যতই দেখছিলাম ততই যে আমার চোখ থেকে অন্ধকার সরে যাচ্ছিলো
=======বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
=======আসসালামুআলাইকুম।
আশা নয় বিশ্বাস করি, যে যেখানে আছেন ভালো আছেন, সুস্থ আছেন।
আলহামদুলিল্লাহ, আমিও ভালো আছি।দোয়া করবেন, আমি যেন আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসায় সব সময় ভালো থাকতে পারি।
আমি শুকরিয়া আদায় করছি, মহান আল্লাহ তায়ালা র কাছে,যিনি এই করোনা মহামারীর মাঝেও আমাকে সুস্থ রেখেছেন।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার বাবা ও মায়ের প্রতি , তাদের কারণে আমি এই সুন্দর পৃথিবী দেখতে পেয়েছি।
আমি আরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, ২১ শতকের সেরা আবিষ্কার, লক্ষ লক্ষ তরুণ তরুণী উদ্যোগক্তাদের আইডল,উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর,একজন স্বপ্ন বাজ মানুষ, যিনি স্বপ্ন শুধু দেখেনই না, প্রতিদিন নতুন নতুন স্বপ্ন দেখান,স্বপ্ন দেখাতে ভালোবাসেন,একজন সফল উদ্যোক্তা আমাদের সবার প্রিয় নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, আমাদের সবার প্রিয় জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি।
=আজ আপনাদেরকে শুনাবো আমার জীবনের গল্প=
আমি খুব দরিদ্র ঘরের ছেলে।গরিব হলেও আমাদের সংসারে ভালোবাসার কোন অভাব ছিলো না। আম্মা,বাবা,আমি, ছোট ভাই, আর ছোট দুটি বোন কে নিয়ে আমাদের সুখের একটা সংসার ছিলো।আম্মা আমাদেরকে খুবই ভালোবাসতেন।বাবাও বাসতেন তবে আমরা বাবাকে তেমন একটা পেতাম না।কারন বাবাই আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জন ক্ষম ব্যক্তি।তাই সকালে ভোরে কাজে যেতেন আসতে আসতে অনেক রাত হয়ে যেতো।আমাদের সাথে দেখা হতো কম।
আম্মা ছিলেন খুব রাগি,তাই খুব শাসনের মধ্যেই ছিলাম আমরা ছোট বেলা থেকে।অবশ্য আম্মা আমার উপর ই বেশি রাগ করতেন,কারন আমি পড়াশোনা করতাম ঠিকঠাক, খেলাধুলার জন্য ছিলাম খুব আগ্রহী। কিন্তু খাওয়া দিকে ছিলাম দূর্বল, তখন এমন মনে হতো যে ভাত না খেতে পারলেই যেন বেচে যাই।আম্মা ও দেরি করতেন না ধুমধাম দিয়ে,জোর করে খাওয়াতেন।এটাই যে মায়ের ভালোবাসা ছিলো তখন বুঝিনি,এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আম্মা বলছি বলে অভাগ হবেন না,
আমার মাকে আমরা ৪ ভাই বোন আম্মা বলেই ডাকতাম।
"""""আমার জীবনে হঠাৎ করে নেমে আসা অন্ধকার """"
