আমি বাবার বড় ছেলে বাবার সাথে কৃষিকাজে সময় দিতে লাগলাম আর এইদিকে স্কুলে লেখাপড়া মোটামুটি চালিয়ে যেতে লাগলাম।
আজ আমি আমার আাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আমার জীবনের কিছুটা অংশ আপনাদের সাথে শেয়ার করছি আশা করছি গল্পটা পড়ে আমার জীবনের অতীত সম্পর্কে জানতে পারবেন ,,,,,,,
পৃথিবীতে বেশির ভাগ মানুষ অসুখী,,,, আমি যতটুকু জানি সুখ হচ্ছে নিজের কাছে। কেউ গাছ তলায় ঘুমিয়ে সুখি, কেউ আবার আলিশান বাড়িতে আভিজাত্যের ছোয়ায় থেকে ও সুখী না।
F M Radio কিব্রিয়া ভাইয়ের কথার সাথে সুর মিলিয়ে বলতে হয় - জীবন নাটকের চেয়ে ও নাটকীয়।
জীবনের গল্প অনেক সময় অনেকের কাছে সুখের, অনেকের কাছে ব্যর্থতার, আবার অনেকের কাছে অনেক কষ্টের, তবে বেশির ভাগ ক্ষেএেই বাস্তব জীবনের গল্প অনেক কষ্টের হয়ে থাকে।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা,
প্রতিটা মানুষের জীবনে গল্প আছে, এই ক্ষনস্থায়ী দুনিয়ায় একটা মানুষের একের অধিক গল্প থাকে আমার জীবনটা ও তার ব্যতিক্রম নয়।
আমার শৈশব কেটেছে যৌথ পরিবারের সাথে। জন্মের পরে আমার দাদাকে দেখিনি । দাদার ভালোবাসা কেমন হয় সেটা বুঝার নচিব হয়নি।
আমার বয়স যখন তিন থেকে চার বছর তখন আমার দাদী ও পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান পরকালে। আমার দাদা ছিলেন একজন কৃষক, নিজের বলার মত তেমন কোন চাষের জমি ছিল না, পরের জমি এক বছরের চুক্তিতে নিয়ে চাষাবাদ করতেন । মাটির সাথে যুদ্ধ করেই পরিবারের জীবিকা আহরণ করতেন।
আমি গ্রামের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের বড় হতে লাগলাম আমার বাবা ছিল আদর্শ কৃষক এবং খুবই সরল ও সাদা সিদা, তার একটি মাএ উদাহরণ আপনাদের সামনে তুলে দরলাম, আর সেটা হলো, তার ছেলে মেয়েদের কে বলতো বাবারা তোমরা জখন চকের মধ্যে হাটবা অথবা জমিতে হাটবা তখন অবশ্যই জমির আইলের উপর দিয়ে হাটবা তার মানে সিমানার উপর দিয়ে হাটবা। অন্যের জমির
উপর পারা দিবানা। কৃষি কাজ করে আমাদের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান ও চিকিৎসা চালানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন। আমরা 3 ভাই ও 3 বোন ছিলাম। আমাদের গ্রামের নাম মহেশখোলা। আমাদের গ্রামের মধ্যে একটা স্কুল আছে, গ্রামের নামে নাম রাখা হয়েছে মহেশখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সেই স্কুলে প্রাথমিক পর্যায়ে লেখাপড়া করতে থাকি প্রাথমিক অবস্থায় নিজের ভালো-মন্দ কোন কিছু বুঝতাম না। এভাবে চলতে চলতে প্রাথমিক বিদ্যালয় অতিক্রম করলাম।
আমি ছাত্র হিসেবে তেমন ভালো ছিলাম না পরিবার থেকে লেখাপড়া কোন সাপোর্ট ছিল না, কারণ আর্থিক সংকটের মধ্যে লেখাপড়া ভালো ভাবে করানোর দিকে কারো কোন তেমন পেসার ছিলো না। স্কুলে আমার রোল নাম্বার 20 এর উপরে থাকত।
যাই হোক এমনি করেই আমি পঞ্চম শ্রেণি অতিক্রম করেছি। লেখাপড়া নিজের চেষ্টায় যতটুকু করা যায় সেটা নিয়ে এগুচ্ছি। প্রাইমারী স্কুল শেষ করে এখন হাইস্কুলে ভর্তি হবো। প্রাইমারি স্কুলের পাশেই আমার বাড়ির এক জ্যাঠার প্রতিষ্ঠিত হাই স্কুল, স্কুলের নাম হল দৌলত হোসেন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় গত দুই বছর অতিক্রম করল স্কুলটি বর্তমানে আমাদের মেঘনা থানাতে দৌলত হোসেন সরকারি বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। ভর্তি হয়ে গেলাম সেই হাইস্কুলে। লেখাপড়া চলছে। হাই স্কুলে যাওয়ার পর নিজের ভালো-মন্দ কিছুটা বুঝতে শিখেতেছি সিক্স সেভেন দুই বছর শেষ করে অষ্টম শ্রেনীর পদার্পণ হয়েছিলাম। আমার যতটুকু মনে পড়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় আমাদের যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবারের রূপান্তরিত হয়ে যায়।
তার কারণ আমরা বাইবোন বেশি সেই জন্য আমার কাকি আলাদা হতেই বেশি পছন্দ করতেন, আমার বাবা ছিল সহজ-সরল দাদার জমি জামা না থাকার কারণে বাড়ির মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছু ভাগ করে আলাদা হয়ে গেল।
