একজন প্রবাসীর উপর ভরসা করে গোটা একটা পরিবার স্বপ্নের পশরা সাজায়। আর এভাবেই এপাড়ে ভরসা করে ওপাড়ে বুনতে থাকে স্বপ্নের জাল।
দুরুদে সালাম পাঠ করছি আমাদের বিশ্ব নবী, প্রানের নবী,আমাদের একমাত্র নেতা হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি।
দূর পরবাস
প্রবাসে পাড়ি জমাব, কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। জীবিকার তাগিদে গৃহ পরিজন ছেড়ে অগত্যা পরবাসের খাতায় নাম লিখাতে হলো।
প্রথমদিকে ব্যাপারটা বনবাসের মতোই লাগত। একজন প্রবাসী প্রতিদিনই নিত্যনতুন ঘটনার সম্মুখীন হয়, অভিজ্ঞতার ভান্ডারও বৃদ্ধি পেতে থাকে সেই সঙ্গে। এভাবেই কেটে গেছে বেশ কয়েকটি বছর।
প্রবাস জীবন শিখিয়েছে কীভাবে কিভাবে আশপাশে ঘটে যাওয়া অনেক কিছুকেই এড়িয়ে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যেতে হয়।
নিরাশার অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া ছেলেটা হাতে হাত চেপে, চোখের নোনাজলকে উপেক্ষা করে বলতে শিখেছে, ‘আমি ভালো আছি মা, তোমরা ভালো আছো তো?
ভালো রান্নার খাবারও পছন্দ না করা সেই ছেলেই তামিল ইডলি, বডে এমনকি অনেক অখাদ্যকে অমৃত সুধা মনে করে খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে।
সকালে ঘুম থেকে উঠাতে যাকে বাড়িশুদ্ধ লোককে ডাকাডাকি করতে হতো, প্রবাসী হবার কারণেই তাকে সূর্যিমামার আগেই জেগে উঠতে হয়।
কর্মজীবীদের খেতে হয় এমন খাবারকর্মজীবীদের খেতে হয় এমন খাবার
জ্বর-ঠান্ডাকে পেছনে ফেলে রোদ-বৃষ্টি পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় স্বউদ্যমে একসময় বন্ধুদের নিয়ে অস্থির জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছেলেকে অন্য এক অস্থিরতায় পেয়ে বসে,
আর তা হলো বিদেশে আসার ধারদেনা ফেরত দেওয়ার অস্থিরতা। প্রতিটি টাকা খরচ করতে তাকে দুবার ভাবতে হয়।
দেশে যে ছেলে কোনো কাজই করেনি, প্রবাসে তাকেই একটি রোববার কাজে বন্ধ দিলে হতাশায় পেয়ে বসে এই ভেবে যে, এ মাসে টাকা কম আয় হবে।
অথচ তাকে বেমালুমই ভুলে যেতে হয় যে সপ্তাহের ছয়টি দিন সকাল ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত কাজ করেছে।
ঘর থেকে বেরোলেই যার রিকশা লাগত, তাকে এখন স্বচক্র যানে বা দ্বিচক্র যানে পাড়ি দিতে হয় অনেক পথ ৷
মায়ের আঁচলতলে বেড়ে ওঠা ভীতু সন্তান হাজার মাইল দূরে নির্ভীক দিবানিশি কাটায় শুধু প্রবাসী বলেই। নরম বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়া তখন স্বপ্নের সম্ভব হয়। কারণ, নরম বিছানার জায়গা কাঠের তক্তা দখল করে নিয়েছে।
কর্মজীবী প্রবাসীদের থাকতে হয় এভাবেকর্মজীবী প্রবাসীদের থাকতে হয় এভাবে
ছাত্ররাজনীতির মাঠে বীরদর্পে প্রদক্ষিণ করা ছেলেগুলোই রাজনীতির ভেদাভেদ ভুলে,
প্রতিহিংসাকে পেছনে ফেলে ‘বাংলাদেশি’ পরিচয়ে এগিয়ে চলে। বিপদে ভাই-বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়ায়।
সারা দিন কাজের শেষে রাত জেগে পড়াশোনায়ও ক্লান্ত হয় না। ভোর না হতেই বেরিয়ে পড়ে কর্মস্থলে। প্রবাসীর এ উদ্যম দেখে ঘড়ির কাঁটা নিজেই যেন ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
শত কষ্ট, ব্যস্ততার মাঝেও প্রবাসীদের খুশি হতে খুব বেশি কিছু লাগে না। দেশে সবাই ভালো আছে, তার হাসিমাখা কণ্ঠস্বরই ভরিয়ে দেয় প্রবাসীদের প্রাণ।
প্রবাসে চরিত্রগুলো ভিন্ন হতে পারে কিন্তু তাদের জীবনযুদ্ধ, গল্পকথা মোটামুটি একই রকম। প্রতিটি জীবনই প্রবাসে এসে বদলে যায়, সজ্জিত হয় সম্পূর্ণ এক নতুন ধাঁচে।
প্রবাস জীবন শেখায় জীবনকে উপলব্ধি করতে, শত বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে চলতে। আর ‘আদু ভাই’-এর মতো আমি/ আমরা শিখে যাচ্ছি বছরের পর বছর। এ শিক্ষা জীবনের শেষ কোথায় কে জানে?
