বাবা নগদ টাকা দিয়ে এলাকায় জমি কিনছেন। কিন্ত কোন সঞ্চয় করেন নাই
💥বুট- বাদাম বিক্রেতা থেকে লাখপতি হওয়ার বাস্তব গল্প💥💥💥💥
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
আসসালামু আলাইকুম
☘️☘️আশা নয় বিশ্বাস নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনের সকল ভাই ও বোনেরা সবাই খুব ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর অশেষ রহমত, আমার মায়ের দোয়া ও সকলের দোয়া ও ভালোবাসায় অনেক ভালো আছি।আলহামদুলিল্লাহ।
🍀🍀শুরুতেই আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার স্যারের প্রতি যিনি না হলে লক্ষ্য লক্ষ্য তরুন বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াতো, অনেকে পথ ভ্রষ্ট হয়ে যেতো। কিন্তু আজ সেসব তরুন ভালোমানুষ হয়ে সমাজে নিজের পরিচয় দেয়ার মত করে নিজেকে তৈরি করছে।
আজ আমি আমার জীবনের সব থেকে প্রিয়, গুরুত্বপূর্ণ মানুষটিকে নিয়ে লিখবো। যিনি আমার জীবনের সব থেকে বড় অনুপ্রেরণা। তিনি আর কেউ নন আমার জন্মদাতা বাবা❤️❤️
🍀বাবার জন্ম ও বেড়ে উঠা-🍀
গ্রামের একটা গরীব ঘরে আমার বাবার জন্ম।আমার দাদার ছনের ছাল এর ঘর ছিলো। আর দাদা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ফসল ফলাতেন, হাল চাষ করতেন।আর তা দিয়ে উনাদের সংসার চলতো কোনভাবে।যেহেতু আমার বাবা সংসারের বড় সন্তান সেই হিসেবে দায়িত্ব একটু বেশিই ছিলো।বাবা ক্লাস টু পর্যন্ত স্কুলে গেছেন তবে উনার হাতের লিখা আর হিসাব নিকাশ দেখে বুঝাই যেতোনা এত কম পড়ালেখা করেছেন।
💥শৈশব ও বেড়ে উঠা-💥
যেই বয়সে ছেলেমেয়েরা দুরন্ত শৈশব কাটায় ঐ বয়সেই বাবা রোজগার এর পথ বেচে নেন।জীবনে প্রথম উনি বুট বাদাম বিক্রি করতেন।আর সেগুলো পরিমাপ এর জন্য পাল্লা হিসেবে নারিকেল এর মালা ব্যবহার করতেন।
🌺এখানে বলে রাখি এতটুকু পর্যন্ত যারা পড়ছেন তারা শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন।কারন বুট বাদাম বিক্রি করা লোক ই ষাটের দশকের লাখপতি হয়েছিলেন।🌺
একটা সময় এসে বুট বাদাম বিক্রি বাদ দিয়ে পান বিক্রি শুরু করেন।প্রতিদিন এক ব্যাড়া পান কিনে সেটা মানুষের বাড়ি বাড়ি বিক্রি করতেন।তখনকার সময়ে এই এক ব্যাড়া পান ই অনেক ছিলো।
এর ফাঁকে আমার বাবা বিয়ে করেন।যেটুকু সঞ্চয় ছিলো সেগুলো শেষ হয়ে যায়।তখন কি করবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছিলেন না।তখন আমার দাদা একজন এর একটা গরু পালন করতেন।সেই গরু বিক্রি করে ১২০টাকা পান।দাদার ভাগে ৬০টাকা পড়ে। দাদা আমার বাবাকে সেগুলো দেন ব্যবসা করতে।এটা কিন্তু ৫০ এর দশক এর কথা।
৬০টাকা দিয়ে আমার বাবা পার্টনারে পানের ব্যবসা শুরু করেন বড় আকারে।হায়দারগঞ্জ, বরিশাল এসব জায়গা থেকে পান এনে স্থানীয় বাজারে সেল করতেন।ভালই চলছিলো ব্যবসা।
