অদেখা অন্ধকারের অমানিশা দূর করতে আমি এক স্বপ সারথি।
🌿বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
🌹সবার প্রতি আমার সালাম আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ 🌹
🌹প্রথমেই শুকরিয়া জানাই মহান আল্লাহর দরবারে যিনি আমাকে সৃষ্টির মধ্যে সেরা আশরাফুল মাকলুকাত হিসেবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন এবং চলমান মহামারীর মধ্যে এখনো আমাকে সুস্থ ও ভালো রেখেছেন৷ 🌹
🌹আমি চিররিনি ও কৃতজ্ঞ আমার মা বাবার প্রতি যারা আমাকে ভালোবাসা ও মায়া মমতা দিয়ে বড় করে তুলেছেন৷ যাদের ছায়া তলে কাটিয়ে দিয়েছি জীবনের অনেক গুলো বছর৷ 🌹
🌷আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর 🌺ইকবাল বাহার জাহিদ 🌺
স্যারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি৷ আজকে স্যারের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এতো সুন্দর ভালোবাসার প্লাটফর্ম পেয়েছি৷ 🌷
🥀চলে যাচ্ছি গল্পের মূল পর্বে
#প্রিয়_ফাউন্ডেশনের_দুই সদস্য_বাবা_ছেলের_গল্প।
বাবাঃ রফিকুল ইসলাম খোকন
(সৌদি প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা )
ছেলেঃ সিদ্দিকুর রহমান শুভ
( এসসি ২০২১, বর্তমান উচ্চমাধ্যমিকের ভর্তি প্রস্তুতি নিচ্ছি)
🌹অদেখা অন্ধকারের অমানিশা দূর করতে আমি এক স্বপ সারথি। আমার ছোট্ট জীবনের ছোট্ট গল্প লিখতে বলতে এসেছি আজ।🌹
আবহমান বাংলার বৈচিত্র রূপের অনন্য নিদর্শন বাংলার যৌথ পরিবার গুলো। এখানে হাসি কান্না দুঃখ সুখ গুলো সবাই একসঙ্গে কাটায়। আমি এক যৌথপরিবারের সন্তান। বাবা-মা, দাদা-দাদি, চাচা-চাচি মিলে আমাদের পরিবার।
গল্পের শুরু হয় আমার জন্মের আগেই।
দাদাবাড়ী বরিশালের বরগুনা জেলায়। দাদার চাকরি সুত্রে তিনি পরিবার নিয়ে বহু বছর ধরে চট্টগ্রাম থাকতেন। সেখানেই গড়ে তুলেছেন স্বপ্নের ভুবন। পরিবার নিয়ে খুব সুখের দিন ছিল।
আমার দাদা এবং বাবা দুজনেই চাকরি করতেন৷ মুক্তিযোদ্ধা দাদার ইচ্ছে ছিল নিজেরা কিছু করার। যা একান্তই আমাদের হবে। নিজেরদের নামে হবে নিজস্ব পরিচয়ের হবে। সেই স্বপ্ন কে পুরন করতে পরিবার থেকে সিদ্ধান্ত নিল যে তারা নতুন ব্যবসা শুরু করবেন। বড় করে কাপড়ের ব্যাবসা শুরু হল এবং টেইলারিং দোকান করা হল। ছোট কাকা টেইলারিং কাজ যানতেন, বড় কাকাও ছোট ভাইয়ের থেকে টেইলারিংটা শিখে নিলেন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে, কয়েকজন কর্মি সহ দুই কাকা মিলে বেশ জমজমাট ব্যাপার। যৌথ পরিবার হলে সবাই মিলে খুশি উৎযাপন হয়। সবার মাঝে হই হই রই রই ব্যপার। যেন চাঁদের হাট বসেছে পরিবারে। ভাবনা ছিল এই ব্যবসা আমাদের জন্য শুভ। এই ব্যবসাই আমাদের জন্য সাফল্য নিয়ে আসবে। তাই, টেইলার্সের দোকানটির নাম দেয়া হল #শুভ_টেইলার্স।
