উদ্যোক্তা হওয়া খুব সহজ কাজ নয় তবে খুব বেশি কঠিন কাজও নয়।
জীবন মানেই উত্থান পতন। জীবন মানেই সুখ দুঃখের মিলন মেলা। জীবনে সুখ কিংবা দুঃখ চিরস্থায়ী নয়। মানুষের জীবন মানেই তাকে সংগ্রাম করে বাঁচতে হবে। আমিও একজন মানুষ। জীবনে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজকের এই জায়গায় অবস্থান করছি।
নানা প্রতিকূলতা ও সময় স্বল্পতার কারণে আমার জীবনের গল্প কখনও শেয়ার করা হয়ে উঠেনি। আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই আমার জীবনের গল্প ও তীল তীল করে আমার উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প।
আমার যতদূর মনে পড়ে সেই ছোট্ট বেলার কিছু স্পষ্ট স্মৃতি,তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করব।
আমার শৈশব ছিল অনেক সুখময় শান্তিময়। বাস্তবতা কি জিনিস সেটা আমি জানতাম না। পড়ালেখা খেলাধুলা টিভি দেখা নিয়ে আমার শৈশব কেটে যেত। বাবা-মায়ের আমি অনেক আদরের ছিলাম, এখনও আছি। কষ্ট কি জিনিস সেটা আমি জানতাম না। অভাব কি জিনিস সেটা আমি কখনোই বুঝতাম না। টাকা কিভাবে জমা করতে হয় সেটাও আমি জানতাম না।
বাবা-মায়ের আদরের ছায়াতলে থেকে পড়ালেখা করতে করতে ছোট মেয়েটি এক সময় অনেক বড় হয়ে গেলাম। জীবন কোন সময় কোন মোড় আসে তা বলা মুশকিল।কেউ বলতে পারে না কখন কি হবে। কখন সুদিন আসবে আর কখন দূর্দিন তাও বলা দুস্কর। তবুও তো জীবনে এগিয়ে যাওয়ার অবলম্বন তৈরি করে নিতে হয়। চেয়েছিলাম চাকরি করতে। পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি শুরু করি। বুঝতে শিখেছি জীবনের মানে। চাহিদা জেগেছে সঞ্চয় করার।
কখনও ভাবিনি উদ্যোক্তা হব। চাকরি করে ভালো দিনযাপন করতাম। কিন্তু করোনারি সময় সব বন্ধ হয়ে যায়। অনেক দাঁড়ে দাঁড়ে হন্য হয়ে খুঁজি চাকরি। কিন্তু মেলেনা আর চাকরির দেখা। হতাশ হয়ে যাই। হতাশ হলেও কখনও থেমে যাইনি। হার না মানা এক যোদ্ধা হয়ে উঠি আমি। আমার হতাশ অবস্থা থেকে নিজেই আবিষ্কার করি আমার পরিত্রাণের উপায়। তখন আমি চিন্তা করি কি করা যায়।সেই চিন্তা থেকেই আমার উদ্যোগ।
উদ্যোক্তা হওয়া খুব সহজ কাজ নয় তবে খুব বেশি কঠিন কাজও নয়। চাকরির পিছনে ছুটতে ছুটতে আমি ক্লান্ত। তবে একটা জিনিস উপলব্ধি করতে পারি পরিস্থিতি মানুষকে সবকিছু শিখিয়ে দেয়। পরিস্থিতি মানুষকে শিখিয়ে দেয় কোন পথে সে আগাবে। পরিস্থিতি আমাকে দিনের পর দিন রাস্তা দেখিয়ে যাচ্ছে। উদ্যোক্তা হতে গেলে অনেক রিক্স নিতে হয়,এতে আছে অনেক ঝুঁকি। আমি অনলাইনে ২০১৮ সালে ছোট্ট একটি কাপড়ের বিজনেস শুরু করেছিলাম তখন আমার কোনো পেইজ ছিল না। আমি ফেসবুকে পোস্ট করে কাপড় সেল করেছি। তারপর কিছু কারণবশত আমার বিজনেসটা বন্ধ হয়ে যায়। মনের মধ্যে প্রবল ইচ্ছা কিছু করার। এমন একটা পরিস্থিতি ছিলাম সেখান থেকে কিছু করা অসম্ভব ছিল। ২০২০ এ অনেক চিন্তা করে ঠিক করলাম কি কাজ করব। শুরু করলাম তেল তৈরির কাজ। বাসায় নিজেই তৈরি করা শুরু করি হোমমেড চুলের তেল। একটি বিউটি পার্লারে প্রথমে ১৫টা বোতল দিলাম। তারপরে ৩০ টা বোতল দিলাম । এভাবে চলতে থাকে কিছু হাত খরচের টাকা। তারপর ভাবলাম আরো কিছু প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করি। তখন শুরু করলাম জন্মদিনের প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করা যেমন বেলুন ,পাটি স্প্রে, লাইট ,হ্যাপি বার্থডে টুপি ইত্যাদি জিনিসের। কিন্তু দূর্ভাগ্য সময় উপযোগী পন্য আনতে পারি নাই বলে এই বিজনেসও লস করে বসে থাকলাম। না বুঝে বিজনেস করলে যা হয় ।
এগিয়ে চলার সাহস পাই প্রিয় মেন্টর Iqbal Bahar Zahid স্যার।যার সুশিক্ষায় আমি পূর্ণ। মেয়ে হয়েও স্বপ্ন দেখি একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার। তৈরি করতে চাই নিজের আত্মপরিচয়। পাশাপাশি আমার হোমমেড তেলকে একটি ব্রান্ডে পরিণত করার স্বপ্ন দেখি । স্যারের বিভিন্ন সেশন ফলো করলাম এবং একটি প্রোডাক্ট এর উপরেই মনোনিবেশ করলাম এবং দীর্ঘদিন এই তেলকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ নিয়মিত লেগে থাকার ফলে আমি অনেক ভালো ফলাফল পাচ্ছি।
সকলের নিকট দোয়া প্রার্থী, আমি যেনো আমার ওহীশ হেয়ার ওয়েলকে একটি ব্রান্ডে পরিণত করে ছড়িয়ে দিতে পারি ভালো মানের চুলের তেল সকলের হাতে হাতে।
স্ট্যাটাস দ্যা ডে - ৭১৬
তারিখ ৬-০১-২০২২
#আলবানী_ইসরাইল_বৃষ্টি
#জেলা:দিনাজপুর
#ব্যাচ: ১১ রেজিষ্ট্রেশন ৩৩০৬৭
#পেইজ_লিংক: https://www.facebook.com/ohaheda/