সফরে থাকা অবস্থায় আমাকে আমার এক পরিচিত ভাই মোবাইল করলেন
(বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম)
(জীবন গল্প)
আসসালামু আলাইকুম
মহান করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করলাম।
লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করি মহান মালিক আল্লাহর দরবারে,
যে মালিক আপনাকে আমাকে সুন্দর করে মানুষরূপী সৃষ্টি করেছেন,
আল্লাহ চাইলে আমাকে আপনাকে পশুপাখি করে সৃষ্টি করতে পারতেন।
তাইতো সর্বদায় আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি আলহামদুলিল্লাহ।
লাখো কোটি দরূদ ও সালাম মানবতার মুক্তিরদূত প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি।
কৃতজ্ঞতা জানাই লাখো যুবকের হৃদয়ের স্পন্দন প্রাণ প্রিয় শিক্ষক ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার প্রতি।
যিনি আমাদেরকে এরকম একটা প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছেন নিজেদের জীবনের গল্প তুলে ধরার জন্য।
ধন্যবাদ জানাই প্রিয় প্ল্যাটফর্মের প্রিয় ভাইয়া আপুদের কে। যে ভাইয়া-আপুরা সব সময় পাশে থেকে আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন।
ছোট এই জীবনের কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে লিখতে শুরু করলাম।
লেখার ভুল ত্রুটি ক্ষমার সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
(মা-বাবার চার সন্তান)
এর মাজে আমি তৃতীয় সন্তান খুব ছোট অবস্থায় আমার মা জননী আমাদেরকে ছেড়ে চলে যান। তখন আমার তেমন বুজ জ্ঞান হয়নি, যখন শুনি মা মারা গেছে তখন খুব কান্না করলাম। মা যেদিন মারা গেলেন সেই দিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো, সেই দিনের মত বৃষ্টি আমি আর কখনো দেখিনি।
আমাদের ফ্যামিলি মধ্যবিত্ত ছিলো।
যখন আমার বুজ জ্ঞান হল তখনই আমাকে আমাদের এলাকায় একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিন।
বাবা একটু রাগী মানুষ।
আমাদের কৃষি জমি থাকায় মাদ্রাসায় ক্লাস শেষ করি বাড়িতে আসি খাওয়া-দাওয়ার পর কৃষি কাজ করতে হয়।
এভাবে প্রতিদিন ফজর নামাজ পড়ে কৃষি কাজ করার পর গোসল-খাওয়া-দাওয়া করে মাদ্রাসায় যেতে দেরি হয়ে যেত অনেক সময় ক্লাস পেতে ও কষ্ট হইত ।
তখন মাদ্রাসার ক্লাসের সময় ছিলো 8:30
যতক্ষণ মাদ্রাসায় থাকতাম ততক্ষণ পড়ালেখা হইত এর পর পড়ার সুযোগ হইতো না।
আমাদের গ্রামের বাড়িতে তখন কারেন্ট না থাকায় রাত্রে পড়ালেখা করতে কষ্ট হতো।
এভাবে প্রতিদিন খুব কষ্টের মধ্যে যেত,
কাজ না করলে বাবা খুব রাগারাগি দিতেন।
অনেক সময় বাবা মাদ্রাসায় যেতে ও দিতেন না।
এভাবে একসময় পড়ালেখার প্রতি অমনোযোগী হইয়ে যায়।
এমন এক সময় আসলো পড়ালেখা পুরাই ছেড়ে দেয়।
(তখন ২০০০সাল)
পড়ালেখা ছাড়ার এক বছর পরে বড় ভাইয়া আমাকে একটি আবাসিক মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেয়।
তখন আমার পড়ালেখা খুব ভালোভাবে চলছে, ছয় মাস পর ভাইয়া আমাকে দেখতে আসেন, ভাইয়াকে বললাম আমার খাতা নেওয়ার জন্য টাকা লাগবে তখন ভাইয়া আমাকে ৫০ টাকা দিলেন।
(এর পরের বছর) নতুন ক্লাস নতুন বই নতুন খাতা
ভাইয়ার কাছে খবর দিলাম আমার বই খাতা লাগবে, তখন ভাইয়া বললেন বড় হুজুরকে বলার জন্য,
