নান্দনিকতায় বাঙালি।
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম।
আসসালামু আলাইকুম,
আজকের ৭৯ তম হাট বারে সবার জন্য রইলো অনেক দোয়া ও শুভকামনা।
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের প্রিয় ভাই ও বোনেরা আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছে।আমিও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।
প্রথমে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমাদের সৃষ্টি কর্তা মহান রাব্বুল আলামীনের প্রতি। যার অশেষ রহমতে আমার ভালো আছি,সুস্থ আছি।
কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাদের সবার প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি।
যার অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা এতো সুন্দর একটা ভালোবাসার প্লাটফর্ম পেয়েছি।আরোও পেয়েছি আমরা আরেকটা বিশাল ভাই বোনের পরিবার, যে পরিবারে আমরা সবাই সবার সহযোগী।
যেখানে প্রতি নিয়ত হয় বিশ্বাসের বেচাঁ কেনা।
আজ এমনি এক গল্প বলবো প্রিয় পরিবারে সবার কাছে।
সময়টা ছিলো গেলো রোজার মাস।তখন আমি সবে মাত্র রেজিস্ট্রেশন করেছি ১৩ তম ব্যাচের।কিন্ত কোন পরিচিতি পোস্ট দেইনি।গ্রুপে একটু একটু সময় দেই।
আমার ছোট পরিসরে ব্যবসায়িক কাজ তখনো অফলাইনে করি।
অনলাইন তেমন একটা বুঝিনা।স্যারের সেশন দেখে দেখে শিখার চেষ্টা করছি মাত্র।
রোজার মাসের কিনতে চাই পোস্ট গোলো আমাকে দারুন ভাবে উৎসাহিত করে। আমি আমার পন্যের কিছু ছবি তুলি এবং কিনতে চাই পোস্টে কমেন্ট বক্সে দিয়ে দেই।
শুধু আমার পণ্য প্রচারের জন্য।কারন তখনো কেউ আমাকে চিনেনা।
হঠাৎ দেখি মেসেঞ্জারে কয়েকটা মেসেজ।
আমার দেওয়া ড্রেসের দাম জানতে চাইছে।সবার মেসেজের উত্তর দিলাম।মনের মধ্যে খুব ভালো লাগা কাজ করছিলো,আমার ড্রেস গুলো কেউ পছন্দ করেছে বলে।
তারপর দু তিনঘণ্টা কেটে গেলো আর কোনা সারা পাইনি।দিনচলে গেলো, ইফতার শেষ নামাজ পড়ে দোয়া দরুদ পড়ছি,তখনি মেসেজের শব্দ পেলাম,চেক করে দেখি এক ভাইয়ের মেসেজ,
মেসেজে লিখা ছিলো আপু, আমি ১৩ তম ব্যাচে আছি।
আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই।
যেহেতু নিজের বলার মত গ্রুপের, তাই দ্বিধা না করে বললাম ঠিক আছে ভাইয়া আপনি ফোন করতে পারেন।
তখনি ভাইয়া ফোন দিলেন এবং আমার পরিচয় জানতে চাইলেন।
আমিও বলে দিলাম ১৩ তম ব্যাচে রেজিস্ট্রেশন করেছি।আমি এখনো কোন পোস্ট করিনি।
ভাইয়া তখন বললো কোন ব্যাপার না, ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের শিক্ষায় সবাই খুব ভালো এবং বিশ্বাসী।
ভাইয়ের কথা শুনে মন ভরে গেলো।
তারপর ভাই বললেন আপু আমি সৌদিআরব থাকি,পরিবারের জন্য গ্রুপ থেকেই ঈদের সপিং করতে চাই।
