পুজোর সময় খরচ করার জন্য টাকা বাচিয়ে রেখে বাটিকের রং এবং কাপড় কিনলাম
সবাইকে নমস্কার ও আদাব।
আশা করি সকল ভাই ও বোনেরা ভালো আছেন।
প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের যিনি সৃষ্টি করেছেন সেই সৃষ্টিকর্তার প্রতি কোটি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আমার মমতাময়ী মা ও শ্রদ্ধেয় বাবাকে।যারা আমাকে জন্ম দিয়েছেন এবং পৃথিবীতে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি আমাদের সকলের প্রানপ্রিয় শিক্ষক, মেন্টর,ভালো মানুষ গড়ার কারিগর ও নিজে বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশনের জনক জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি।
যার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা এতো সুন্দর একটা ভালো মানুষের প্লার্টফর্ম পেয়েছি।
সেই স্যার ও স্যারের পরিবার যেন সবসময়ই সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকেন এই কামনা করি সৃষ্টিকর্তার কাছে।
আমার পরিচয়
আমার জন্ম বাংলাদেশের সর্বউত্তরের জেলা হিমালয় কণ্যা পঞ্চগড়।
আমার বাবা- মা এর আমি বড় কন্যা সন্তান,এবং আমার বাবা-মা এর দ্বিতীয় সন্তান ও কন্যা সন্তান।
দুই কন্যা সন্তান হওয়াতে আমার বাবা-মা এবং আমাদের কে অনেক কথা শুনতে হয়। কিন্তু আমার বাবা আমাদের কে সবসময়ই পুত্র সন্তান মনে করতো।আমাকে আজ পর্যন্ত কখনো "বাবা গো" ছারা নাম ধরে ডাকেনি।
আমি ছোট বেলা থেকেই পারবো না এই শব্দটা ছিলো না।
আমার বাবার সাথে প্রতিটা কৃষি কাজে যুক্ত ছিলাম। আমার বাবা বেসরকারি চাকরি করতো পাশাপাশি কৃষি কাজ করতো।আমার মা ও সংসারের তাগিদে করেছিলো এনজিও চাকরি।
আমার শিক্ষা জীবন
পড়াশোনায় বরাবরই ভালো ছিলাম।আমার বিদ্যালয় বাড়ি প্রায় ৩ কি.মি. দুরে ছিলো।প্রতিদিন হেটে যাতায়াত করতাম। আমরা একসাথে ৪ জন স্কুলে যেতাম কিন্তু পড়াশোনায় ভালো ছিলাম দেখে তারা সবসময়ই আমার সাথে হিংসা করতো।
আমি ব্র্যাক স্কুলে পড়তাম,তখন পঞ্চম শ্রেনীর সমাপনী পরীক্ষা আলাদা হতো এবং বৃত্তি পরীক্ষা আলাদা হতো।
আমার যখন বৃত্তি পরীক্ষা হয় প্রায় ১৫কি.মি. দুরে একটা স্কুলে আমার বাবা সাইকেল চালিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতো আবার নিয়ে আসতো।
কিন্তু ব্র্যাক স্কুল থেকে বৃত্তি পরীক্ষা সেজন্য প্রাইমারি শিক্ষকদের আলাদা একটা তার্গেট ছিলো।
আমার বাবার কষ্টের মূল্য আমি দিতে পারিনি সেজন্য অনেক কেঁদেছি
এস.এস.সি এবং এইস.এস.সি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাশ করলাম।
শুরু হলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির যুদ্ধ, কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার পরেও কোথায় চান্স পেলাম না। শুরু হলো আবারও হতাশা কিন্তু আমার মা সবসময়ই আমার সাথে অনুপ্রেরণা হয়ে ছিলো। মা বললো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হও।পরের বার আবার চেষ্টা করো। অবশেষে গনিত নিয়ে পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হই।
আমার সংসার জীবন
বিয়ে হয় ২০১৭ সালে মার্চ মাসে।অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি হওয়ার কয়েকমাস পরেই আমার একজন সরকারি চাকরিজীবি ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে যায়। আমি যেহেতু গনিত নিয়ে পড়ি, তাই অনেক বিষয়ে প্রাইভেট পড়তে হতো। কিন্তু শশুড় বাড়ি থেকে শুরু হলো বাধা। প্রতিদিন কলেজ আর প্রাইভেট যাওয়া যাবে না, কলেজের হোস্টেল বা ম্যাচ এ থাকা যাবে না।
অবশেষে আমার হাসবেন্ড বললো পরের বছর সাবজেক্ট চেন্স করে ভর্তি হওয়ার জন্য।
মাঝখানে কয়েক মাসে বিরতিতে যেন হাপিয়ে উঠলাম। পরেরবার আবারও ভর্তির চেষ্টা করলাম কিন্তু আবারও সাবজেক্ট আসলো পদার্থ বিজ্ঞান
