আজ আমি বলবো আমার স্বপ্ন জয়ের কথা
আসসালামু আলাইকুম,
#স্বপ্ন দেখতে দুটি চোখ ইই যথেষ্ট নয়,,,,,
#আজ আমি বলবো আমার স্বপ্ন জয়ের কথা।
#দুটি চোখ আপনাকে কখনোই স্বপ্ন দেখাবেনা,, স্বপ্ন দেখাবে আপনার "মন "
আপনার ভেতরে থাকা সুপ্ত বাসনা।
এই এক জোড়া চোখ আমাদের সবারই আছে কিন্তু আমরা সবাই কি স্বপ্ন দেখি?
#আমি বলছি,,,, জীবনকে গড়ে তোলার স্বপ্নের কথা,
আমি বলছি,,,, লক্ষ্যে পৌছানোর স্বপ্নের কথা,
আমি বলছি,,,, নিজের বলার মতো একটা গল্প তৈরির স্বপ্নের কথা।
এই স্বপ্ন গুলো দেখতে হলে আমাদের সবারই একটা ভালো মন থাকা চাই।
আমি মনে করি আমাদের সবার ভেতরেই এই মন আছে শুধু একটু যত্ন করা দরকার এই মনটাকে।
#ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখেছি একজন উদ্যোক্তা হবো কিন্তু তেমন সুযোগ হয়ে উঠেনি।
উদ্যোক্তা যখন হয়েছি তখন নিজেকে চর্চা করতে শিখিনি।
হঠাৎ ইই পেয়ে গিয়েছি সেই স্বপ্নের কারিগর,,,, জনাব "ইকবাল বাহার জাহিদ " স্যারকে।
পেয়েছি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার স্বপ্ন দেখার প্লাটফর্ম।
যা সবই সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রিয় স্যারের কারনে।
আজ আমি স্বপ্ন দেখি লক্ষ্যে পৌছানোর।
#ছোট বেলা থেকেই শান্ত প্রকৃতির আমিটাকে একটু চঞ্চল করতে চেয়েছি বার বার, স্বপ্ন দেখেছি জীবনে কিছু করার।
মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবার বড় মেয়ে ছিলাম, আর বড় বলতে বুঝতেই পারছেন যেমন ভালোবাসা পাওয়া যায় তেমনি আবার সব কিছু সইবার ক্ষমতাটাও একটু বেশি নিয়েই জন্মায় পরিবারের সব বড় ছেলে মেয়েরা। আমিও এর ব্যতিক্রম নই।
মাস্টার্স শেষ করে খুব ইচ্ছে ছিলো একটা চাকরি করার, অনেক বার চাকরির পরিক্ষা দিয়েছি ,কোথাও টিকেছি আবার কোথাও বা নিরাশ হয়ে ফিরেছি। চাকরির বাজারে আজ বড় এমাউন্টের টাকা আর মামা খালু না থাকলে সেই চাকরি টাও হয়না। আমার এগুলোর সবই ছিলো, কোথাও কমতি ছিলোনা কিন্ত ভাগ্যের পরিহাসে আমার কপালে সেই চাকরি নামক সোনার হরীনের দেখা মিললোনা।
তবে স্বপ্ন থেকে দুরে থাকিনি।
বিয়ের পর পড়াশুনা চালিয়ে গেছি, মাস্টার্স শেষ করেছি। কিন্ত একটা মেয়ের পরিচয় শুধু বিয়ে আর পরাশুনাতেই আটকে থাকতে পারেনা, নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের একটা পরিচয় থাকাটা খুব দরকার।
#খুব বেশি দিন আগের কথা নয়,
ঢাকায় গিয়েছিলাম একটা চাকরির এক্সাম দিতে,
এক্সাম শেষে,
সখের বসে ঘুড়তে গিয়েছিলাম #হাতির ঝিলে আমার ছোট দুই ভাইয়ের সাথে,
সেখানে অগনিত মানুষের আনাগোনা, কেউ স্থানীয় আবার কেউবা আমার মতো ভিন্ন জেলার।
পরিবেশটাও খুব সুন্দর লাগছিলো আমার কাছে, ঢাকার এই যান্ত্রিক জীবনের মাঝেও একটা মনোরম পরিবেশ।
একটু একটু করে সামনের দিকে হাটতেই চোখে পরলো বেশ কিছু ছোট ছোট ছেলে খেলাধুলা করছে। তাদের পাশ দিয়েই আমি যাচ্ছিলাম আর তাদের দেখছিলাম,
মুহূর্তের মধ্যে ওই ছোট ছোট ছেলে গুলো খেলা বাদ দিয়ে আমার কাছে এসে আমাকে সালাম দিলো এবং আমাকে ঘিরে ধরলো,
আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ওরাই বলতে শুরু করলো
#আপু আপু আপনাকে আমাদের নিজের বোনের মতো মনে হচ্ছে, আমাদের একটা ইচ্ছা পুরোন করবেন?