হঠাৎ আমার বাবা টাইফয়েড এ আক্রান্ত হন।প্রায় ৩/৪মাস আব্বা অসুস্থ্য ছিলেন।তখন আবার আমার আব্বা বেকার হয়ে পড়েন।কারন ব্যবসা নতুন করে শুরু করার মত মূলধন বাবার ছিলোনা।পরিশেষে বাধ্য হয়ে আমার নানার থেকে ১০০টাকা ধার নেন।সেই টাকা দিয়ে নতুন করে ডাবের ব্যবসা শুরু করেন।এলাকা থেকে ডাব কিনে নিয়ে ঢাকা শহরে সেল করতেন।ঢাকা আসা যাওয়া করতে করতে সেখানকার কিছু ব্যবসায়ির সাথে বাবার পরিচয় হয়।উনারা বাবাকে কাঠের ব্যবসা করার পরামর্শ দেন।আর আমার বাবা শুরু ও করে দেন।
🌾প্রথমে রামগঞ্জ এর বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছ কিনে সেগুলো ঢাকায় পাঠাতেন।এরপর লক্ষীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছ কিনে বড় মালবাহী নৌকায় করে সেগুলো ঢাকায় পাঠাতেন।সেখানে মেচ ফ্যাক্টরি সহ বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে সেগুলো সেল হতো।
ধীরে ধীরে আমার আব্বার ব্যবসা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রসারিত হতে থাকে।বিশেষ করে বরিশাল অঞ্চলে বাবার বেশি যাওয়া হতো।বরিশাল থেকে আনা আমড়া গাছে এখনো আমাদের আমড়া ধরে।গাছটা কিন্তু আমার থেকে বয়সে অনেক বড়।দিন দিন আমার বাবার ব্যবসা বড় হতে লাগলো।
🌺চুয়াত্তর এর দুর্ভিক্ষে আমাদের পারিবারিক অবস্থা:
১৯৭৪ সালে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।পণ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যায়। কত মানুষ না খেতে পেরে মারা যায়, ক্ষিধার যন্ত্রনায় যা সামনে পেয়েছে তাই খেয়েছে।কিন্তু তখন আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালই ছিলো।ধান,চাউল সবই ছিলো।কিন্তু মানুষের অনেক হাহাকার ছিলো। এলাকার অনেক লোককে আমার বাবা ঢাকায় কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা করে দেন।আমাদের আশেপাশের মানুষ জনকে আমার মা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতেন।বাবা তখন ঢাকাতেই থাকতেন।যাকে যা দিয়ে সাহায্য করা যায় আমার মা ই ব্যবস্থা করতেন।আমার আম্মা সবসময়ই দান করতে পছন্দ করতেন।এখনো যথাসাধ্য চেষ্টা করেন।
😪বাবার ব্যবসায় ধস ও এর কারন🌾🌾🌾
ষাট এবং সত্তর এর দশকে আমার সেই সফল বাবা আশির দশকে এসে ধীরে ধীরে ব্যার্থতার গ্লানি নিয়ে পথ চলা শুরু করেন।আর সেই ব্যার্থতাকে কাটিয়ে উঠতে পারলেন না।
আগেই বলছিলাম আমার বাবার ব্যবসা সারাদেশে প্রসারিত ছিলো।আর সেই সুবাদে বিভিন্ন এলাকার মানুষের সাথে লেনদেন করেছেন।গাছ দিবে বলে এডভান্স অনেকেই মোটা অংকের টাকা নিয়ে যেতো এরপর কেউ মাল দিতো আবার কেউ টাকা ও ফেরত দিতোনা মাল ও দিতোনা।এইভাবে আমার বাবার অনেক টাকা লস খায়।আর এর জন্য সব থেকে বেশি দায়ী তখনকার যোগাযোগ ব্যবস্থা।এক এক এলাকায় যেতে কয়েকদিন লেগে যেতো।তারমধ্যে গেলে যদি টাকাটা পাওয়া যেতো।বর্তমান সময়ের মত যোগাযোগ ব্যবস্থা হলে হয়তো এমন ধরা আমার বাবা খেতেন না।কাউকে পাঠানোর মত লোক ও ছিলোনা।আবার কাউকে পাঠানো ও ভয়ের ছিলো।যদি কোন বিপদ আপদ হয়।তাই বাধ্য হয়ে বাবাই যেতেন।কিন্তু এইভাবে কত যাওয়া যায়। তবুও যদি পাওনা টাকা বা মাল পাইতেন তবুও শান্তনা ছিলো।এইভাবে চারদিকে টাকা আটকে বাবা হতাশ হয়ে যান।চারদিক থেকে থেকে লস আর লস খেয়ে যাচ্ছিলো। রামগঞ্জ আর রায়পুর এ আমাদের ছ-মিল ছিলো, ধীরে ধীরে সেগুলো ও লসের মুখ দেখা শুরু করলো।অবশেষে সেগুলো বিক্রি করতে বাধ্য হলেন আমার আব্বা।
