আমার জীবনের চলমান গল্প
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
""আসসালামু আলাইকুম"
আশাকরি প্রিয় গ্রুপের সকল ভাই ও বোনেরা আপনারা সবাই আল্লাহর রহমতে ভালই আছেন।আর ভাল থাকাই কাম্য।
আমাদের প্রিয় মেন্টর,তারুন্যের আইডল জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের এক
অনবদ্য রচনা "নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন "যা দেশে বিদেশের প্রায় ৪ লক্ষ মেম্বার দ্বারা সংগঠিত"। এই প্লাটফর্মের হাত ধরেই অনেকেই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে সফলতা প্রাপ্ত হয়েছেন।
জীবনের নতুন একটা গল্প তৈরী করতে পেরেছেন।
শ্রদ্ধেয় স্যার বলেছেন" জীবনে নিজের বলার মত একটা গল্প তৈরী করতে।যদিও আমি এখনো সেটা তৈরী করতে পারিনি।তবে ইনশাআল্লাহ প্রিয় প্লাটফর্মের হাত ধরেই একদিন আমিও একটি সফল জীবন ও নিজের বলার মত একটা গল্প তৈরি করবো।
তবে আজ আমি আমার জীবনের চলমান গল্পটি সকলের সাথে সেয়ার করবো।আশাকরি সকলেই মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
পারিবারিক জীবনঃ
আমার প্রিয় পরিবারের কিছু কথা ; আমি সবার মতই এক মধ্যবর্তী পরিবারের ছেলে। আমার বসবাস পটুয়াখালী জেলার অর্ন্তগত বাউফল থানার, মদনপুরা ইউনিয়ন এর দিপাশা গ্রামের হাওলাদার বাড়িতে । ছোটবেলা থাকেই গ্রামে বসবাস।
আমার পরিবারে আমরা ৪ ভাই ২ বোন,মা, বাবা এই হল আমার পরিবার। আমি পরিবারের ছোট ছিলাম। বাবা চট্রগ্রামে পোর্টে চাকুরি করত। হঠাৎ করে বাবার ডায়াবেটিকস রোগ ধরা পরে, এরপর আস্তে আস্তে আরো অসুস্থ বেশি হওয়ায় ২ বছর এর মাথায় ২০০৬ সালে বাবা মারা যায়😢।আমি তখন ক্লাশ এইট পড়ি, মানে ৮ ম এ।
এ সময় আমাদের উপর থেকে বাবার অনুপস্থিতি, চরম বাস্তবতার দিকে ফেলে দেয় আমাদেরকে।
আমার শিক্ষা কালঃ আলহামদুলিল্লাহ ছোটবেলা থেকেই ক্লাসে ১ম, ২য় না হলেও ৩য় হইতাম। বাবা মারা যাওয়ার পর আমার শিক্ষার ভার বহন মার ওপর অর্পিত হয় । মার প্রচেষ্টায় আমি ২০০৮ সালে মাদ্রাসা দিয়ে দাখিল পরিক্ষা দেই। এর মাঝে অনেক কিছু হয়ে যায় যা বলতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে। আলহামদুলিল্লাহ আমার রেজাল্ট হল ৪.৩৪।এর পর কোথায় পরব, ভাবতে ভাবতে ভর্তি সময় চলে আসে আমি দিশেহারা, কি করব?
সবার কাছে শুনি ভাল লেখাপড়া করতে অনেক টাকা লাগবে,কিন্তু কে দেবে আমাকে টাকা। বাবা নামক বট গাছটা না থাকার কারনে আমি আর ভাল কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারলাম না,😥
এ সময় কেও কোন সু পরার্মশ দেয় নাই।
সময় না থাকার কারনে আমি আমার নিজ ইচ্ছা ও প্রচেস্টায় বাড়ি থেকে অনেক দূরে একটি আলিম মাদ্রাসায় ভর্তি হই। আমি রেগুলার ক্লাশ করতে পারি নাই। কারন মাদ্রাসা অনেক দূরে, ভাড়া ১৫০টাকা লাগত। তাই আর হল না ক্লাশ করা😢
এরই মাঝে আমি আমার বাড়ির অনেক কিছু কাজ করতাম। প্রাইভেট সহ অনেক কিছু। চট্রগ্রামে ও কিছু দিন জব করি। এর মধে কেটে যায় ২ বছর।
এরপর আমি ওইখানে টাকা দাখিল করে ২০১০ সালে আলিম পরীক্ষা দেই। না ক্লাশ করে কি ভাল রেজাল্ট করা যায়? তারপর ও আলহামদুলিল্লাহ, আমি ৩.৫৮ পয়েন্ট পাই।
এর পর কি করব ভাবতে ভাবতে আবার চলে আসল ভর্তি সময়। এবারো নিজের চেষ্টায় নিজের টাকায় ভর্তি হলাম আমাদের উপজেলা বাউফল ডিগ্রি সরকারী কলেজে।
এরপর কি করব ভাবতে আছি, হঠাৎ করে আমার ঢাকা যাওয়ার কথা মনে হয়। সবাই কে বলি আমি ঢাকা যাব কিন্তু কেও মেনে নিতে পারল না। কারন তা পরে বলব।যাই হোক, আমি অনেক কস্ট করে মাকে রাজি করিয়ে দুরের এক জন লোকের মাধ্যমে ঢাকা আসি। ঢাকা সাভার হেমায়েতপুর এ ।
