"বৃষ্টি সবার জন্য হয়, কিন্তু ভিজে কেউ কেউ , স্বপ্ন দেখুন , সাহস করুন , লেগে থাকুন ।“ যথাযথ প্রমানিত ও অনুপ্রেরণামূলক কথা
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
আসসালামু আলাইকুম
সকল প্রশংসা আল্লাহর। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমাদের প্রিয় মেন্টরের প্রতি যিনি অনেক সুন্দর একটা প্লাটফর্ম তৈরি করেছেন ।
আমার নিজের জীবনের গল্প ঃ
আমার মা গৃহিণী এবং বাবা সরকারি চাকুরীজীবী ছিলেন বলে আমার শৈশব বিভিন্ন জেলায়: কক্সবাজার, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালীতে কাটে এবং শেষ পর্যন্ত আমাকে স্থির হতে হয় টাঙ্গাইলের বিখ্যাত ভারতেশ্বরি হোমসে এসে। ওখান থেকেই আমি এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করি ২০০১ ও ২০০৩ এ।
বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনদের মুখে যখন শুনি যে, আমি মেয়ে বলে আমার আর পড়াশোনা করানো হবে না কারন মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে কোন লাভ নেই ,বিয়ে দিতে হবে, তখন আমি আরও বেশি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই যে আমি পড়াশোনা করব। এবং ডাবল অনার্স করবো, এটলিস্ট একটা ইন্টারন্যাশনাল ডিগ্রি নেব। যে কোন সাধারণ একটা ছেলের থেকেও এগিয়ে থাকব। শেষ পর্যন্ত আমি তাই করি। প্রথম অনার্সটা করি সমাজবিজ্ঞানের উপর ইডেন থেকে এবং দ্বিতীয় অনার্সটা করি আইনের উপর ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে। সব শেষে আইনের উপর মাস্টার্সটাও করি। পড়ালেখা শেষ করেই গ্রামীণফোন লি: এর লিগ্যাল ডিপার্টমেন্টে ইন্টার্ন হিসেবে চাকুরি শুরু করি।
এক পর্যায়ে আমি অনুভব করি যে আমি চাকরি করব না, আইনজীবী হিসেবে কোর্টে প্রেকটিস করব এবং আমি শুরু করি। যেহেতু আমার বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদ ছিলোনা তাই সবার মত আমিও জুনিয়র হিসেবেই একজন শ্রদ্ধেয় সিনিয়রের কাছে কাজ শিখি এবং তাকে এসিস্ট করা শুরু করি সেই সাথে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদের পরীক্ষার জন্য প্রিপারেশন নিতে থাকি। এ অবস্থায় ২০১৫ সালে আমার বিয়ে হয় এডভোকেট শাকুর বিন শহিদের সাথে। ভালই যাচ্ছিল সব। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ২০১৬ তে মেয়ে জন্ম গ্রহন করে তারপর ২০১৮ তে ছেলে জন্ম গ্রহন করে।
আমার কোর্ট প্রাকটিস বন্ধ হয়ে যায়। আমি একদম বাসায় বসে যাই। প্রচন্ড ডিপ্রেশনে পড়ে যাই।আত্মীয়
স্বজনদের লাঞ্ছনায় ও বেড়ে যায় । বলছিলাম না মেয়েকে এতো পড়িয়ে কোন লাভ নাই , গেলো তো টাকা পানিতে । আত্মীয় স্বজনরা বার বার স্মরণ করিয়ে দিতে থাকল যে যখন আমি পড়তে চেয়েছিলাম তখন সবাই বলছিল এতো টাকা নষ্ট করে কি লাভ মেয়ে কে বিয়ে দিলে পর হয়ে যাবে কোন লাভ হবে না । কিন্তু আমি দেখাতে চেয়েছিলাম এক জন শিক্ষিত মেয়ে এক জন ছেলের চেয়ে কোন অংশে কম না কিন্তু এখন আমি হেরে যাচ্ছি । প্রচন্ড ইচ্ছা শক্তি থাকা স্বত্বে ও পারছিনা সাবলম্বি হতে।লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে তারপর ভাবলাম ঘরে বসে কিছু একটা করব। ২/৩ টা ব্যবসা ট্রাই করলাম কিন্তু ব্যবসা করা শিখিনি বলে বড়-সড় ধাক্কাও খেলাম। দেশে করোনা ভাইরাস আক্রমণ করল লক ডাউন শুরু হলো এবং আমি ডিপ্রেশনের হাইয়েস্ট লেভেলে পৌঁছে গেলাম। আমার নিজেকে প্রতিবন্ধী মনে হতে লাগল।
