জীবন এমনি এক বৈচিত্রময় গল্প
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ। প্রিয় ভাই ও বোনেরা কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন।
প্রথমেই শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে যিনি সংকটময় সময়ে আমাদেরকে ভালো রেখেছেন সুস্থ রেখেছেন আলহামদুলিল্লাহ।
দরুদ ও সালাম পাঠ করছে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম (সাঃ) এর উপর আলহামদুলিল্লাহ আমরা শেষ নবীর উম্মত হতে পেরেছি।
ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাদের প্রিয় শিক্ষক প্রিয় মেন্টর হাজার হাজার তরুণ-তরুণীদের আইডল জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারকে। যিনি আমাদেরকে এত বিশাল একটা প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছেন, 'নিজের বলার মত এটা গল্প ' "ফাউন্ডেশন "।
নিজের গল্প নিজেই বুক ফুলিয়ে বলবো প্রিয় প্লাটফর্মে এসে আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টল লাখ লাখ তরুণ-তরুণী আইডল জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর অনুপ্রেরণায় ও শিক্ষায় আজ আমরা নিজেদের জীবনের গল্প নিজেরাই বলতে শিখেছি,,,,, প্রিয় প্ল্যাটফর্মের প্রাণপ্রিয় ভাইয়া ও আপুরা তাদের জীবনের গল্পগুলো এত সুন্দর ভাবে লিখতে পারে তাদের দেখে আমিও অনুপ্রেরিত ও উৎসাহিত হয়ে লিখে ফেললাম আমার জীবনের গল্প ।
আমি খুব গরিব ঘরে জন্ম নিয়েছি। আমরা দুই ভাই বোন। বাবা একটা দোকানের কর্মচারী ছিলেন। আমি অনেক ছোট ছিলাম তাই অনেক কিছু বুঝতে পারতাম না,, কিন্তু এটা বুঝতে পারতাম আমার বাবা ছিল অলস প্রকৃতির মানুষ তার যেকোনো কাজে ছিলো লজ্জা বোধ সব সময়। ☺️ তিনি যেকোনো কাজেই আগে ভয় পেতেন,,,, আর ভাবতেন আমি এই কাজে যাবো মানুষ কি বলবে ☺️ এই ভেবে তিনি আর কোন কাজে যেতেন না ☺️।
সংসারের দায়িত্ব সম্পন্ন পড়ে মায়ের উপর 😥 একটা মেয়ে মানুষ হয়ে সংসার চালানো অনেক কষ্ট প্রতিটা মুহূর্ত আমি সেটা একটু একটু বুঝতে পারতাম 😥 মায়ের একমাত্র কাজের উৎস ছিল বিভিন্ন ধরনের সেলাই ঘরে বসে সেলাই করে সংসারের খরচ বহন করতেন ☺️
যেহেতু নওগাঁ সদর এই থাকি আমরা বাসাটা ও ভাড়া,,, বাসা ভাড়া থেকে সম্পূর্ণ বহন করত মা নিজেই সেলাইয়ের কাজ করে ,, আমার মা ও তার বাবা মা বেঁচে নেই তাই কষ্ট করে সংসার করছিলো বা করে যাচ্ছে এখনো ।
আমি যখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি তখন আমার ছোট ভাইয়ের জন্ম🙍,,,তখন থেকে বেশ কয়েক মাস মায়ার সেলাইয়ের কাজ করতে পারছিলোনা ঠিক মতো ☺️। আমিও ছোট তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া মেয়ে আর কতই বা বয়স হবে 🤔। তখন থেকে আমিও শুরু করলাম সেলাইয়ের কাজ। এভাবেই চলতে থাকে আমাদের জীবন 🙂।
