কিছুটা স্মৃতির কিছুটা যন্ত্রনার আবার অনেক খানি আনন্দের গল্প
আসসালামু আলাইকুম,
গল্পের শুরুতেই আমি সত্যিই ধন্য সৃষ্টিকর্তা এখনো আমাকে ভালো রেখেছেন। আশরাফুল মাকলুকাত হিসেবে আমাকে জ্ঞান, বিবেক, বুদ্ধি দিয়েছেন। আমি ধন্য মুসলিম ঘরে শেষ নবীর উম্মত হিসেবে সৃষ্টি হয়েছি ধরনীর এই বুকে।
তারপর মনের গভীর থেকে প্রিয় মেন্টর আমাদের বটবৃক্ষের মতন যিনি ছায়া দিয়ে যাচ্ছেন সেই শিক্ষাগুরু কে আমার সালাম"আসসালামু আলাইকুম"।
প্রিয় এই প্লাটফর্মের প্রায় ৬ লাখ পরিবারকে আমার সালাম"আসসালামু আলাইকুম" ও ভালোবাসা।
🌹আজকের গল্পটা একটু ভিন্ন, কিছুটা স্মৃতির কিছুটা যন্ত্রনার আবার অনেক খানি আনন্দেরও৷
✍️আমার ছেলেবেলা
আমি ২০০৯ এর এস. এস. সি. র ব্যাচ ছিলাম কুড়িগ্রাম সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে৷ কিছুদিন আগে আমার মেয়ে আমার এতো দিনের লালিত স্বপ্ন পূরন করেছে একই স্কুলে এডমিশন হয়ে।
স্কুলে ঢুকেই বুকটা আমার আঁটকে গেল। সেই স্যার ম্যাডাম, সেই আম গাছ, সেই বকুল ফুলের গাছ সেই ক্লাস আমাকে বাকরুদ্ধ করে ফেলেছে। ☺️
স্কুলে ঢুকতেই আমার প্রিয় স্যার ম্যাডামের সাথে কুশল বিনিময় করেছি। প্রায় ১ যুগ পর স্যার ম্যাডামদের সাথে আমার দেখা৷ দিশা ম্যাডাম, আজম স্যার, কল্পনা ম্যাডাম, বিল্পবী ম্যাডাম আরো ২/৩ স্যার ম্যাডাম উপস্থিত ছিলেন, কত পরিচিত সেই চিরচেনা মুখ☺️৷সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গিয়ে হঠাৎ আজম স্যার বলে উঠলো, তুমি জাকিয়া না? স্যারের কথা শুনে আবেগে আপ্লুত হলাম এতোদিন পর মুখ দেখেই স্যার চিনে ফেললো। বললাম জি স্যার আমি জাকিয়া। আপনাদের প্রিয় চোখের মনি ছিলাম, দুরন্তপনা, জেদী রাগি অভিমানি ছিলাম।
স্যার প্রশ্ন করলে এখানে কেন? আমি বললাম স্যার আমার মেয়ে এবার চতুর্থ শ্রেনী থেকে পঞ্চম শ্রেনীতে ভর্তি হবে। ৪১ নং সিরিয়াল যেখানে আসন সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৫ জন। এটা আমার চোখের পানির মূল্য আল্লাহ্ র দরবারে৷ । এক পর্যায়ে স্যার বলে ফেললো তুমি নিজেই এখনো পিচ্ছি তার উপর তোমার এতো বড় মেয়ে এটা কি ভাবা যায়😀? কত সালে বিয়ে করছো? মেয়েকে জানতে চাইলে এটা তোমার কে হয়?☺️ মেয়ে বললো আমার মা হয়? ☺️ স্যার হেসে বললো আয়নায় দেখিও তো মাকে☺️। এক যুগ আগে তোমার মা এই স্কুল থেকে ভালো রেজাল্ট করে বেড়িয়ে গেছে। এভাবে কয়েকটা স্যার ম্যাডাম জানতে চাইলো বর্তমান কোথায় আছো/কি করছো/ হাসবেন্ট কোথায়?