নতুন করে ভর্তি না হয়ে গনিত নিয়েই শুরু করলাম পড়ার।শশুড় বাড়ি থেকে নিষেধ করলে বাবা বাড়ি থেকে না বলে কলেজ আর প্রাইভেট যেতাম।
কিন্তু তাও আর বেশিদিন চাপা থাকলো না,একদিন কলেজ যাওয়ার সময় বাস গাড়িতে অনেক বড় একটা এক্সিডেন করি
অবশেষে আমার হাসবেন্ড তার বাবা-মা কে রাজি করায় পড়াশোনার জন্য
এভাবে চলতে চলতে আমি কনসেভ করি কিন্তু সামনে পরীক্ষা। কনসেভ করার প্রায় ৯ মাস এই অবস্থায় আমি পরীক্ষা দেই।কিন্তু সব পরীক্ষা দিতে পারলেও রসায়ন পরীক্ষার প্যাকটিকাল পরীক্ষা হয় ডেলিভারি তারিখের ৫ দিন আগে। আমি যেতে চাইলে শশুর বাড়ির লোক কোনভাবে যেতে দেয়নি।স্যারের সাথে সব বিষয় বলার পরও স্যার কোন হ্যাল্প করেনি
সব বিষয় ফার্স্ট ক্লাস আসলেও রসায়ন প্যাকটিক্যাল পরীক্ষা না দেওয়াতে প্রমোটেট হলাম না
৯ জানুয়ারি ২০১৯ সালে আমি প্রথম মা হই এবং কন্যা সন্তানের সি সেকশন জন্ম দেই।
সি সেকশন একজন মায়ের জন্য কতটা কষ্টকর যারা সি সেকশনে মা হয়েছে তারাই শুধু বুঝতে পারবেন।
মেয়ে বড় হতে থাকে কিন্তু আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। আবারও আমার মা অনুপ্রেরণা হয়ে আমাকে ডিগ্রিতে ভর্তি করায়। এখনও পড়াশোনা চলছে।
আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরু
পড়াশোনা করে চাকরি করবো সবাই যেমন চায় আমিও চেয়েছি চাকরি করবো। ২০২০ সাল আমার জীবনটা যেন নিজের কাছেই বিরক্তি পরিনত হলো। আমার দ্বারা কিছুই হবে না এটাই যেন নিত্য সঙ্গী হয়ে গেলো।
ফেসবুকে হঠাৎ একদিন দেখলাম বাটিকের প্রশিক্ষন করায় একজন আপা। আমি কোর্সটা করার জন্য রেডি হয়ে গেলাম। ফি ১২০০ টাকা কোথায় পাবো। আমাকে হাত খরচের জন্য ১৫০০ টাকা দিয়েছিলো আমার হাসবেন্ড সেই টাকা দিয়েই কোর্সটা শিখি।
কিন্তু কোর্স অনলাইনে শেখা প্যাকটিস করার জন্য কাপড় রং,আরো অনেক ম্যাটারিয়াল এর প্রয়োজন।
পুজোর সময় একটা মোটা অংকের টাকা দিতো খরচ করার জন্য সেই টাকা বাচিয়ে রেখে বাটিকের রং এবং কাপড় কিনলাম। শুরু হলো নতুন কাজ। কিন্তু সেগুলো কোথায়,কিভাবে প্রেজেন্টেশন করবো।সঠিক প্রেজেন্টেশনের অভাবে বাদ দিয়ে দিলাম।
এবার ৪০০০ হাজার টাকা জমিয়ে কিছু শাল চাদর নিয়ে এলাম কিন্তু অনলাইনে সেল করতে পারলাম না। সেল করলাম অফলাইনে কম দাম দিয়ে।
আবারও হতাশ হয়ে গেলাম।
ততদিনে আমি " নিজে বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন "এ যুক্ত হয়ে গেলাম।
অনেকের পোস্ট দেখলাম লাইক দিলেও কখনো কমেন্ট করিনি। কি লিখতে গিয়ে কি লিখবো।তবে অনলাইনে ধারনা মোটামোটি চলে আসে টুকটাক করে সেল হওয়া শুরু হয়।
অবশেষে স্যারের ১৫ তম ব্যাচ এ রেজিষ্ট্রেশন করি।
এবং রেজিষ্ট্রেশন করার পরে অনেক সহযোগী ভাই ও বোন পেয়েছি।যাদের সাথে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও একটা আত্মার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
অনুপ্রেরনা
স্যারের স্লোগান - স্বপ্ন দেখুন,সাহস করুন, শুরু করুন এবং লেগে থাকুন সফলতা আসবেই।
স্যার এই বানিতেই আমি সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরনা পাই। আমি স্বপ্ন দেখেছি, সাহস করেছি সেজন্য এখন চার নারী কাজ করে আমার সাথে।
লেগে আছি আশা করি একদিন একজন সফল উদ্যোক্তা হবো।
আমার পোস্টটি পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। এই প্রথম এতো কিছু লিখেছি লেখায় ভুল থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭১১
Date:- ৩০-৩১/১২/২০২১ইং
তনুশ্রী রায়
ব্যাচঃ১৫
রেজিষ্ট্রেশনঃ৬৮৫৪৫
কাজ করছি
দেশীয় শাড়ি,
থ্রীপিছ,
কাস্টমাইজ করা টাই-ডাই বাটিক শাড়ি, থ্রীপিছ,
ও শাল চাদর নিয়ে
আমার পেজঃআস্থা- Astha