজ ছিলো ওখান থেকেই শুরু করলাম।
🔸_______2020 শালের কথা:
কুরবানী ঈদের দিনের ঘটনা
সেদিন আমি খুব খুশি,আয়েশাকে সাজিয়ে গুছিয়ে দিয়েছি,রান্নাবান্না করছি।
কেউ আমাদের বাসায় মাংস নিয়ে আসছে,আবার আমাদের বাসাথেকে মাংস দিয়ে পাঠাচ্ছি,বাড়িতে বেশ মেহমানও ছিলো।বিকেলের দিকে আমার মেজো ননদের জামাই আসছে মাংস নিয়ে,তো স্বাভাবিক ভাবেই ওনাকে খাবার দিলাম আপ্যায়ন করলাম।যাওয়ার সময় আমার ছোট ননদের জামাকে নিয়ে বের হইছে,আর সে যেতে যেতে ওনার কাছে সব ঘটনা বলে গেছে আর বলে গেছে, এই কথা গুলো যেনো ভাবি না জানে।আমার কথা বলেছে মানে আমাকে বলতে নিষেধ করেছে। আমি আর আমার ছোট ননদ একসঙ্গে একই ফ্লাটে থাকি জয়েন।
ছোট ননদের জামাই এই গুলো শুনে এসে ননদকে সব বলেছে।আমার সাথে ছোট ননদের সাথে অনেক ভাল সম্পর্ক।ও আমাকে অনেক ভালবাসে,আমাকে অনেক সম্মান করে,আমার কোনো কষ্ট ও সহ্য করতে পারেনা।ও বার বার আমার পাশে এসে বসে আবার চলে যায়,কেমন যেনো ছটফট করছে।
এবার ও আমাকে বলল ভাবি তোমাকে এখন কিছু একটা করতেই হবে,তোমার পেইছটা এবার তোমাকে দাড়করাতেই হবে।আমি বললাম,হবে আস্তে আস্তে আমার তো আর অনেক জরুরী না।ও আমাকে বলল ভাবি তোমাকে তোমার নিজের পায়ে দাড়াতে হবে।
ও আমাকে এসব বলছে আর আমি কিছুই বুঝতে পারছনা।আর ওই দিকে ছোট ননদের জামাইও এই মেজো ননদের জামাইয়ের বলা কথা গুলো আমাকে বলার জন্য অস্থির হয়ে আছে।
এক পর্যায়ে আমাকে ডেকে বললো,ভাবি আমি আপনাকে এমন কিছু কথা বলবো,আপনাকে শক্ত হতে হবে।
আপনি মনোযোগ দিয়ে শুনেন কিছু বলার দরকার নেই এখন।আমি তো ঘাবরিয়ে গেছি কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছিনা।
একটু সাহস করে বললাম ঠিক আছে বলো আমি আমি শক্ত আছি শুনতে চাই।
আমি অনেক দুর্বল মনের মানুষ তারপরেও বলেছি আমি শক্ত আছি।
সে বললো আপনার জামাই তো বিয়ে করেছে,তার একটা ছেলেও আছে।
আমার তো আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পরেছে।
আমি আর নিজেকে সামলাতে পারি।
যাই হোক ননদের জামাই বলল,আপনি এখন আর কিছু বলবেননা,
আপনারইতো সব,আপনার যতো টাকা পয়সা সবইতো তাকে দিয়েছেন,এখন যদি কিছু বলেন তাহলেতো সব হারাতে হবে।
সে আরো বললো আয়েশার বাবা কিন্তু আপনাকেই ছাড়বে দ্বিতীয় স্ত্রীকে ছাড়বেনা এইটা মনে রাখবেন।
আমাকে সে সব প্রমাণও দিল।
আমার স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রীর ছবি,সেই ছেলের ছবি আমার স্বামীর ছবি।
এগুলো দেখে আমার মাথা ঠিক নেই,
আমিযে কান্নায় ভেঙ্গে পরছি শুধু লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করি।
কিন্তু এগুলো কি আর লুকিয়ে রাখা যায়?
