জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প।
আমি বিদ্যুৎ মৈশান আমার নিজ গ্রাম ভলাকুট, থানাঃ নাছিরনগর, জেলাঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া। আমি ছিলাম মধ্যবিত্ত একটা ফ্যামিলির ছেলে। আমরা দুই ভাইয়ের মধ্যে আমি বড়। আমার জন্ম ২২/০৯/১৯৮৮।
🦧🦧আমার ছোটবেলার দুরন্ত শৈশব এর প্রথম পর্ব।
আমার স্কুলে ভর্তি হওয়ার প্রথম গল্পটা আমার সঠিক মনে পড়ছে না এখন।
তবে চতুর্থ শ্রেণীর পঞ্চম শ্রেণীর গল্পটা আমার সঠিক মনে আছে। আমি ছিলাম খুব চঞ্চল ফাঁকিবাজি ধরনের। পড়ার প্রতি তেমন একটা মনোযোগ ছিল না লেখাপড়া করলে কি হবে সেই জ্ঞানটুকু আমার ছিলনা। পাড়ার সবাই স্কুলে যায় আমিও যাই মা-বাবা অনুপ্রেরণা আমাকে পড়তে হবে । মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। কিন্তু মানুষটা যে কি আজ এত বছর বয়সে এসে এখন জীবনের বাস্তবতাটা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি,মানুষ কাকে বলে।
আমার প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত আমার বাবা একমাত্র শিক্ষক ছিলেন । চতুর্থ শ্রেণীতে আমার রোল নম্বর ছিল ৪ পঞ্চম শ্রেণীতে আমার রোল নম্বর ৩ আমাকে স্কুল থেকে নির্দেশনা দেয়া হলো বৃত্তি দিতে হবে এবং বৃত্তি পেতে হবে কারণ আমি ছাত্র হিসেবে তেমন ভালো না হলেও কিন্তু পাড়ার মধ্যে আমি একমাত্র ক্যান্ডিডেট।
এই আশা নিয়ে আমি বৃত্তি পরীক্ষা অংশগ্রহণ করি কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি বৃত্তি পাই নাই। বাবা-মার মন ভেঙ্গে যায় আমারও খুব খারাপ লাগে। জীবনের প্রথম একটা সাফল্য এনে দিতে পারি নাই আমার বাবা মার হাতে। মনটা অত্যন্ত খারাপ হয়ে গেল। আমি তখন বেশ কান্না করেছিলাম যখন রেজাল্ট দিয়েছে কিন্তু আমার নাম নাই। বৃত্তি পেয়েছে আমার এক সহপাঠী বান্ধবী।
এই ফাকে আমার শৈশব দুরন্তপনা স্মৃতিগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
তখন ছোট ছিলাম একান্তই দুরন্ত চঞ্চল প্রকৃতির ছিলাম।
যখন আমি ছোট ছিলাম হাতগুলো জামার ভিতর ঢুকিয়ে রেখে বলতাম আমার হাত নাই।একটা কলম ছিলো যার চার রকমের কালি ছিলো,আর তার চারটা বোতাম একসাথে চাপার চেষ্টা করতাম।
আমাদের সময়ে এক হাত সমান কলম পাওয়া যেত। আমাদের কিছু বন্ধুবান্ধবকে ছাত্র তৈরি করতাম এবং আমি নিজের শিক্ষক হতাম, পড়া না পারলে সে ছাত্রদেরকে কলম দিয়ে শাস্তি দিতাম।
বড়শির মধ্যে গরম ভাত দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করতাম । দরজার পিছনে লুকিয়ে থাকতাম কেউ এলে চমকে দিব বলে।রাতে হাটার সময় ভাবতাম আমি যেখানে যাচ্ছি চাঁদ টাও আমার সাথে যাচ্ছে ।স্কুলে যাওয়ার সময় সবাই এক সাথে দৌড়াদৌড়ী করে যেতাম। ক্লাসের কোন সহপাঠী সাথে ঝগড়া হলে কলমের ক্যাপ খুলে আঘাত করতাম তাকে। আবার একসাথে মিলেমিশে চোর-ডাকাত-বাবু-পুলিশ খেলতাম। অনেক সময় স্কুল ফাকি দিয়ে কয়েক জন বন্ধু মিলে গাছের আম চুরি করে খেতাম বড়ই চুরি করে খেতাম কলা চুরি করে খেতাম ঘুরতে যেতাম আড্ডা দিতাম আর ও কত কি।
এক টাকার বা 50 পয়সার রঙ্গিন বা নারকেলি আইসক্রিম , 50 পয়সার লিলি বিস্কিট, 50 পয়সার চকলেট খেতাম ।হঠাৎ আকাশ দিয়ে হেলিকপ্টার গেলে সবাই রুম থেকে বের হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতাম । স্কুল ছুটি হলে দৌড়াদৌড়ি করে বাসায় ফিরতাম অল্প ভাত খেয়ে আবার তাড়াতাড়ি বন্ধুদের সাথে খেলতে যেতাম মাঠে ।
শুক্রবার বিকাল ৩ টা থেকে আপেক্ষা করতাম কখন BTV তে সিনেমা শুরু হবে । ভাত না খেয়ে থাকতে পারতাম কিন্তু সিনেমা দেখা বন্ধ করা যাবে না। বাবা-মা কোন কাজ করতে অর্ডার করলে আগে কন্ডিশন করে নিতাম আমাকে কিন্তু সিনেমা দেখার সুযোগ দিতে হবে । স্কুল ছুটির পরে বিকালে এসে গোল্লাছুট কানামাছি কুতকুত দাড়িয়া বান্দা লুডু খেলতাম আবার ফাঁকে ফাঁকে বিকেলে আকাশে ঘুড়ি উড়ানোর সখ ছিল । এসব খেলা খেলতে না পারলে দিনটাই যেন মাটি হয়ে যেত ।