এখানে এসে আমি ১৭ দিন বসে বসে খাই। এটা আমার ভাললাগে না। ১৭ দিন পর আমি ডেকোগুরুপে জয়েন্ট করি। বেতন মাত্র ৩৪০০ টাকা.। ওভার টাইম করলে ৩ ঘণ্টায় পেতাম ২৪*৩ =৭২ টাকা। এভাবেই দিন যেতে লাগলো,
হঠাত করে একদিন কলেজ থেকে ফোন আসে, "তুমি কি পরিক্ষা দিবা? আমি বললাম "হ্যা স্যার দিব," স্যার বলল তাহলে তারাতারি চলে আস।আমি কাওকে কিছু না বলে যেদিন আসব ওইদিন অফিসের সকল কে বলি আমি চলে যাচিছ সবাই অবাক হয়ে বলল কি হয়েছে, আমি বলি আমার ডিগ্রি পরিক্ষা তাই।
ওখান থেকে এসে আমি ২০১৫ সালে পরিক্ষা দেই। শুধু বাসায় বসে পড়াই আমার সম্বল,, ক্লাশ তো আর করা সম্ভব হয় নাই। আলহামদুলিল্লাহ আমি সেকেন্ড ২ডিভিশনে পাশ করি।
এর মাঝখানে আমি গ্রামে একটি দোকান দেই, কারন মার কাছে থাকা যাবে ভেবে।আলহামদুলিল্লাহ ভাল সময় আসতে না আসতেই বড় ভাইয়েরা তারা সেপারেট মানে আলাদা হয়ে যায় । তাই আমি ও আমার মা থাকার জন্য একটি টিনের ঘর করি আমার টাকায়।
যাইহোক এভাইবেই ভাল যাচ্ছে আমাদের দিন। আমার দোকানে ছিল লোড,বিকাশ কসমেটিকস ইত্যাদি।আমার ব্যাবসা ভাল চলার কারনে ওইখানে এক বড় ভাইর চোখে লাগে ওনার অনেক টাকা ছিল। আমার পুঞ্জি কম ছিল যার কারনে আমি আর টিকে থাকতে পারলাম না। পাড়ি দিলাম ২০১৭ সালে আবার ঢাকা।
এর ফাকে আমি ঢাকা কবি নজরুল সরকারি কলেজে ভর্তি হই মাস্টার্সে।এর ফাকে আমি এয়ারটেলে জব নেই।পরিক্ষা দেই ২০১৭ সালে। দুঃখ তো একটাই, কলেজ না করে পরিক্ষা দেই। আলহামদুলিল্লাহ আমি আবারো সেকেন্ড ডিভিশন পেয়ে পাস করি।
এর ফাকে অনেক কিছুই মেনে নিতে হয়েছে, তা তো বুজতেই পেরেছেন। এয়ারটেলে জব করতে করতে প্রমশন পেয়ে সুপারভাইজার হই, এরপর একাউন্টস ম্যানেজার হই।
আমি একটু পিছনে যাবো," আমায় ঢাকা আসতে না দেয়ার মুল বা আসল কাহিনী হল, আমি বিধাতার রাজি খুশিমতো একজন প্রতিবন্ধি মানুষ হয়ে জম্মাই। যার করুন অবস্থা আমাকে প্রতি নিয়ত বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তাই কেও ভাল ভাবে দেখতো না। আমার ডান পা বাকা তাই সবাই যার যার মত করে দেখতে ও বলত। আরো অনেক কিছুই আছে সব বলতে গেলে আমার চোখের জলে কমতি হবে না,আশাকরি সবাই বুজতেই পারছেন আমার অবস্থা
প্রিয় প্লাটফর্ম এর সাথে যুক্তঃ
আমি লালবাগ এয়ারটেল এ জব এ থাকা অবস্তায়।
আমার সহপাটি ভাই আরফান উদ্দিন আল আমিন আমাকে বলে ভাইয়া আপনি এই গ্রুপে যুক্ত হন। তার বলায় আমি স্যারের ভিডিও গুল দেখি ভাল লাগে আমার।
তারপর তার সাহায্যে রেজিষ্টেশন করি। তার পর আমি লালবাগ জোনেকিছু কাজ করি। এরপর আমি ওখান থেকে জব টা ছেড়ে দেই, যার কারনে আমি আবার পিছে পরে যাই।এর পর আমি কেরানীগঞ্জ জব নেই এর পর আমার ভিতর একটা কাজ করে আমি কিছু একটা করব তাই আমি পুনঃ রায় আবার আল আমিন ভাই এর মাধমে রুনা আপু আমাকে কেরানীগঞ্জ এ যুক্ত করে। আমার স্বপ্ন আমি এক জন ভাল মানুষ হয়ে ভাল প্রোডাক্ট দিয়ে সবাইকে সেবা প্রদান করব।
আমি আমার নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন থেকে অনেক কিছু শিখতে পারছি। এখন অনেক কিছু শিখার বাকি আছে। সবাই দোয়া করবেন সকলে যেন আমি একজন ভাল উদ্দোক্তা হতে পারি।
প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের জন্য অন্তরের অন্তর থেকে দোয়া ও ভালবাসা। কারন তার কারনে আমি আজ আমার জিবনের গল্প বলার মত একটা প্লাটফর্ম পেয়েছি। নিজেকে নতুন রুপে তৈরী করার একটা পথ পেয়েছি।অনেকগুলো ভাল মানুষের সাথে পরিচিত হতে পেরেছি।নিজের কাজ ও সেবা দিয়ে আরো এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা পাচ্ছি।
স্টাটাস অফ দি ডে=৭২৫
তারিখঃ১৮-১-২০২২
কে এম আনিচুর রহমান
পটুয়াখালি, বাউফল
ব্যাচ নংঃ১১
রেজিষ্ট্রেশন নংঃ ৩১৩৯৩
দুরন্ত কেরানীগঞ্জ জোন
কেরানীগঞ্জ,ঢাকা