ধার দেনা করে পারি দিলাম দুবাই
আসসালামু আলাইকুম।
নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনের ভাই ও বোনেরা সবাই কেমন আছেন।
আমি আজ আমার নিজের জীবনের কিছু স্মৃতি আপনাদের নিকট তুলে ধরলাম।
আমি যখন ছোট তখন আমি জানাতাম না যে আমার বাবা ২টি বিয়ে করেছেন। আমার বয়স যখন 6--7 আমার মা বাবার সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়ে যায়। আমি ছোট থেকেই দেখছি আমার মা মানুষের বাড়ি কাজ করে আমাদের ভরনপোষণ করে যাচ্ছে।তখন আমি আর আমার ছোট ভাই এক সাথে থাকতাম কিছুদিন যাওয়ার পর আমার বাবার বাড়ি থেকে খবর আসে আমার বাবা খুব অসুস্থ তিনি আর মনে হয় বাঁঁচবেনা আমাদের দু ভাইকে দেখতে ইচ্ছে আমার বাবার। আমরা তখন আমার নানার বাড়ি। তখন আমার মামারা সবাই মিলে বলল ঠিক আছে তাদেরকে নিয়ে যাক আমরা আবার পরে গিয়ে নিয়ে আসবো।মানুষের মনের খবর একমাত্র আল্লাহ পাক ভালো জানেন। আমাদের দু ভাইকে বাবার বাড়ি নিয়ে গেল।আমাদের আর আমার মায়ের কাছে দিবেনা আমার সৎ মা।তিনি আমাদের দিয়ে বিভিন্ন কাজ করান।আমার সৎ মা তার সন্তানদের তিনি সকাল বেলা ঘুম উঠে সুন্দর করে পরিপাঠি করে মক্তবের জন্য বের করে দিত আমেদের দু ভাইকে নানান কাজে পাঠিয়ে দিত।কিছুদিন যাওয়ার পর আমার বড় মামা আসে আমাদের নেওয়ার জন্য এসে দেখে আমরা দু ভাই 5 দিনের বাসি বাতের মাড় আর মুড়ি খাচ্ছি মামা এগুলো দেখে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে যায়।এসে আমার ছোট মামাকে সব খুলে বলে। তার কিছুদিন পর আমার ছোট মামা আর এক বন্ধু মিলে আমাদের দেখতে যায় গিয়ে দেখে আমরা দু ভাই মাঠে আলু কুড়াই তখন আলুর সিজন চিল।তখন ঐ গ্রামের সকল মহিলা মিলে আমাদের দু ভাইকে ছোট মামার সাথে চলে আসতে সাহায্য করে।আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তায়ালার রহমতে বাড়ি ছলে আসি।আসার পর এখন আমার মা আমাদের নিয়ে কি করবে তিনি খুব পেরেশান এমতাবস্থায় আমাকে আমার মা পড়শোনা করানোর জন্য এক বৃদ্বা মহিলার নিকট দিয়ে দেয়। কিন্ত ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস লেখা পড়া থাক দূরের কথা কাজ করেই সময় পার করা যায়না তো আবার লেখা পড়া।এভাবে কিছুদিন গেল তারপর একদিন দেখলাম।আমি যে ঘরে কাজ করি সেই মহিলা একজন কারি সাহেব কে নিয়ে আসলেন আমাকে পড়ানোর জন্য।আলহামদুলিল্লাহ আমি মহা খুশি আমি পড়বো।তারপর থেকে শুরু আমার আরবি ও বাংলা শিক্ষা স্কুলে ও মাদ্রাসায় না বাড়িতে বসেই।এভাবে চলতে লাগলো কিছুদিন আমি যে বাসায় কাজ করতাম উনাকে খালাম্মা বলে সম্মোধন করতাম।আমি একদিন বাড়ি একা খালাম্মা নাই সেই দিন কারি সাহেব পড়াতে আসছে আমি বাড়ির গেট খুলি নাই।খালাম্মা বাড়ি আসার পর হুজুর আমার নামে উনার কাছে বিচার দিল হুজুর চলে যাওয়ার পর খালাম্মা আমাকে প্রচন্ড মারধর করতে লাগলো। সেদিন থেকে শুরু হলো আমার উপর নির্মম অত্যাচার। এমন করতে করতে একটি বছর পার হয়ে যায়।