👉আর একটা সময় এসে আমার বাবার ঢাকার ব্যবসা সম্পুর্ন গুটিয়ে বাড়ি চলে আসেন।বাবা কেমন জানি স্তব্ধ হয়ে যান।এমন কষ্ট সামলানো সত্যিই কঠিন।এরপর জন্ম হয় আমার।তখন ৯০এর দশক। আমি ছোট থেকেই দেখতাম আমার আব্বা বাড়িতেই থাকতেন। আর খুব চুপচাপ থাকতেন।শারীরিক ও মানুষিকভাবে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েন।কয়েক মাস পর পর ঢাকায় যেতেন পাওনা টাকার জন্য।কিন্তু শুধু শুধুই যেতেন।দিবো দিবো করে আব্বাকে ঘুরিয়েছেন কিন্তু টাকা আর দেন নাই অনেকেই।আমি ছোট থাকতেই আমার বড় ভাই আর মেজ ভাই বাইরে চলে যান। উনাদের বাইরে পাঠাতে আমার মামার সহযোগিতা আর বাবার কিনা জমি বিক্রি করা লাগছে।
❤️❤️বাবার জীবন থেকে শিক্ষা:💕💕
🍀ব্যবসা করে কিন্তু আমার বাবা আমাদের বর্তমান বাড়ি সহ আরো অনেক জমি কিনেন।কিন্তু এত বছর ঢাকায় ব্যবসা করেও ঢাকা শহর জমি কিনেন নাই।অথচ তখন চাইলেই অনেক জমি সেখানে কিনার ক্ষমতা আমার বাবার ছিলো। হয়তো তখন সেখানে জমি থাকলে ব্যবসায় লস খেয়েও উঠে দাঁড়াতে পারতেন।
এখন বুঝি আমার বাবার কখনো কোন সঞ্চয় ছিলোনা।যদি সঞ্চয় থাকতো তাহলে হয়তো শেষ বয়সে আমার বাবা অনেক না বলা কষ্ট বুকে নিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হতোনা।
অনেক বছর আমার বাবা বাড়িতেই ছিলেন।কখনো আমাদের বকা দিতেন না।বাজার আর বাড়ি এই নিয়ে বাবার শেষ বয়সটা কেটেছে।কারো প্রতি কোন অভিযোগ ছিলোনা।নিজের ব্যর্থ জীবনের কষ্ট নিজেই বহন করেছেন।আমিতো ছোটই ছিলাম কিন্তু কখনো বাবার কাছে কোন আবদার ছিলোনা।আমি সেই ছোটবেলা থেকেই আমার চাওয়া পাওয়া গুলো কখনো ই বলতাম না।কারন আমার প্রয়োজনীয় সকল কিছু আমার মা,ভাই,বোনেরা না চাইতেই দিয়ে দিয়েছেন।কখনো আমি বুঝিই নাই যে আমার বাবা তখন বেকার।কারন আমার বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই বাবাকে বাড়িতে দেখতাম।মাঝে মাঝে ঢাকায় যেতেন সেখানে আমার মেজ মামার বাসায় উঠতেন।আর আসার সময় মামা আমাদের জন্য জামা কাপড় কিনে দিতেন।তাই আমি বুঝতাম জামাকাপড় মামা ই কিনে দেয় এটাই হয়তো নিয়ম।তবুও বাবাকে কখনো বলি নাই আপনি কি আনছেন। তবে আমার আব্বা আমাদের জন্য কাঁচের চুড়ি কিনে আনতেন সেগুলো পেয়ে আমরা সে কি খুশি হতাম।সেগুলো ভেঙ্গে ও অনেক মজা পেতাম😀এমনিতে বাবার কাছে আর কিছুই চাইতাম না।হয়তো আল্লাহ আমায় সেই বুদ্ধি দিয়েছেন।অবুঝ এর মত চাইলেতো বাবা না দিতে পেরে কষ্ট পাইতেন।
🌺🌺বাবার পরিচয়ে আমি-