প্রবাস জীবন কখনোই সুখকর হয় না। তবু মানুষ প্রবাসী হয়। পরিবারের মানুষগুলোকে একটু ভালো রাখার আশায়, এদের স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব নিয়ে এরা পাড়ি জমায় প্রবাস নামের যন্ত্রণায়।
নানামুখী কারণে প্রবাসী হওয়া এসকল মানুষগুলোর কাঁধে একটি নয় দু’টি নয় গোটা পরিবারের স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব থাকে।
যে দায়িত্বের কথা চিন্তা করে এরা ভুলে যায় নিজের স্বপ্নকে। দেশে রেখে আসা পরিবারের সদস্যদের স্বপৃন পূরণকে একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে স্থীর করে এরা প্রতিনিয়ত সহ্য করে যায় অসহনীয় কষ্ট।
একজন প্রবাসীর উপর ভরসা করে গোটা একটা পরিবার স্বপ্নের পশরা সাজায়। আর এভাবেই এপাড়ে ভরসা করে ওপাড়ে বুনতে থাকে স্বপ্নের জাল।
অনেক আবার ৩ বেলা ঠিকমত খাবারের স্বপ্নও জড়িয়ে থাকে এই প্রবাসীর উপর। এরকম হাজারও দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে জন্মভূমি ও জননীকে ছেড়ে অচেনা অজানা এক দেশে পাড়ি জমায় এরা।
অনেকেই বলেন স্বপ্ন পূরণের প্রবাস। কিন্তু অনেকেই জানেন না কতটা ঝুকি নিয়ে এই মানুষগুলো পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করে যাচ্ছে।কিন্তু সব প্রবাসীরা কি পাড়ে তার পরিবারের সকল স্বপ্ন পূরণ করতে? হয়ত চাইলেও অনেকেই তা করতে পারে না।
অনেক সময় আমরা অনেক প্রবাসীর মৃত্যুরর সংবাদ পায়। তার মধ্যে স্বাভাবিক মৃত্যুগুলো হয়ত মেনে নেয়া যায় কিন্তু অস্বাভাবিক মৃত্যুগুলো কি করে মেনে নেয়া সম্ভব বলুন তো। অস্বাভাবিক মৃত্যু বলতে যা বুঝানো হচ্ছে তাহলো।
কর্মক্ষেত্রে দূর্ঘটনার স্বীকার হয়ে কিংবা কোন হামলার স্বীকার হয়ে।
এমন কি অনেক সময় দেখা যায় বাংলাদেশিরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করেও প্রতিহিংসার বসে মানুষ খুন করছে। এ বিষয়গুলো সত্যিই হতাশা জনক।
আমরা হয়ত কখনো ভেবেও দেখিনি যে একজন প্রবাসীর মৃত্যুর পর তার পরিবারের কি অবস্থা হয়। হয়ত এই দিক আমরা খুব স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তা করি।
মনে করি সবাইকেই তো একদিন মরতে হবে তাহলে এ আর এমন কি?
কিন্তু আমরা কখনো ভেবে দেখিনি যে একজন প্রবাসীর মৃত্যু শুধু একটি মানুষে মৃত্যু, মৃত্যু হয় গোটা একটি পরিবারে।
কতটা ভরসা করে কতটা স্বপ্ন বুনে মা তার ছেলেকে বিদেশ পাঠায়, কত কষ্ট চেপে বুকে একজন মা নিজের সন্তানকে দূরে রাখে তা কি আমরা কখনো ভেবেছি?
যে মানুষটি আজ প্রতিহিংসার কারণে প্রবাসে খুন হলো হয়ত তার মা একবুক আশায় রয়েছেন তার ছেলেটি তার কাছে একদিন ফিরে আসবে।
কিন্তু ছেলের মৃত্যুর সাথে সাথে যে এই মায়ের এই আশারও মৃত্যু ঘটেছে তা কি আমরা ভেবে দেখি।
ছোট ছোট ভাই-বোন, আর মা-বাবা কত স্বপ্ন থাকে প্রবাসি সেই বড় ভাই বা বড় ছেলেটাকে ঘিরে। কিন্তু যখন ঐ ছেলেটাই থাকে না তখন তো এই মানুষগুলোর স্বপ্নও থাকে না।
এদের স্বপ্নেরও কি অপমৃত্যু ঘটলো না। প্রকৃত অর্থে একজন প্রবাসীর মৃত্যু কেবল তার একা মৃত্যু নয় তার গোটা পরিবারের মৃত্যু।
আমরা যারা বাংলাদেশ থেকে প্রবাসে এসেছি তারা সকলেই জানি আমাদের পরিবার আমাদের দিকে চেয়ে আছে।
তাদের হাজারোও স্বপ্ন পূরণের দায়ভার নিয়ে আমরা প্রবাসে এসেছি। তাহলে কি করে আমার অন্য আরেকটি পরিবারের সকল স্বপ্ন ও আশাকে শুধুমাত্র প্রতিহিংসার বসে হত্যা করি।
কেন একটি পরিবারকে সাগরের জলে ভাসিয়ে দেই। এটাই কি আমাদের মানবিকতা। নাকি স্বদেশি হিসেবে একজন আরেক জনকে সাহায্য করার নামই মানবিকতা।
প্রিয় ভাইয়া ও আপুরা আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ সময় নিয়ে ধৈর্যের সাথে আমার ছোট এই গল্পটি পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ এবং অনেক অনেক ভালবাসা জানাচ্ছি আপনাদের।
সেই সাথে সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের লেখার সমাপ্তি টানলাম এখানেই।
সবাই সাবধানে থাকবে
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬১৪*
*Date:- ০৪/০৯/২০২১*
এম, এইচ মালেক (মোল্লা)
ব্যাচ নাম্বার ১২
রেজিস্ট্রেশন নাম্বার 43 871
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
জেলা চাঁদপুর, ফরিদগঞ্জ (উপজেলা)
বর্তমান রিয়াদ সৌদি আরব