আয়েশার বাবা বাসায় আসার পরে আমি আর ওর সাথে কথা বলতে পারিনা শুধু কান্না আসে।যাই হোক সে আমাকে বলল আমি একটু নিচে থেকে আসছি,আমাদের বিল্ডিং এর নিচে।আমিও কিছুক্ষণ পরে যাই,আমার মনে হলো গিয়ে দেখি করে নিচে।গিয়ে দেখলাম ফোনে কথা বলতাছে একজনের সাথে,আমি কিছু না বলে হুট করে তার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেই, দেখি সে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে কথা বলতাছে।তারপরেও আমি জিজ্ঞেস করলাম কার সাথে কথা বলো?
সে আমাকে এখনো মিথ্যাই বলে যাচ্ছে,,
সে আমাকে বলে আমি এক কাষ্টমারের সাথে কথা বলতাছি।
দেখেন কেমন মিথ্যাবাদি।
সে এমন ঘামা ঘামতাছে যে তার শার্ট প্রায়ই পুরোটা ঘেমে গেছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম তুমি এমন ঘামতাছো কেনো?
সে বলে কই না তো এমনিই।
যাই হোক দুজনেই বাসায় আসলাম
তারপর জিজ্ঞেস করলাম তুমি নাকি বিয়ে করেছো এবং তোমার নাকি একটি ছেলেও আছে?
কিন্তু সে আমাকে এখনো মিথ্যা বলে চলছে।হায়রে মানুষ মিথ্যা বলতে বলতে মিথ্যার পাহাড় গড়ে তুলেছে।
সে আমাকে বলে তুমি কি শুনেছো এগুলো সব ভুল শুনেছো আমি কোনো বিয়েটিয়ে করিনি।
তারপর আমি ছবি গুলোর কথা বলি,তখনো সে মিথ্যাই বলছে।
যখন আমি আমার ছোট ননদকে বললাল তোর ভাইকে ছবি গুলো দেখাতো, তখন আর সে অস্বীকার করতে পারলোনা।
সে তখন বলে হুম করেছি আমিতো এই বিয়ে করেছি 2015 তে।
আমার কেনো যানি মনে হয় সে এই কথাটাও মিথ্যা বলেছে।
ও আমার সাথে সব সময় মিথ্যা বলেছে আর আমি বোকার মতো তাকে বিশ্বাস করেছি।
আমি এখনো এই সংসারেই আছি কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিনা আমি কি করবো,আমার কি করা উচিত,আমি কোথায় যাবো?
আমার আয়েশা এখনো অনেক ছোট
ও ওর বাবাকে অনেক ভালবাসে।
ও সব সময় বলে আমি আমার বাবার কাছে থাকবো।
আমি যদি বলি তোমার বাবা মরে গেলে কার কাছে থাকবা,তখন ও বলে কি জানেন?আমার বাবা মরে গেলে আমিও মরে যাবো।
আর এইদিকে আমার স্বামী তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ বেড়েছে,শুধু যোগাযোগই নয় যাওয়া আসাও বেড়েছে।
আমার এবং আমার আয়েশার প্রতি তার ভালোবাসা একেবারেই আর নেই।..............।
🔸__হায়রে স্বামী একবারো মনে রাখলোনা আমার কথা।আমার সহযোগিতায়,সে আজ এতোদূর এসেছে আর এখন সে আমায় ভুলে গেছে।হায়রে স্বামী সংসার যেই স্বামী সংসার করে করে জীবনের সব কিছু ছেড়ে দিলাম,আর আজ দিন শেষে দেখি সেই স্বামী সংসারই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
কেউ বলতে পারেনা কখন কার জীবন কোথায় গিয়ে দাড়ায়।
এখন আমার আপন বলতে কেউ রইলোনা।নেই কোনো নিজের পরিচয়।
মা নেই,বাবা নেই,ভাই বোনেরাও আগের মতো নেই,আর যে একজন বোন ছিল সেও দুনিয়াতে নেই।
শুধু এক আল্লাহ্ আছেন যিনি আমার চির আপন।এখন আমার বেচে থাকার অনুপ্রেরণা আমার আয়েশা আর আপনারা।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭০৮
Date:- ২৭/১২/২০২১ ইং
আসিয়া খাতুন
ব্যাচ নং ১৬.
রেজিস্ট্রেশন :77855.
নিজ জেলা মুন্সীগঞ্জ।
আমি কাজ করছি ঢাকা লালবাগ থেকে।
আমার প্রডাক্ট:
পাঞ্জাবী,শাড়ী,থ্রিপিছ,।