বড় হুজুরকে বলার পর হুজুর বললেন তোমার ভাইয়া টাকা পাঠাই নেই।
তখন আমি শুধু খাতার ব্যবস্থা করি,
কিন্তু বইয়ের ব্যবস্থা করতে পারিনি, আমার সাথী যারা ছিল তাদের বই নিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি, এরমধ্যে পরীক্ষা চলে আসলো, পরীক্ষার জন্য কাগজ কিনব সেই টাকা ও আমার কাছে ছিল না।
একদিন আমাদের একটা বিষয় পরীক্ষা মসজিদে হয়,
সম্ভবত সেদিন বাংলায় লিখিত পরীক্ষা ছিল, পরীক্ষা শেষ খুব বৃষ্টি শুরু হলো, মসজিদ থেকে বের হতে পারেনি।
এরপর মসজিদে একাকীত্ব বসে আল্লাহর দরবারে দুই হাত তুলে অনেক কান্নাকাটি করলাম।
এরপর আগের মতো আস্তে আস্তে পড়ালেখা নষ্ট হতে শুরু করল।
পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়ার পরে দুই বছর বাড়িতে আগের মত কৃষি কাজ শুরু করলাম।
তখন আমি কিভাবে কি করব কোন কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা।
এরমধ্যে ভাইয়া খবর দিলেন আমাকে ভাইয়ের কাছে চলে যাওয়ার জন্য,।
বলছেন পড়ালেখা করাবে পাশাপাশি অনার ব্যবসা দেখাশোনা করতে ,
কিছু না ভেবে আমি ভাইয়ার কাছে চলে যায়।
আমিও ভাইয়ার কাছে যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল, আবার পড়ালেখা শুরু করব, পাশাপাশি ভাইয়ার ব্যবসা দেখাশোনা করব,
কিন্তু সেই আশা আমার পূরণ হলো না,
শুধু ভাইয়ার ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
তখন আমার কোন সেলারি ছিল না,শুধু টুকটাক খরচ দিতেন, ভাইয়া বলতেন এই ব্যবসা আমাদের দুইজনের।
এমন ব্যাস্ত ছিলাম কখনো কোথাও যেতে চাইলেও যেতে পারতাম না।
একবার বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়ার কারণে ভাইয়া রাগারাগি করলেন এবং কি আমাকে বললেন দোকান থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য, আমিও রাগ করে চলে আসার জন্য প্রস্তুত হয়।
পরে ভাইয়া কি বুঝি আমাকে আবার থাকার জন্য অনুরোধ করলেন।
একটানা ১৩ বছর ভাইয়ার ব্যবসা দেখাশোনা করি।
এর মধ্যে আমার আলাদা কোনো ফান্ড ছিলোনা,
2015 সালে আমি বিয়ে করি, বিয়ের পর পরে আমি সবার কাছে খারাপ হয়ে যায়।
বিভিন্ন রকম অপবাদের পর আমি ভাইয়ের দোকান থেকে রাগ করে চলে আসি।
আসার পর আমি কিভাবে জিরু থেকে শুরু করব তা ভেবে পাচ্ছিনা।
আমার কাছে কোন রকম মূলধন ছিল না,
কিছুদিন পর ঢাকা চলে যায় চাকরি করার উদ্দেশ্যে,
পরিচিত যতজনের কাছেই গেলাম সবাই বলল তুমি চাকরী করতে পারবেনা ।
আমি জানতে চাইলাম আমি কেন পারবোনা, বললেন চাকরি খুব কষ্টের তাই তুমি করতে পারবে না ।
তখন আমি ভাবলাম নিজের ব্যবসা নিজের মতো করে চললাম, চাকরি করলে পরের অধীনে চলে যাব চলতে কষ্ট হবে।
ঢাকায় দশ দিন থাকার পরে আমি বাড়িতে চলে আসি।
এর কিছুদিন পর আবারো ঢাকা যাই , যাওয়ার পর মার্কেটগুলোতে ঘুরতেছি আর ভাবতেছি কি নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারি, কিন্তু কোন আইডিয়া আসলো না।
দ্বিতীয়বার ঢাকা থেকে আসার পর আমি একটি ফেসবুক পেইজ বিক্রয় ডট কম, নামে খুলি।
এর কিছুদিন পর আমি তাবলীগ জামাতের ৪০ দিনের সফরের যায়, আমার সাথী যারা ছিলেন সবাইকে বললাম আমার জন্য দোয়া করার জন্য আমার জেনো ভাল একটা চাকরি হয়।
