সংগ্রামে ঘেরা জীবনের এই যাত্রা.
★★সংগ্রামে ঘেরা জীবনের এই যাত্রা...★★
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু,,
★★★শোকরিয়া_জ্ঞাপন
শুরুতে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে লাকো কোটি শোকরিয়া, যে মহান রাব্বুল আলামিন আমাকে এবং নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের সকল ভাই বোনকে সুস্থ রেখেছেন।
সেই সাথে লাকো দরুদ এবং সালাম উম্মতের কাণ্ডারি সৃষ্টির সেরা মহামানব রসুলে করিম (সঃ) এর প্রতি।
★★★কৃতজ্ঞতা_প্রকাশ
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি লক্ষ তরুন তরুনীর আইডল আমার প্রান প্রিয় শ্রদ্ধেয় সম্মানিত শিক্ষক জনাব iqbal bahar zahid স্যারকে। যার হাত ধরে গড়ে উঠেছে লাকো ভাল মানুষ গড়ার প্লার্টফ্রম, নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন।
★★★ধন্যবাদ_জানাই
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের সকল মোডারেটর,ডিস্টিক এম্বাসেডর, উপজেলা এম্বাসেডর ক্যাম্পাস এম্বাসেডর, কমিউনিটি ভলান্টিয়ার, রেজিস্ট্রেশন টিম মেম্বার, ব্লাড ডোনার্স টিম মেম্বার, হাট মনিটরিং টিম মেম্বার, প্রিয় প্লার্টফ্রমের সকল ভাই বোনদের জানাই অন্তরের অন্তস্থল থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
আজ আমি আপনাদের মাঝে বলতে আসলাম মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের কত কষ্ট করতে হয় তা নিয়ে।
★★আমার বাবার জীবন যুদ্ধ
আমার শ্রদ্ধেয় পিতা এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জম্মগ্রহণ করেছিলেন। চট্রগ্রাম বায়েজিদ সেনা নিবাসের পাশেই ছিল আমার দাদাদের বাড়ি।অনেক ধন সম্পদ ছিল। বাবার বয়স যখন ১২ বছর তখন দাদা চলে গেল ভারতে চাকরির উদ্দেশ্যে।বেশ কিছুদিন পর থেকে আর কোন খোজ খবর রাখেনি, টাকাও দেয়নি। এভাবে টানা ২০ বছর চলে গেল। দাদা আর ফিরে আসেনি। আর এদিকে দাদাদের যা কিছু সম্পত্তি ছিল সব চাচারা দখল করে নিয়ে নিল। কিঞ্চিত পরিমানও আমার বাবাকে দেয়নি। তাদের অনেক টাকা পয়সা থাকা সত্ত্বেও কেউ কোন সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। শুরু হলো অভাব অনাটনের সংসার।
দাদি আর ৮ বছরের আমার একমাত্র চাচাকে নিয়েই শুরু হলো বাবার জীবন যুদ্ধ। তাদের মুখে অন্য তুলে দিতে শহরের মধ্যে বাবা কিছু কসমেটিক্স নিয়ে ফুটপাতে বিক্রি করতে শুরু করলেন। এরকম করে সংসার চলত কোন রকম। পাশাপাশি বাবা মেকানিকের কাজও শিখে ফেলেন। এভাবে চলতে চলতে হঠাৎ একদিন দাদি মারা গেলো গ্রামের বাড়িতে আনার কোন সুযোগ না থাকায় দাদিকে চট্রগ্রাম বায়েজিদ সেনা নিবাসের পাশেই দাফন করা হলো। জায়গা গুলো আমাদের ছিল। পরে সেনা নিবাসের জন্য তাদের কাছে বিক্রি করে দেয়।
