আমার প্রবাস জীবন গল্প
✍️আমার প্রবাস জীবনের গল্প ✍️
🤲 সবাইকে একটু সময় করে পড়ার অনুরোধ রইল🤲
🌺বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম 🌺
🌺আসসালামু আলাইকুম🌺
✍️ প্রথমেই শুকরিয়া জানাচ্ছি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর দরবারে, যিনি আমাদের সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এবং আমাকে ও আমার পরিবারকে সুস্থ ও সুন্দর রেখেছেন আলহামদুলিল্লাহ।
🤲 শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা সাথে স্মরণ করছি ভালো মানুষ গড়ার কারিগর ও পথ হারা মানুষের পথপ্রদর্শক আমাদের সবার প্রিয় শিক্ষক ও মেন্টর জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যারের প্রতি। যার পরিশ্রম সততা ও নিষ্ঠার এবং ভালোবাসার ফসল হিসাবে আমরা পেয়েছি "নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন" একটি মানবিক প্ল্যাটফর্ম। অনেক অনেক দোয়া ও ভালোবাসা রইলো স্যারের প্রতি। আল্লাহতায়ালার কাছে স্যারের সার্বিক সুস্বাস্থ্য কামনা করি। তিনি যেন সবসময় সুস্থ থেকে আমাদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে পারেন।
✍️✍️আমার প্রবাস জীবনের গল্প✍️✍️
প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে এমন কিছু গল্প ও মুহূর্ত থাকে যা জানার পর অন্যদের হৃদয় নাড়া দিয়ে ওঠে। আজকে আমার জীবনের ঠিক তেমই কিছু মুহূর্ত আপনাদের সাথে শেয়ার করতে আসলাম।
✍️ আমি রেজাউল করিম সোহাগ আমার জন্ম স্থান: রাজবাড়ী জেলার, কালুখালী উপজেলার, কয়ারদি পাড়া গ্রামে একটি মুসলিম পরিবারে। আমার দুই বোন ও আমি নিজে। আমি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমার বাবা একজন বেসরকারি চাকুরীজীবি ছিলেন। বেশ কয় এক বছর হল বাবার চাকরিটা চলে গেছেন। এখন বাড়িতেই থাকেন। আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা 5 জন ।
✍️ অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমার বাবা আমাদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন এবং আমাদের সংসার পরিচালনা করেছেন। আমি যখন ছোট আমাদের পরিবার ছিল খুব হাসিখুশি সচ্ছল। আমার বয়স তখন ৫/৬ বছর তখনই বড় আপুর বিয়ে হয়ে যায় । আমাদের সংসার খুব ভালোই চলছিল। বাবা যতদিন চাকরি করেছেন খুবই সততার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু হঠাৎ কম্পানির ম্যানেজারের অসৎ কাজে বাধা দেওয়ায় বাবার চাকরিটা চলে যায়। বাবা খুবই হতাশ হয়েছিল। সারা জীবন সততার সাথে কাজ করে শেষে দুর্নীতি কাছে পরাজিত হতে হলো।
✍️ আমাদের সামান্য কিছু সম্পদ ছিল বাবা সেটা বিক্রি করে সংসার চালানো শুরু করেন। সম্পদ বিক্রি করা টাকা দিয়ে সংসার কত দিন চালানো যায়। যত দিন গড়াচ্ছিল বাবা দিনে দিনে আরও অসহায় হয়ে পরেছিল।
আমার লেখাপড়ার খরচ আমার বড় আপু বহন করতেন। আপুর সহযোগিতা ও ভালোবাসায় আমি লেখাপড়াটা চালিয়ে যাই। তখন আমার এইচএসসি পরীক্ষা শেষ রেজাল্ট খুব ভালো হলো🤗। কিন্তু তারপর থেকেই আমি আর লেখাপড়াটা কনটিনিউ করতে পারিনি, সংসারে হাল ধরতে কর্মজীবনের নেমে পড়ি। আমি ঢাকাতে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি নিলাম সেখান থেকে যে বেতন পেতাম তা দিয়ে সংসার চালানো খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তার মাঝে আমার ছোট বোনের বিয়ের ঠিক হয়ে যায়। বোনের বিয়ের জন্য যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন ছিল সেটা আমাদের কাছে ছিল না। অনেকের কাছ থেকে টাকা ধারদেনা করে কোন মত অনুষ্ঠানটা শেষ করলাম।পরবর্তীতে আমাদের পরিবারে আরো অবনতি শুরু হলো । কোনভাবে বুঝতে পারছিলাম না কিভাবে সংসারটাকে সচ্ছল করব। কিভাবে মানুষের টাকা পরিশোধ করব । সবদিক থেকে একেবারে ভেঙ্গে পড়েছিলাম আমি এবং আমার বাবা😥😥।
✍️✍️ দেশে থেকে যে টাকা বেতন পেতাম তাতে আমার সংসারের খরচ ও মানুষের টাকা পরিশোধ করা একেবারে ই অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। দেশের বাইরে যেতে হবে । তখন আমি ব্যাংক থেকে কিছু টাকা লোন নিয়ে যুদ্ধের খাতায় নাম লেখিয়ে চলে আসলাম মালয়েশিয়াতে। হয়ে গেলাম একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা। আমার ঠিকানা হলো প্রবাস জীবন নামক এক জেলখানাতে । মা-বাবা ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে ত্যাগ করে চলে আসলাম যুদ্ধের মাঠে। শুধুমাত্র আমার সংসার এবং আমার পরবর্তী প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে । মালয়েশিয়ায় আসার পর একটি প্লাস্টিক কোম্পানিতে আমার কাজ হয়। এখান থেকে যে বেতন পাই তা দিয়ে আমি নিজে এবং আমার সংসার কোন মত চালিয়ে নিতে পারি। কিন্তু আমার আরো অনেক টাকার প্রয়োজন।
এ টাকা গুলো কোথায় পাবো? কীভাবে মানুষের টাকা পরিশোধ করব ?
