জীবনের উত্থান পতনের গল্প
🌷🌷বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আসসলামু আলাইকুম ..........।
🌷🌷🌷প্রথমে শুকরিয়া জানাই মহান সৃষ্টি কর্তার প্রতি যিনি আমাদের এই মহামারীর সময়েও সুস্থ রেখেছেন। তরপর কৃতজ্ঞতা জানাই লক্ষ তরুনের স্বপ্নদ্রষ্টা পথপ্রদর্শক নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশনর প্রতিষ্টাতা জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি।যার আবির্ভাব না হলে হয়ত অকালেই ঝরে যেত লক্ষ তরুনের স্বপ্ন।স্বপ্ন মানুষকে নতুন করে বাঁচতে শেখায় স্বপ্নই মানুষকে নতুন করে পথ দেখায়।প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে বলার মতো একটা গল্প তৈরি করতে অনুপ্রেরণা যোগায়।তেমনি একজন স্বপ্নবাজ মানুষ আমি স্বপ্ন দেখতে খুব ভালবাসি স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে ভালবাসি।কখনও পারি কখনও ব্যর্থ হয়ে আবারো নতুন স্বপ্নে বিভোর হয়ে যায়।ছোট্ট এই জীবনের গল্পটা একটু শেয়ার করব ইনশাআল্লাহ দুই মিনিট সময় নিয়ে পড়বেন আশাকরি।
🌷🌷🌷🌷আমার শৈশবকালঃ
আমি হলাম পরিবারের সবার বড়ছেলে আমার ছোট এক ভাই ও দুই বোন আছে।আমার বাবা একজন সাধারণ কৃষক আমাদের যে পরিমান জমি ছিল তা চাষ করে আমাদের পরিবার কোন রকম চলত।তবে মাঝেমধ্যে যখন আমার প্রাইভেট পড়তে হত এবং পরিক্ষার সময় টাকাটা একটু বেশি লাগত তখন বাবাকে কেমন করে বলব যে বাবা আমার প্রাইভেট ও পরিক্ষার ফি দিতে হবে।যেখানে বাবাকে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়।তারপরও বাধ্য হয়ে বলতে হত।বাবা আমার কথাশুনে কিছু বলতেন না। কিন্তু টাকা ম্যানেজ করার জন্য দূরের কোন এলাকায় কাজের সন্ধানে চলে যেথেন এবং টাকাটা যেইভাবেই হোক ম্যানেজ করতেন।তবে বাবা আমাদেরকে কখনও বলতেন না যে কােথায় যাচ্ছেন কারণ আমি যদি জানি তাহলে নিষেধ করব এবং কষ্ট পাব।যদিও আমি লোক মারফত পরে জানতে পারতাম।স্যালুট বাবা আমায় এবং পরিবারের সকল সদস্যদের এত আগলে রেখেছ।তোমার এই ত্যাগ ও ভালবাসার ঋণ কখন শোধ করার ক্ষমতা আমার নেই।তবে আমার শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও তোমার সেবা করে যেতে চাই এই সুযোগটা আমি কখনও মিস করতে চাইনা।
🌷🌷🌷বাড়ি থেকে শহরে যাওয়া ও ফিরে আসাঃ
আমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি তখন আমার ছোট কাকা বললেন যে তোমাকে জেনারেলে পড়ার দরকার নাই টেকনিক্যালে ভর্তি হবে।টাকা লাগে আমি দিব।যেই কথা সেই কাজ আমি নিজ শহর কিশোরগঞ্জ চলে যায়।এবং টেকনিক্যালে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হই।দুই বছর বাবার একটু চাপটা কমেছিল যেহেতু বাড়ি থেকে কোন টাকা পয়সা নিতে হয়নি।