সব কিছু ঠিক চলছিলো।২০০৩ সালের ২৫ ই জুন সন্ধা থেকেই প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা ৪ ভাই বোন প্রতি দিনের মতো ২৫ ই জুন রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সারা রাত একটানা বৃষ্টি হয়েছে। ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি তখনও বৃষ্টি হচ্ছে। সারা রাত ভর বৃষ্টি হওয়ার কারনে পাহাড়ি ঢল নামে রাত থেকেই। ২০০৩ সালের ২৬ ই জুন সকালে ধীরে ধীরে সেই পাহাড়ি ঢল আরও বাড়তে থাকে,, বেলা বাড়ার সাথে সাথে সেই ঢল রূপ নেয় বন্যায়। আমাদের বাড়ি খালের পাশে হওয়ায় সকাল ৯ঃ০০ টার সময় আমাদের উঠানে বন্যার পানি চলে আসে।বন্যার বাড়ার গতি দেখে আমরা সবাই ঘরের জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্চি।মাত্র ৩০ মিনিটের ব্যবধানে বন্যার পানি আমাদের ঘরে ঢুকে পড়ে।এবং খুব দ্রুত পানি বাড়ছিলো।৯ঃ৫০ মিনিটের সময় আমাদের ঘরে কোমর সমান পানি। এরই মধ্যে ঘরের জিনিসপত্র প্রয়োজনীয় সব কিছু সরিয়ে নেওয়া হয়েছে অন্য জায়গায় মানে আমার নানার বাড়িতে। আমার ভাই ও ২ বোনকে আগেই নানার বাড়ি রেখে আসে আমার আম্মা। ঘরের মধ্যে পানি যখন কোমর সমান হয় তখন আমার বাবা আমাকে আর পানিতে নামতে দেয়নি। সব কিছু নিয়ে আসার পর যখন ৯ঃ৫৫-১০ঃ০০ বাজে তখন আমাদের ঘরে বন্যার পানি বুক সমান। তখনই আম্মার মনে পড়ল একটা কাপড়ের ঝুড়ি আর পবিত্র কুরআন শরীফ রয়ে গেছে। আম্মা বললো আমি এগুলো নিয়ে আসতেছি।আম্মা আর বের হয়ে আসতে পারে নি সে দিন।এক হাতে কুরআন শরীফ, অন্য হাতে ঝুড়ি নিয়ে ঘর থেকে বাহির হওয়ার সময় ঘর ভেঙে পড়ে,আম্মা ঘরের নিছে চাপা পড়ে যায়।মূহুর্তে ই আমরা ৪ ভাই বোন হয়ে যাই এতিম। তখন আমি ৭ ম শ্রেণিতে পড়ি,ছোট ভাই ৩য় শ্রেণিতে,বড় বোন ১ম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট বোনের বয়স ছিল মাত্র দেড় বছর। আমাদের ছোট ছোট রেখে আম্মা চিরদিনের জন্য পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।আমার মায়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন।
তবে সেদিন আম্মাকে উঠিয়ে আনতে সময় লেগেছে মাত্র ১৫ মিনিট। এর ই মাঝে বন্যার পানি ও নেমে গেছে।কোথায় যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো পানি।সাথে সাথে বৃষ্টি ও বন্ধ হয়ে গেলো।এভাবে চিরতরে মাকে হারালাম।
""""""""" শিক্ষা জীবন """"""
ক্লাস ওয়ান থেকেই ভালো ছাত্র ছিলাম।তাই শিক্ষকেরা খুব আদর করতো আমায়।কোন দিন কোন কারনে ফাস্ট বেঞ্চে বসতে না পারলে মন খারাপ হয়ে যেতো।স্যারেরা ও বুঝতেন অন্য কাউকে পিছনে দিয়ে আমাকে সামনে নিয়ে আসতেন।
প্রাইমারি জীবন খুব ভালোই কেটেছে আমার।প্রতিযোগিতা করে পড়াশোনা করতাম।
হাইস্কুলে যাওয়ার পর পড়ালেখার উপর কিছুটা গুরুত্ব কমে যায় হঠাৎ করে। ৬ষ্ঠ শ্রণীর বার্ষিক পরীক্ষায় রেজাল্ট খুব খারাপ হয়। ৭ম শ্রেণীতে ভালো ফলাফলের আসায় প্রস্তুতি নিতে লাগলাম। কিন্তু এর ই মাঝে আম্মা মারা যান।এর পর প্রতি দিন নতুন নতুন প্রতিবন্ধকতা আসতে থাকে। তবুও টেনে টুনে দশম শ্রেণি পযন্ত করেছি।আমার বাবাও চেষ্টা করেছে,, কিন্তু অভাবের সংসার বাবার ও কিছু করার ছিলো না। বেরিয়ে পড়লাম জীবিকার খোঁজে।