যেহেতু আমি বাবার বড় ছেলে বাবার সাথে কৃষিকাজে সময় দিতে লাগলাম আর এইদিকে স্কুলে লেখাপড়া মোটামুটি চালিয়ে যেতে লাগলাম। আমার মনে পড়ে সেই চিত্র গুলো বা সেই কাজগুলো আমার চাচা ও চাচাতো কাকা বাবা ও কাকারা মিলিয়ে 5 অথবা 6 জন আঙ্গুল দিয়ে চাষাবাদ করতাম।
একদিন পরপর একে এক করে একজনের জমিতে জমি চাষ করা হতো সেই চিত্র গুলো খুবই সুন্দর লাগতো। সেইসাথে সকালের নাস্তায় একসাথে খাওয়া হতো সেই দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে।
আমি একটি কথা বললে হয়তো অবাক হবেন, হাইস্কুলে যখন এস এস সি টেস্ট পরীক্ষা আরম্ভ হলো তখন সময়টা ছিল 1991 সাল নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস, পরীক্ষা চলাকালীন আমি পরীক্ষার সময় সকাল বেলা কাকাদের সাথে হাল চাষ করে আটটা অথবা সাড়ে আটটার মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য বাড়িতে আসতাম এবং নাস্তা খেয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতাম । কারন আমার বাবার শরীরটা পর্যায়ক্রমে খারাপের দিকে যাচ্ছিল, এইভাবে সকল টেস্ট পরীক্ষা দিলাম পরীক্ষা মোটামুটি সকল বিষয়ে পাশ করলাম। 1992 সালের প্রথম দিকে এসএসসি পরীক্ষা আরম্ভ হল তখন আমাদের থানা ছিল দাউদকান্দি, সেখানে আমাদের মেঘনা থেকে নদীপথে অনেক দূর যেতে হতো দাউদকান্দি বাসা ভাড়া নিয়ে পরীক্ষা দিলাম আমাদের পরীক্ষা ছিল নৈমিত্তিক যা প্রথম আরম্ভ হয়েছে, পরীক্ষা দিয়ে বের হলেই দেখতাম পাশ নম্বর হয়ে গেছে, আলহামদুলিল্লাহ পরীক্ষার রেজাল্টও ভাল হল, 5/6 নাম্বারের জন্য প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হতে পারি নাই।
আমি জানি লেখা পড়া যাই কিছু করিনা কেন হাতের কাজ না জানলে চাকরি পাওয়াটা খুবই কষ্টকর। যদি ভাগ্যক্রমে চাকরি পেলে ও ঘোষের জন্য চাকরি হয় না। সেই চিন্তা থেকে টেকনিক্যাল কাজ শিখার আগ্রহ ছিলো এরপর ঢাকায় গেলাম,
ঢাকা মীরপুরে দুইনাম্বারে জার্মান টেকনিক্যাল কলেজে ছয় মাসের জন্য রেফ্রিজারেটর ও এয়ারকন্ডিশনের ভর্তি হলাম 6 মাস কোনরকম ক্লাস করার পর পরীক্ষা দিলাম পরীক্ষা ভালো রেজাল্ট হল।
তখন সেখান থেকে বেসিক আইডিয়া পেলাম। তখন তেমন কোন কাজ করতে পারতাম না।
সেইজন্য মিরপুর এক নম্বরে একটি ফ্রিজের দোকানে ভর্তি হলাম কোন টাকা পয়সার ছাড়াই।
সেই সময়টাতে আমার বাবা পুরোপুরি অসুস্থ। আমার ছোট ভাই বাবার কাজ পুরোপুরি তার হাতে নিয়ে নেয়। মিরপুরে পড়ার সময় মাঝেমধ্যে বাবাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসতাম সেই কারণে মিরপুরের দোকানে হাতের কাজ শিখা হলোনা ।
তার কারণ বাবা খুবই অসুস্থ বুকে ব্যথা কাশি দিলে মুখ দিয়ে রক্ত চলে আসত সে জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও পিজিতে ডাক্তার দেখালাম এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি এবং ঔষধ বিভিন্ন রকম চিকিৎসা করার পর ডাক্তার বলেন তাকে বাড়িতে নিয়ে যান তার অবস্থা ভালো না ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতে নিয়ে আসলাম। কারন ডাক্ত ও বুঝতে পেরেছিলেন বাবার অবস্থা খুবই সিরিয়াস। তাই তিনি বলে দিলেন বাড়িতে নিয়ে একটু ভালো ভাবে সেবা যত্ন করেন আর যা খেতে চায় তা খাওয়ান। ডাক্তারের এই কথা শুনে আমার বুকটা কেপে উঠছিলো। তখন মনে হলো বাবা মনে হয় আর বাচবে না।
সন্মানিত প্রিয় বন্ধুগন আমার জীবনের গল্পটা বড় হয়ে যাচ্ছে তাই আজ এই পর্যন্তই, তারপর আমার দ্বিতীয় অধ্যায় আরম্ভ হবে। আমার জীবনের বাস্তব গল্পের দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ আমার চাকরি জীবন যে চাকরিজীবন 20 টি বছর অতিক্রম করেছি সেই গল্প পরবর্তীতে আমাদের কাছে তুলে ধরব.....
# *📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৩৩*
Date:- ৩০/০৯/২০২১
মোঃ জসীম উদ্দিন
বেচ নং 14
রেজিস্ট্রাশেন 64529
উপজেলাঃ মেঘনা
জেলাঃ কুমিল্লা