একদিকে নার্সিং অন্য দিকে ডিপ্লোমা
💥আমার পরিচিতি:
আমি খুরশীদ মহল (মুক্তা)
আমরা দুই ভাই তিন বোন আমি সবার ছোট। পরিবারে সবাই চাকুরীজীবি। এক ভাই জর্জ কোর্ডে আর একজন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার পরিদর্শক। এক বোন নার্স আর এক বোন ইন্ডাস্ট্রিতে। আর বাবা মা অবসর । কারণ বয়স হয়েছে। নাতি নাতনি নিয়ে উনাদের সময় পার হয়।
💥আমার পড়াশুনা বি এস সি ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং। এস এস সি ২০০৯ সাল এরপর ডিপ্লোমা চট্টগ্রাম পলিটেকনিক, তারপর সেখান থেকে ট্রান্সপার হয়ে যায় হালিশহর মহিলা পলিটেকনিকে। এর পর বি এস সি পোর্ট সিটি ইন্টারনেশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে।
কিন্তু খুব সহজে বলে ফেললাম লেখাপড়ার কথা। কিন্তু এই ধাপগুলো আমার জন্য অনেক কঠিন ছিল। অনেক যুদ্ধে এই পথ পাড়ি দিয়েছি।💥
💦যখন আমি ক্লাস সিক্সে ভর্তি হব ফাইভ শেষ করে। তখন থেকে অনেক কষ্ট পেয়েছি পড়াশুনা নিয়ে। তবে কিছু দুর্ঘটনার কারণে। ঈদের সময় আমরা সবাই নানু বাড়ি বেড়াতে যায়। এরমধ্যে আমাদের বাড়িতে আগুন। আগুনের সূত্রপাত আমাদের ঘর থেকে। শত্রুতা করে। আমরা দুই সেট কাপড় নিয়ে নানু বাড়ি যায়। পুরো ঘরে জিনিস ভর্তি। আমাদের ঘর থেকে পুরো বাড়ি আগুন লাগে ১১টা ঘর পুরে যায়। সবার অবস্থান রাস্তায় তখন কেউ কেউ আশ্রয় নেয় আত্মীয় স্বজনের বাড়ি। শখের অনেক জামা কাপড় পুড়ে চাই। সব পড়ে কয়লা। তারপর আসে আমাদের পরিবারের উপর চাপ। যেহেতু শত্রুতা। আর এই সময় আমার নতুন স্কুল আর নতুন বইয়ের কথা চিন্তাই করতে পারছিলাম না। কান্না করে যাচ্ছি খালি। তারপর মা বাবা ভাইয়ারা সবাই নানু বাড়ি থেকে যায় দীর্ঘদিন। সেখানে বেড়ে উঠা বড় হওয়া। এরপর আমাকে আমার বোন নিয়ে যায় শহরে পূর্ণ হলো আমার ইচ্ছা নতুন স্কুল নতুন বই। এরপর ক্লাস এইড শেষ করলাম আবার ঝামেলা আম্মু বেশি অসুস্থ তাই শহর থেকে আবার গ্রামে ক্লাস নাইন টেন শেষ করলাম মায়ের সেবার পাশাপাশি। ভালো রেজাল্ট করলাম। ইচ্ছা হলো কারিগরি প্রতিষ্টানে পড়াশুনা করব। কিন্তু বড় ভাই বাধা দিল পড়া যাবে না। গ্রামে পড়তে হবে। আবার বোন বলে নার্সিং পড়তে হবে কি করি। তারপর বোন নিয়ে আসে আমাকে শহরে। বোন ছিল ডিপ্লোমা নার্স তাই সে চাই আমিও নার্সিং পড়ি কিন্তু আমার মন বলে অন্য। কিন্তু পড়তে দিবে না। তারপর ও নার্সিং এর পাশাপাশি আমি চট্টগ্রাম পলিটেকনিক থেকে ফর্ম নি। এবং জমা দি। মেরিড লিষ্টে চলে আসলাম। তারপর ভর্তি হলাম। একদিকে নার্সিং অন্য দিকে ডিপ্লোমা। সারারাত সি সি ইউ আই সি ইউ তে নাইট ডিউটি করে মর্নিং শিফটে ক্লাস করতে যেতাম। খুবই কষ্ট হতো তবুও ইচ্ছা শক্তি ছিল আমাকে পাড়তে হবে। চালিয়ে গেলাম। কিন্তু বড় ভাই রাগ ছিল শুরু থেকে তাই খরচ দিত না। আর বোনরা বিবাহিত স্বামী আছে তাছাড়া নিজের সংসার সব মিলিয়ে তারাও সাহায্য করতে পারে নি। আর আমাদের পরিবারের এতবড় একটা দুর্ঘটনা হওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াতে অনেক সময় লেগেছে। কারণ বোনদের মাত্র বিয়ে হলো আর ভাইরা লেখাপড়া করছে আর আমি ছোট।