একদিকে চাকরি না করায় পরিবারের তাচ্ছিল্য এবং বউ ছেলের ভরণপোষণ এর দায়িত্ব ।
আমার দাদা একজন সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন শিক্ষকতার পাশাপাশি একজন হোমিও ডাক্তার এবং তার পাশাপাশি থানার জমাদ্দার ছিলেন। তার কাছে কেউ সরকারি চাকরি করে মানেই সেই আসল শিক্ষিত এবং কর্মঠ।তারই ধারাবাহিকতায় আমার বড়ো চাচা ও একজন সরকারি চাকরিজিবি ছিলেন।
তখন কার যুগে যখন খুব অল্পবয়সেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হতো তখনও আমার ফুফুদের বেলায় ছিলো উল্টা। তারা সরকারি চাকরি না করলেও বি.এ পাশ করার পরেই বিয়ে দিয়েছিল। অতঃপর তারাও সেই ধারাবাহিকতায় আমার ফুফাতো ভাই বোন রাও সরকারি চাকরিজিবি এবং তাদের জীবন সঙ্গীরাও । এক কথায় আমাদের পরিবারে সরকারি চাকরি টাকে সোনার হরিণ মনে করা হয় ।
ধারাবাহিকতার রেকর্ড ভাঙলো আমার আব্বু পরিবারে ছোট হওয়ায় সবাই খুব ভালোবাসতো এবং আব্বুকেও সেই সোনার হরিণ ধরিয়ে দিতে চাইলেও আব্বু ছিলো সম্পূর্ণ বিরোধী । সে কোনো ভাবেই সরকারি চাকরি করবে না ।
তাই অনেক টা ওই পরিবার থেকে আলাদা হওয়ার মতো পরিস্থিতি হলো । তাদের কথা ছিল চাকরি না করলে পড়ালেখার ও দরকার নাই। তাই আব্বু জেদের বশে HSC পরীক্ষাও দিলো না। এক বন্ধুর দোকানে বসে টেইলারি শিখতে থাকে।
আমার বড় চাচারা যেখানে শুধু অলস-বিলাসী জীবনযাপন আর চাকরির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো, সেই তুলনায় আমার আব্বু খুব পরিশ্রমী সব কাজেই আগ্রহী এবং খুব সুন্দর করে যেকোনো কাজ কমপ্লিট করতে পারতো। এছাড়াও যে জিনিস টা তার ইচ্ছার বিরোধী তাকে দিয়ে সেটা করানোও ছিলো অসম্ভব। একঘেয়েমি কোনো কিছু কারোর ই পছন্দ না।
আব্বুর চিন্তা ভাবনার সাথে না পেরে এক পর্যায়ে আমার দাদার খুব ঘনিষ্ট এবং প্রভাবশালী বন্ধুর মেয়ের সাথে (মানে আমার আম্মু) আব্বু কে বিয়ে দিয়ে দিল ।
এরপর শুরু হলো আব্বুর জীবনের কঠিন ধাপ । তারপর এলো আমার বড়ো ভাইয়া
একদিকে চাকরি না করায় পরিবারের তাচ্ছিল্য এবং বউ ছেলের ভরণপোষণ এর দায়িত্ব । কিছুটা আত্মসম্মানেও লাগলো তাই আব্বু চিন্তা করলো সে পরিবার থেকে দূরে থাকবে চট্টগ্রাম তার এক বন্ধুর কাছে চলে যাবে । যেমন কথা তেমন কাজ আম্মুকে আর বড়ো ভাইয়াকে নিয়ে চট্টগ্রাম চলে গেলো।
#এবার_বলি_আমার_বুদ্ধিমতী_আম্মুর_কথাঃ
আব্বুর সাথে অচেনা এক পরিবেশে যখন অর্থসংকট তখন আম্মু নিজেই আগ্রহ করে আব্বুর কাছ থেকে ট্রেইলারিং শিখে নিলো । এবার আস্তে আস্তে সব মহিলারা আম্মুর কাছে আসতো ড্রেস সেলাই এর জন্য, পাশাপাশী আম্মু মহিলা দের কে ট্রেইলারী শিখাতো
তারপর আসতে আসতে একটা দোকান ভাড়া নিয়ে ফেললো। এভাবেই তারা একে অপরের সহযোগী হয়ে বড়ো ভাইয়ার পড়ালেখা এবং সংসার চলছিল ।তারপর ছোট ভাইয়ার আগমন । বড়ো ভাইয়া খুব বিলাসিতায় বড়ো হলেও ছোট ভাইয়া কিছুটা অভাব দেখেছে । তারপর আস্তে আস্তে সুখের দিন ফিরে পেয়েছে