মাজে মাজে আমার নানু আসতো আমাকে দেখার জন্য কিন্তু আমার নানুর সাথে আমাকে দেখা করতে দিতেন না।এক বছর চলে যাওয়ার পর সেখানে আর থাকতে আমার ভালো লাগেনা কখন সেখান মুক্তি পাব শুধু সেই চিন্তা।আমি কয়েকদিন ওখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু কোন লাভ হয় নাই।1999 সাল শুরু আমি একদিন সেই বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বের হয়ে যাই কিছুদূর যাওয়ার পর এক লোক আমার হাতে ধরে বললো আমরা মাদ্রাসা চালু করবো তুই লেখা পড়া করবি এই কথা শুনে মনের প্রশান্তি আসলো।আমি উনার কথায় রাজি হয়ে উনার সাথে চলে যাই আস্তে আস্তে উনাদের মাদ্রাসায় ছাত্র ভর্তি হওয়া শুরু করলো। সেখান থেকে শুরু আমার শিক্ষা জীবন আলহামদুলিল্লাহ শুরু হল কায়েদা আমপারা কোরআন মাজিদ নাজেরা (মানি দেখে দেখে)পড়াকে বলা হয়। নাজেরা পড়া শেষ হেফজ খানার প্রথম দাপ শুরু সবক দিবে তার আগে দোয়া নিতে হবে ওস্তাদদের কি করি নিজের কাছে তখন টাকা ছিল 150 টাকা ওখান থেকে কিছু টাকা দিয়ে( বাতাসা) নিয়ে আসলাম বাকি টাকা ওস্তাদ কে দিয়ে হেফজ খানায় পড়া শুরু করে দিলাম।আলহামদুলিল্লাহ এক বছরের মাতায় 13 পারা কুরআন মুখস্থ করে ফেললাম সকলে আমার প্রতি খুব খুশি 2000 সালে 13পারা মুখস্থ শেষ। এমন কর চলছে আমার লেখা পড়া এর মাঝখানে হয়ে গেল সমস্যা মাদ্রাসায় ছাত্ররা ঠিক মত লেখা পড়া করেনা ওস্তাদ বদলি এই নানান ঝামেলা এমন করতে করতে চলে গেল 2001 সাল। পরে সেই মাদ্রাসা থেকে চলে গেলাম অন্য আরেক মাদ্রাসায় সেখানে গিয়ে আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তায়ালার রহমতে হেফজ শেষ করলাম।হেফজ শেষ করার পর এখন অন্য মাদ্রাসায় ভর্তি হতে হবে নিজের কাছে নাই টাকা কি করি। শুরু করলাম নিজের সাথে যুদ্ধ আস্তে আস্তে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে গেলাম মা কিছু টাকা দিলেন তাতে কিতাব খাতা কলম কিনে সব শেষ। মাদ্রাসায় কিছু ভাই ইলেক্ট্রিক্যাল কাজ করে তাদের সাথে যুক্ত হলাম কিছু কিছু শিখে আস্তে আস্তে বিভিন্ন জাগায় কাজ শুরু করলাম শুরু হলো লেখা পড়া ও কাজ। এরি মাঝে এক মসজিদে ডাক পরলো ঈমামতি করার জন্য শুরু করে দিলাম ঈমামতি কাজ লেখা পড়া। আস্তে আস্তে নিজে বড় হচ্ছি সংসারের বর ছেলে মায়ের দুঃখ আর কতদিন সহ্য করবো এদিকে কাওমী মাদ্রাসায় লেখা পড়া চলছে আবার আলিয়া মাদ্রাসায় ও।এখন দিন দিন উপরের ক্লাসে উঠছি খরচ বেরেই চলেছে আমার মায়ের পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না।তখন আমার মা আর মামারা সিদ্ধান্ত করলো আমাকে বিদেশ পাঠিয়ে দিবে সংসারের হাল ধরার জন্য।শুরু হলো 2011 সাল প্রথম প্রবাস জিবন মানুষের কাছ থেকে ধার দেনা করে পারি দিলাম দুবাই সেখানে ও আমার কপাল খারাপ কোম্পানি 10 মাস কাজ করার পর একেবারেই 450 জন লোক এক্সিট করে দেশে পাঠিয়ে দেয়।কি করবো ভেবে কোন পথ খুজে পাচ্ছিনা।