কিছু কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে গেলাম ।সবাইকে ত্যাগ করে প্রবাস আসার পরও আমি মানসিক ভাবে খুব ভেঙ্গে পড়ি। তখন আমার বাবা-মা আমাকে সান্তনা দিতেন ধৈর্য ধরো আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। যে বেতন পাই তার থেকে নিজের জন্য ও পরিবার খরচ বহন করার পর যে সামান্য কিছু থাকতো সেটা আমি অল্প অল্প করে জমিয়ে রাখতাম। আর মানুষের থেকে ধার নেওয়া কিছু টাকা পরিশোধ করতাম ।
✍️✍️ রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আমি একা একা কান্না করতাম😥😥।
নিজেকে দোষী ভাবতাম। আর ভাবতাম কেন আমার জীবনটা এরকম হলো ।আমি কবে দেখা পাবো সুখের মুখ। বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন জাগতো আমার মনে । আমি কি আদৌ কোনোদিন সুখের মুখ দেখা পাবোনা? আমি কি সবার মতন পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে পারবো না? ঠিক তখনি চলে আসলো আমাদের মাঝে করোনা ভাইরাস_কভিড-১৯। ক্রমেই বেড়ে চলছে আতঙ্ক, দিনের পর দিন ঘর বন্দি হয়ে পরেছে সবাই। গভীর চিন্তায় পরে গেলাম। আশেপাশের অনেক কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেল। আমাদের কোম্পানিটাও বন্ধ হয়ে গেল ।তখন নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না। সবসময় ভাবতাম কিভাবে কি করবো । মানসিকভাবে খুবই ভেঙ্গে পরেছিলাম । আমি যদি কাজ না করতে পারি তাহলে আমি আমার পরিবার ও ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করব। অনেক টেনশনের মাঝে আমার শরীরটাও দুর্বল হয়ে গেল।
✍️✍️ তারপর একদিন করোনা টেস্ট করলাম, রিপট অসলো করোনা পজিটিভ । মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। শুধু চিন্তা করতাম আমার জীবন এখানে শেষ। চারিদিকে মৃত্যুর মিছিল চলছে,। আমি নিজে নিজে ভাবলাম আমার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ছে এটা যদি আমার ফ্যামিলিতে আমি জানাই তাহলে তারাও অনেক টেনশন করবে যার কারণে আমি কাউকে কিছু না জানিয়ে কোয়ারেন্টিনে থাকলাম 14 দিন । এক একটা দিন আমার কাছে মনে হচ্ছিল আমি যেন পাপের সাগরে ডুবে আছি । সাঁতরাতে সাঁতরাতে ক্লান্ত হয়ে গেছি তাও কিনারা খুঁজে পাচ্ছি না। খুব কষ্টের মধ্যে যাচ্ছিল আমার দিনগুলো । মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাকে এরকমই কষ্ট সহ্য করে যেতে হবে। প্রাতি দিনই মনে হত আগামী কালকের দিনটা আমার আর দেখা হবে না😥😥।
✍️✍️ ঠিক তখনই আমার পাশে এসে দাঁড়ায় আমার এলাকার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই Nirob Ahamed । ছোটবেলা থেকে আমি তার সাথে সময় কাটাতাম । তার থেকে আমি অনেক জ্ঞান অর্জন করেছি এবং ভালো মানুষ হিসাবে পরিচিত হতে পেরেছি। আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সব ঘটনার সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। তিনি আমার ইচ্ছা শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে বললেন । আমাকে উৎসাহিত করলেন । তখন আমি তার আশ্বাস পেয়ে জীবন যুদ্ধের হাল ছাড়লাম না । নিজের শক্তি যোগানো সাহস পেলাম । নিজেকে একটিভ করলাম তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠলাম। তারপর আমি আবার কাজে যুক্ত হলাম ।আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ মেহেরবানীতে আজ আমি সুস্থ।
✍️✍️ একদিন কাজ শেষে আমি বাসায় ফিরে রান্না খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি ।ঠিক তখনি ফেসবুকে আমার চোখ পড়ে ""নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশন"" এর একটি পোস্ট। পোস্টটি পড়ে আমার খুব ভালো লাগলো। এভাবে পরপর দুই-তিনদিন আমি পোস্টগুলো দেখলাম ও পড়লাম। তখন আমি একদিন ভাবলাম আসলেই এই ফাউন্ডেশন এর কাজটি কি । এই ফাউন্ডেশনটা মূলত কি? জানার খুব আগ্রহ হলো আমার । তখন আমি ""নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশন"" এর পেজ এ ঢুকলাম এবং বিস্তারিত দেখলাম। দেখতে দেখতে তখনই চলে আসলো আমার সামনে স্যারের একটি ভিডিও