কে কি ভাবে জানিনা সরকারি চাকরির প্রথা থেকে বের হয়ে এসে নিজের কাজ কে ভালোবাসায় আমি আব্বুকে খুব পছন্দ করি।
#আমাকে_যেভাবে_চাওয়া_হয়েছিলঃ
সবার ইচ্ছা ছিলো একটা মেয়ের প্রতি। আম্মুর কাছ থেকে শুনেছি আম্মুর একটা কালো শাড়ি ছিলো, সেটা পড়ে তাহাজ্জুত নামাজ পড়ে আল্লাহ কে বলতো "ঠিক এই কাপড়ের মতো কালো হোক তাও একটা মেয়ে চাই"আল্লাহ আমাকে পাঠিয়ে দিলো ছোট ভাইয়ার ঠিক তেরো বছরের ছোট আমি।
আমি আসায় সবচেয়ে খুশি ছিলো ছোট ভাইয়া। আমাকে কখনো কোনো অভাব পেতে দেয় নি।এবার সবার স্বপ্ন আমাকে নিয়ে। চট্টগ্রামেই খুব সাচ্ছন্দে বেড়ে ওঠা ।
আমাকে কখনো পড়ালেখা নিয়ে ফোর্স করতো না। জে.এস.সি পরীক্ষায় রেজাল্ট 4.80 ছিলো আমাকে কখনো বলা হয়নি যে তুমি A+ পেলে না কেনো? তুমি সাইন্স বা কমার্স নিয়ে পড়ো আর্টস তো ড্যামিশ রা নেয়। কারণ তারা বুঝেছে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে কিছু করানো উচিৎ না
তবে আমার দাদার নাকি ইচ্ছা ছিলো আমাকে ওকলাতি পড়াবে কি আর করার ছোট বেলা থেকেই উকিল হওয়ার প্রতি খুব একটা ভালো লাগা কাজ করতো । তার ধারাবাহিকতায় আমি মানবিক বিভাগে পড়ালেখা করি। এবং ভালো রেজাল্ট ছিলো। আর একটা কথা স্কুল জীবনে আমার শিক্ষ্ক দের অবদান ছিল অতুলনীয় । আমি তাদের অনেক ভালোবাসা এবং প্রশংসা পেয়েছি। বিশেষ করে শারমিন সুলতানা ম্যাডাম আমার শিক্ষা জীবনের আদর্শ।
#আমার_জীবনে_আমার_ছোট_ভাইয়ার_ভূমিকাঃ
আমাকে কখনো কোনো অভাব পেতে দেয় নি আমার ভাইয়া। মুখ ফুটে যা চেয়েছি আমাকে তা দিয়েছে । কোন কাজ টা ভালো যা করলে মানুষ ভালো বলবে এবং কোন কাজ টা খারাপ যাতে আমাকে মানুষ খারাপ বলবে , এসব খেয়াল আম্মুর পাশাপাশি ভাইয়া ও খুব রাখতো।
#এলাকায় কোনো ছেলে যেনো আমাকে রাস্তায় ডিস্টার্ব না করে সেজন্য ভাইয়া এলাকার বড়ো ভাইয়াদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতো । যার কারণে রাস্তায় কেউ ডিস্টার্ব করা তো দূরের কথা উল্টো দেখলে এড়িয়ে যেতো।
এরপর আমি যখন ক্লাশ 9 এ তখন ভাইয়ার বিয়ে হলো । বিয়ের শুরুতেই তার #প্রথম_শর্ত ছিলো তার মা এবং একটা মাত্র বোন এই দুইজনকে যে সবচেয়ে বেশি ভালবাসতে পারবে তাকেই আমি বিয়ে করবো। কথায় বলে #"নিয়ত গুনে বরকত" । আর আমরা ভাইয়াকে যেহেতু ভালোবাসি সুতরাং ভাবীকে অবশ্যই খুব ভালোবাসি আর ভাবীও খুব ভালো ।
এই জন্যই বলি আমার জীবনে #আমার_ভাইয়াই_একজন_হিরো।
#"অল্প_বয়সে_সল্প_বাস্তবতার_ছোঁয়া"
আমাকে মোবাইল কিনে দেওয়া হয়েছিলো কলেজে ওঠার ৫ মাস পরে । আমি যদিও মোবাইল নেওয়ার জন্য তেমন একটা বায়না করি নি। কলেজ দূরে হওয়ায় তারাই দিয়েছিল। মোবাইল এর খুঁটিনাটি বুঝতে বুঝতে এবং ফেসবুক একাউন্ট রানিং করতেও আমার কলেজের প্রথম বর্ষ শেষ যাইহোক যখন একটু বুঝতে শিখলাম অনেক কৌতূহল জন্মালো । আর বিশেষ করে বিভিন্ন সফল ব্যাক্তিদের জীবনী পড়তে ভালো লাগতো