আমাদের পূর্ব পুরুষের বেশিভাগ চাকরিজীবী ছিল।এখন বাবা চিন্তা করলেন এই শহরে আমার আর মাথা গুজার টাই হবেনা বুঝি।সব কিছু হারিয়ে নিস্ব হয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় যে আমি উদ্দোক্তা হবো।আমি আর শহরে থাকব না গ্রামের বাড়ি চলে যাব। আমাকে দেখার মত আর কেউ নেই।মাও চলে গেলো দুনিয়া থেকে।১৯৮৬ সালে বাবা গ্রামের বাড়িতে চলে আসে, আসার পর গ্রামে একটা মেকানিকের দোকান দেয়। প্রথম দিকে ভালই চলছিল। কয়েক বছর পর বাবা বিয়ে করল,,, আবারো হতাশায় ঘিরে ধরলো বাবাকে। আস্তে আস্তে আগের তুলনায় ইনকাম ও কমে যাচ্ছে😥।কিন্তু তারপর ও বাবা হাল ছাড়েনি। পাশাপাশি ছোট করে নার্সারির চারা গাছ উৎপাদন শুরু করলেন। এভাবেই কোন রকম চলতে থাকল। বাবার ঐ মেকানিকের দোকান এবং নার্সারি। এক সময় দেখা গেল বাবা দুইটা একসাথে চালাতে পারছেনা তাই নার্সারি বন্ধ করে দেয়।মনে হচ্ছে দুঃখ গুলো বাবার একেবারে বন্ধু হয়ে জীবনে একসাথে চলতেছে,,
★এবার শুরু হলো নিজের জীবন সংগ্রাম।
🌹প্রত্যেক বাবারা নিজের জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে সন্তানদের ভালোর জন্যে।
আমার বাবাও তার ব্যাতিক্রম নয়।
আমরা পরিবারের ছয় ভাই-বোন। তার মধ্যে আমার বড় বোন, তারপর আমি। বাবার ঐ ছোট্ট মেকানিকের দোকানের ইনকাম দিয়ে পরিবার চালাতে খুব হিমশিম খেয়ে যেত। তারপরও বাবা আমাদের কে তার কষ্টটা বুঝতে দেয়নি কোনদিন। ছোট বেলা খুব হেলায় দুলায় কাটিয়েছি আমি। বাবার কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও লেখাপড়া বন্ধ হয়নি এক মূহুর্তের জন্য।
আমার মায়ের ইচ্ছা ছিল আমাকে কোরআনে হাফেজ বানাবে। প্রাইমারি শেষ হওয়ার পর বাবা ভর্তি করিয়ে দিলেন হাফেজখানায়। প্রথম দিকে বাড়ির কাছে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছি। ঐ মাদ্রাসায় তিন বছর পড়ালেখা করার পর হেফজ সমাপ্ত করি। আলহামদুলিল্লাহ।
এর পর হাফেজিটা আরেকটু ভাল করে রিভাইস দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করি।তারপর বাবাকে বল্লাম আমি অন্য একটা মাদ্রাসায় বদলি হবো। তখন বাবা বল্লেন দেখ এখন আমার ইনকাম কম আর ইদানীং ব্যবসাটাও তেমন ভাল যাচ্ছেনা। এরিমধ্যে তুই দূরে কোথাও গেলে তুর আলাদা একটা খরচ আছে সেটা আমি কিভাবে দিব? সেই সামর্থ্যও আমার নেই,, তখন বাবাকে বল্লাম দেখেন বাবা আপনি এটা নিয়ে একদম টেনশন করবেন না. আল্লাহ যে কোন ভাবে আমাকে সাহায্য করবেন। আমি টিউশনি করে হলেও কোন রকম মেনেজ করব,,বাবা একটা শান্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বল্লেন আচ্ছা যা তুই, যদি কষ্ট করতে পারিস আমি আর কিছু বলব না ফি আমানিল্লাহ।
★★তারপর ভর্তি হলাম অন্য একটা হাফেজিয়া মাদ্রাসায়।
ঐ মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পর থেকে অনেক কষ্টের জীবন শুরু হলো😥।ছিলনা পড়ার মত ভাল একটা পাঞ্জবি। ভাল কিছু খেতে পারিনি। কোন রকম খেয়ে না খেয়ে জীবনে ধৈর্য্য নিয়ে এগুচ্ছিলাম। কোন কোন সময় নাস্তা করার জন্য ১০ টা টাকাও ছিলনা। কাউকে বলতেও পারছিনা আমার টাকা নেই। যাই হোক ওখানে আরো দুই বছর লেখাপড়া করে হাফেজি কমপ্লিট করলাম।