ফলের গুটি খেয়ে ফেললে দুশ্চিন্তা করতাম পেটের ভিতর গাছ হবে কিনা। মাথায় মাথায় ধাক্কা লাগলে শিং গজানোর ভয়ে আবার নিজের ইচ্ছায় ধাক্কা দিতাম। কেউ বসে থাকলে তার মাথার উপর দিয়ে ঝাপ দিতাম যাতে সে আর লম্বা হতে না পারে।
কবে ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হবে সেই আশায় থাকতাম। ফাইনাল পরিক্ষা শেষ হলে তো সকালেও রাতে পড়া নেই এতো মজা লাগতো যা বলার বাইরে। সেই সময় ইঞ্জিনের তিনটা বিয়ারিং দিয়ে কাঠের তিনটা ত্রিভুজাকৃতির ফ্রেম করে ঠেলা গাড়ি তৈরি করতাম সেই গাড়ি দিয়ে সকাল-দুপুর-রাত বন্ধুরা মিলে সারাদিন গাড়ি চালাতাম।
মাঘ ফাল্গুন মাসের শীতের ভোর রাতে উঠে পাড়ার বড়ই গাছের নিচে গিয়ে বড়ই কুরাইতাম। বৈশাখ মাসের ঝড়ের দিনে গাছে গাছে ছোট ছোট আম কুরাইতাম সেই আম বাজারে নিয়ে বিক্রি করতাম। কোন ফার্মেসি অথবা ডাক্তারের কাছ থেকে পরিত্যাক্ত সিরিঞ্জ ও স্যালাইন সেট নিয়ে আসতাম তারপর সিরিঞ্জ স্যালান সেটে পানি ঢুকিয়ে কলাগাছে ইনজেকশন দিয়ে ডাক্তারি করতাম। ঔষধ খাওয়ার পর পরিত্যক্ত ওষুধের খোসা বা ফয়েল এর ভিতর মাটি নরম করে ছোট ছোট ট্যাবলেট আকারে তৈরি করে ঔষধের খোসার ভিতরে ঢুকিয়ে রোগীদেরকে দিতাম ।
পরিত্যক্ত স্যালাইনের সেটের ভিতরে কাপড় শুকানোর তার ঢুকিয়ে স্টেথোস্কোপ তৈরি করতামও রোগীদের বুক পরীক্ষা করতাম। তবে যখন ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ আসতো মনের মধ্যে ভয় আসত ,ওই দিন যে ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে।
এসব কথা মনে পড়লে ইচ্ছা করে আবার যদি সেই ছেলে বেলা টা ফিরে পেতাম। সত্যিই আমাদের জীবন থেকে সেই সোনালী দিনগুলি হারিয়ে গেছে কখনো আমরা সেই সোনালী দিনগুলো আর ফিরে পাবোনা।
🌹🌹🌹মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপ।
পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষায় প্রায় ৩০০ জন ছাত্রছাত্রীকে ওভারকাম করে আমার রোল নম্বর ১হয়েছে।
তখন আমার খুশি আর দেখে কে। তখন আমি মনে মনে ভাবি বৃত্তির রেজাল্ট হয়তো মা-বাবাকে দিতে পারি নাই। তবে এখানে ৩০০ জন শিক্ষার্থীকে ওভারকাম করে আমার রোল নম্বর ১হয়েছে সেটা আমার বড় পাওনা ছিল তখন আমার কাছে মনে হয়েছিল এটাই বুঝি আমার একটা খুশির সংবাদ ।
ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার পর নাম জানা-অজানা অনেক বন্ধু বান্ধবীর সাথে আমার পরিচয় হয়ে গেল।
তখন একসাথে সবাই ক্লাস করি সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত মাঝখানে দুপুর ১ থেকে ২ টা পর্যন্ত বিরতি।
ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত আমার পড়ালেখা সুন্দর এবং ভালভাবে চলছে । দশম শ্রেণীতে এসে টেস্ট পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ছি।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এস এস সি তে এসে আমার দুই বিষয়ে রেজাল্ট খারাপ হয় গণিত ও হিসাববিজ্ঞান । তখন তো আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে মা-বাবার মন আরও খারাপ হয়ে গেলো। তার চেয়েও বেশি কষ্ট পেয়েছে পাড়া-প্রতিবেশী কারণ পাড়া-প্রতিবেশীর আমি একমাত্র ক্যান্ডিডেট ছিলাম এসএসসি পরীক্ষার্থী।
পরীক্ষা খারাপ হওয়ার পিছনে কারণ অবশ্যই আছে। আমার পাশের ছেলেটা সকল সাবজেক্ট এ আমার উপর নির্ভরশীল ছিল। আমাকে বারবার বিরক্ত করতো। পরিশেষে টিচার বিরক্ত হয়ে আমার খাতা নিয়ে যায় ১ ঘন্টা পর্যন্ত খাতা টেবিলের উপর রেখে দেয় পর পর দুই দিন এতে করে আমার পরীক্ষার ভীষণ ক্ষতি হয়।