=========কর্ম জীবন=========
আল্লার রহমতে, ও মুরুব্বিদের দোয়ায়, জীবনে যে কাজ ই করেছি,, খুব অল্প সময়ে কাজ আয়ত্ত করতে পেরেছি। জীবনের শুরু তে একটা ইনসুরেন্সের কোম্পানির কাজ দিয়ে শুরু করেছি আমার কর্ম জীবন। শুরু থেকে ভালোই মনে হলো।কিন্তু ৩-৪ মাস পর যখন কোম্পানি সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম,তখন দেখলাম কোম্পানি ভালো,যে অফিসারের অধিনে কাজ করছি উনার মধ্যে গড়মিল আছে।তাই আস্তে আস্তে নিজেকে সরিয়ে নিলাম ঐ কোম্পানি থেকে।
2009 সালের শেষের দিকে ঢাকায় একটা ফুড& বেভারেজ কোম্পানিতে চাকরি নিলাম ৩০০০/ বেতনে।অল্প কিছু দিনে বেভারেজে কাজ শিখে ফেললাম,বেতন ও বাড়লো।কিন্তু তা দিয়ে আমার পরিবারের চাহিদা পূরণ হচ্ছিলো না,তাই সবার চাওয়া মতন ফিরে আসলাম ঢাকা থেকে।
ফিরে এসে মামাতো ভাই দের সাথে চাকরি নিলাম মিরেরশ্বরাই উপজেলার, বারইয়ারহাট পৌর মৎস্য আড়ৎ এ।ভালো বেতনের আশায়।
এখানেও অল্প দিনে কাজ শিখে নিলাম।অন্যরা যেখানে কাজ শিখে ম্যানেজার হতে সময় লাগে ৭-৮বছর বা তার অধিক সময়। সেখানে আমি মাত্র ২ বছরেই আড়তের মেইন পোষ্ট ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ পাই।
ধীরে ধীরে পাল্টাতে থাকে আমার জীবন, ভালো বেতন, সপ্তাহে একবার বাড়ি যাওয়ার সুযোগ সব মিলিয়ে পরিবার ও আমার জীবনে আসে ব্যপক পরিবর্তন। কয়েক মাস পর আমাদের ছোট্ট ঘর টাকে নতুন করে বড় করলাম।দেখতে দেখতে ভাই বোনেরা বড় হয়েছে।প্রায় ৪ লক্ষ টাকা খরচ করে বড় বোনকে বিয়ে দিলাম,ভাইয়ের জন্য একটা দোকান নিলাম।বাবার কিছু টাকা ঋণ ছিলো সেটা শোধ করলাম। বাবার চাষের জন্য ২ বিঘা( কানি বলে আমাদের এলাকায়) জমি নিলাম,এবং ঘরের আসবাবপত্র, ফার্নিচার থেকে শুরু সব যা যা প্রয়োজন ব্যবস্থা করলাম। বেশ গেছালো ভালো একটা অবস্থান তৈরী হলো গ্রামে আমাদের।বাবা, আম্মা ( আম্মা মারা যাওয়ার পর বাবা আবার বিয়ে করেছিলেন) ও আমার চেষ্টায়, আমাদের ভালো একটা সময় কাটতে থাকলো।
"""""""" চাকরির পাশাপাশি উদ্যোক্তা """""
২০০৮ সাল থেকে মনের মধ্যে স্বপ্ন পুষে রেখেছি একজন উদ্যোক্তা হবো।দিন যায়, মাস যায়, পেরিয়ে যায় অনেক গুলো বছর, কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবে রূপ দিতে পারছিলাম না।বাবার কাছে বললে বাবা বলে না দরকার নাই ব্যবসা করার, যে ভাবে আছি সে ভাবে যেন চাকরিতে থাকি।বাবা কোন রকম ঝুঁকি নিতে রাজি না।রাজি হবেই বা কেন, পৃথিবীর কোন বাবা কি চায় যে তার ছেলে নিশ্চিত ভবিষ্যত রেখে অনিশ্চিত ব্যবসার ঝুঁকি নিক।এভাবে আরো ৪-৫ মাস কেটে গেলো, কোন ভাবেই পরিবারের কাউকে বুঝাতে পারলামনা। তাদের কথা একটাই ব্যবসা অনিশ্চিত, তাছাড়া আমার কোন অবিজ্ঞতা নাই।