হাফেজি কমপ্লিট করে এসে ভর্তি হলাম অষ্টম শ্রেনিতে ২০১১ সালে.দুই-তিন কিলোমিটার রাস্তা হেটে যেতাম মাদ্রাসায়। অনেকদিন যাওয়ার পর বাবা কষ্ট করে কোন রকম একটা সাইকেল কিনে দেয়। তারপর থেকে সাইকেল নিয়ে আসা যাওয়া করতেছিলাম।অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা দিয়ে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার কিছুদিন পর বাবার দোকানের সামনে থেকে সাইকেল টাও চুরি হয়ে যায়😥😥,,,
তারপরও হাল ছাড়িনি। আবারো পায়ে হেটে মাদ্রাসায় যাওয়া আসা শুরু। এসএসসি টা দিলাম ২০১৪ সালে।২০১৬সালে এইচএসসি পরিক্ষা শেষ হওয়ার একদিন পর আসল বড় বোনের বিয়ের দিনটা।বিয়েও ধুম ধাম করে হয়ে গেলো।
😥বড় বোনের অকালে মৃত্যু বরণ।
বড় বোনের বিয়ে হয় ২০১৬ সালে। তার প্রথম ছেলে সন্তান হয়। সবাই খুশিতে আত্মহারা। শাশুর বাড়িতে অনেক কষ্টে ছিল বোনটা। আপুর শাশুড়ি টা ছিল অন্য ধরনের। সব সময় পুত্র বধুদের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত থাকত। ছোটখাটো বিষয় নিয়েও ঝগড়া করত।প্রতি রাতেই বালিশ ভিজত বোনের কান্নায়। এভাবে কষ্টের জীবন পার করতে করতে ২০১৯ সাল।
হঠাৎ একদিন বোনের ডাইরিয়া হলো। তখন সে প্রেগনেট ছিল। ডাক্তার অনেক চেস্টা করেও তার ডাইরিয়া টা কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রনে আনতে পারছেনা। ভারি কোন ঔষধ ও দিতে পারছে না প্রেগনেট অবস্তায়। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে কিছুদিন পর দেখা গেল বোনের অবস্তা দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। ডাক্তার সিদ্ধান্ত নিল সিজার করাই ফেলতে হবে। সিজার করতে গিয়ে দেখল পেটে টিউমার😥😥। এগুলোও অপারেশন করল। তারপর মেয়ে সন্তান হলো।
আস্তে আস্তে বোনের অবস্তা আরো করুণ। গলার দুই পাশে দুইটা টিউমার দেখা দিল। দিন দিন সেগুলা বড় হতে লাগল। গলার আওয়াজ ছোট হতে শুরু করল। হাত পাও সব কিছু অবস হয়ে আসছে!গায়ের শক্তি সব চলে যাচ্ছে! তারপর ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ চট্রগ্রাম মেডিকেল থেকে রিলিস দিয়ে দিল।
ডাক্তার বলেছিল ১৪ দিন পর আবার ক্যান্সার বিভাগে দেখা করতে। বাড়িতে এনে সবাই ভাল ভাবে দেখাশুনা করতেছিলাম। আশা ছিল আমাদের বোন আবার আগের মত হাটতে পারবে সবার সাথে কথা বলবে পারবে। আমাদের সেবা যত্নের কোন কমতি ছিলনা। বাড়িতে আনার পর ৭ দিন পর্যন্ত কথা বলতে পারছিল। তারপর থেকে গলার আওয়াজ একেবারে বন্ধ হয়ে গেলো😥😥😥 তখন সব কিছু বোন বলত ইশারাই! মূখের আওয়াজ আর নেই। তখনও মনে হলো আমার বোন ভালো হয়ে যাবে। আমি অন্য জায়গায় ছিলাম চাকরির কারনে। তারপরও কয়েকদিন পর পর দেখে আসতাম।যেদিন রাতে ১৪ দিন পূর্ণ হলো অর্থাৎ ৮এ অক্টোবর ২০১৯ সাল। সেদিন রাতেই মায়ের সাথে বেশ কিছুক্ষন হাসতেছিল। মাও খুশি আমার মেয়ে আমার সাথে হাসতেছে।রাত ১২টা -১২ঃ৩০ পর্যন্ত বোনের পাশেই বসা ছিল মা।হঠাৎ তার কিছুক্ষন পর আরেকটা মায়ের সাথে হাসি দিয়ে বোন চলে গেলো না ফেরার দেশে😥।