খেয়াল করলাম বেশির ভাগ সফল ব্যক্তিরা কেউ ছিলেন খুব দরিদ্র, বাবা মা থেকে বিচ্ছিন্ন, কেউ অশিক্ষিত, আবার কেউ বাবা মায়ের দোয়ায় শূন্য থেকে আজ ধনী ,তারাই আজ পুরো বিশ্বের মধ্যে ধনীবর্গ । তাদের অধীনে কাজ করছে লক্ষ কোটি মানুষ
অন্যদিকে যারা এত শিক্ষিত, জীবনের অর্ধেকটা সময় পড়ালেখার পিছনে দিয়েছে তবুও কাজ করছে অন্যের অধীনে ।
এই ব্যাপার গুলো মাথায় ঘুরপাক খেত। আর তাই গুগল,ফেসবুক, ইউটিউবে আমার সার্চলিস্টে ছিলো বিশ্বের ধনী ব্যাক্তিদের নাম জীবনী এবং কিভাবে তারা উঠে দাড়ালো সেগুলো খোঁজ।
তবে আমার #সরকারী চাকরি করার ইচ্ছা আছে কিন্তু সেটা দ্বিতীয় অপশন। আমার ইচ্ছা এবং স্বপ্নই সবার প্রথমে
এভাবেই লকডাউনে একদিন বসে বসে এ ব্যাপারে ঘাটতেই চোখে পড়লো #নিজের_বলার_মতো_একটা_গল্প_ফাউন্ডেশন এর এই গ্রুপ টি। প্রথম প্রথম বুঝতাম না তবে গ্রুপের পোষ্ট গুলো পড়তাম সবসময়।পোষ্ট গুলে পড়ে আমার মনে একটা অন্য রকমের অনুভূতি জন্মালো।আমার মনে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন জাগলো।
একপ্রকার ভালোবেসে ফেলেছিলাম প্রিয় প্লাটফর্ম টাকে।
অবশেষে একদিন প্রাণপ্রিয় স্যারের একটা পোস্ট দেখলাম যেখানে এই ৯০ দিনের সেশন আর রেজিস্ট্রেশন করার কথা উল্লেখ ছিল। তাই আর দেরি না করে ভালোবাসার গ্রুপ টাকে নিজের আরেকটা পরিবার হিসেবে গ্রহণ করে ফেললাম
#আমার_জীবনের_প্রথম_উদ্যোগ#
HSC পাস করে যখন কোনো পড়ালেখা ছিলো না অলস সময় পার করছি তখন বাসায় শখের বসে হ্যান্ড পেইন্ট করতাম। কখনো নিজের কামিজে কখনো ভাইজির ফতুয়া তে আবার কখনো ওড়না তে। তবে ফাউন্ডেশন এ যুক্ত হওয়ার পর ভাবতে লাগলাম হ্যান্ড পেইন্ট টাকেই কাজ হিসেবে নিলে কেমন হয় 🤔 জীবনে একটা উদ্যোগ নিয়েই দেখি
অতপর আমি এই ফাউন্ডেশনের ইসরাত আপুর কাছ থেকে কিছু #খাদি পাঞ্জাবি আর হাফ সিল্ক শাড়ি কিনে নিলাম । ব্যাস সেগুলোতে হ্যান্ডপেইন্ট করার মাধ্যমে শুরু হয়ে গেল আমার কাজ । এবং আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া প্রথম কেনা পাঞ্জাবি গুলো কয়েকদিনের মধ্যেই সব অর্ডার হয়ে যায়। এরপর আবার নিলাম আপুর কাছ থেকে এভাবেই চলছে সবার দোয়ায়।
আমি কাজ করছি হ্যান্ড পেইন্ট পণ্য নিয়ে। এর পাশাপাশি দেশীয় শাড়ি এবং পাঞ্জাবি নিয়ে
#আমার_স্বপ্ন_পূরণে_কিছু_বাঁধা
ছোট বেলা থেকেই আমি খুব দুষ্ট আর বাসার সবার সাথে এতো হাসিখুশি থাকি । বাচ্চাদের সাথে খুব সহজে মিশে যাই। কিন্তু
যখন অনেক মানুষ জন দেখি বা কোথাও যাই তখন আর কথা বলতে পারিনা কেমন যেনো অসস্তি লাগে কথা বলতে
এমনকি আমার বন্ধুবান্ধব রা জানে আমি খুব শান্ত একটা মেয়ে ।
আমার #জড়তা টাই আমার প্রথম বাঁধা
তারপর আমার কোনো একটা ভালো কাজের কেউ যদি একবার নেগেটিভ দিক বের করে আমি আর সে কাজ টা করতে পারি না।
# *📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৩৩*
Date:- ৩০/০৯/২০২১
Tamanna Tapshi
ব্যাচ নং: ১৪
রেজিঃ ৬৫০৮৮
জেলা: বরগুনা