পরীক্ষায় ফেল মারার কারনে মনটা এত খারাপ হয়ে যায়। বাবা ও আমাকে আল্টিমেটাম দিয়ে দে আমাকে আর পড়তে দেওয়া হবে না। আমি মানসিকভাবে তখন খুব ভেঙ্গে পড়ি। কিছুদিন পর বাবাকে বললাম আমি একটা চাকরি করব। আমি চাকরির জন্য হন্যের হয়ে ঘুরতে লাগলাম। চাকরি কি আর আমাকে কেউ দেয় আমি যে আন্ডার মেট্রিক। মেডিসিন কোম্পানিতে জব করে উপজেলা লেভেলের আমার এক বড় ভাইকে গিয়ে ধরি।
আমাকে একটা চাকরি দেওয়ার জন্য উনি অনেকক্ষণ চিন্তা করে আমাকে বলে চাকরি দেওয়া যাবে ১০,০০০ টাকা জামানত দিতে হবে। কোম্পানিকে যদি দিতে পারো তাহলে আমার সাথে তুমি যোগাযোগ করবে। তখন বাবা কে বললাম আমি নাছোড়বান্দা আমি চাকরি করবোই করবো।
তখন বাবা আমাকে একটা গাভী বিক্রি করে ১০,০০০ টাকা দেয়। টাকা ভাইয়াকে দিয়ে দিলাম কিন্তু আমার চাকরির কোন খবর নাই।
পরে জানতে পারলাম লোকটা আমার কাছ থেকে একটা সুযোগ নিয়েছে। অবশেষে অনেকের সহযোগিতা নিয়ে আমি লোকের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করি । তখন আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা নেই আমি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে একটা কিছু করবো এর আগে নয়। এর মধ্যে আমার মা আমার বাবাকে খুব রিকোয়েস্ট করে বলল আমাকে-আবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিতে। তখন আমি আবার পরের বছর পরীক্ষা দিয়ে পাস করি ।
🌹🌹🌹কলেজ পর্যায়ে তৃতীয় ধাপ।
কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় আমাকে অনেকটা বেগ পোহাতে হয়েছে। যেহেতু আমি মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ছেলে আমার সংসারের তেমন কোনো আয়-উন্নতি ছিল না। কলেজে ভর্তি হওয়ার ফিশ নতুন জামা-কাপড় কেনা নতুন বই কিনা অনেকটা খরচ।
এরমধ্যে কলেজ আমার বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে নৌকায় আসা-যাওয়া করতে হয়।
সব খরচ বহন করতে বাবা খুব হিমশিম খেয়ে গেল।
তখন আমি নিজ দায়িত্বে কলেজের পাশে লজিং ঠিক করলাম দুইটা ছেলেকে পড়ানোর দায়িত্ব নিয়ে ।
তখন আমি আরেকটা বাস্তবতার মুখে পড়লাম। মা বাবার আদর ভালোবাসা মায়া মমতা ছেড়ে অন্যের বাড়িতে থাকা কতটা কষ্ট বেদনা দায়ক, নিজের স্বাধীনতা বলতে কিছু থাকে না নিজের পছন্দ বলতে কিছু থাকে না নিজের ইচ্ছা বলতে কিছু থাকে না। বুকে পাথর চাপা দিয়ে অনেক কিছু সহ্য করে নীরবতার মাঝে সে দিনগুলো পার করি।
লজিং বাড়ির প্রতি আমি কোন অসন্তুষ্ট না শত হলেও উনি আমাকে সেই দুঃসময়ে আশ্রয় দিয়েছে । তখন আমার আর বুঝতে বাকি নাই জীবন কত কষ্টের জীবন কত দুঃখের জীবনের বাস্তবতা কাকে বলে জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে হয় কিভাবে । জীবন মানে যন্ত্রনা নয় ফুলের বিছানা তখনকার সময়ে কথাটা আমি খুব মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি । তখনকার সময়ে আমি আর ও ভাবতাম যে, এর চেয়েও মনেহয় আরো কঠিন যুদ্ধ সামনে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। যাইহোক এরমধ্যে আমি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করলাম।
তখন আমি আমার বাবাকে বললাম আমি ঢাকা চলে যাব , কিন্তু কিভাবে যাব কার মাধ্যমে যাবো আমার যে কেউ পরিচিত নাই। ঠিক তখনই দেবদূতের মতো উপস্থিত হয়েছে
আমাকে সাহায্য করার জন্য আমার স্কুল জীবনের প্রিয় শিক্ষক জনাব আলী আহমেদ স্যার । উনার কথা না বললেই নয় উনার অবদানের জন্য আজকে আমি পর্যন্ত আসতে পেরেছি উনি আমাকে সাহস দিয়েছেন শক্তি দিয়েছেন আরো দিয়েছেন দোয়া।
তখন স্যারের এক ভাতিজাকে স্যার রিকোয়েষ্ট করে আমাকে ঢাকা নিয়ে আসার জন্য ।
উনি হচ্ছেন সেই জিয়াউল ইসলাম জিয়া ভাই। উনি আমার জীবনের অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জিয়া ভাই আমাকে ঢাকা আসার জন্য তারিখ দিলেন ২০০৭ সালের ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ। তখন উনি sara multi-tread কোম্পানি নামে গার্মেন্টসের মেশিন কোম্পানিতে মার্কেটিং পদে আমার জন্য একটা চাকরি রেডি করে রেখেছিলেন।