আপনার দেওয়া ড্রেসের ছবি গুলো আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।আমি ৮/১০ টা ড্রেস নিবো, আপনার কাছে যদি কালেকশন থাকে তবে ছবি দিয়ে রাখেন,
ইফতার শেষে আমি জানিয়ে দিবো, দাম কোন ব্যপার না,কোয়ালিটি ভালো হলেই হবে।
ধন্যবাদ জানিয়ে ঠিক আছে বলে রেখে দিলাম।
এবং সাথে সাথে ভালো কিছু ড্রেসের ছবি ইনবক্সে দিয়ে
দিলাম।
সেই ভাই রাত ১০_৩০ টার দিকে মেসেজ করে জানতা চাইলো, অনেক রাত হয়ে গেছে এখন কি কথা বলা যাবে,আমি বললাম অবশ্যই,
ফোন দিয়ে, প্রথমে সরি চেয়ে নিয়ে বললো আসলে প্রবাসে থাকি, সব সময় লিখতে পারিনা কাজের জন্য।
তাই আপনাকে ফোন দিচ্ছি, প্লিজ রাগ করিয়েন না,
আপু আমার ৬ টা ড্রেস পছন্দ হয়েছে আমি টিক দিয়ে দিচ্ছি আপনি দাম লিখে দিয়েন।
আমি বললাম ঠিক আছে।
দাম দেখার পর বললো ঠিক আছে কোন অসুবিধা নেই, ড্রেসগুলো আমি নিবো,ভাইটা আরো বললেন কেন যেন আপনাকে বিশ্বাস করা যায়, তাই দামাদামি করলাম না,আপনি যা বলেছেন তাই মেনে নিলাম
আসলে আমিও অতিরিক্ত কোন দাম চাইনি, এটা ঐ ভাইয়া বুঝেছিলো।
এখন আসি মুল কথায়,
ভাইয়া টা পরের দিন দুপুরে ফোন দিয়ে বলছিলো, আপু ড্রেসের টাকা আমি ৩/৪ দিন পরে বিকাশ করে দিবো।
যদি আমার প্রতি আপনার বিশ্বাস থাকে।
তখন মনটা যেন কেমন করে উঠলো, তারপরেও বললাম ঠিক আছে।
ওপাশ থেকে ফোন রেখে দিলো।
কিন্তু হায় ৩ দিন চলে যায়, ৪ দিন চলে যায়, কোন মেসেজ নেই, এদিকে বাসায় কাস্টমার আসে ড্রেস গুলো নিতে চায় আমি দেইনা,বলি এগুলো বিক্রি হয়ে গেছে।
এতগুলো ড্রেস এভাবে রেখে দেওয়া ঠিক হচ্ছে কিনা বুঝতেও পারছিনা।তখন পুরোপুরি লকডাউন চলছে, তাই বাসায় ক্রেতারা বেশি আসছেন।
যাইহোক পঞ্চম দিনে আমি ভাইকে সালাম জানিয়ে মেসেজ দিলাম।
দুই ঘন্ট পর, রিপ্লাই দিয়ে দুঃখিত বললেন, এবং বললেন আপু মাসের শেষ, আমার কাছে যে টাকাট আছে একট গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য রেখে দিয়েছি।
তাই দেরি হচ্ছে।
আপু আমাকে আর ২/৩ টা দিন সময় দেন।
আমিও সরল মনে বিশ্বাস নিয়ে বলে দিলাম ওকে।
অনলাইনে অর্ডার করে কয়েকদিন পর অর্ডার বাতিল করে দেয়, শুনেছি।তাই কেমন যেন মনে হচ্ছিলো।
কিন্তু তত দিনে নিজের বলার মত গ্রুপের প্রতি আমার অনেক বিশ্বাস মনে চলে এসেছিলো, তাই সব ভাবনাকে উড়িয়ে দিলাম।
এখানে সবাই আমরা ভালো মানুষ হওয়ার চর্চা করি।
২ দিন পর ভাইয়াটা ফোন।বললো আপু আপনার বিকাশ নাম্বার টা দিন কত টাকা বিকাশ করতে হবে,
আমি বললাম আপাতত ডেলিভারি চার্জ বিকাশ করুন, পণ্য হাতে পাওয়ার পর, বাকি টাকা দিবেন।
ভাই আবার ও মোট টাকা জানতে চাইলেন,
আমি বললাম ৬২০০ টাকা।