এবং এই পরিবারের অনাগত সন্তানের নাম হবে শুভ। দাদা জুড়ে দিলেন যে নাম হবে #সিদ্দিকুর_রহমান_শুভ। তিনি তার অবচেতন মনে একটি পুত্র সন্তান প্রত্যাশা করেছিলেন হয়তো। তখন সন্তান সম্ভাবা ছিলেন আমার মা এবং বড় কাকি, বড় কাকির কোল আলো করে এল পরের প্রজন্মের প্রথম সন্তান আমার মিষ্টি বোন। পরিবারের আনন্দের কমতি ছিলনা৷ কিন্তু শুভ নামটি এখনো অপেক্ষমান তার প্রকৃত মালিকের জন্য 🥰 কিছুদিন পর আমার জন্ম। যথারীতি আমিই হয়েগেলাম এই সুন্দর নামটির অধিকারী ❤️❤️ এই গল্প আমার বাবার মুখে শোনা। আমি সেই ভাগ্যবান মানুষটি, জন্মের আগেই যার নাম পারিবারিক ব্যবসায় জুড়ে ছিল। দোকানের নেইম প্লেটে বড় বড় অক্ষর, ম্যামো আর চেকে নিজের নাম খুজে পাওয়ার এক৷ অকৃত্রিম ভালোবাসার অনুভূতি উপলব্ধির সুযোগ করে দিলেছিল আমার পরিবার।
বেশ ভালোই চলছিল আমাদের, আমি, বোন এবং আমাদের ব্যবসা নিয়ে মেতে থাকত সবাই। আনন্দ আর সুখের যেন জোয়ার বইত সব সময়। কিন্তু জীবন বড় বৈচিত্রময়, জীবনের বাকেঁ লুকিয়ে স্বপ্ন ভঙ্গের দুর্বিষহ যন্ত্রণা। হটাৎই ব্যবসায় প্রচন্ড রকম ক্ষতি হতে শুরু করল, একটা পর্যায়ে এসে ব্যবসাটা শেষ হয়ে গেল। দুই কাকারই ব্যবসা কেন্দ্রিক জীবিকা বলে কাজ বন্ধ হয়ে গেল। এর মধ্যে দাদুও চাকরি থেকে রিটায়ার্ড করেছিলেন। এত জনের পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে টিকে থাকা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে গেল। বাবার সিদ্ধান্তে সবাই গ্রামের বাড়ি অর্থাৎ আমার দাদবাড়ি বরগুনায় চলে আসলাম। বাবা একা রয়ে গেলেন চট্টগ্রামে বললেন চিন্তা করনা আমি আছি, প্রতি মাসের শেষে টাকা পাঠিয়ে দেব। কিন্তু বেতন ছিল দশ হাজার পাচশ টাকা। বাবারা এমনই হয়। চুড়ান্ত অসম্ভব জিনিকেও কত সহজে বলে দেয় আমি আছিতো। চিন্তা কর না🥰।
বরগুনাতে চলল আমাদের আবার শুন্য থেকে শুরু করার গল্প। সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে কৃষি খামার, মাছ চাষ, পশুপালন দিয়ে শুরু হল ভিন্ন রূপে নতুন যাত্রা। আমি তখন ও খুব ছোট। কিন্তু আল্লাহ যখন পরিক্ষা নেয়া শুরু করেন তখন চারদিক থেকে সমস্যা চলে আসে।
💔১৫ ই নবেম্বর ২০০৭💔
আমার বয়স তখন চার। হটাৎ ঘূর্নিঝড় সিডর আঘাত হানে দক্ষিণবঙ্গে। আবারও শেষ হয়ে যায় নবস্বপ্ন টুকু। সব ঘর-বাড়ি, ফসল খামার, গরু ছাগল, পুকুর ভর্তি মাছ একটা অন্ধকার রাত কেড়ে নিয়ে যায় সব। রাতের ব্যবধানে সব শেষ হয়ে যায়। নিঃস্ব হয়ে যাই পুরো পরিবার। বাবা তখন চট্রগ্রাম ভেবেছিলেন সব বুঝি শেষ প্রানগুলোও বুজি রক্ষা পেলনা। পরের দিন চট্টগ্রাম থেকে বহুকষ্টে এসে আমাদের খুঁজে বের করেন, ঝড়ের কারনে মোবাইল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল, রাস্তাঘাট সব বন্ধ ছিল রাশি রাশি লাশের মিছিলে বাবা ভেবেছিলেন কলিজার টুকরো গুলোর বুঝি বঙ্গোপসাগরেই সমাধি হল। অনেক পরে বহুকষ্টে আমাদের খুঁজে পেলেন। অই মুহুর্তে সবাই বেচে আছি এইটাই ছিল সবচেয়ে বড় সাফল্য এবং সবচেয়ে প্রাপ্তি। এবং আল্লাহর অশেষ কৃপা।