আমি যখন পঞ্চম শ্রেণীতে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে নিউ ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠে। হঠাৎ তখন আমার বাবা আমাদেরকে ছেড়ে চলে যান 😭।তখন থেকে আমাদের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার
সে অন্ধকারে সময় পঞ্চম শ্রেণীর সার্টিফিকেট ওঠিয়ে এ ষষ্ঠ শ্রেণীতে দিতে হবে। তার জন্য ৬০ টাকার ওইটা টাকা টা ছিল না আমাদের কাছে। কাগজপত্র জমা দিতে না পারলে ভর্তি বাতিল হয়ে যাবে অনেক কষ্ট করে মায়ের হাতে মার খেয়ে টাকা জোগাড় করে ভর্তি টা বাঁচিয়ে ছিলাম সেই মুহূর্তে। কিন্তু এক্সামের সময় পরীক্ষার ফিস দিতে হবে সেইটা দিতে পারছিলাম না এমন সময় পড়াশোনা টা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ।
কিন্তু তখন আমার মামা এসে পাশে দাঁড়ায় এবং কিছু দিন পড়াশোনার খরচ বহন করেছিলেন,,,, তারাও ছিলেন গরিব তাদেরও তো সংসার আছে কতবার দেখবে,,,, তখন থেকে সেলাই মেশিনের কাজ করে নিজের পড়াশুনার খরচ নিজে বহন করতাম এভাবে এস. এস. সি. টা পাশ করলাম। 😀
এরপর ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য এডমিশন এক্সাম দিলাম,,,, আল্লাহর রহমতে সরকারি পলিটেকনিক কলেজে চান্স পেয়ে গেলাম। সেখান থেকে ডিপ্লোমা কমপ্লিট করলাম এনভায়রনমেন্টাল সাবজেক্ট থেকে 🙂।
এরপর আর পড়াশোনা করা হয়নি,,,, কারণ ছোট ভাই আছে তাকে মানুষ করতে হবে মায়ের বয়স হচ্ছে,,,, একা আর কতো দিন দেখবে,,,, আমার পড়াশোনা বন্ধ হওয়াতে সব চাইতে বেশি কষ্ট মা পাইছে,,, এখনো চোখের পানি ঝরায় কিন্তু সামর্থ্য আর নেই । মায়ের চোখের পানি আমিও দেখতে পারি না। আড়ালে নামাজে বিছানায় বসে চোখের পানি ঝরায় কারণ মায়ের সামনে কান্না করলে মা সবচাইতে বেশী কষ্ট পায়,,, মায়ের সামনে দুই ভাইবোন হাসি মুখে থাকি 😀😀।
কারণ শুধুমাত্র আমাদের দুই ভাই বোনের জন্য তার সুন্দর জীবন এভাবে কাটিয়ে দিচ্ছে,,, তিনি চাইলে আমাদের ছেড়ে চলে যেতে পারতো,,কিন্তু যাইনি 🙂।,,,, পৃথিবীতে একমাত্র মা যিনি নিঃশাতে সন্তানদের ভালোবাসে তার ভালোবাসার সঙ্গে অন্য কোনো ভালবাসার তুলনা চলে না ❤️।
অনেক কষ্ট করছে মা জীবনে এখনো করে যাচ্ছে,,, তাই মায়ের মুখের হাসি দেখার জন্য আমার এই যাএা শুরু করছি,,, আমার এই যাএার একমাত্র ভরসা আল্লাহ,, আর মায়ের দোয়া এবং আপনাদের সকলের স্নেহ ও ভালোবাসা আমার বাকি জীবনের পথ চলার অবলম্বন,,, 🙂।
সন্ধ্যায় লিখতে বসলাম, লিখতে তো কত কিছুই না ইচ্ছে করে কিন্তু সবকিছুই কি আর লিখা যায়! জীবন এমনি এক বৈচিত্রময় গল্প যেখানে কখনো ছন্দের মিল থাকে আবার কখনো থাকে না। যা লিখতে চাইলে কলমের কালি শেষ হয়ে যাবে তবু জীবনের গল্পটা শেষ হবে না, সে তো ফুরিয়ে যাবারও নয়।