🌹🌹🌹কর্মজীবন ও শিক্ষাজীবন চতুর্থ ধাপ ।
যেই শুনতে পারলাম জিয়া ভাই আমার জন্য চাকরি রেডি করে রেখেন আমি ঢাকা যাব। তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছুটি গল্পের নায়ক ফটিক চক্রবর্তীর মত হয়ে গেলাম খাওয়া নেই নাওয়া নেই চোখে ঘুম নেই, নির্ঘুম চোখ আমার রাত জাগা পাখি, স্বপ্নে বিভোর আমি সারারাত জেগে থাকি । একটা সেকেন্ড যেন আমার কাছে একটা বছর হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনে শুধু এই চিন্তা আমি কখন যাব কিভাবে যাব, সেই রঙিন স্বপ্ন আমার পিছু ছাড়ছে না । যাই হোক আমি ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ ২০০৭ সাল আমি বাড়ি থেকে রওনা হলাম মাত্র ১৫০০ টাকা নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে। প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এক আত্মীয়ের বাসায় উঠে রাত্রি যাপনের জন্য। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা কমলাপুরের উদ্দেশ্যে ট্রেন ছাড়বে ভোর ৪ টায় ।
আমার আত্মীয়ের বাসা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশন ৩০ টাকা ভাড়া । আমি রাত ৩.৫০ মিনিটে উঠি এবং হাতে দুইটা ব্যাগ নিয়ে কনকনে শীতের রাতে রিক্সা না নিয়ে আমি একা রাস্তা দিয়ে টুকটুক করে হাঁটতে লাগলাম । যাওয়ার পথে দেখলাম ব্যাংকের একটা দারোয়ান বৃদ্ধ কনকনে শীতের রাত্রে কিছু কাগজ পুড়িয়ে শরীর গরম করছে। তখনো আমার মনে বিন্দুমাত্র ভয় আসেনি , আমি একা একজন মানুষ এই গভীর রাতে একা একা পথ চলছি। হয়তো কোন চিন্তাইকারী অথবা কোন খারাপ লোকের কবলে পড়লে আমি তখনই বড় কোন ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারতাম।
তখন হয়তো আমার সেই সোনালী স্বপ্নগুলো ধুলিস্যাৎ হয়ে যেতে পারত, আমার ঢাকা আর আসা হতো না। কিন্তু সেই ভয় টুকু তখনকার সময়ে বিন্দুমাত্র হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনি আমায় । কিন্তু এখন বুঝি শহর জীবনের এই সময়ে রাত কত ভয়ঙ্কর, কত নানা রকম অপকর্ম ও ভয়ঙ্কর জনিত কাজকর্ম চলে।
ভয় হয়তো আমার মনে তখনকার সময় আসেনি কারণ, আমার উদ্দেশ্য ছিল সৎ আমায় ঢাকা আসতেই হবে কিন্তু টাকার স্বল্পতার কারণে আমি দূঃসাহস করে একাই রওনা দিয়েছি হেঁটে হেঁটে। হয়তো মা-বাবার আশীর্বাদ ছিল এজন্য রাস্তায় কোন ক্ষতি আমার হয়নি। দুপুর প্রায় ১ টার দিকে আমি ঢাকায় এসে পৌছালাম জিয়া ভাইয়ের কাছে। উনি একটা বিজ্ঞাপন কোম্পানির মালিক উনার অফিস ঢাকা পল্টন। উনার কোম্পানির নাম হচ্ছে ভিয়াস বিজনেস লিংক। জিয়া ভাইয়ের নিকট সালাম ও কুশল বিনিময় করে পরিচিত হলাম । তখনই উনি আমাকে বলেছিলেন তুমি ঢাকায় এসেছো কষ্ট করতে পারবে তো। ঢাকা আসলে কিন্তু সবাইকে কষ্ট করতে হয়। আমি একবুক সাহস নিয়ে বলেছিলাম ভাইয়া আমি অবশ্যই অবশ্যই পারবো।
কিন্তু তখন বুঝতে পারে নাই আমাকে ঢাকায় এতটা কষ্ট করতে হবে। তখন উনার অফিসে থাকি অফিসে ঘুমায় এবং বাড়ি থেকে নিয়ে আসা টাকা দিয়ে তিন বেলা খাবার খাচ্ছি। এরমধ্যে টাকাও শেষ হয়ে গেছে প্রায়। ১০/১৫ দিন পর জিয়া ভাই আমাকে mirpur- 1 ডিওএইচএস sara multitrade company ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে আমাকে পরিচয় করে দিলেন। উনি আমাকে দেখে বললেন এই ছেলেকে দিয়ে হবে তবে তোমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে তোমাকে নিরুৎসাহী হওয়া যাবে না । আমি বললাম জ্বী স্যার আমি অবশ্যই পারবো আমার জন্য দোয়া রাখবেন আপনি। আমার কাজ হচ্ছে গার্মেন্টসের বিভিন্ন ক্যাটাগরির মেশিন নিয়ে কথা বলা ও মেশিনের অর্ডার আনা মোটকথা গার্মেন্টসের মেশিন এর মার্কেটিং করা। উনি আমাকে দায়িত্ব দিলেন মিরপুর পল্টন যাত্রাবাড়ীর সবগুলোর গার্মেন্টসের একটা তালিকা করা ও একটা করে ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করা।