আমি বললাম, হুম বলো, কি তোমাদের ইচ্ছা?
#আসে পাশের অনেকেই বলতে লাগলো, আপু এদের কথা আপনি শুনবেন না, এরা ধান্দায় থাকে।
আমি শুধু শুনে গেলাম, অন্যদের কথায় কান না দিয়ে ওদের বললাম, বলো কি ইচ্ছা?
#ওরা বললো আপু আপনার সাথে শুধু একটা ছবি উঠাবো। এখানে অনেকেই ঘুড়তে আসে কিন্তু আমরা সবার কাছে এই আবদার করিনা আবার অনেকেই আমাদের অবহেলা করে আমাদের আবদার রাখেনা কারণ আমরা বস্তিতে থাকি তাই কিন্তু আপনাকে কেনো জানিনা খুব আপন মনে হয়েছে তাই আপনার কাছে আমাদের আবদার আপু। প্লিজ আপু একটা ছবি উঠাবো শুধু।
#আমার খুব খারাপ লাগছিলো এই ভেবে যে এই ছোট ছোট বাচ্চা গুলোও আজ বুঝে গেছে তাদের অবস্থান কোথায়! শুধুই আমাদের এই সমাজ ব্যাবস্থার জন্য, উঁচু নিচু ভেদাভেদের জন্য।
#ওদের আমি বলেছিলাম ছবি তো উঠাবো কিন্তু ছবি গুলো তোমরা নিবে কিভাবে?
ওরা বললো, আমাদের ছবিগুলো লাগবেনা আপু।
#আমি কিছুটা অবাক হয়েছিলাম,
অবাকের সুরে বলেছিল,
তোমরা যদি ছবি গুলো নাই নিতে পারবে তাহলে ছবি উঠাবে কেনো?
ওরা আমায় বললো ---
আপনি নিয়ে যাইয়েন আর আমাদের এই ছবি গুলো যখন দেখবেন তখনি আমাদের কথা আপনার মনে পরবে,
এই যে আমরা আপনার মনের মাঝে সারাজীবন থেকে যাবো একটা ছবির জন্য এটাই আমাদের অনেক বড় পাওয়া।
#আমি হতোবাক হয়ে ওদের কথা গুলো শুনছিলাম আর ভাবছিলাম, এই ছোট ছোট আর অনাদর, অবহেলায় বড় হচ্ছে যে ছেলে গুলো তাদের মাঝে এতো সুন্দর একটা অনুভূতি কিভাবে এলো! যা কিনা আমাদের ভদ্র সমাজের কিছু শিক্ষিত, জ্ঞানী মানুষদের মাঝেও নাই!
#আমি তাদের কাছে অপরিচিত একটা মানুষ
আর শুধু এই আমার মনের মাঝে সারাজীবন জায়গা করে নিবে বলেই ছবিটা উঠবে।
#সেদিন অনেক গুলো ছবি উঠেছিলাম ওদের সাথে। আর আমার আরো ঘুড়াঘুড়ির পুরো সময়টা কাটিয়েছিলাম ওদের সাথে। অনেক গল্প করেছিলাম, জেনেছিলাম তাদের জীবনের সুখ দুঃখ গুলো।
কিছুটা সময়ের জন্য আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম তাদের মাঝে।
খুব করে ইচ্ছে হচ্ছিলো তাদের জন্য অনেক কিছু যদি করতে পারতাম।
কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই সাধ্য আমার সেদিন ছিলোনা!
