আমি গ্রামের একটা ছেলে। গ্রামের নয় দশ টা ছেলে মেয়ের মতোই আমার বেড়ে ওঠা।
★বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম ★
★আসসালামু আলাইকুম ★
★জীবনের গল্প ★
দরুদ সালাম পাঠাই মানবতার শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু সাল্লাম এর রওজা মোবারকে।
কৃতজ্ঞতা সম্মান শ্রদ্ধা জানাই আমাদের ফুলের প্রিয় শিক্ষক লক্ষ তরুণের আইডল ও মেন্টর জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যার কে। যিনি আমাদের এত সুন্দর একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার কারণে আমরা ভালো মানুষ ও উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারছি।
আসলে প্রত্যেক মানুষের জীবনের কোন না কোন গল্প থাকে। হোক না সে গল্পে হাসি আনন্দ দুঃখ বেদনা পাওয়া না পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি বিষয়। জীবনের গল্প লিখে শেষ করার মতো না। তারপরও জীবনের কিছু গল্প আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম।
আমার শৈশব
আমি গ্রামের একটা ছেলে। গ্রামের নয় দশ টা ছেলে মেয়ের মতোই আমার বেড়ে ওঠা। কিন্তু আমি ছিলাম মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। দুই ভাই ও তিন বোন। ভাই বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট ছিলাম। আমি মোটামুটি অন্যান্য ভাই বোনের চেয়েও শান্ত ও নিরব প্রকৃতির ছিলাম। আমি সবার ছোট থাকার কারণে সবাই আমাকে অনেক ভালোবাসতো। বাবা ছিলেন খুব সাদাসিধে একজন কৃষক ও মা গৃহিণী। সাতজনের সদস্যের ভরণপোষণ করতে বাবার অনেক কষ্ট করতে হতো।
প্রাথমিক শিক্ষা
প্রাথমিক শিক্ষা আমি আমার বড় ভাই বোনদের কাছ থেকে শিখেছি।আমার শিক্ষার হাতে খড়ি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। পড়াশোনায় খুব বেশি ভালো ছিলাম না। মা ও বাবার খুব আশা ছিল যে আমি লেখাপড়া অনেক বড় হবো । অনেক চেষ্টা করতাম।চেষ্টা করলে পারতাম। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে মাঠে গিয়ে গরু ছাগলের জন্য ঘাস কেটে নিয়ে এসেই পরে স্কুলে যেতাম। এই ভাবেই কেটে গেল পাঁচটি বছর।
মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন
আমার পাশের গ্রামের নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হলাম।ষষ্ঠ থেকে থেকে থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়লাম। আমার বড় ভাই মাদ্রাসা লেখাপড়া করতো। কিন্তু লেখাপড়া শেষ করতে পারলো না বন্ধ হয়ে গেল তার লেখাপড়া।আর্থিক সংকটের কারণে। বাবার কাজে সাহায্য করা শুরু করলো। আমি মাঝে মাঝে স্কুলে যেতাম। বাবা ও ভাইয়ের মাঠের কাজে সহযোগিতা করতাম। কিন্তু আমরা লেখাপড়া চালিয়ে যেতাম। বাবা অনেক কষ্ট করে বড় ভাইকে মালয়েশিয়াতে পাঠিয়ে দিল। আমিও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করলাম গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
ঢাকার জীবন
বড় ভাই বিদেশে যাওয়ার পরে আর্থিক অবস্থা অনেকটায় ভালো হয়ে গেল। চাচাতো ভাই এর সহযোগিতায় ঢাকাতে টেকনিক্যাল স্কুলে ভর্তি হলাম। নবম ও দশম শ্রেণী পর্যন্ত ভালোই চলছিল লেখা পড়া। হঠাৎ বাবার মৃত্যু।২০১০ সালে শেষ দিক।
কষ্টের জীবন শুরু
2010 সালে আমি তখন এসএসসি পরীক্ষা দিব। রোজার ঈদের ছুটিতে আমি বাড়িতে গেলাম বাড়িতে যাওয়ার তিন দিন পরে বাবা মারা গেল। 25 শে রমজান আসরের নামাজ পড়তে গিয়ে নিজ বাড়িতে জায়নামাজে মারা গেল রোজা থাকা অবস্থায়। মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না শুধু অঝোরে কাঁদছিলেন। বাবা নামক বটবৃক্ষ ছায়া সরে গেল মাথার উপর থেকে। মনে হচ্ছিল আমার পার নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।সেই কথা মনে পড়লে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিনা। অবশ্যই বাবা থাকতে তিন বোনের বিয়ে দিয়েছিল। তখন বড় ভাই দেশের বাইরে থাকতো। গ্রামে আমার মা একা হয়ে গেল। মাকে ছেড়ে ঢাকাতে আসতে রাজি হলাম না। পশুর কান্না করতে শুরু করলাম।