পারিশ্রমিক হিসেবে উনি আমাকে 3000 টাকায় বেতন ধরেছেন এবং অগ্রিম এক মাসের বেতন দিয়েছেন। ছয়টা 500 টাকার নোট একত্রে 3000 টাকা দেখে আমার চোখ কপালে উঠে গেল আমি তো কখনো 3000 টাকা আমার জীবনে ইনকাম করি নি । এই টাকা আমার প্রথম চাকরি জীবনের বেতন আমার মনে এত আনন্দ লাগল যা বলার বাহিরে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না, তাও ঢাকায় এসে নতুন চাকরি আবার বেতন ১ মাসের অগ্রিম কার না ভালো লাগবে বলেন। কিন্তু আমার মাথায় তখন আসেনি এই টাকা দিয়েই মার্কেটিংয়ের যাতায়াত খরচ খাবার এবং থাকা হবে কিনা। ওই টাকা নিয়ে মিরপুর থেকে পল্টন আসি চোখেমুখে খুব আনন্দ নিয়ে। পরের দিন থেকেই আমার কর্মজীবন শুরু মনে খুব খুশি। পরের দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে মার্কেটিংয়ের একটা ব্যাগ নিয়ে কর্মস্থলে রওনা হলাম। প্রথমাবস্থায় ঢাকা শহরের অলিগলি চিনতে একটু বেগ পোহাতে হয়েছে পরে এটা আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে গেছে।
সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সারাদিন বিভিন্ন গার্মেন্টস-এ ঘুরলাম দুপুরে লাঞ্চ করলাম এবং যাতায়াত ভাড়া দিলাম। এইভাবে পাঁচদিন ঘোরার পর আমার যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে , এই টাকা দিয়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন গার্মেন্টসের মার্কেটিংয়ের যাতায়াত খরচ শুধু হবে আমার থাকা-খাওয়ার খরচের টাকা হবে না ।
তখন আমি জিয়া ভাই কে বিষয়টা বলি , বলার পরে উনি উনার অফিসে আমাকে থাকার জন্য সুযোগ করে দিলেন। থাকার সুযোগ করে দিলেন কিন্তু পেটে যে ভাত নাই কি করব এখন। গল্পের এখানে এসে আমি আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি । চোখ দিয়ে আমার ঝর ঝর করে পানি পড়তেছে। আমি এখানে নীরব হয়ে গেলাম। তারপর শুনুন বাস্তবতা কাকে বলে।
সারাদিন টইটই করে এই গার্মেন্টসে ওই গার্মেন্টসে ঘোরাফেরা করি। কিন্তু পেটে ভাত নাই সকালে এক গ্লাস পানি খেয়ে বের হয়ে দুপুরে কোন খাবার নেই রাতে আবার বাসায় এসে দুই গ্লাস পানি খেয়ে ঘুমাই। শীতে রাতে ঘুম আসে না এদিকে মাথার কোন বালিশ নেই। কাপড় চোপড়ের ব্যাগটা মাথা দিয়ে ঘুমাই কোনরকম রাত পার করি। কিন্তু খাবারের তো কোন বাজেট নাই আমার। পাশের রুমের আরেক জন বড় ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে আমার । উনি আমাকে প্রায়ই বলে বিদ্যুৎ তুমি খেয়েছ তোমার মুখটা কেমন শুকনা শুকনা লাগে। মুখে একটা হাসি দিয়ে বলি খেয়েছি অনেকক্ষণ আগে পানি খাই নাই তো তাই এমন দেখাচ্ছে ।
উনার সামনে এই সুযোগে পানি খাওয়ার সুযোগ পেলাম তাই ঢকঢক করে দুই তিন গ্লাস পানি খেয়ে ফেললাম। কারন উনার সামনে পানি খেতে পারিনা, পানি খেতে দেখলে উনি আমাকে বলেন , তোমাকে শুধু পানি খেতে দেখি অন্য কোন খাবার খেতে তো দেখিনা। এভাবে বেশ কয়েকদিন চলে গেল। এরমধ্যে মা-বাবা ফোন করে বলে আমি কেমন আছি আমি উত্তর দেই আমি অনেক অনেক ভালো আছি। কিন্তু কতো দিন কতো রাত না খেয়ে পার করেছি তার হিসাব জীবনের খাতা নেই। মানুষ বলে মানুষ নাকি না খেলে মারা যায় কই আমিতো এখনো মরিনি আমিতো এখনো দিব্যি বেঁচে আছি, আজকের এই দিনে আমার জীবনের গল্প লেখার জন্য।