আমি থাকবো চাকরিতে কি ভাবে সামলাবো এ চিন্তায় রাজি না পরিবারের কেউ। আরো প্রায় ২-৩ পর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ করে আমার কাকা ( বাবার ছোট ভাই) আমাকে ফোন দিয়ে বললো, উনি ( কাকা) যে খানে কাজ করেন লোকাল একটা আইসক্রিম ফ্যাক্টরীতে,
ঐ ফ্যাক্টরীর মালিক ফ্যাক্টরীটা বিক্রি করে দেবে।আমার কাছে টাকা থাকলে ফ্যাক্টরী কেনার জন্য অনুরোধ করলো।আমি বাড়িতে ফোন করে বাবা, আম্মা, ও ভাইয়ের সাথে কথা বলে, সবাইকে বুঝিয়ে রাজি করালাম। আমার কাকার কাছে তখন টাকা ছিলো না,সব টাকা আমি দেই এবং আইসক্রিম ফ্যাক্টরী টা ক্রয় করি।কাকা কে বললাম আপনার হাতে যখন টাকা হবে তখন আমাকে অর্ধেক টাকা দিয়ে দিয়েন,মানে কাকা কে পাটনার হিসেবে রাখলাম।
২০১৫ সালের শেষের দিকে ডিসেম্বর মাসে আমার খালু ( আমার মায়ের বোনের স্বামী) আমাকে ফোন দেয়, ফোন দিয়ে বলে উনাকে যেন একটা ব্যবসা করার ব্যবস্থা করে দেই।আমিও ভাবলাম ঠিক আছে খালু যেহেতু বলছে দেবো ব্যবস্থা করে।আমি বাড়িতে আসলাম উনার সাথে দেখা করে বললাম কি নিয়ে ব্যবসা করতে চান, খালু ডিলার শিপ নিয়ে আগ্রহ দেখালো,আমারও ভালো লাগলো।কিন্তু বাড়িতে জানানোর পর সবাই নিষেধ করেছে, আমি কারো কথা না শুনে অনেকটা গোপনে খালুকে টাকা( প্রায় ছয় লক্ষ টাকা) দেই। এখন খালুর ব্যবসা ও নাই,
সেই টাকাও ফেরত পাইনি। কি আর বলবো বিশ্বাস + আত্নীয় দুই মিলে আমার অবস্থা শেষ।
আইসক্রিম ফ্যাক্টরী টা ঠিকঠাক চলছে দেখে কাকা বললো আইসক্রিম সেলস্ দেওয়ার জন্য একটা ছোট গাড়ি হলে ভালো হয়,আমিও চিন্তা করে দেখলাম কাকা ঠিকই বলেছেন, ১ টনের একটা ছোট পিক-আপ কিনলাম ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে (সেকেন্ড হ্যান্ড)। সব যেন চাওয়ার আাগেই হয়ে যাচ্ছে,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাড়ছে আমার কাছে ও ভালো লাগছে।
২০১৬ সালের মে মাসে আমার এক বন্ধু বললো LPG গ্যাস এর ব্যবসা নাকি খুব লাভ জনক ব্যবসা। ও LPG গ্যাসের বিজনেস করবে আমি যেন পার্টনার হিসেবে ওর সাথে থাকি।আমি বললাম এই মূহুর্তে আমার হাতে টাকা নাই, আমার ধারা সম্ভব না। ও নিজের নামে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে আমাকে
পার্টনারশিপ হিসেবে রাখলো,(পার্টনারশীপের টাকা পরে আমি ওকে দিয়ে দিয়েছি)আমিও ভাবলাম আমার নিজের ও যেহেতু গাড়ি আছে,আমার গাড়িটাও মাঝে মাঝে ঐ দিকে ব্যবহার করা যাবে।
আরেক বন্ধুর ভাইকে ম্যানেজার হিসাবে রাখলাম।
