সেদিন আব্বুকে আমি দেখেছিলাম বাচ্চাদের মতো খুশি হতে
গতকালের সেশান এর হেডিংটা ছিলো "নিজের পরিচয় শুধু মাত্র নিজের কাজ " চমৎকার একটা সেশান ছিলো এটা, যদিও Iqbal Bahar Zahid স্যারের সব সেশান ই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ কথাটা ও খুব তাৎপর্য পূর্ণ। নিজের জীবনে অনেক উদাহরণ আছে এর আমার।
ক্লাস ১০ থেকে earn করা একটা মেয়ে প্র্যাগনেন্সির টাইমে হঠাৎ জব ছেড়ে দিয়ে শূণ্য হাতে যখন ঘরে বসে থাকে..... তখন তাকে কি মানসিক দীনতা নিয়ে বাঁচতে হয়েছে তা বোধ হয় সে মেয়েটি ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারবে না😢😢। মেয়েটি প্রচন্ড আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচা মানুষ.... সে সারা জীবন নিজের খরচ নিজে চালিয়েছে.... না বিয়ের আগে বাবার থেকে নিয়েছে.... না বিয়ের পর হাজব্যান্ড থেকে!!! যখন সে মেয়েটি শূণ্য হাতে থাকে আর কারো কাছে প্রয়োজনীয় কিছু চাইতে পারে না.... কি কষ্টে তার দিন গিয়েছে তা না হয় নাই বা বলি!!!
যেহেতু জব ছেড়ে দিয়েছি.... পরিবারে অনেক লাঞ্চনার শিকার হয়েছি.... আমার কাজিনগুলো সব বিসিএস ক্যাডার, আমি সেখানে কি???!!! আমার জন্য কারো কাছে মুখ দেখাতে পারে না, পরিচয় দিতে লজ্জা পায় তারা....৷ একজন এতো বড় সরকারি কর্মকর্তার মেয়ে বেকার, কোন কোয়ালিটি নেই তার😢😢
হাজব্যান্ড অবহেলাসূচক কোন ব্যবহার করে নি, কিন্তু আমার যেহেতু আইটি রিলেটেড স্কিল কম ছিলো, বেশি মানুষের সাথে মেশা হয় নি, চাকরীও ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে বাচ্চা পালি..... তাকে তার অফিস রিলেটেড কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলতো, "তুমি বুঝবে না।" অথচ এক সময় দুজনের অফিসের গল্প করতে করতেই কয়েক ঘন্টা পেরিয়ে যেতো!!!!
নিজের একমাত্র ভাই + ভাই এর স্ত্রী দুজনেই বিসিএস করা ডক্টর, ডিগ্রী ও করে ফেলছে, তাদের জন্য বাবা মায়ের মুখ উজ্জল হয়। তাদের কথা প্রায়োরিটি পায়। রিলেটিভদের ও দেখি একই সাথে আমার পরিবার আর ভাই এর পরিবার থাকলে ভাইকে কতো সম্মান দেয়!!! অথচ আমার সাথে কোন কথা বলে না। আমার কোন কথার উত্তর দেয় না। আমার বাচ্চা আর ভাই এর বাচ্চা এক সাথে খেলা করে, ছাদ থেকে রিলেটিভদের সাথে একসাথে কথা বলে।ভাই এর বাচ্চার সাথে কথা বলে, আমার বাচ্চার সালামের ও জবাব দেয় না😢😢 সবচেয়ে দুঃখ পেয়েছিলাম সেদিন যেদিন দেখেছিলাম.... ২ বাচ্চা একসাথে খেলছে, ৫ টাকার ঘুড়ি.... ভাই এর বাচ্চাকে দিয়ে গেছে, আমার বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে!!! 😢😢😢
২০২০ এর জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহের ঘটনা। ১৯৯৬ সালে এক বন্ধু থেকে আলাদা হয়েছিলাম। এতে বছর পর সে দেখা করতে এসেছে। কোন একটা সরকারী ডিপার্টমেন্ট এর ডিরেক্টর সে। ফেলো করতে USA চলে যাবে। দেখা করতে এসেছে মামার বাসায়। যেহেতু সে আমার আর কাজিন ২ জনের ই বন্ধু ছিলো... আমাকে ও ডেকে নিলো তাদের বাসায়। সে আমি হাউজ ওয়াইফ জানার পর ও কোন তাচ্ছিল্য আমাকে দেখায় নি (আমি যে বিজনেস করি সেটা কাউকে বলতাম না আমি)। আমার সাথে সেই ছোটবেলার মতো কথা বলেছে। কিন্তু সেখানে তার সামনে আমাকে চরম অপমান করেন আমার মামা। সেদিন তার বলা একটা কথা ছিলো এমন,...."যে পড়ালেখা শিখে জীবনে কিছু করতে পেরেছে, আমি তাকে সম্মান করি। যে পড়ালেখা জীবনে কোন কাজে লাগাতে পারে নি, তাকে আমি কোন দাম ই দেই না।"