এক কথায় আমি থেমে গেলাম বাকরুদ্ধ হয়ে মিথ্যে কথা বললাম হাসবেন্ট প্রসঙ্গে। স্যারকে বললাম স্যার আমি অনার্চ মাস্টার্স Economics সাবজেন্ট নিয়ে পড়াশুনা করেছি রংপুর কারমাইকেল থেকে। এখন কুড়িগ্রাম ল কলেজে আছি৷ পাশাপাশি আপনাদের দেয়ায় ছোটখাটে একটা অনলাইন বিজনেজ করছি৷ ভালোবেসে সময় করে আমার পেজ থেকে ঘুরে আসবেন৷
আমার মেয়ে অধ্যয়নরত ছিল কুড়িগ্রাম ১ নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিছুদিন আগে পূর্বের কুলের ম্যাডামদেরকে মিষ্টি মুখ করিয়েছিলাম। ম্যাডামরা বারবার বলছিল সব ভালো ছাত্র ছাত্রীরা এই স্কুল থেকে বিদায় নিলো। হেড ম্যাডাম মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে দোয়া করে শুধু একটি কথাই বলছিল শহরের সবথেকে বড় স্কুলে গেছ৷ তোমার মা অনেক সংগ্রামী, সাহসী৷ মায়ের মতন নিজেকে যোগ্য করে তুলবে৷ একদিন যেন আমি শুনতে পারি তুমি ভালো রেজাল্ট করেছো৷
✍️বিদায়ের লগ্নঃ বিদায়ের লগ্নে মেয়ের সব বান্ধবীরা বন্ধুরা জানালার গ্রীল ধরে শেষ বারের মতন ওকে বিদায় জানানো। ওই দৃশ্যটা আমার কাছে অনেক খারাপ লেগেছিল৷ কতটা নিঃপাপ চোখ নিয়ে ঝলঝলে চোখে ওর হাত ধরে বিদায় জানালো। মনে পড়ে গেল আমার ছেলেবেলা। এস এস ছির বিদায়ে আমরা কত বান্ধবী বুকে বুক লাগিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছি। আজকে শুনতেই ভালো লাগে দীশা আছে Uk তে। রেইনা রাজশাহী তে। কেউ ডাক্তার, কেউ ইন্জিনিয়ার কেউবা বিদেশে সেটেল হয়ে গেছে। রুশি আছে রাজশাহীতে, লীনা যশোরে, সালমার খোঁজ দিতে পারলাম না, নীতি সুখের ঘরে দিব্যি সংসার করছে। সাথী আছে ঢাকাতে, সোমা আছে ঢাকাতে৷ মৌরি ছিল ক্লাসের ফাস্ট গার্ল।
স্কুলের সেই পুরনো ভবনগুলো ভেংগে নতুন ভবন করছে কিন্তু মনে হচ্ছিল আজও আমি যেন হইচই করছি৷ আম গাছে ঢিল মারতে গিয়ে সিমুর কপাল ফাটিয়ে দিয়েছি। সকাল হলে জাম্বুরা চুরি করে খাওয়ার দৃশ্য আজ বারবার মনে পড়ছিল। কামরাঙা গাছটিতে কত ঢিল মেরে কামরাঙা পেরেছি। বকুল ফুল, শিউলি ফ পলাশ, কৃষ্ণচূড়া সব ফুল কুড়ানোর জন্যই তাড়াতাড়ি স্কুলে যেতাম। টিফিনে কানাকড়ি করতাম। আমি আমার জীবনে অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছি। প্রায় আধা কিলো রাস্তা পায়ে হেটে স্কুলে যেতাম। এক ড্রেস দিয়ে ২ বছর পাড় করতাম। সে সময় টিফিনের জন্য বাবা আমাকে ২ টাকা দিতো। তাই দিয়ে আমি ঝালমুড়ি খেতাম বা বাদাম। মাঝেমধ্যে জোর করে ৫ টাকা নিতাম তাই দিয়ে দুধ আইসক্রিম বা চালতার কিংবা বড়ুইয়ের আচার খেতাম। স্যার ও ম্যাডামদের এতো সুন্দর সৌজন্যে বোধ এক যুগ পরে এসেও এতো সম্মান, এতো ভালোবাসা এতো আনন্দ পাবো ভাবতেই ভালো লেগেছে।
✍️আজ আমার সন্তান এর কষ্টগুলোঃ
সেই ছোট বেলা থেকে ওর বাবা আমি, মা ও আমি, ওর বন্ধু, আমি ওর অভিভাবক আমি ওর সব ৷ ওর কষ্ট হবে বলে ওর স্কুলের ব্যাগটা নিজের কাঁধে তুলে নেই। আমি সহজেই বাবার কাছে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা চাইলে পেতাম না৷ কারন সে সময় বাবার আর্থিক অবস্থা ছিল শোচনীয়। আজ আমার সন্তান চাহিবা মাত্রই অনায়াসে টাকা পেয়ে যায় সেই দশ টাকা।
স্কুল, টিউশনি, কোচিং সব কিছু পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েছি। আজ আমার সন্তান একটু হেঁটে এসে যখন বলে আম্মু আমার পা ব্যাথা করে আমার বুকটা ফেটে যায়৷ ওর কোন কষ্ট আমি মানতে পারি না।
✍️স্মৃতিতে ঘেরা আমার ছেলেবেলা