আমরা দুজনই চাকরী করছি তখনও,নিজের মাথায় তখনও ঢুকেনি যে এত গুলা ব্যবসা, মানুষের হাতে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হচ্ছে কিনা।আসল কথা হলো বিশ্বাসী ছিলাম। আমার নিজের হাতে প্রতিষ্ঠানের কোন কন্ট্রোল ছিলো না।তারপরও সব কিছু ঠিকঠাক চলছিলো।
""ব্যবসায়িক লোকসান ও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়া""
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হলো পিছু টান।
হঠাৎ করে একদিন গাড়ির ড্রাইভার বললো রানিং গাড়ির ইঞ্জিনে আগুন ধরে গেছে,শুনে আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না তখন।এ প্রথম ধাক্কা খেলাম,গাড়ি এনে কাজ করানো পর খরচ + কিনা মিলিয়ে গাড়ির দাম হয়ে গেলো প্রায় ৯ লক্ষ টাকা। গাড়ি বিক্রি করালাম সাড় তিন লক্ষ টাকা।
কিছুদিন পরেই আবার আমার বাবা ও ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বললো খালুকে যে ডিলারশীপের ব্যবসা অবস্থা ও নাকি ভালো না। তাড়াতাড়ি বাড়িতে এসে হিসাবে বসলাম, বাকী + লোকসান+ ড্যামেজ = ২৫০০০০/ লচ। আমি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়লাম।
আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ব্যবসা আমি নিয়ে নিবো খালুর কাছ থেকে,কিন্তু আমার খালা ও খালাতো ভাইবোনদের কথা চিন্তা করে নিলামনা,খালু বললো অল্প অল্প করে টাকা দিয়ে দিবে,আজও পাইনি সে টাকা।
হঠাৎ করে ব্যবসা নিয়ে এমন পরিস্থিতিতে পড়বো তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।অনেক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিলাম চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসার হাল ধরবো।
২০১৭ সালে চাকরি টা ছেড়ে দিলাম,, পরিবারের কেউ রাজি ছিলো না,আমার নিজের সিদ্ধান্তে ছেড়েছি চাকরি। চাকরি ছেড়ে বাড়িতে আসার ২ মাস পর আমার বন্ধু বলে(LPG গ্যাস) ওর পোষাচ্ছে না ব্যবসা করবেনা,তখন তো আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। অনেক বুঝালাম, কিন্তু না ও আর ব্যবসা করবে না।আমার পক্ষে ও একা এত টাকা ছিলো না।অবশেষে গ্যাসের ব্যবসা ও হিসাব করে বন্ধ করে দিলাম,ওখানে তেমন একটা লোকশান হয়নি,অল্প কিছু ছাড়া।একটা সময় আমি পুরোপুরি ডিপ্রেশনে চলে গেলাম,সারাক্ষণ শুধু কি যেন ভাবতাম আর ঘরে বন্দির মত সময় যাচ্ছে আমার।সময় মত খেতাম না চোখে ঘুম আসতো না রাতের পর রাত।প্রতি নিয়ত বাবা, মা,আমার স্ত্রীর বকাবকিতে আমি যেন একটা পাগলের মত হয়ে গেলাম।(আরো অনেক লম্বা কাহিনী সংক্ষিপ্ত আকারে লিখছি)।
পরিবার থেকে পাওয়া লাঞ্ছনা
২০১৮ সালের কথা আমি তখন পাগলের মত অবস্থায় আছি।প্রতিদিন নিয়ম করে আমার বাবা রাতে ঘুমানোর আগে ও সকালে ঘুম থেকে উঠে,, উনার মুখে যা আসতো তাই বলতো।
মায়ের আবার কোন নিদিষ্ট সময় ছিলো না, যখন মুখে যা আসে তাই বলে,আমার খারাপ লাগেনা কারন আমি না শুনার ভান করে শুয়ে থাকতাম।