বাসায় এসে আমি অনেক অনেক কেঁদেছিলাম। কোন ভাবেই কান্না থামাতে পারছিলাম না। সেদিন ই সিদ্ধান্ত নেই, অনেক হেলাফেলা করেছি কাজ নিয়ে। আর না। এর একটা জবাব আমাকে অতি শীঘ্রই দিতে হবে। আমি পূর্ণ উদ্যমে কাজ শুরু করি। নিজের শরীরের দিকে আর তাকাই নি। টানা কাজ করতে থাকি। কাজের পরিধি ও বাড়াই। একটার পর একটা অর্ডার হতে থাকে আলহামদুলিল্লাহ।
বাসায় সারাক্ষণ আমার কাজ নিয়ে বাবা, মা, ভাই, হাজব্যান্ড..... সবার কাছে বকা খেতাম। কিন্তু যখন কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে আমার ১৮ হাজার টাকার গাছ বিক্রি হয় এবং আমি আমার বাবার হাতে কিছু টাকা দিতে পারি গাছ বিক্রির টাকা থেকে..... সেদিন আব্বুকে আমি দেখেছিলাম বাচ্চাদের মতো খুশি হতে। এর পর আর কোন দিন আমাকে গাছ লাগানোর জন্য বকেন নি তিনি। বরং আমার গাছ তিনি আর আম্মুই যত্ন করেন। হাজব্যান্ড ও সম্মান দিতে থাকে..."এ ঘাস গুলো এতো দামে সেল হয়??!!! তুমি তো বড় বিজনেস ওম্যান হয়ে যাচ্ছো!!! ""
কাজ করতে থাকি আমি। হাতের কাজের ড্রেস এর কাস্টমার অনেক বাড়ে আলহামদুলিল্লাহ। রিপিট কাস্টমার বাড়ে। নতুন কাস্টমার আসে। লিলি সেলের জন্য ভারত, পাকিস্তান থেকে অর্ডার আসে। আমি এক্সপোর্ট করার প্রস্তাব পাই। কিন্তু যে কোন কারণে হোক এক্সপোর্ট করা হয়ে ওঠে নি আমার। কিন্তু বাংলাদেশের রেইন লিলির জগতে আমি একজন শীর্ষ স্থানীয় রেইন লিলি কালেক্টর হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
২০১৮ তে যখন বিজনেস মাত্র স্টার্ট করেছি তখন তুরস্ক থেকে অর্ডার পেয়েছিলাম হাতের কাজের ড্রেসের। কিন্তু তখন বিজনেসের কিছুই বুঝি না, মাত্র শুরু করেছি, নিতে পারি নি অর্ডার। ২০২১ এর শুরুতে একটা লন্ডন ও একটা এমেরিকান ফ্যাশন হাউজের কাজের অর্ডার পাই। তারা ওখানকার বাঙ্গালী পোশাকগুলো আমার কাছ থেকে করাতে চান। কিন্তু আমি রাজি হই নি। কারণ আমার পরিশ্রমের কাজ আমার পরিচয়ে বিক্রি হবে, অন্য কারো পরিচয়ে নয়। আমি সেটা চাই নি। আমি চাই নি, আমার ডিজাইন, আমার কাজ কোন ফ্যাশন হাউজের ট্যাগ লাগিয়ে বিক্রি হোক। যদি বিক্রি হয় ই তা হবে Suchana Collection এর ট্যাগে। আমার পরিচয় আমি হারিয়ে ফেলতে চাই নি টাকার লোভে!!!!
সে আত্মীয় এসেছিলেন আমার কাজিনের বিয়ের দাওয়াত দিতে ২০২১ এর মাঝামাঝিতে। সেদিন আমার ড্রেসের ডেলিভারী ছিলো। তিনি এসে দেখেন আমি ডেলিভারী নিয়ে বিজি। ড্রেসগুলো দেখে অবাক হয়ে বললেন, "এতো নিখুঁত ডিজাইনগুলো তুই করিস??!!" আমার বিদেশ থেকে পাওয়া গাছ আর ড্রেসের অর্ডারের কথা শুনে খুশি হলেন। আফসোস করলেন আমি কেনো অর্ডারগুলো ফিরিয়ে দিলাম!!! শেষে সবার সাথে আমাকেও বিয়ের আলাদা কার্ড দিয়ে গেলেন সম্মান দেখিয়ে!!!!
এতো বড় গল্প লিখলাম কারণ স্যারের এ সেশান আমার জীবনের সাথে কিভাবে মিলে গেছে!!! অনেক কাজ বাকি... অনেক দূর যাওয়া বাকি..... অনেক কিছু অর্জন বাকি..... এখনো কিছুই হয় নি..... কিছুই করতে পারি নি.... এমন একটা অবস্থানে যেতে চাই যেনো সবাই আমাকে আমার যোগ্য সম্মান টা দেয়। এর বেশি কিছু চাওয়া নেই। মাঝে অনেক বার ভেঙে গিয়েছি। আবার উঠে দাঁড়িয়েছি। আর ভেঙে যেতে চাই না। আর এক মুহূর্ত নষ্ট করতে চাই না। এমন একটা দিন শুধু দেখতে চাই যেদিন আজ আমাকে অবহেলা করা মানুষগুলো আমার সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
সবার দোয়া প্রার্থী😊😊😊
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭২৩
Date:- ১৫/০১/২০২২ইং
Tanzila Zannat Suchana
ব্যাচ ১৫
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
রেজিষ্ট্রেশন নং ৭১৯৪৩
জোন ওয়ারী
নিজ জেলাঃ ঢাকা
Owner of Suchana Collection