তবে যতো টুকু সাধ্য ছিলো ততোটুকুই করেছিলাম।
#কয়েকদিন পরে ঢাকা ছেড়ে নাটোরের উদ্দ্যেশ্য রওনা দেয়ার সময় মনে পরেছে ওদের কথা বার বার।
আর ভাবছিলাম, এই সমাজের হাজারো নষ্ট হয়ে যাওয়া ছেলে পেলে আছে, কেউ নেশা করে, কেউ চুরি করে, কেউ চাদা বাজ, কেউবা সন্ত্রাসী হয়েছে।
আমরা এদের বাইরের রুপ টা দেখে খুব সহজেই বিচার করে ফেলি কিন্তু এদের জীবন নষ্ট হয়ে যাবার পেছনের গল্পটা কেউ পড়ে দেখিনা বা জানার চেষ্টা টুকুও করিনা!
হায়রে জীবন!
এদের জীবন ও হতে পারতো সুন্দর, সাবলীল। অথচ?
#মিথ্যে বলবো না,
প্রতিটা বখে যাওয়া, নষ্ট হয়ে যাওয়া জীবনের পেছনের গল্প আমি খুঁজে বেড়াই সব সময়।
সরাসরি তাদের দোষারোপ আমি কখনোই করিনা।
দোষী তখন নিজেদেরকেই মনে হয়।
কারন, আমরা এই পুরো সমাজ ইচ্ছা করলেই তাদের একটু ভালো জীবন দেয়ার চেষ্টা হয়তো করতে পারতাম।
#এখনো আমি প্রতিটা দিন ওদের ছবি বের করে দেখি আর ভাবি ওদের সাথে দেখা হলে হয়তো আমাকে এরা চিনবেনা কারণ ওদের সাথে ক্ষনিকের দেখা আর ওদের কাছে আমার কোনো ছবিও নেই কিন্তু আমার মনে ওরা সারাজীবনের জন্য একটা জায়গা করে নিয়েছে।
কিছু দিন পরে ওখানে গিয়ে এদের সাথে দেখা হলেও হয়তো আমিও ওদের চেহারা দেখে চিনবোনা কারণ ওরা বড় হয়ে যাবে। বদলে যাবে সময় বদলে যাবে চেহারা।
কিন্তু ক্ষনিকের সেই নিষ্পাপ মনের ভালোবাসা থেকে যাবে আমার মনের মাঝে আজীবন।
#শুধু বড় বড় স্কুল কলেজে পড়াশুনা করলে আর ভদ্র সমাজের কিছু মানুষের সাথে মেলামেশা করলেই যে আপনি ভালো শিক্ষা অর্জন করবেন তা নয়,
এই অবহেলায় বেড়ে উঠা শিশুদের কাছ থেকেও শেখার আছে অনেক কিছু।
#তাই আসুন তাদের অবহেলার চোখ দিয়ে নয়, ভালোবাসার চোখ দিয়ে একটু দেখি সবাই মিলে।
তাদের পাশে দারাই।
#হ্যা আমাদের হয়তো এই সমাজের সব অবহেলিত মানুষের পাশে দারানো সম্ভব নয় কিন্তু আমি একজনের, আপনি একজনের এমন করে আমরা হাজার জন মানুষ হাজার জন অবহেলিত মানুষদের পাশে দারাতে পারি।
#আজ আমি একটা সুন্দর ভালোবাসার প্লাটফর্ম পেয়েছি, যেখানে শুধু বিজনেস আইডিয়াই শেখানো হয়না, সাথে শেখানো হয়, কিভাবে মানুষকে ভালোবাসতে হয়, কিভাবে একজন ভালো মানুষ হওয়া যায়।
আর এগুলোর জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক Iqbal Bahar Zahid স্যারের প্রতি।
যিনি এতো সুন্দর একটা প্লাটফর্ম আমাদের উপহার দিয়েছেন।
#জীবনে নিজ পায়ে দাড়াতে চেয়েছি সবসময় আর এটার বড় একটা কারন হলো নিজের অস্তিত্ব শক্ত করে অবহেলিত মানুষের পাশে যেনো দাড়াতে পারি।
#আমি বিশ্বাস করি এই প্লাটফর্ম এর সবাই ভালো মানুষিকতা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে আর বিজনেসের পাশাপাশি ভালো কাজ গুলো করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
কারন -আমাদের শ্রদ্ধেয় স্যার এই শিক্ষাই দিয়ে আসছেন সবাইকে, আলহামদুলিল্লাহ্।