তখন তার মেয়ের বয়স মাত্র ৩২ দিন! সবাই চিন্তা করছি ছোট ছোট মাসুম বাচ্চা গুলো দেখাশুনা কে করবে। দুইটি জীবন দান করে তার পুরো জীবন বিসর্জন দিয়ে দিল।
(বোনের একটা কথা এখনো কানে বেজে উঠে মেডিকেল দেখতে গেলে বলত তোকে দেখলে মনটা অনেক বড় হয়😥😥😥)
এখন বোনের জন্য দোয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিলনা।বোন তোর জন্য সব সময় দোয়া করি আল্লাহ যেন জান্নাত বাসী করেন। আমিন ছুম্মা আমিন। বড় বোনের ভালবাসা আর পাবনা হয়ত। তারপর নিজের বলার মত গল্প প্লার্টফ্রমে যুক্ত হয়ে দেখলাম অনেক বোন এখানে আছে। আমি চিন্তা করলাম বড় বোন একটা হারিয়েছি কিন্তু তার বিনিময়ে হাজার টা বোন আমি পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।সব বোনদের জন্য রইলো আন্তরিক ভালবাসা।
🍀উদ্দোক্তা হওয়ার মানসিক চেতনা কিভাবে হলো।
একদিন ফেইজবুকে ভিডিও দেখছিলাম। দেখতে দেখতে হঠাৎ ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের ভিডিও চোখে পড়লো। তারপর পুরোটাই দেখলাম। মাঝখানে স্যারের একটা কথা শুনে খুব ভরসা পাচ্ছিলাম।
"স্বপ্ন দেখুন,সাহস করুন,শুরু করুন,এবং লেগে থাকুন সফলতা আসবেই।"
এই কথাটা কেমন জানি মনে দাগ কাটল। এভাবে স্যারের ভিডিও প্রতিদিন দেখতে লাগলাম।এবং নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশন গ্রুপে জয়েন করার পর ১১ তম ব্যাচে রেজিস্ট্রেশন করি। তারপর থেকে স্যারের সেশন গুলো প্রতিদিন দেখতে থাকি। স্যারের প্রতিটা কথা মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকলাম।যতই সেশনগুলো পড়তেছি ততই মনোবল শক্ত হচ্ছে । ছোটবেলা থেকে সবাই বলতো তোমাকে ডাক্তার হতে হবে, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে, মাস্টার হতে হবে, বড় কোন চাকরি করতে হবে, কিন্তু কেউ কখনো বলেনি তোমাকে উদ্দোক্তা হতে হবে। তুমাকে উদ্দোক্তা হতে হবে এই কথাটা প্রথম শুনেছিলাম নিজের বলার মত গল্প প্লাটফর্মে যুক্ত হওয়ার পর। শিখতে লাগলাম কিভাবে উদ্দোক্তা হতে হয় স্যারের কথা গুলো যতই শুনি মনে প্রশান্তি যোগায়। আর এই শিক্ষা বিনামূল্যে দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার। আলহামদুলিল্লাহ স্যারের শিক্ষা বুকে ধারণ করে কিভাবে একজন সফল উদ্দোক্তা হওয়া যায় সেই লক্ষ নিয়ে আগাচ্ছি সামনের দিকে সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
পরিশেষে ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এবং প্রিয় প্লাটফর্মের দায়িত্ত্বে থাকা সকল ভাই বোনদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালবাসা জানিয়ে আজকের মত এখানেই শেষ করলাম।
খোদা হাফেজ।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭১৯
Date:- ০৯/০১/২০২২ইং
💢মুঃনেওয়াজ উদ্দিন
💢ব্যাচঃ১১
💢রেজিঃ২৯৯৪৮
💢চট্রগ্রাম,, ফটিকছড়ি
💢রক্তের গ্রুপ, ও পজিটিভ
💢পেশা,,চাকরিজীবী এবং একজন উদ্দোক্তা।
💢কাজ করছি ছেলেদের পোশাক নিয়ে।