তাই সব বুঝে নিজের খরচ নিজেকে চালিয়ে যেতাম । তখন ট্রেনিং পিরিয়ডে আমি পেতাম মাত্র ১৬০০ টাকা এর মধ্যে খাওয়া দাওয়া এবং লেখাপড়া ও অন্যান্য সব চালিয়ে যেতে হত। তারপর দেখি পারছি না এরপর একটা টিউশনি নি। পেতাম ৫০০ টাকা। কলেজ করে আসার সময় টিউশনি শেষ করে আসতাম তারপর আমি রেষ্টে যেতাম। এরপর কলেজে আমার উপর চোখ পড়ে এক বকাটের তার জন্য কলেজ থেকে ট্রান্সপার হয়ে গেলাম। শেষ করলাম ডিপ্লোমা। এরপর জব পরিবর্তন করি যুক্ত হয় একটা কোম্পানিতে এইচ আর ডিপার্টমেন্টে। তারপর বি এস সি তে ভর্তি হয় বিকাল শিফটে পাশাপাশি জব চলছে।
এইভাবে চলে দৌড়ঝাঁপ ।💦
💥 তারপর ২০১৮ তে বিয়ে এরপর বাচ্চা। এরপর শুরু হয় নতুন যুদ্ধ। বাচ্চা নেওয়ার কারণে জব ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু এত সংগ্রাম করা একটা মেয়ে কি বসে থাকতে পারে? বাচ্চা হওয়ার পর নিজেকে খুজেঁ পাচ্ছি না কিছুইতে তারমধ্যে কিছু পারিবারিক সমস্যা সব মিলিয়ে হারিয়ে ফেলি নিজেকে। তারপর আবার জবের জন্য চেষ্টা করি পেয়েও যায় পছন্দের জব। কিন্তু দুই মাস করে বাচ্চার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায় হাসপাতালে ভর্তি করাই। শেষ পর্যন্ত জবটা ছেড়ে দিতে হল। এরপর শহরে থেকে যুদ্ধ করা মেয়েটা চলে যায় আবার আনোয়ারা গ্রামে। সেখানে এক ভাইয়া আমি বাড়িতে শুনে একটা কম্পিউটার ট্রেনিং পরিচালনার দায়িত্ব দেয় সময় কম দেখে জয়েন হলাম। তাও একি সমস্যা বাচ্চা কেউ ম্যানেজ করতে পারে না। অসুস্থ হয়ে যায়। তাই মহামারিতে উদ্যোগ নিলাম উদ্যোক্তা হওয়ার। চিন্তা করলাম ঘরে বসে নিজে কিছু করব।
তারপর নিজে পেইজ খুললাম এবং আস্তে আস্তে সবাইকে জানালাম। কিন্তু পরিবার থেকে বাধা পেলাম। কারণ আমাদের পরিবার এবং আত্মীয় স্বজন সবাই চাকুরিজীবি কেউ ব্যবসায়ী নাই। তারমধ্যে মেয়ে মানুষ মানুষ কি বলবে তাই পরিবারের সবাই অনেক কথা শুনিয়েছে। আমি শুনিনি তাদের বুঝিয়েছি। এবং চালিয়ে যাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ্ আমার উদ্যোগের বয়স এখন একবছর প্লাস। আলহামদুলিল্লাহ্ এখন সবার সহযোগিতা এবং ভালোবাসা পাচ্ছি। এবং অনেকের আস্তা অর্জন করতে পেরেছি। আমার সন্তান নিয়ে বেশ ভালো আছি। এখন আর আমাকে কথা শুনতে হয় না আমার বাচ্চা কে দেখবে? উদ্দেশ্যে আছে একটা লেডিস শপ দেওয়ার এবং নারীদের নিয়ে কাজ করার। যেন আমার সাথে কয়েকজন নারীর ভাগ্য বদলাতে সাহায্য করতে পারি।সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং ভালোবেসে পাশে থাকবেন আশা করছি।💥
💥এই গ্রুপে যুক্ত হয়েছি ভালোবেসে পরিচিত অনেক ভাই বোন এই গ্রুপে আছে। তাদের কার্যক্রম এবং স্যারের পোস্টগুলো আমাকে বিশেষ করে অনুপ্রাণিত করছে। তাই আমি রেজিষ্ট্রেশন করে নিয়েছি। এবং নিয়মিত খুলশী জুনের সেশন চর্চা ক্লাসে যুক্ত আছি ভালোবেসে। 💥
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭১৪
Date:- ০৩/০১/২০২২ইং
খুরশীদ মহল (মুক্তা)
♦♦ব্যাচ: ১৪ তম
♦♦রেজি: ৬২৬৫০
♦♦উপজেলা : আনোয়ারা
♦♦জেলা: চট্টগ্রাম।
♦♦বর্তমান অবস্থান : হালিশহর।
👉আমার সিগনেচার প্রোডাক্ট নিজের হাতে ডিজাইন করা বেবী ফ্রক।
👉সাথে আছে লেডিস ও বেবী আইটেম।
তাছাড়া আছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার কোয়াব।
👉স্বত্বাধিকারী : Araf Fashion