যাইহোক এভাবে কিছুদিন চলার পরে আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে ততদিনে ঢাকা শহরের কিছু কিছু অলি গলি চিনা জানা হয়ে গেছে , কিছু কিছু জায়গা বাসে না গিয়ে হেঁটে হেঁটে গিয়ে টাকাটা সঞ্চয় করেছি।এই টাকা দিয়ে কোন কোন দিন প্রত্যেকদিন না দুপুরে ৫ টাকার ভাগ ৩ টাকার আলু ভর্তা , রাতে মাঝে মাঝে রাস্তার পাশে বসে থাকা চিতই পিঠার দোকান থেকে একটা পিঠা খেয়ে দিন পার করেছি। এই খাবার আবার প্রতিদিন খেতে পারি নাই। সকালে খাবারের তালিকায় কোন কিছু নাই দুপুরে আলু ভর্তা ভাত খেলে রাত্রে শুধু পানি খেয়ে রাত পার করি।আবার সারাদিন কিছু না খেলে রাত্রে শুধু চিতই পিঠা খাই । মাঝে মাঝে রাত্রে শুকনা পাউরুটি খাই। এদিকে শরীর আমার না খেয়ে খেয়ে দুর্বল হয়ে গেছে । এরমধ্যে প্রায়ই আমার সাত মাস অতিবাহিত হয়ে যায় । আবার গ্রাজুয়েশন করার ইচ্ছা ও মাথায় আছে কিন্তু কি করব ভেবে পাচ্ছি না। চিন্তা করলাম এক বছর গ্যাপ দিয়ে পরের বছর গ্রাজুয়েশন এর জন্য এডমিশন নিব। এদিকে সকালে নাস্তার জন্য টোটাল এক মাসের জন্য একটা তালিকা করলাম,১ কেজি মুড়ি, হাফ কেজি চিড়া, ২৫০ গ্রাম চিনি ।
প্রতিদিন খেয়ে খেয়ে এক মাস পার করি দুপুরের খাবারের তালিকায় কিছুই নেই রাত্রে শুধু একটা চিতই পিঠা সাথে দুই গ্লাস পানি। এভাবে চলে যায় আরো বেশ কিছুদিন। ঠিক এক বছর পর আমার শ্রদ্ধেয় আলী আহমদ স্যার ঢাকার কোন এক জরুরী কাজে এসে আমাকে দেখার সুযোগ হল। স্যার রাত্রে আমার কাছে আসে দুজনে একসাথে ঘুমাই । প্রতিদিনকার যে কাপড়ের ব্যাগ টা আমার মাথার নিচে দিতাম সেটা আজকে আমার স্যার কে দিয়েছি আর নিচে হালকা একটা পাতলা কাপড়। স্যার ততক্ষনে বুঝতে আর বাকি নেই ছাত্র আমার বেশ কষ্টে আছে।
যাই হোক ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে এসে স্যার চেয়ারে বসে আমিও বসি অপজিট পাশের চেয়ারে একজন আরেকজনের মুখোমুখি মাঝখানে একটা টেবিল । সকালে যে স্যার কে একটু ভালো নাস্তা করাবো সে টাকা তো আমার কাছে নেই । টেবিলের উপর একটা পেপার বিছিয়ে পেপার এর মধ্যে আমি ঢালতে থাকলাম অল্প অল্প করে চিড়া মুড়ি চিনি। স্যার কে খেতে দিয়ে আমি আর খেতে পারছি না আমার গলা দিয়ে খাবার নামছে না। অঝোর ধারা চোখের পানি দিয়ে আমার চিড়া-মুড়ি সব ভিজে যাচ্ছে। না পারি আমি নিজে পেট ভরে খেতে না পারলাম আজকে স্যার কে কিছু খাওয়াতে।
যাইহোক স্যার অল্প কিছু খেয়ে আমাকে নিয়ে বের হল শান্তিনগর বাজারে গিয়ে আমাকে ৪০ টাকা দিয়ে একটা বালিশ কিনে দিলো।
কিন্তু স্যার আর বুঝতে বাকি নেই আজকে এক বছর যাবত আমার মাথার কোন বালিশ নেই। যাইহোক স্যার কে বিদায় দিলাম আমি আমার কর্মস্থলের চলে গেলাম। ঠিক তখনি আমি বুঝতে পারলাম জীবনের বাস্তবতা কাকে বলে , ক্ষুধার জ্বালা কেমন হয় ক্ষুধার জ্বালা কাকে বলে তা আমি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি। প্রতিদিনকার খরচ থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় করে এক বছর পর আমি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার উদ্দেশ্যে ঢাকা মিরপুর বাঙলা কলেজে এ এডমিশন নেই।
কিন্তু দুঃখের বিষয় এডমিশন নেয়ার কয়েকমাস পরেই আমাকে অফিস থেকে বলা হয় নারায়ণগঞ্জ গিয়ে কাজ করতে কারণ নারায়ণগঞ্জ গার্মেন্টস এরিয়া অনেক বড় প্রচুর গার্মেন্টস আছে । কি করব চাকরি করতে হলে তো অফিসের কথা রাখতেই হবে। বেতন তো সেই আগের ৩০০০ টাকায় রয়ে গেছে । নারায়ণগঞ্জে এসে প্রথম একটা ম্যাচ এ থাকা খাওয়া সব মিলিয়ে ২৫০০ টাকা ভাড়া নিয়ে থাকি। আর থাকলে মাত্র ৫০০ টাকা। তখন মনের আনন্দ লেগেছিল। আর যাই হোক তিন বেলা তো পেট ভরে ভাত খেতে পারব।
ঢাকা মিরপুর বাংলা কলেজ থেকে রিলিজ স্লিপ এনে নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে এ এডমিশন নেই। এইভাবে আমার কষ্টের দিন চলছে। এদিকে আমার এক বড় ভাইয়ের পরিচিত বন্ধুর মাধ্যমে মেডিসিন কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে কাজ করার একটা সুযোগ পেয়ে যাই বেতন ১০,০০০ টাকা। তখন আগের চাকরি আমি ছেড়ে দেই। এবার তো আমি খুশিতে আত্মহারা। এভাবে কাজ করতে করতে আমার এক সময় গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হয়ে যায় এদিকে আমার প্রমোশন হয়ে বেতন হয়ে যায় প্রায় ২৫ হাজার টাকার মতো। প্রতি মাসে ১৫,০০০ টাকার মত আমি সঞ্চয় করতে শুরু করলাম। এখন আমি আগের চেয়ে অনেক ভাল আছি।