""স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন,
এবং লেগে থাকুন সফলতা আসবেই।
ভিডিওটি দেখে আমার খুব ভালো লাগলো।
✍️✍️ তারপর থেকে আমি প্রতিদিন প্রোফাইলে ঢুকে পোস্ট গুলো দেখতাম। আসলে স্যারের পোস্ট গুলো এতই বাস্তব আর এতই যে উজ্জ্বল ময়ী আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। এই ফাউন্ডেশন সম্পর্কে আরো গভীরভাবে জানার জন্য আমি আমার শ্রদ্ধেয় Nirob Ahamed ভাই কে নক দিলাম এবং তাকে বললাম যে "নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশন" সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর জন্য। ভাই ১০ম ব্যাচ থেকে মুক্ত আছেন প্রিয় ফাউন্ডেশনে। ভাই আমাকে খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন। আমার খুব ইচ্ছা হলো এই ফাউন্ডেশন এর সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করার জন্য। নীরব আহম্মেদ ভাই আমাকে 11 তম রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দেয়। আর এভাবেই ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের বিভিন্ন পোস্ট এবং ভিডিও দেখে নিজেকে তৈরি করার সাহস পেলাম । পেলাম এক ভালো মানুষের পরিবার। আমার অতীতের সব দুঃখ কষ্ট ভুলে যেতে শুরু করলাম। আমি ভালো মানুষ হওয়ার প্রতিজ্ঞা করলাম। নিজেকে পরিবর্তন করতে চেষ্টা করে য়াচ্ছি প্রতি নিয়োত। আমি এখান থেকে আমার জীবনের সাথে শপথ নামা পড়ে নিলাম।
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের যুক্ত হওয়ার পর থেকে আমি নিয়মিত আমার নিজ জেলা রাজবাড়ী এবং বর্তমান অবস্থান মালয়েশিয়ার সেশন চর্চা ক্লাসে নিয়মিত যুক্ত থাকার চেষ্টা করি। প্রতিদিনের সেশন চর্চা ক্লাস থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে শিখতে পারছি এবং আমার প্রিয় পরিবারের ভাই-বোনেরা আমাকে ভালোবেসে সবসময় সাপোর্ট করে যাচ্ছেন।
✍️✍️ আমি একজন ভালো মানুষ হতে চাই ,,,
আমার নিজেকে আমি নিয়ে যেতে চাই অন্য একপর্যায়ে।
আমি চাই আমার মা-বাবা ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে নিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে।
অতীতের সব দুঃখ কষ্টকে ভুলে আমি আমার জীবন টাকে সুখে-শান্তিতে পার করতে চাই ।
✍️✍️ আমি নিজে একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চাই। এবং আমি আমার পাশের এক ভাই পাশের এক বোন বা বন্ধুকে সব দিক থেকে সহযোগিতা করতে চাই । সফলতার সাথে নিজের জীবনটাকে পরিবর্তন করতে চাই। ভূমিকা রাখতে চাই সমাজের দেশের পরিবর্তনে।
✍️✍️ অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যিনি আমাকে স্বপ্ন দেখতে সাহস করতে অনুপ্রাণিত করেছেন। সেইসাথে ধন্যবাদ জানাই প্রানের প্রিয় গ্রুপে সকল ভাই ও বোনদের প্রতি সবার জন্য অনেক অনেক দোয়া ও ভালোবাসা রইলো সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
✍️✍️ কষ্ট করে ধৈর্য সহকারে আমার গল্পটি পড়ার জন্য সকলের প্রতি অন্তরের অন্তরস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা রইলো।
আমার লেখার মধ্যে যদি কোন প্রকার ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে দয়া করে সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭২২
Date:- ১৩ & ১৪/০১/২০২২ইং
🌺আমি মোঃ রেজাউল করিম সোহাগ
🌺 গর্বিতটিম মেম্বার
🌺ব্যাচ নং ১১তম
🌺রেজিষ্ট্রেশন নং ২৭৯২৮
🌺জেলাঃ রাজবাড়ী
🌺উপজেলা কালুখালী
🌺বর্তমান অবস্থান মালয়েশিয়া
🌺ফোন নাম্বার +601135198552
Md Iqbal Hossain Jahangir Khan Sagar Banik Cm Hasan Nurun Nabi Riyaz Ismat Hasan নিঝুম আমিন Tania Akter Hossain Al Mamun Mostak Ahmad Mridha Protul Pathak Sayedur Rohman Mahbub Hasan