এরি মাজে দেশে আসার কয়েক মাস পর মা এবং সকলে মিলে দিলেন বিয়ে করিয়ে।যাক আলহামদুলিল্লাহ ভালোই চলছিল বিয়ের দের বছর পর আবার পারি জমালাম ওমান সেখানে ও একি অবস্থা বাগানের কাজ খুব কষ্ট হত।আল্লাহ পাক যা করেন মানুষের কল্যাণের জন্য করেন এই ভেবে পরে রইলাম 2বছর। 2বছর আমার ছোট মামাকে যে আমাকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন আমার জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে তিনি হটাৎ স্ট্রোক করে দুনিয়া ছেড়ে চলে জান আমি আমার কপিলের নিকট ছুটির জন্য আবেদন করলাম সে আমাকে ছুটি দিবেনা আমাকে এক্সিট করে দিবে।তখন পরলো মাথায় বাঁশ কি বলে এক্সিট করে দিবে কি অপরাধ কিছুই মাথায় আসছেনা।তারপর সে এক্সিট করেই দিল এক্সিট করার পর আমি চলে গেলাম আমার পরিচিত এক ভাইয়ের কাছে লুকিয়ে কাজ করার জন সেখানে দের বছর কাজ করি তারপর পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে দেশে চলে যাই একেবারে। এদিকে আমার ছোট ভাইকে আবার আমি ওমান নিয়ে যাই দরজি কাজে 450000 টাকা খরচ করে ভাই মোটামুটি ভালোই চলছিল কাজ কর্ম করে।ভাইয়ের উপর তো আর সবকিছু বহন করা সম্ভব না তারপর আবার সিদ্ধান্ত নিলাম বিদেশ যাবো যেই কথা সেই কাজ।আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তায়ালার রহমতে এক ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে ঢাকা আমাদের কোম্পানির কপিলের সাথে দেখা হয়ে যায় তার সাথে কথা বলার পর সে আমার চিবি সংগ্রহ করে নিয়ে গেলো। তারপর আমার জন্য ভিসা পাঠিয়ে দেয় আমার ভিসার পিছনে যার অবদান বেশি তিনি আমার বড় ভাই ( মনির মন) তার অক্লান্ত পরিশ্রমে আমি সৌদি আরব আসি। আসার পর অপেক্ষার পালা আর শেষ হয়না কাজ দেয়না ডিউটি দেয়না 21 দিন পর যখন ডিউটি পেলাম মনের প্রশান্তি আসলো আলহামদুলিল্লাহ।আসার সময় মাথায় করে 18 লক্ষ টাকার ঋণ নিয়ে সৌদি আরব আসি আলহামদুলিল্লাহ এখন দিতে দিতে আলহামদুলিল্লাহ 3 লাখ এসে পোঁছেচে। আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসায়। ৷ আমি একটা কথা বলতে ভুলে গেছি সেটা হল আমার সৎ মা যখন তার সন্তানদের সকাল বেলা মাদ্রাসায় বা মক্তবে পাঠাতো তখন খুব মনে কষ্ট লাগতো। আল্লাহ পাক কি না করেন আজ আমি একজন কুরআনের হাফেজ একজন ভালো মানুষ।আমার সৎ ভাই যারা আছে তাদের কেউ ইজ্জত করেনা তারা গাড়ির ড্রাইভার বিভিন্ন কাজে কর্মে লিপ্ত।আমি নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনের সাথে থেকে একজন সফল উদ্যোগক্তা হতে ছাই আপনাদের সকলের সার্ভিক সহযোগিতা কামনা করছি। একজন ভালো মানুষ হয়ে সকলের খেদমত করতে চাই।
এই হলো আমার জীবনের গল্প।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭১১
Date:- ৩০-৩১/১২/২০২১ইং
হাফেজ মোঃ আবু হানিফ
ব্যাচ নাম্বার 11
রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার 29661
নিজ জেলা কুমিল্লা।
বর্তমান অবস্থান সৌদি আরব।