একপর্যায়ে একদিন আমার হাসবেন্ড আমাকে "নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনের" কথা বলে এবং রেজিস্ট্রেশনও করিয়ে দেয়। আমার মেসেঞ্জারে স্যারের কয়েকটা ভিডিওর লিংক পাঠিয়ে বলে, প্রত্যেকদিন অন্তত ১ঘন্টা এই গ্ৰুপে সময় দিতে। আমার তখন ব্যবসা বাণিজ্যের উপর থেকে আগ্রহ চলে গেছে। হঠাৎ একদিন স্যারের একটা কথা আমার মনোযোগ কেড়ে নেয় "বৃষ্টি সবার জন্য হয়, কিন্তু ভিজে কেউ কেউ , স্বপ্ন দেখুন , সাহস করুন , লেগে থাকুন ।“
আলহামদুলিল্লাহ মনের জোড় বেড়ে যেতে লাগল। আমার দ্বারা কিছু হবে না টা আর মনে হল না । আমি রেজিস্ট্রেশন করে যুক্ত হই এবং প্রতিটি সেশন আমি মনোযোগ দিয়ে করি এবং পরিচিত পোস্ট দিতে থাকি । তারপর চুয়াডাঙ্গা মেসেঞ্জার এবং লালবাগ জোন এ এড হই । প্রতিদিন সেশন চর্চা ক্লাস এ যুক্ত হতে থাকি এবং মনের সব জড়তা দূর হতে থাকে । নিজেকে মনের দিক থেকে খুব শক্তিশালি একজন মনে হয় আলহামদুলিলাহ । আমি আমার দুই ছোট বাচ্চা নিয়ে বার কাউন্সিল তালিকাভুক্ত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেই । ছোট ছেলেকে আম্মুর কাছে রেখে মেয়ে কে নিয়ে কোচিং এ যেতাম কারন দুই ভাইবোন মারামারি করে । খুব কষ্ট হতো। তারপরে ও থামি নাই এইটুকুর জন্য । আলহামদুলিল্লাহ বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে এডভোকেট হয়ে যাই, পাশাপাশি সাহস করে চিংড়ি নিয়ে কাজ শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো সাড়া পাই । তারপর আমি শুরু করি থ্রি পিস নিয়ে কাজ ।আলহামদুলিল্লাহ এবারও অনেক সাড়া পাই । তারপর শুরু করি বার কাউন্সিল তালিকাভুক্ত পরীক্ষার অনলাইন কোচিং। আমার এখন কোর্ট , পাশাপাশি অন লাইন ব্যাবসা , অনলাইন কোচিং এবং সন্ধ্যায় অন লাইন সেশন চর্চা ক্লাস ভালোবাসার পরিবারের সাথে ।
এই ফাউন্ডেশন থেকে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। পেয়েছি বিশ্বাস করার মত একটা পরিবার । আমি স্বপ্ন দেখে সাহস করে শুরু করে লেগে আছি আমার প্রতিটি উদ্যোগের সাথে। আমার এই পরিবারের ভাই বোন গুলো এখন আমার উদ্যোগ গুলোর সফলতার সাথী।আমাকে এখন কোন বিপদে বা কোন ভাবনায় পড়লে মনে করতে হয় না আমার কে আছে , কাকে বলবো। আলহামদুলিল্লাহ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে সব সময় পাশে থেকেছে প্রিয় মেন্টর স্যারের তৈরি করা ফাউন্ডেশনের ভাই বোনরা।
আলহামদুলিল্লাহ । ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে শেষ করছি প্রিয় মেন্টরের প্রতি যিনি টানা ৯০ দিন বিনা পয়সায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন এবং আমাদের পজিটিভ ভাবে মনের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছেন।
স্যারের কাছ থেকেই শিখেছি জীবনে হতাশা বলতে কিছু নেই এবং আরও অনেক কিছু যা বলে শেষ
করা যাবে না । আমি কাজ করছি মেয়েদের থ্রি পিছ নিয়ে এবং আমার বিজনেস পেইজ লিংক নিচে দেওয়া হল । ভালবেসে পাশে থাকবেন এবং লাইক দিবেন ।
https://www.facebook.com/limafashionhub/
স্টাটাস অফ দি ডে =৭২৫
তারিখঃ১৮-১-২০২২
আমি তাসলিমা জামান
পেশায় ঃ আইনজীবী
ব্যাচঃ১৩ রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ঃ৫৩০৬৬
মেম্বার ২৪/৭ লাইফ সাপোর্ট টিম
নিজ জেলা ঃ সিলেট , চুয়াডাঙ্গা
বর্তমান অবস্থান ঃ লক্ষিবাজার , লালবাগ জোন ঢাকা