আমি উঠে দাঁড়াতে পারছি না , গোড়ালির পিছন থেকে রক্ত পড়ছে , পা ভেঙে চুড়ে গুড়ো হয়ে গেছে
সেপ্টেম্বরের তিন তারিখ, কী একটা বিভৎস দিন। আব্বা, আমি একসাথে এক্সিডেন্ট করি। আব্বার বাম হাত ভেঙে গেছে। ভাঙা হাত বুকে চেপে ধরে শার্টের পকেটে থাকা চেক, ভাঙা চশমা খুঁজছেন রাস্তায়। তাঁর সাথে আমিও ছিলাম তিনি সেটা ভুলে গেলেন। কপাল ফেঁটে রক্ত পড়ছে। চশমা ভেঙে চোখের ভিতরে ঢুকে গেছে।
তার কোনোদিকে তাঁর খেয়াল নেই। কোনো ব্যথা নেই, মুখে কথা নেই। স্তব্ধ, নিরব। আমি খানিক বাদে চিৎকার দিয়ে বললাম, আমাকে বাঁচাও।
তখন লোকজন আমাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করে গাড়ির নিচ থেকে বের করলো।
আমি উঠে দাঁড়াতে পারছি না। গোড়ালির পিছন থেকে রক্ত পড়ছে। পা ভেঙে চুড়ে গুড়ো হয়ে গেছে। কপালে সামান্য আঘাত আমিও পেয়েছি। ব্যাটারির এসিডে পুড়ে গেছে হাত।
বাইকে করে একটা ছেলে যাচ্ছিলেন পাশ দিয়ে। লোকটা এগিয়ে আসলেন। আব্বাকে জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে? ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন না ক্যান?
তার কাছে থাকা ব্যাগ থেকে হেক্সিসল বের করে আব্বার কপালে, আমার পায়ে দিলেন। জ্বলুনি শুরু হলো। পা থেকে রক্ত পড়েই যাচ্ছে তখনো। তিনি টিস্যু বের করে চেপে ধরতে বললেন।
একটা অটো ঠিক করে আমাদের হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলেন। সারাদিন তিনি আমাদের নিয়ে হাসপাতালময় দৌঁড়ঝাপের উপরে থাকলেন। ডাক্তার, টেস্ট, ওটি ইত্যাদি ইত্যাদি। অফিসে গেলেন না।
হাসপাতালে ছুটে আসলো ছোটো ভাই Rezwan। সেদিন বৃহস্পতিবার। ওটি না করতে পারলে ফের ওটি হবে রবিবার। শেষমেশ ওটিও হলো।
এক পরিবারের দুইজন একসাথে এক্সিডেন্ট করা মানে যে কী তা হয়তো অনেকে বুঝবে না। আমার আম্মা আগে থেকেই অসুস্থ। আমাদের এই অবস্থার পর আরও অসুস্থ হয়ে গেলো। বোন ছোটো মানুষ। বিশাল একটা ধাক্কা সামাল দিতে হয়েছে আমাদের । এবং এটা যেমন তেমন একটা ধাক্কা ছিলো না।
পাঁচ তারিখ ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় আসি। বাসায় বসেই প্লাস্টার করাই। কপাল মন্দ হলে যা হয়। প্লাস্টার এতো টাইট হলো যে পরদিনই কেটে ফেলতে হলো। আবার করালাম। অক্টোবরের ১০ তারিখ আবারও নিজে নিজেই প্লাস্টার কেটে ফেললাম। অসহ্য লাগছিলো তখন সবকিছু। যাই হোক তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।
দেখতে দেখতে একটা বছর হয়ে গেছে। পা ভেঙেছে বলে কত কথা শুনতে হয়েছিল। অনেকের ধারণা ছিলো আমি আর আগের মতো স্বাভাবিক হবো না। আগের মতো হাঁটতে, দৌঁড়াতে পারবো না। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ। পারি। যারা মনে মনে খুশি হয়েছিল তারা জানেই না, হাঁটতে মনের জোর লাগে। আমার ছিলো। আমি প্লাস্টার কাটার পরে যখন ঠিক মতো দাঁড়াতে, বসতে, হাঁটতে পারি না, ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটতে হয় তখনই জবে জয়েন করি। একা একা তখন সব সামলে নিয়েছি।
কারণ, আমার কাছে জীবন মানে সংগ্রাম। ঘরে ননীর পুতুল হয়ে বসে থাকা না। চাকরির পাশাপাশি শুরু করি বিজনেস। আল্লাহ আমার সহায় ছিলেন বলে ডিসেম্বর থেকে জুলাই পর্যন্ত আমার বিক্রিও হয়েছে দুই লাখ টাকার প্রডাক্ট। আলহামদুলিল্লাহ।
দোয়া করবেন সবাই আমার জন্য।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬১৪*
*Date:- ০৪/০৯/২০২১
নামঃ সুলতানা
রেজিষ্ট্রেশন নাম্বারঃ ৬৯৫৭৩
ব্যাচঃ ১৫
জেলাঃ ঝালকাঠি
উদ্যোগঃ প্রেমাংক