ওকে বলে রেখে দিলেন।
একটু পরেই মোবাইলে মেসেজ, চেক করে দেখি
খরচ সহ ফুল টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন।
আমিতো পুরাই অবাক।
অনলাইনে প্রথম ড্রেস সেল, তাও আবার অগ্রীম।
মনে মনে স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলছিলাম
এটা শুধই সম্ভব হয়েছে নিজের বলার মত গল্প গ্রুপের জন্য,আমাকে কেউ চিনে না, শুধু এই গ্রুপের রেজিস্ট্রেশন করা মেম্বার বলে।
পর মুহুর্তেই দেরি না করে ভাইকে মেসেজ দিলাম টাকা পেয়েছি।
সাথে সাথে ভাইয়ের ফোন,কত টাকা পেয়েছেন,
আমি বললাম,এবং এও বললাম যে আমিতো শুধু ডেলিভারি চার্জের কথা বলেছি।
ভাই বললেন, আপনি আমাকে বিশ্বাস করেছেন, তাই আমিও আপনাকে বিশ্বাস করেছি,
যে ঠিকানায় ড্রেস গুলো পোঁছে দিবেন, সেই ঠিকানা দিয়ে দিলাম,সাথে ফোন নাম্বার,।
এখন বলেন কবে ড্রেস হাতে পাবে আমার বাড়ির মানুষ।
আমি বললাম লকডাউন চলছে, তাই একটু সমস্য,
তবে ভয় নেই ৩/৫ দিনের মধ্যে পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।
তখন ভাই বললেন আমিতো খরচ সহ টাকা দিয়েছি,আপনার কাছে থেকে কিছাড় পাচ্ছি।
আমিও সাথে সাথে বলে দিলাম
আপনার জন্য ডেলিভারি চার্জ ফ্রি।
একটা হাসি দিয়ে ফোন রেখে দিলেন।
পরদিন সকালেই আমি ড্রেসগুলো সুন্দর বন কুরিয়ার থেকে পাঠিয়ে দিলাম,এবং ভাইকে ছবি সহ মেসেজ করে দিলাম এবং বললাম হাতে পেয়েই যেন জানিয়ে দিতে।
দুদিন পরেই ভাই মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দিলেন, ড্রেস হাতে পেয়েছেন এবং বাড়ির সবার খুবই পছন্দ হয়েছে।
আমিও নিশ্চিন্ত হলাম।বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পেরেছি,আসলে যখন কেউ না চিনেই বিশ্বাস করে তখন দায়িত্ব বোধ বহুগুণে বেড়ে যায়।
এভাবেই আমার শুরু প্রিয় ভালোবাসা ও বিশ্বাসের গ্রুপ থেকে,
ওহ, বলে রাখি ঐ ভাইয়ের কিছু কেনার প্রয়োজন হলে আমাকে নক করেন।
ভাইয়ার মন মানুষিকতা অনেক ভালো।
ভাইয়ের বাড়ি চট্টগ্রাম।
ভাইয়ের নাম। Shahid khan Ctg
স্যার আমাদেরকে যে সততার শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন প্রতি দিন,আমরা সেই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে নিজেরা সফল হবো এবং অন্যকেই সাথে নিয়ে চলবো।
সবাই ভালো থাকবেন, এবং আমার জন্য দোয়া করবেন।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭০৯
Date:- ২৮/১২/২০২১ইং
Sabrina Khanom
ব্যাচ -১৩
রেজিস্ট্রেশন - ৫৭৯৩৬
জেলা - মানিকগঞ্জ
ব্লাড গ্রুপ - O+
বর্তমান অবস্থান - মোহাম্মদপুর
কাজ করছি মেয়েদের ড্রেস, হাতে বানানো গয়না,আচার,মধু নিয়ে।
স্বত্বাধিকারী - Nandonikotai Bangali - নান্দনিকতায় বাঙালি।