যে না পাওয়াটার জন্য এত কষ্ট করলাম আজ তা পেয়ে হারালাম!!!
আমার জীবনের গল্প:
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি বারকাতুহু।
আশা করি আল্লাহর মেহেরবানীতে সবাই ভাল আছেন এবং সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি।
প্রথমেই আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের প্রিয় মেন্টর শিক্ষক জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি,
যার জন্য স্বপ্ন দেখতে সাহস পাচ্ছি, প্রিয় স্যারের জন্য অনেক অনেক দোয়া ও ভালোবাসা রইলো।
🌹🌹সংক্ষিপ্ত ভাবে একজন কে বলা আমার জীবনের গল্প,
তখন রাত সাড়ে ১১ টা বাজে সৌদিআরব, আমি অনেক ক্ষন ধরে আকাশে তাকিয়ে মনে মনে কিছু একটা ভাবছিলাম এমন সময় দেখলাম একটা লোক বলতেছে কি হয়েছে ভাই, যে এভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন? আমি কোনো কিছু উত্তর না দিয়ে কিছুক্ষন পর আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম, লোকটা আগের মতই আবার জিজ্ঞাসা করলেন
লোকটা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন দেশী ভাই নাকি?
আমি: হ্যা ভাই,
লোকটা: ভাই অনেক ক্ষন ধরে দেখলাম আপনি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন যে?
আমি: এইতো ভাই হিসাব করতেছিলাম এই প্রবাস জীবনে কি পেলাম আর কি হারালাম আর ২১ বছরের প্রবাস জীবনের দুঃখ সুখ গুলো ভাবতে ছিলাম!
২১ বছরের কথা শুনে লোকটি অভাগ
লোকটি কৌতুহলী হয়ে বললেন ভাই আমাকে বলবেন আপনার দুঃখ এবং সুখ গুলো? আমার খুব শুনতে ইচ্ছে করছে।
আমি: ভাই ২১ বছরের দুঃখ এবং সুখ গুলো মাত্র কয়েক মিনিটে শুনে কি করবেন?
লোকটি: ভাই আমি হয়তো পারবোনা আপনার দুঃখগুলো তাড়িয়ে দিতে ,কিন্ত এমনতো হতে পারে যে, আপনার দুঃখগুলো শুনে আমি কিছু শিক্ষা নিতে পারবো, কারণ আমি ও তো একজন প্রবাসী।
আমি: তাহলে শুনেন, আমরা ছিলাম ৫ ভাইবোন আমি ছিলাম সবার বড় তখন ক্লাস নাইনে পড়ি. বাবা ছিলেন কৃষক নিজেদের জমি চাষ করতো, পাশাপাশি বাবার সাথে আমিও কাজ করতাম. বাপ বেটা মিলে সংসারে অভাব দূর করতে পারতাম না ..ছোট ভাইবোন‘রা পড়ালেখা করতো, ওদের কাউকে ক্ষেতে–খামারে নিতামনা, যদি পড়ালেখার ক্ষতি হয় এই ভেবে।
এভাবে দিনের পর দিন কষ্ট করতে লাগলাম, কিন্তূ কষ্টের দিন শেষ হয় না, একদিন কিছু জায়গা বিক্রি করে পাড়ি দিলাম ইরাক, সেখানে চার বছর ছিলাম, তারপর বাড়িতে আসলাম, এর মাঝে সংসারে অভাব কিছুটা দূর হলো, ভাইবোনদের পড়ালেখা ভালো চলছিল. কিছুদিন যাবার পর দেখালাম আবার ও পুরানো দুঃখগুলো বাড়ির চারপাশে ঘুরতেছে, আবার পারি দিলাম দুবাই,
দুবাই এসে মাত্র কয়েক মাস থাকার পর পারমিট বাতিল করে দিল, দেশে গিয়ে পরলাম মহাবিপদে যা টাকা ছিল সব শেষ! মা বাবা বললেন বিয়ে করতে ,আমি বিয়ে করিনি,
কারণ ভাইবোন গুলো পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পাক আবার বোনদের বিয়ে দেওয়া হয় নাই! কয়েক বছর পর আবার আসলাম সৌদিআরব…এর মাঝে কেটে গেল অনেক বছর, ছুটিতে বাড়ি গেলাম বিয়ে করব বলে কিন্ত বিয়ে করতে গিয়ে পড়লাম অনেক জামেলায়, অশিক্ষিত বলে ভাল বাড়িতে বিয়ে করতে পারলাম না. শেষে কোনো উপায় না পেয়ে গরিবের এক মেয়েকে বিয়ে করলাম, জীবনে খুঁজে পেলাম সুখের ঠিকানা, ভালোই কাটছিলো ছুটির দিনগুলো মনে হইছিল পৃথিবীতে আমি একজন সুখী মানুষ।
ছুটি শেষ করে আবার চলে আসলাম সৌদিআরব,
এসে কোনো কিছু ভালো লাগতো না! রাতে ঘুম আসেনা! কাজে মন বসে না! বাড়ি যাওয়ার জন্য মনটা ছটফট করতো! মনে মনে ভাবলাম ভাইবোনদের বিয়ে হয়েছে, ভালো চাকরি হয়েছে ভাইদের, এখন আমার দায়িত্ব শেষ এইভেবে একেবারে বাড়ি চলে গেলাম।
আর এটাই ছিল আমার জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল! এখন সেই ভুলের মাসুল দিতেছি. কিছুদিন যাওয়ার পর দেখলাম চেনা মানুষ গুলো অচেনা হয়ে গেলো! যে ভাই বোনদের জন্য এতকষ্ট করলাম! তারা যেন আমাকে চিনে না! কারণ আমি কেন একেবারে চলে এলাম দেশে. আর বুঝতে পারলাম এতদিন ওরা আমাকে ভালোবাসেনি, ভালবাসতো আমার টাকাকে!