🌹🌹🌹উদ্যোক্তা জীবন পঞ্চম ধাপ।
পাঁচ-ছয় বছর চাকরি করে আমি নিজে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আর চাকরি করব না আমি একজন উদ্যোক্তা হব । আমি নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিলাম কোন একটা মেডিসিন কোম্পানির সাথে চুক্তি করে ডিলারশিপ নিয়ে ব্যবসা করব । কোম্পানির সাথে কথা বলে দেখলাম যে পরিমাণ মূলধন লাগবে, সেটা আমার একার পক্ষে বহন করা সম্ভব না। আমার পরিচিত দু'জন কলিককে বিষয়টা নিয়ে কথা বলি এবং তাদেরকে প্রস্তাব দিই উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য। তারা সহজেই রাজি হয়ে যায়। আমরা পরিকল্পনা করি কোম্পানির সাথে চুক্তি করে ডিলারশিপ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ মুন্সিগঞ্জ ব্রাহ্মণবাড়িয়া এই তিন জেলা মার্কেটিং করব এর জন্য অভিজ্ঞ লোক নিয়ে বিজনেস শুরু করবো।
আমরা তিনজনে মোটামুটি ভাল অঙ্কের টাকা দিয়ে বিজনেস শুরু করলাম। মার্কেটিং এর জন্য বেশ কয়েকজন লোক নিয়োগ দিলাম। মার্কেটিংয়ের সর্বক্ষণ কাজ করার জন্য আমি সহ আরেকজন পার্টনার মোট দুজনে আমরা দায়িত্ব নিলাম সর্বক্ষণ মার্কেটে কাজ করব এবং আমরা কোম্পানির থেকে বেতন নিব ২৫ হাজার টাকা করে। তিন নম্বর পার্টনার সে কোম্পানির জন্য কোন কাজ করতে পারবেন না সুতরাং তার বেতন নাই সে অন্য আরেকটা কোম্পানিতে কাজ করে। যেহেতু আমি জীবনের প্রথম উদ্যোক্তা তাই দিনরাত এক করে কঠোর পরিশ্রম করতে লাগলাম। এই ভাবে কাজ করার পর প্রথম মাসে আমরা লভ্যাংশের মুখ দেখি। মনে অনেক আনন্দ কাজ করতে অনেক ভালো লাগে । আমরা যে পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ করেছিলাম এক বছরের মাথায় তার দ্বিগুণ হয়ে গেল। মনে এত আনন্দ জীবনের প্রথম বেলায় এত সাকসেস হয়ে গেলাম।
কিন্তু ভাগ্য আমার খুবই খারাপ, কিছুদিন পর তৃতীয় নম্বর পার্টনার আমাকে বলে সে কোম্পানিতে কাজ না করলেও তার বেতন লাগবে প্রতি মাসে। আমি বললাম না আপনি কাজ না করলে তো বেতন পাবেন না। এই নিয়ে ওনার সাথে আমার মনোমালিন্য বাকবিতন্ডা অবশেষে আমির শত্রুতে পরিণত হই । এখানে আমি একটা নিজে ভুল কাজ করেছিলাম। কোম্পানির শুরুতেই আমি কোন অংশীদারি চুক্তিনামা করিনি , এটাই আমার জীবনের চরম ভুল। যে বিষয়টা আজকে আমি ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের কাছ থেকে শিখতে পারলাম। এক পর্যায়ে দুই নম্বর পার্টনার ও তিন নম্বর পার্টনার একত্রে মিলিত হয়ে আমাকে একেবারে শূন্য হাতে কোম্পানি থেকে বহিষ্কার করে । তারপর অনেক লোকজনের কাছে আমি খুব ছোটাছুটি করেছি কিন্তু কেউ আমার কোনো সহযোগিতা করতে পারেননি কারণ আমার কোন অংশীদারিত্ব চুক্তি নামা নাই কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি। অবশেষে আমি মানসিকভাবে খুব ভেঙ্গে পড়েছি। প্রায় আমি একমাসের মত অসুস্থ ছিলাম । আমার সেই স্বপ্ন আমার সেই উদ্যোগতা জীবন মুহূর্তের মধ্যে ধুলিস্মাৎ হয়ে গেল। আমার চোখের সামনে আজ তারা বাড়ি গাড়ির মালিক আর আমি সেই আমিই রয়ে গেলাম। পরে আমি একটি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি সেবামূলক কাজ করব একটা ফার্মেসি দিব।