আবারও নতুন লড়াই, পরিবারে লোক বাড়ছে, দাদা দাদির বয়স বাড়ছে, বাচ্চা আর বৃদ্ধদের খরচ। আমার আর বোনের স্কুলের খরচ, এখানের ফার্মের বিনিয়োগ যা ছিল কিছুই আর হয়ে উঠল না। এই বিশাল ক্ষতি পুরোন করতে বাবাকে এবার প প্রবাস নামক জেলখানায় পাড়ি দিতে হল।
হায় ভাগ্য! তুমি সেখানেও স্বাদ দিলে না!
দালাল নামক একপ্রকার মানুষ রূপি নরপশুদের খপ্পরে পড়ে নির্মমভাবে দিনাতিপাত করতেন আমার বাবা। পুরো পরিস্থিতি সামাল দিতে বিক্রি করতে হলো জমি। পৌরসভার মধ্যের ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে সম্ভাবনা ময় প্রানের ধনটুকু হাড়িয়ে যায়গা হল আরও গ্রামের দিকে। দেনা পরিশোধ করে অবশিষ্ট টাকা দিয়ে আবাও দিন ফেরানোর চেষ্টা।
💚বলা হয় আল্লাহ কখনো বান্দাকে নিরাশ করেন না। দুঃখের সমুদ্র পাড়ি দিলেই আশায় আলোর চিকচিকে বালুচরে সোনালী রোদ উপভোগ করা যায়। সময়ে সাথে সাথে বাবার অবস্থার পরিবর্তন হল, কাকাদের হাল না ছেড়ে ঘুড়ে দাঁড়ানোর তীব্র প্রচেষ্টায় আজ আমাদের অবস্থা ফিরেছে। আমি এবছর এস এস সি পরিক্ষা দিয়েছি। সকলের দোয়ায় আশানুরূপ ফলাফল করতে পেরেছি।
বাবার স্বপ্ন আমি একজন ভালোমানুষ হই। আলোকিত মানুষ হই। তার জীবনের ভুল গুলো যেন আমাকে না ছোয়। আমার বাবা @রফিকুল ইসলাম খোকন নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনের ১৩ তম ব্যাচের একজন গর্বিত সদস্য। একজন পিতা সবসময় তার সন্তানকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চায়। বাবা উপলব্ধি করতে পেরেছেন নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন আমার ছেলের জীবনকে সুন্দর রূপে সাজিয়ে নিতে সহায়তায় করবে, এখানে ভালো মানুষিকতার চর্চা, ১১ টি স্কিল একজন উদ্দোক্তা হওয়ার প্রশিক্ষণ জীবনের মোর ঘুড়িয়ে দিতে পারে। তাই আমার রেমিট্যান্স যোদ্ধা বাবা প্রবাস থেকে আমার হাতের আংগুল ধরে নিয়ে এসেছেন নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের নামক স্কুলে। এই স্কুলে আমরা বাবা ছেলে একসাথে ক্লাস করি। বাবা আর আমি একই স্কুলের একই ব্যাচের স্টুডেন্ট। এই অনুভূতি সত্যিই লিখে প্রকাশ করা যায়না।
#নিজের_বলার_মতো_একটা_গল্প_ফাউন্ডেশনের_অবদানঃ
আমি নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশনের বরিশাল বিভাগের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য আমি। হয়তোবা পুরো ফাউন্ডেশনেই সর্বকনিষ্ঠ আমি।