সব চাইতে অভাগ হয়েছিলাম ২ টা ঘটনায়,১/ যে কাকা কে আমি নিজের টাকা দিয়ে ব্যবসায়িক পার্টনার করেছিলাম, তখন মানুষকে কাকা বলতো আমাকে নাকি উনি চিনে না।
২/ আমারই আপন ছোট ভাই যে ভাইয়ের ইচ্ছা পূরনে কখনো কোন কম্প্রোমাইজ করিনি।নিজে এক জোড়া জুতা ১০০০/ দিয়ে কিনলে, ভাইয়ের জন্য কিনেছি ২৫০০/ দিয়ে। মোবাইল আমি ব্যবহার করতাম ১৫০০০/ দামের,ভাইকে কিনে দিয়েছি ২৫০০০/ দামের,সব কিছু ভাইয়ের জন্য কিনতাম দামি ও ভালো মানের টা।আমার স্ত্রীর সাথে কতো ঝামেলা হয়েছে একমাত্র ভাইকে এসব কেন দেই একারনে।সেই ভাই ও তখন আমার কথা কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলতো আমাকে চিনে না।
আমার প্রিয়তমা স্ত্রী ও আমাকে ঐ অবস্থায় রেখে বাপের বাড়ি চলে যায়, ফিরে আসে ৮ মাস পর।
মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট করে প্রায় এক মাস নিজ হাত দিয়ে খেতে পারিনি, তখন আমার ৪ বছরের ছোট্ট মেয়েটা ছাড়া আর কেউ জিজ্ঞেস করেনি,দেখেনি কেউ এসে একটি বার।( আমার স্ত্রী বাপের বাড়ি যাওয়ার সময় ওর সাথে মেয়ে যায়নি,আমার বাবার কাছে থেকে যায়)।
ঐ দেড় বছরে আমি উপলব্ধি করেছি বারবার, কেউ কাউকে ভালোবাসেনা,, সবাই ভালোবাসে টাকা।( যারা পড়ছেন নোট করে রাখতে পারেন।
ঘটনা থেকে নেওয়া আমার শিক্ষা
আমি বোকা ছিলাম না, বিশ্বাসি ছিলাম,সেই বিশ্বাসের মর্যাদা কেউ দেয় নি,,পারে নি কেউ বিশ্বাস রাখতে। তাই আপনাদের বলবো টাকা লেনদেনের সময় কাগজ/ দলিল করে নিবেন অবশ্যই, ১০ হাজার হোক বা ১০ লাখ। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আপনজনের কাছ থেকে যতটা পারবেন দূরে থাকবেন। যে কাউকে বিশ্বাস করবেন কাজে, টাকার ব্যপারে মায়ের পেটের ভাইকেও বিশ্বাস করবেন না।যতটা পারবেন ব্যবসা একা করার চেষ্টা করবেন,হোক সেটা ছোট করে শুরু।এবং আমার মত বসে থেকে সময় নষ্ট করবেন না।পরিবারের চাহিদার তুলনায় কম খরচ করুন।
এ বিষয় গুলো যদি আমি ২০১৫ সালে উপলব্ধি করতে পারতাম তাহলে আর আমার এতটা লোকশানের মুখোমুখি হতে হতো না।আরেক টা কথা ব্যবসায় শট কাট বলে কিছু নেই,যে ব্যবসাই করেননা কেন জেনে বুঝে দক্ষতা নিয়ে তারপর শুরু করবেন।শটকাটে কিছু পেলে তা ধরে রাখার গুরুত্ব থাকেনা।
প্রিয় স্যারের শিক্ষা ও আমার স্বাভাবিক জীবনে ফেরা।
আমি অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও হাজার বার স্যালুট জানাচ্ছি আমাদের সবার প্রিয় স্যার,আমার মত হাজারো হতাশা গ্রস্ত যুবকের আলোর দিশারি উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের সম্মানীত চেয়ারম্যান, প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ কে।যার কারনে আমি আজ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছি।