যেহেতু ছোটবেলায় আমি একটু একটু ডাক্তারি করতাম। তবে আমি এখানে একটা কথা বলে রাখি যেহেতু আমি খেলার ছলে ছোটবেলা ডাক্তারি করতাম । এই বিষয়টাকে দায়িত্ব নিয়ে আমার মা-বাবা যদি ডাক্তারি পেশায় পূর্ণাঙ্গ ডাক্তার না হতে পারতাম তবে কোন কোনটেকনিক্যালি কাজ করার জন্য আমাকে উৎসাহ দিত তাহলে মনে হয় আমি ভালো করতে পারতাম। তবে এই ভুলটা আমাদের নয় এই ভুল হচ্ছে মা-বাবার। লক্ষ্যহীন পড়াশোনা আর একগাদা সার্টিফিকেট দিয়ে বাস্তব জীবনে হতাশা ছাড়া কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই আজকে আমার গল্প লেখার ছলে প্রত্যেকটা বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে বলি আপনার আদরের সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত কামনা করতে চাইলে, ছোটবেলায় থেকে খেয়াল রাখবেন ও কোন বিষয়ের প্রতি এক্সপার্ট। ও যে বিষয়ের প্রতি এক্সপার্ট তাকে সেই বিষয়ে বাস্তবমুখী শিক্ষা দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবেন।
তাহলে আপনার আদরের সন্তানের সুনিশ্চিত ভবিষ্যত গড়তে মাত্র সময়ের ব্যাপার।যাইহোক এখন চিন্তা করলাম আমি আর মাস্টার্স কমপ্লিট করব না আমি নিজে এখন একটা বাস্তব মুখী শিক্ষা গ্রহণ করব । তখন নারায়ণগঞ্জ জেনারেল ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল কর্তৃক পরিচালিত আর এম পি ট্রেনিং কমপ্লিট করি সাথে ওই হাসপাতাল থেকেই ইন্টার্নশিপ ট্রেনিং কমপ্লিট করি।
তখন পাশাপাশি একটা ফার্মেসি দিয়ে বসি বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল কর্তৃক পরিচালিত সরকারিভাবে সি গ্রেট ফার্মাসিস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। বাংলাদেশ টেকনিক্যাল এডুকেশন বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত সরকারিভাবে প্যারামেডিকেল কোর্স কমপ্লিট করি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ইন্টার্নশিপ ট্রেনিং কোর্স কমপ্লিট করি। শিশু হসপিটাল ঢাকা শ্যামলী থেকে এম সি এইস কোর্স সম্পন্ন করি। বর্তমানে ফার্মেসির মাধ্যমে সেবামূলক কাজে নিয়োজিত আছি। রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত এ লক্ষ্যে আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। তবে আমি এখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি ।
🌹🌹🌹অপারেশন ছাড়া নাকের পলিপাসের চিকিৎসা।
এর অনেকগুলো উপসর্গ আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে কমন উপসর্গ হলো সারাক্ষণ মাথা ব্যথা ও সবসময় ঠান্ডা লেগে থাকা।
এই চিকিৎসার মাধ্যমে আমি অনেকের কাছ থেকে সম্মান ও ভালোবাসা পেয়েছি। এই গ্রুপের প্রতিটি ভাই বোনের কাছ থেকে দোয়া ও ভালোবাসা কামনা করি।
এই সেবামূলক কাজের পাশাপাশি ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর অনুপ্রেরণায় আমি আবার নতুন করে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখি। আমি কাজ করছি মায়ের হাতে নারিকেলের নাড়ু, খেজুর, চা পাতা, বডি স্প্রে পারফিউম। সবাই আমার জন্য দোয়া রাখবেন ভালোবেসে পাশে থাকবেন।
এই গল্পের মাধ্যমে আমার মনের দুটি একান্ত ইচ্ছা প্রকাশ করছি। 🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
🌺🌺১| হাজারো গল্পের ভিড়ে আমার এই গল্পটা স্যারে নিজে পড়ার সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।
🌺🌺২| স্যারের কাছে আমি নিজে একান্ত ভাবে দেখা করার জন্য অনুরোধ করে সবিনয় মর্জি কামনা করি।
যদি সম্ভব হয় স্যার আমার এই অনুরোধটুকু বিবেচনার দৃষ্টিতে দেখবেন । আপনার প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা, সালাম ও সম্মান জানিয়ে এখানে আমার বাস্তব জীবনের গল্প শেষ করলাম।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭০৮
Date:- ২৭/১২/২০২১ ইং
🌹বিদ্যুৎ মৈশান
🌹ব্যাচ নাম্বার ১৫
🌹রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ৬৯৫২৭
🌹নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া
🌹বর্তমান অবস্থানরত জেলা নারায়ণগঞ্জ ।