মাঝেমাঝে এত কষ্ট লাগে যাদের জন্য এত কষ্ট করলাম আজ তারা কত সুখে, আর আমি একাই কতকষ্টে আছি!
আজ ভ্যাগের কঠিন আঘাতে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে আমার দেহ মন! ভ্যাগের কঠিন নিয়মে পরাজিত হয়ে দিক–বিদিক হারিয়ে ফেলেছি! যে না পাওয়াটার জন্য এত কষ্ট করলাম আজ তা পেয়ে হারালাম!!! কিছু নিজের স্বার্থপর আপনজনের কারণে! “অভাবের দিন যে কত বড় তা শুধু অভাবে যারা থাকে তারা বুঝে“
আবারো টাকা ঋণ করে সৌদিআরবে আসলাম, ঋণের তাড়নায় কোনো কিছু ভালো লাগেনা একদিন ভাইকে ফোন দিয়েছিলাম বললাম আমাকে এক লক্ষ টাকা ধার দে,
সে যে কথা বলছে আমি কোনো দিন ভুলতে পারবোনা না। আমাকে বললো...এক বেলা না খেয়ে থাকলে এক বেলা খাওয়ানো যায়,বা ১শ টাকা ১হাজার টাকা ধার দেওয়া যায় কিন্তু কারো ঋণ শোধ করা যায়না!!!
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করতো মরে যাই! কিন্ত আমার একটি ছেলে আছে তার কি হবে? মা বাবা ভাইবোন সবাই সুখে আছে হয়তো বউও চলে যাবে! কিন্ত আমার ছেলের কি হবে? ভাইদের অনাদর অবহেলায় বড় হবে, তাই আবার নতুন করে যুদ্ধ শুরু করলাম অর্ধেক বয়সে………!!!
কথাগুলো বলতে বলতে আমি কাঁদছিলাম,
লোকটিও আমার কথা শুনতে শুনতে কখন যে কেঁদে দিয়েছে আমি নিজেও বুঝতে পারিনি!
লোকটি: দেশী ভাই আপনাকে কি বলে শান্তনা দিবো আমার সব ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
আমরা প্রবাসীরা হলাম এমন এক যুদ্ধের সৈনিক. যে যুদ্ধের জয়ের উল্লাস আমরা করতে পারি না! দিয়ে দিতে হয় অন্যদের …হয়তো অন্যদের মাঝ থেকে জয়ের উল্লাস কেউ পায় আবার কেউ পায় না! অথচ, এই যুদ্ধে আমাদের দিতে হয় পরিশ্রম নামে জীবনের স্বাদ ইচ্ছা ভালো লাগার মুহূর্তগুলোকে বিসর্জন।।।
সব জায়গায় প্রবাসীরা অবহেলিত, কিন্তু একটা জায়গা পেলাম যেখানে প্রবাসীদের সম্মান করতে দেখলাম,
আর সেই জায়গাটি হল নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন, ভেংগে পড়েছিলাম দুম্বরে মুরচে একাকার হয়ে গিয়েছিলাম, স্বপ্ন দেখতে সাহস হত না, কিন্তু এই নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের সেশন পড়ে এখন কেন জানি মনে হয় আমাকে দিয়ে হবে, আমি পারব, স্যারের সেশনে কেমন যেন একটা যাদু আছে যে যাদু ভয় দূর করে দেয়,
১৬তম ব্যাচে যুক্ত হয়েছি এই কয়দিন সেশন পড়ে ভয় দুর হয়ে গেছে, আমি আরো অনেক শিখতে চাই, একটু সময় নিব শিক্ষাটা নিয়ে শুরু করব ইনশাআল্লাহ,
প্রিয় স্যারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের "আলোর পথ" দেখানোর জন্য,
আরো ধন্যবাদ জানাই দায়িত্বশীল ভাই বোনদের প্রতি,
আরো ধন্যবাদ জানাই যারা এই বেষ্ট লিখার সিস্টেম চালু করেছে তাদের অনুপ্রেরণায় আমার জীবনের এই গল্প লিখা,
সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, সবার দোয়া প্রত্যাশী,
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭১১
Date:- ৩০-৩১/১২/২০২১ইং
মুহাম্মাদ আনোয়ার
ব্যাচ নাম্বার: ১৬
রেজিষ্টেশন নাম্বার:৭৭৭৬২
বর্তমান অবস্থান: সৌদিআরব, রিয়াদ, নিউ সানাইয়া।
দেশের বাড়ী, বাসাইল, টাংগাইল।