প্রতি বছর annual sports এ অংশগ্রহণ করতাম। লং জাম্প, হাই জাম্প, বল্লম নিক্ষেপ, যেমন খুঁশি তেমন সাজো,পাখি উড়ে, হাতি উড়ে, দড়ি খেলা, মোড়ক যুদ্ধ, বস্তা দৌঁড় প্রতিটি খেলাতে অংশ্রগহন করতাম৷
কুচকাওয়াজ, প্যারেড,পিটি, ১৬ ই ডিসেম্বর এ অংশ্রগ্রহনে কোন কিছুতে পিছিয়ে ছিলাম না। কবিতা আবৃতি, নাচ, হাম নাথ এগুলোতেও পার্টিছিপেট করেছিলাম৷ খুব ই দুরুন্তপনা দুষ্টু চঞ্চল স্বভাবের ছিলাম তাই পিটি ম্যাডাম আফরোজা ম্যাডামের কাছে অনেক শাস্তিও পেতাম☺️।
✍️আমাদের দায়োয়ান চাচাঃ
সালাম দিলাম কানে শোনে না। চাচা মেয়েকে বলছিল তোমার আম্মু সবথেকে বেশি স্কুল পালাতো। অনেক সময় টিফিন পিরিয়ড এ টিফিন শেষ করে মেইন দরজা খোলা পেলেই ব্যাগ নিয়ে কয়েকজন মিলে স্কুল পালাতাম। এই রেকর্ড আমার আজও আছে☺️।
✍️স্কুলের পিয়ন লিটন ভাইয়া ও বুয়া আরজু আপুঃ
এখনো দায়িত্ব নিয়ে তারা কাজ করছে৷ আরজু আপু আমাকে দেখা মাত্রই চিনে ফেলে বললো এটা তোমার মেয়ে। মনেই হয় না তোমার বিয়ে হয়েছে☺️। মেয়েকে মজা করে বলছিল আম্মু বলবে না বলবে তোমার বোন 😊। আমি বললাম আপু লজ্জ্বা দিবেন না৷ এ ধরনের প্রশ্ন আমার কাছে কমন অল্প বয়সে বিয়ে করলে যা হয়। 🙏
ভালোবাসা,🎩 ভালোছিলাম লেখাপড়ায়। মনোযোগী ছিলাম কিন্তু বিয়ের পর পুরো জীবনটাই এলোমেলো হয়ে গেছে তবুও হার মানি নি৷আজকের এই দিনে এক যুগ পরে আবারো প্রানের স্যার ম্যাডামদের এতো কাছের হবো ভাবনার বাহিরে ছিল সব কিছু। হয়তো সে সময়ের আন্তরিকতা, সে সময়ের একটিভিটিটি এতো ভালো ছিল যে আজও তাদের স্মৃতির পাতায় জাকিয়া নামটি আছে। আমি হতে পারতাম জীবনে অনেক কিছু ডাক্তার ইন্জিনিয়ার না হতে পারলেও অন্য কিছু হতে পারতাম যদি জীবনের শুরুতে ছোট ভুলটা যদি না করতাম। ছোট্ট একটা ভুল সারা জীবনের মাসূল।
🥀গল্পটি বলার উদ্দেশ্যঃ জীবনে অনেক সম্ভাবনা আছে আর থাকবে৷ হার মেনে নেয়া মানেই জীবনের সাথে আপোষ করা৷ যেটা আমি করি নি। কিছু হতে না পারলেও প্রিয় এই প্লাটফর্মের মেন্টর যা শিখাচ্ছে তাতে আমার আজকের এই গল্প বলার মতোন জীবনটা সার্থক। প্রতি মুহূর্তে শিখছি ভালো মানুষ আগে হতে হবে, নিজেকে যোগ্য প্রমান করতে হবে, কাজ ই মানুষকে ভালো রাখে,কোন কাজ ই ছোট না। টানা ৯০ দিনের ফ্রি সেশন চর্চায় নিজেকে অংশগ্রহণ করাতে শিখেছি, শিখেছি পারসোনাল ব্যান্ডিং, শিখেছে কথা বলার জড়তা কাটানো৷ সেই স্কুল জীবনের মতন এখন জীবনটা নেই৷ পড়া হয় নি বলে লাস্ট ব্রেঞ্চে বসেছি মুখ বন্ধ করে ভয়ভীতি নিয়ে চুপচাপ থেকেছি। এখন আমি জানতেও বলতে শিখেছি। পেয়েছি প্রিয় মেন্টর এর ভালোবাসা, পেয়েছি আদর স্নেহ, আন্তরিকতা। শিখেছি কমিউনিকেশন। এখন আমার এই প্লাটফর্ম টি আমার কাছে সেই হারিয়ে যাওয়া বিদ্যালয় যেখানে ভালো মানুষ গড়ার কারিগর হয়ে ৬ লাখ পরিবারের জন্য রাত দিন কাজ করে যাচ্ছেন। যেখানে প্রিয় মেন্টর কোন টেলিভিশন দেখে না, বিনোদন দেখে না। তার বিনোদন আমরাই যখন আমরা এক একজন করে শূন্য থেকে নিজেকে তৈরি করি তার দেখানো পথে এবং জিরো থেকে হিরো হই ভালো মানুষ হওয়ার অঙ্গিকার করি। যেখানে আমরা বলতে পারি আমাদের " নিজের বলার মতন একটি গল্প"।
আবারো সকলেই আমার সালাম" আসসালামু আলাইকুম "। আজকের মতন এইটুকু গল্পটা বলে শেষ করছি। যারা এতোক্ষন ধৈর্য্য নিয়ে পড়লেন তাদের জন্য রইলো আন্তরিক ভালোবাসা।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭১৫
Date:- ০৪/০১/২০২২ইং
Jakia Fardousy
ব্যাচঃ১১,
রেজিষ্ট্রেশন ঃ২৮২৪৪,
জেলাঃকুড়িগ্রাম
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার।
পেজঃ JM Shop BD