আমার বয়স ১৬। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছি🥰
এই ফাউন্ডেশনে আমার বাবা রফিকুল ইসলাম খোকন এবং বাবার প্রিয় দুবাই প্রবাসী বন্ধু মাসুদ রানা (কমিউনিটি ভলান্টিয়ার) কাকার হাত ধরে আমার আশা। প্রতিনিয়ত শিখছি। শিখছি লজ্জা, ঘৃণা, ভয় করতে হবে জয়। শিখেছি কোন কাজে লজ্জা নেই। তাই আমার গ্রামীণ পরিসরে বাবার তীব্র আপত্তি সত্ত্বেয় ২৬ টি ছাগল পালন করছি, মাঠের মধ্যে কৃষি কাজ করছি, আবার স্কুল ড্রেস চাপিয়ে স্কুল চলে যাচ্ছি। ফাউন্ডেশনের আন্টি আর কাকাদের সাথে হই হই করে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি পালন করছি। বরিশালের আড্ডা মিট আপে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়ে পুরুষ্কার হিসেবে বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম হাসিব ভাইয়ের কাছ থেকে
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের #৪র্থ_প্রতিষ্ঠা_বার্ষিকী_উদোক্তা_মহাসম্মেলনে_ফ্রী_টিকিট_পেয়েছি। 😁😁😁 বরগুনা জেলা টিমের আন্তরিকতা স্নেহ মমতায় সিক্ত হয়ে প্রতিনিয়ত অনলাইন এবং অফলাইন মিট আপ গুলোতে অংশ নিচ্ছি। প্রতিদিন ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের দেখানো পথে নিজেকে এগিয়ে নিচ্ছি। স্যারের দেয়া প্রতিটি শেসন, প্রতিটি লাইন আমি বুকে ধারণ করার চেষ্টা করছি।
আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাঃ
আমার জীবনে না চাইতে যে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছে আমার পরিবার বড় হয়ে আমি সেই পরিবার পাশে দাড়াতে চাই। বাবার হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নকে আবার বাচিঁয়ে তুলতে চাই, দাদার সেই শুভ সূচনায় সাফল্য এনে দিতে চাই। শত প্রতিকুলতায় আগলে রাখা আমার জন্মদাত্রী মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। ফাউন্ডেশনের শিক্ষায় পরিবার সমাজ ও দেশের পাশে দাড়াতে চাই। ভবিষ্যতে বাবাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বলতে চাই বাবা তোমার ছোট্ট শুভ আজ বড় হয়েছে। চলো আবার বাপ বেটা আরেক বার শুরু করি। তুমি আর মা শুধু তোমাদের একরত্তি শুভর প্রান ভরে দোয়া করে দেও।
আমার ছোট্ট জীবনের কোন সাফল্যের গল্প আমি শোনাতে পারি আজ। তবে আশা করে আছি সুন্দর আগামীর। সকলের কাছে আমি দোয়া প্রার্থী। আপনাদের একটুকরো শুভর জন্য চাই সকলের শুভ কামনা।
ধন্যবাদ সকলকে ধৈর্য ধরে আমার গল্পটি পড়ার জন্য। কোন ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭২২
Date:- ১৩ & ১৪/০১/২০২২ইং
🌹সিদ্দিকুর রহমান শুভ
🌹বরগুনা জেলা
🌹ব্যাচঃ১৩
🌹রেজিঃ৫৮০০৭
🌹থানাঃপাথরঘাটা
🌹বতমান অবস্থানঃপাথরঘাটা
🌹পেশাঃস্টুডেন্ট