#চাকরি টা যখন আমার কাছে হলো সোনার হরীন
তখন স্বপ্নটাকেও পরিবর্তন করতে বাধ্য হলাম।
ফিরে গেলাম ছোট বেলার স্বপ্নে।
হার না মানা এই আমি হাতে তুলে নিলাম পেন্সিল আর খাতা, শুরু করলাম আমার নিজস্ব ডিজাইনে সুই সুতার মাধ্যমে এবার নিজের পরিচয় টা ফুটিয়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।
আর কিছু অবহেলিত কিছু শিশুদের পাশে দাঁড়াবো।
সেদিনের পর থেকে আমার মনটাকে আরো বেশি করে নাড়া দিয়েছিলো যে আমাদের দেশের কত শিশু আজ অবহেলিত আর সব কিছু থেকে বঞ্চিত।
#নিজের জমানো ৫০০০ টাকা দিয়ে শুরু করলাম আমার উদ্যোক্তা জীবনের পথ চলা কিন্ত ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। পুরো একটা বছর আমার তেমন কোনো সেল ছিলোনা। কত বার আমি কত কথা হজম করেছি। আমাকে দিয়ে কিছু হবেনা, আমি কিছুই পারিনা, কেঁদেছি বহু বার কিন্ত কারো কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ থেকেছি আর আমার বিজয়ের দিনটির জন্য অপেক্ষা করেছি।
মনোবল হারাইনি কখনোই।
আমি শুধু ভাবতাম আমাকে আমার স্বপ্ন জয় করতেই হবে।
প্রথমে মেয়েদের পোশাকে আমার নিজস্ব ডিজাইন দিয়ে কাজ করাতাম তাই ভাবলাম এবার নতুন কিছু নিয়ে কাজ করবো।
শুরু করলাম নতুন কন্সেপ্ট দিয়ে, আমার নিজস্ব ডিজাইন দিয়ে পাঞ্জাবীতে সুই সুতার কাজ।
আমার কর্মী ছিলো কয়েকজন।
কিন্ত আমার এই নতুন আইডিয়াতে সবাই বাধা দিলো।
কেউ আমাকে এটাতে সাপোর্ট করলোনা কিন্ত আমি এক রকম জীদ করেই শুরু করলাম পাঞ্জাবীতে হাতের কাজ, এই প্লাটফর্ম এর হাসান মাহামুদ ভাইয়ের মাধ্যমে আমি প্রথমে ৬ টা পাঞ্জাবী নিয়ে আসি।
যেহেতু ডিজাইন গুলো আমার নিজস্ব এবং ইউনিক হয়ে থাকে তাই আমি প্রথমেই খুব ভালো সাড়া পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ্,
প্রথম মাসেই আমি ৫২০০০ টাকার পাঞ্জাবী সেল দেই এর পরে আর আমাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
চলছে আমার বুনো ফ্যাশনের যাত্রা এবং আমার ডিজাইন গুলোতে কাজ করা পাঞ্জাবী পুরো বাংলাদেশ জুড়ে বেশ সুনাম অর্জন করেছে আলহামদুলিল্লাহ্।
#আজ আমার সেই হাতিরঝিলের অবহেলিত শিশু গুলোর কথা খুব মনে পরে কারন আমার আজ সাধ্য হয়েছে তাদের মতো শিশুদের পাশে কিছুটা হলেও দাড়ানোর। আল্লাহ্ যেনো আমাকে আরো ভালো কিছু করার তৌফিক দান করেন।
#জিবন আমাকে অনেক শিক্ষা দিয়েছে।
অবশেষে আমি আমার স্বপ্ন জয় করতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ্।
আর কিছু অবহেলিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে পারবো বলে মনে করি এবং মনে প্রাণেবিশ্বাস করি।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭২০
Date:- ১১/০১/২০২২ইং
#মিতু মরিয়ম
#ব্যাচ :১১
#রেজিঃ ২৮৯৬১
#জেলা :নাটোর
#ওনার অফ :বুনো ফ্যাশন
#কাজ করছি হাতের কাজের পন্য নিয়ে।