সময় ছুটে চলে আপন গতিতে। ঝর্ণা যেমন চলার পথে কোথাও বাঁধা পেয়ে তৈরী করে সরোবর আবার কোথাও গহীন অরণ্যে সৃষ্টি করে গভীর খাঁদ। তেমনি মানুষও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলার পথে জেনে না জেনে, বুঝে না বুঝে তৈরী করে কত না গৌরবময় সৃষ্টি আবার কখনো কখনো কুৎসিত কদাকার বীভৎস রূপ।😥😥
জীবনে সবকিছুই থাকবে এটাই স্বাভাবিক। হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, গান, কবিতা, স্মৃতি সবই। জীবন কখনো সুখের কখনো দুঃখের হতেই পারে তাই বলে থেমে থাকা! না! কখনোই না।😥😥
কিছু ভালবাসা, কিছু স্মৃতি আর কিছু কষ্ট যা মানুষের সবসময় মনে থাকবে। ভালবাসা এমন একটা অনুভূতি যেটা কারো সাথে সারাজীবন থেকেও আসে না। আবার কারো সাথে হয়তো কিছু মুহুর্তই যথেষ্ট যা কখনো জোর করে হয় না।😥😥
কিন্তু সবছেয়ে বড় কথা হল ‘সম্মান’ যেটা সবকিছুতেই আবশ্যক। জীবনের কিছু ঘটনা থাকে যা শেয়ার করলে অনেকেই শুনে কিন্তু নিজের মত করে বুঝতে চায় না। মানুষের জীবনে অনুশোচনা করার মত অনেক ঘটনাই থাকে যা নিজেকে তিলে তিলে পুড়িয়ে মারে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর উল্টোটাও ঘটতে পারে অনুশোচনার দহনে পুড়ে খাটি সোনা হয়ে উঠতে পারে। আসলে সবটুকুই নির্ভর করে ব্যাক্তির দৃষ্টিভঙ্গির উপর। আমি করি একটি ব্যাক্তি ভুল করলে তার প্রতি সমাজের রূঢ় আঙুল না উঠিয়ে ভুলটা শুধরে দেয়া যদি তাও সম্ভব না হয় অন্তত ভুলটা ধরিয়ে দেয়া কিংবা তাকে অনুশচনার সুযোগ দেয়া। যে অপমান সইতে পারে সেই তো জীবনের বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে বহুদূর যেতে পারে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না জীবনে কেউ কখনো হারে না, হয় তো জিতে নয় তো শিখে।🙂
অতীত কোন ঘটনা অনুশোচনাকে কেন্দ্র করে জীবনকে থামিয়ে দেয়া কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কেননা অতীতকে যে পরিবর্তন করা যায় না তা ধ্রুব সত্য। তাই অতীতকে অনুশোচনার মাধ্যমে বর্তমানকে শুধরে ভবিষ্যতকে আলোকময় করার চেষ্টা করা উচিৎ। জীবনে নিজের নেয়া কোন সিদ্ধান্তকেই ছোট করে দেখা ঠিক না, কেননা তোমার জীবন তোমার দুনিয়া। অন্যের সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার চেয়ে নিজের সিদ্ধান্তে বার বার হোছট খাওয়াটা অনেক ভালো। নিজের পৃথিবী, নিজের ইচ্ছা, নিজের লক্ষ্য ঠিক রেখে চলতে হবে তবেই একজন মানুষ সফল হবে। সামনে অবারিত সম্ভাবনার হাতছানি, এইতো সময় এগিয়ে যাওয়ার সুন্দর-সুখী জীবনের পানে।🙂
আমার লেখার মধ্যে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে আপনারা সকলেই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন 🥰
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭১৩
Date:- ০২/০১/২০২২ইং
মাহিমা তালুকদার
ব্যাচ নংঃ ১৫।
রেজিষ্ট্রেশন নংঃ ৭১৩৮০।
জেলাঃ নওগাঁ