আমার বাবার পরিচয়ে আমি রাস্তায় বের হলে লোকে আমার বাবার নাম ধরে খুব প্রশংসা করতেন।এখনো কিছু লোক পাওয়া যায় যারা আব্বাকে চিনতেন। সবাই এখনো আমার আব্বার প্রশংসা করেন।যারা বাবাকে কাছ থেকে দেখেছে উনারা বলে তোমার বাবার মত ভালো মানুষ হয়না।আমি এমন বাবার ঘরে জন্ম নিয়ে গর্বিত।
🌿🌿বাবার ব্যর্থতা থেকে আমার শিক্ষা
আমার বাবা অনেক স্ট্রাগল করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে সেই স্থানে নিজেকে ধরে রাখতে পারেন নাই।এক সময় সব কষ্টগুলো ব্যর্থতায় ভরে গেছে।আমার বাবাকে নিয়ে মন্তব্য করার সাহস আমি করতে চাইনা। এখনকার মত যদি তখন প্রযুক্তির এত উন্নয়ন হতো তাহলে আর এত সমস্যার মুখোমুখি আমার বাবা হতেন না।তখন যদি এমন একজন ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার থাকতেন হয়তো আমার বাবা নিয়তির কাছে হার না মেনে উঠে দাঁড়াতেন।
🍀🍀🍀সঞ্চয়ের উপকারিতা🍀🍀🍀
বাবা নগদ টাকা দিয়ে এলাকায় জমি কিনছেন।
কিন্ত কোন সঞ্চয় করেন নাই।নিজেরা ভালো খেতেন আর আশেপাশের মানুষজন, আত্মীয়দের সহযোগিতা করতেন।অসহায় বাবাদের মেয়ে বিয়ে দিতে আটকে গেলে আমার বাবা আর মা মিলেই তাদের সেখান থেকে উদ্ধার হতে সহযোগিতা করতেন।এমন অনেক উদাহরণ আছে আমাদের এলাকায়।উনি বলতেন জমা রাখলে সেগুলো পরে সাপ হয়ে খাবে।অনেক জমিন ছিলো সেগুলো বিক্রি করে হয়তো আবার শুরু করতে পারতেন কিন্তু বাবা সেগুলো বিক্রি করতে ভয় পেতেন যদি আর কেনার ক্ষমতা না হয়।তাই আমি এইটুকু বুঝেছি আয় যাই হোক তার থেকে কিছুটা হলেও সঞ্চয় করা উচিত।আর সেই সঞ্চয় বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়ায়।
🍀বাবার জীবনের শেষ কয়টা বছর🏵🍀
আমার বাবা ২০০৯ সালের ১২ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন তার আগে ৪ বার হার্ট হ্যাটাক করেন।কিন্তু শেষ বার আর আমার বাবাকে বাঁচাতে পারি নাই।তাই সেদিন চিরতরে আমরা বাবাকে হারিয়ে ফেলি।
আমি আমার বাবার টাকা পয়সা না ফেলে কি হয়েছে বাবার আদর পেয়েছি অনেক।যেটা বাড়িতে থাকাতেই বেশি পেয়েছি।
❤️আমি আমার বাবাকে খুব বেশি ভালোবাসি❤️
বি:দ্র:বাবার মুখ থেকে শুনে লিখলে হয়তো আরেকটু সুন্দর হতো।এখন তেমন ভালো হয় নাই তবে এই লিখার মাঝে অনেক প্রেরনা লুকিয়ে আছে।
কষ্টকরে আমার বাবাকে নিয়ে অগোছালো লিখা পড়ার জন্য আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।
🌾আশা করছি আপনাদের মুল্যবান মতামত দিয়ে পাশে থাকবেন।🌾
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে - ৭১৮
তারিখ ৮-০১-২০২২
🌺হাসনা ইয়াসমিন
💐কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
❤️ব্যাচ-১১
💐রেজিষ্ট্রেশন-৩০৬১৯
🌺উপজেলা-রামগঞ্জ
❤️জেলা-লক্ষীপুর
👉কাজ করছি-ব্লক এর ড্রেস,সব ধরনের আচার,হোমমেইড নারিকেল তেল,তিলের সন্দেশ নিয়ে।
পেইজ- ঝুম কর্নার JhoomCorner
সবাই ভালোবেসে আমার পেইজ ভিজিট করে আসবেন