৪০দিন শেষ করার পর আরও ৬০দিনের জন্য সফরে বের হয়ে যায়,প্রতিদিন আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ আমাকে একটি ভালো চাকরির ব্যবস্থা করে দিন।
সফরে থাকা অবস্থায় আমাকে আমার এক পরিচিত ভাই মোবাইল করলেন তুমি কোথায় আছো, আমি বললাম আমি সফরে আছি, তখন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি কখন আসবে, আমি আসার তারিখ বললাম, বলার পর উনি বললেন তুমি আসলে আমার সাথে দেখা করবে।
আসার পর উনার সাথে দেখা করলাম,
দেখা করার পর উনি বললেন আমাদের দোকান দেখাশোনার দায়িত্ব তুমি নিতে পারবে, আমি বললাম ইনশাআল্লাহ আমি পারবো।
তখন উনি আমাকে বললেন তোমার স্যালারি কত হলে তোমার পোষাবে, দাবি ছিল 15 হাজার,পরে 10 হাজারের উপরে আমি ওনাদের দোকানে থাকি।
দীর্ঘ এক বছর আমি ওনাদের দোকানে চাকরি করি।
কিছু মূলধনের ব্যবস্থা করি।
পরবর্তীতে আমি নিজেই ব্যবসা করব এরকম একটা চিন্তা-ভাবনা আমার চলে আসে।
পরে আমি ওনাদেরকে জানালাম যে আমি চাকরি আর করব না, আমি নিজেই ব্যবসা করব, তখন ওনারা বললেন আপনি নিজে ব্যবসা করলে যেতে পারেন সমস্যা নেই।
আমি চাকরীতে থাকা অবস্থায় আমি আমার দোকানের ডেকোরেশন ব্যবস্থা করি।
আমাদের গ্রামের বাজারে আমাদের নিজস্ব ঘরে দোকান দেয়।
এরপর বাবাকে নিয়ে বড় ভাইয়ের কাছে যাই, আমাকে কিছু টাকা দিয়ে হেল্প করার জন্য, আব্বু ভাইয়াকে বলার পর আমাকে ৯৮ হাজার ৫৬০ টাকা দেয়।
তখন আমি ভাইয়াকে আরো কিছু টাকা দেওয়ার জন্য বলছি, উনি আর এক টাকাও দেয়নি।
তখন মেজো ভাইয়া সাথে ছিল, মেজো ভাইয়াকে বললাম এই টাকা দিয়ে আমার কি হবে, ভাইয়া বলল নে এখন কি করবি আর ব্যবসা শুরু কর আল্লাহ ব্যবস্থা করে দিবে।
এই টাকা দিয়ে আমি ব্যবসা শুরু করি,আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ার বরকতে এখন ভালো অবস্থানে আছি।
নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশনে কিভাবে আসলাম।
আমার এলাকার সম্পর্কে মামা হয়
উনার ফেসবুকের পোস্ট দেখে আমি নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশন এর ব্যাপারে জানতে চাই, উনি বললেন আগে আপনি রেজিস্ট্রেশন করেন তারপর সব আপনি জানবেন।
তারপর আমি ওনাকে বললাম আমাকে রেজিস্ট্রেশন করার ব্যবস্থা করে দিন, তখন উনি আমাকে গ্রুপে রেজিস্ট্রেশন করে দেয়।
আলহামদুলিল্লাহ নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনে রেজিস্ট্রেশন করতে পারি আমি খুবই আনন্দিত।
এ ফাউন্ডেশন আসার পর, আমার বিক্রয় ডট কম, নামের পেইজের পরিবর্তন করি।
এখন আমার পেইজের নাম অনলাইন সেলাই মেশিন
আলহামদুলিল্লাহ, নাম পরিবর্তনের পরে অনেকগুলো সেলাই মেশিন সেল হয় আমার।
এ ফাউন্ডেশনে না, আসলে আমি অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে এত বেশি ধারণা নিতে পারতাম না।
সবাইকে ধন্যবাদ
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭১১
Date:- ৩০-৩১/১২/২০২১ইং
> মোঃ মোছলেহ উদ্দিন
>জেলা লক্ষ্মীপুর
>উপজেলা কমলনগর
>ব্লাড গ্রুপ AB+
>পেশায় ব্যবসা
>রেজিস্ট্রেশন ৩০২৯২
>ব্যাচ ১১
>মোবাইল 01745015646
>বর্তমান নিজ এলাকায়
https://www.facebook.com/273835656147347/posts/1952864794911083/