এর মধ্যে কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে গেল। সামনে এস এস সি পরীক্ষা। পরিবারের সকল দায়িত্ব আমার মাথার উপর চেপে বসলো। এক দিকে মা অন্য দিকে এসএসসি পরীক্ষা।ঢাকাতে কিভাবে যাব মাকে একা রেখে বুঝতে পারছিলাম না। মা বললো চিন্তা করিস না আল্লাহ ভরসা আমি একা থাকতে পারবো কোন সমস্যা হবে না। মা এবং ভাইয়া খুব বোঝানোর পড়ে পরীক্ষা দিতে ঢাকা তে পাঠালো। এস এস সি পরীক্ষা দিলাম রেজাল্ট মোটামুটি ভালো হলো। ভাবলাম বাবা নয় আর লেখাপড়া করব না।চলে গেলাম আবার ফিরে গ্রামের বাড়িতে। শুরু করলাম গ্রামে কৃষি কাজ।খুব ভালো করতে পারলাম না। সিদ্ধান্ত নিলাম দেশের বাইরে চলে যাব। ভর্তি হলাম দক্ষিণ কোরিয়ার ভাষা কোর্স। কোরিয়ার ভাষা কোর্সে পাস করার পরও যেতে পারলাম না। ব্যর্থ হলাম। কিছুই ভালো লাগেনা।
শেষ হয়ে গেলে জীবন থেকে এক বছর।মা বলল লেখাপড়া শুরু কর বাবা।আমি রাজি হয়ে গেলাম শুরু করলাম জীবনের সাথে সংগ্রাম।
জীবনের কথা লিখতে গিয়ে শুধু চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়ে যায়। কিছু ভালো লাগে না পিছনের কথা মনে ওঠেলে।
নতুন উদ্দীপনায় জীবন শুরু
জীবন চলে জীবনের গতিতে জীবন তো থেমে থাকে না। নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গায় পলিটেকনিকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হলাম। লেখাপড়ার পাশাপাশি কৃষি কাজ করতে থাকলাম। পরিবারের সকল দায়-দায়িত্ব আমার উপরেই ন্যস্ত থাকলো। শেষ করলাম ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং।
চাকুরি থেকে শিখা
ঢাকা আসলাম সার্ভে কোম্পানিতে জয়েন করলাম ৭ হাজার টাকা বেতন। কোম্পানির নামটা প্রকাশ করলাম না। একমাস চাকরি কন্টিনিউ করলাম। অন্য আরেকটি কোম্পানিতে জয়েন করলাম কিন্তু খুব বেশিদিন করতে পারলাম না। আবার আগের কম্পানিতে ডাকলো বেতন বাড়িয়ে দেবে। আমি জয়েন করলাম। এক মাসের বেতন দিলে দুই মাসের দিত না। খুব কষ্ট করতে লাগলাম। এক বেলা খেলে অন্য বেলা খেতাম না। কখনো পরিবারকে জানায়নি। সবাই জিজ্ঞেস করলে বলতাম অনেক ভালো আছি। মা যেন কেমনে বুঝতে পারতো । পরে অন্য কোম্পানিতে জয়েন করলাম। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে অনেক ভালো আছি। আমার বাবাকে অনেক মিস করি। কোনদিন বলতে পারিনি বাবা আমি তোমাকে ভালোবাসি। বাবার জন্য কোন কিছু করতে পারিনি। আমার মা বেঁচে আছে আপনার আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।
*প্ল্যাটফর্ম থেকে পাওয়া *
১ হতাশ না হওয়া
২ আগে ভালো মানুষ হওয়া
৩ প্রত্যেকটা কাজ ধৈর্য ধরে করতে হবে
৪ উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখি
৫ অন্যের জন্যে কিছু করা
৬ ভালো কাজে সহযোগিতা করা
৭ আসলে মা বাবার দোয়া ছাড়া কখনো সফল হওয়া সম্ভব না।
৮ পরিবারে প্রত্যেকটা ভাই বোন খুবই আন্তরিক
মোট কথায় বলতে গেলে এ পরিবার থেকে পাওয়া লিখে শেষ করা সম্ভব না। প্রতিদিন শিখতেছি করে নতুন করে। স্বপ্ন ভুনতেছি, সাহস নিতেছি স্যারের সেশন থেকে নিজেকে তৈরি করতেছি নতুন ভাবে।প্লাটফর্মে যুক্ত না হলে কোনদিন নিজের জীবনের গল্প লেখার সাহস পেতাম না।
স্যার কে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন । আর এই প্লাটফর্মে এভাবেই ভালো মানুষের পরিবারে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমাদের এই প্লাটফর্মে স্যারের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমাদের মত লক্ষ লক্ষ তরুণ স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে শিখছে। স্যারের প্রতিটি সেশন যেন নিজেকে নতুন করে তৈরি করতে শিখায়তেছে।
স্যারকে আল্লাহু সুস্থ ও ভালো ভাবে বেঁচে থাকার তৌফিক দিন। প্ল্যাটফর্মের নিয়োজিত সকল ভাই ও বোনদের ভালো ও সুস্থ থাকার তৌফিক দান করেন। আমিন।
পরিশেষে বলবো কষ্ট করে গল্পটি পড়ার জন্য আপনাদের সবার প্রতি দোয়া ও কৃতজ্ঞতা জানায়
ধন্যবাদান্তে
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬১৫
Date:- ০৫/০৯/২০২১
শামীম হোসেন আলোক
১২ তম ব্যাচ
রেজিস্ট্রেশন নম্বর- ৩৬৪৭৭
জেলা - চুয়াডাঙ্গা
উপজেলা -আলমডাঙ্গা
বর্তমান অবস্থান- নারায়ণগঞ্জ
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের সদস্য