আমি যখন সারাক্ষণ বন্দির মত থাকতাম তখন আমার একমাত্র সঙ্গি ছিলো মোবাইল। ২০১৮ সালের শেষের দিকে তখন সম্ভবত ৩য় ব্যাচ চলছিলো।আমি দুপুরে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল টা হাতে নিয়ে ইউটিউবে ঢুকে দেখতে পেলাম স্যারের একটা ভিডিও। ভিডিও টা দেখলাম এবং ভালো লাগলো।ঐ দিন রাত থেকেই স্যারের ভিডিও গুলো দেখা শুরু করলাম, যতই দেখছিলাম ততই যে আমার চোখ থেকে অন্ধকার সরে যাচ্ছিলো।
স্যারের একটা কথা খুব ভালো লেগেছিল,
স্বপ্ন দেখুন,
সাহস করুন,
শুরু করুন,
এবং লেগে থাকুন,
সাফল্য আসবেই।
ধন্যবাদ আপনাকে প্রিয় স্যার আমার চোখ খুলে দেওয়ার জন্য।
সেই থেকে শুরু গ্রুপে যুক্ত হলাম ৪র্থ ব্যাচ থেকে স্যারের নিয়মিত ছাত্র হয়ে গেলাম।মাঝ খানে কিছুদিন এক্টিভ ছিলাম না তবে এখন আবার এক্টিভ আছি,থাকবো ইনশাআল্লাহ। সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য।
আর একটা কথা,প্রিয় স্যারের, নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আর কোন কিছু হারাই নি।যদি ২ বছর আগে নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনে যুক্ত থাকতাম তাহলে আমার আর এত টাকা লোকসান দিতে হতো না।আইসক্রিম ফ্যাক্টরী টাও লোকসান দিতে দিতে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, ঠিক তখনই আলোর দিশারি হয়ে আমার জীবন পাল্টে দিলো, প্রিয় স্যার ও নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন। প্রিয় স্যার কে আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে জানাই লক্ষ কোটি সালাম ও অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।স্যারের কারনেই আমি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি আইসক্রিম ব্যবসার পাশাপাশি ভালো একটা চাকরী করছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, উদ্যোক্তা জীবনে আমি যেন সফল হতে পারি।
আমার জীবনের নেওয়া গল্প,ভুল হলে ক্ষমা করবেন।কারো জীবনে যদি এখান থেকে নিয়ে কিছু কাজে লাগে তবে আমি সার্থক। লেখালেখি তেমন একটা করিনা, তাই খুব একটা গোছালো হয়নি।এটাই সত্যি এদেশে পরিবার, সমাজ এমন ভাবে তৈরী হয়েছে,, কোথাও আপনাকে কেউ একটু অনুপ্রেরনা দিবেনা। দিবে শুধু তুচ্ছতাচ্ছিল্য।
ধন্যবাদ সবাইকে, আমার পাশে থাকবেন।
আমি সব সময় আপনাদের কাছেই থাকতে চাই।
যদিও আমার কাছে এটা খুব ছোট করে লিখা
বাস্তবতা আমাকে আরো অনেক কিছু শিখিয়েছে।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭২২
Date:- ১৩ & ১৪/০১/২০২২ইং
মোঃওমর ফারুক
ব্যাচ- ৪র্থ
রেজিষ্ট্রেশন নং- ৪৭৫৩
ব্লাড গ্রুপ - বি+(পজেটিভ)
উপজেলা - রামগড়
জেলা- প্রকৃতির রানী খাগড়াছড়ি।