এখানে আমার ছোট কাকাকে একটা স্যালুট দিতে চাই আমাদের এই দুঃসময়ে আমার পিছনে মুল্যবান অর্থ ও সময় ব্যয় করেছেন।দুইটা বছর কেটেছে সুখে দুখে যাক এই দিকে যেথে চাইনা। অবশেষে বহুল কাঙ্খিত আমার জীবনের প্রথম সফলতা অর্থাৎ এসএসসি পাশ করি।সেদিন আমি যতটা খুশি হয়েছিলাম তার চেয়ে হাজারগুন বেশি খুশি হয়েছে আমার মা বাবা।আমার একটা সমস্যা ছিল টেকনিক্যালে পড়তে ভাল লাগতনা কারণ বন্ধুরা সবাই জেনারেলে পড়ত আমিও জেনারেলে পড়ব।তাই কাকা বাধ্য হয়ে আমাকে বাড়িতে পাটিয়ে দেয়।আবার শুরু হল সংগ্রাম চাচার কাছে থাকলে হয়ত কিছু আর্থিক সহায়তা পেতাম কিন্তু চলে এসেছি তাই তিনি আর কোন দায়িত্ব নেবেননা।এখন এইচএসসিতে ভর্তি হব টাকা কোথায় পাব অনেক দৌড়াদৌড়ি করার পর বাবার ফুফাতো ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে ভর্তি হলাম।এখন কলেজ ও জমির কাজ চালিয়ে যেতে হবে না হয় সংসার চলবেনা সাথে পড়াশোনাও আর হবেনা।তাই প্রতিদিন ভোড়ে ঘুম থেকে উঠে জমিতে কাজ করে তারপর কলেজে যেতাম।কলেজ থেকে এসে আবার জমিতে কাজ করতে যেথে হত।পড়ার সময় পেলেও সারাদিন কাজ করার পর ক্লান্তি পেয়ে যেত টেবিলে কখনযে ঘুমিয়ে পরতাম বুঝতেই পারতামনা।তাই ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে এইচএসসি ফেল।মানুষিকভাবে প্রচন্ড ভেঙ্গে পরেছিলাম তখন আমার মা আমাকে এতে বেশি সাহস যোগিয়েছেন যে হয়ত আমার মা না থাকলে এই ধাক্কাটা আমার জীবনে অন্ধকার নেমে আসত।পড়ালেখায় হয়ত বন্ধ করে দিতে হত।যাক পরের বছর পাশ করতে পেরেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ।
🌹🌹🌹🌹আবার শহরে চলে যাওয়াঃ
শুরু হল ভর্তি পরিক্ষার যুদ্ধ ভার্সিটির ফরম কিনব কিন্তুু চিন্তা করলাম বাহিরে থাকা খাওয়া ভার্সিটির খরচ এগুলো বাবার বহন করার ক্ষমতা নেই তাই বাদ দিলাম।এত দিনের লালিত স্বপ্ন শেষ হতে দেখে খুব বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম।তরপরও পরিবারের মহান ব্যক্তি আমার বাবার চাপ কমবে ভেবে নিজেকে শান্তনা দিয়েছিলাম।যাক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ফরম কিনলাম এবং ভর্তি পরিক্ষায় চান্স হল ব্যাবস্থাপনা বিভাগে।এবার ভর্তি হলাম কিন্তু কিভাবে চারটা বছর চলব পরে গেলাম ভিষন চিন্তায়।ছয়মাস তিনবেলা ম্যাচের খাবারের টাকা আমি দিতে পারিনি যথাসময়ে যার ফলে কত কথাযে শুনেছি। মাঝেমধ্যে মিল অফকরে দেওয়া হত আমি সেদিন বাহিরে একটা রুটি বা কেক খেয়ে কাটিয়েছি কিন্তুু কাউকে কিছু বলতে পারিনি নিরবে কান্না করেছি।সেদিন বুঝতে পেরিছিলাম দারিদ্রতা কত কষ্টের।তবে দারিদ্রতাই আমাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছে।ম্যাচের খরচ চালাতে পারছিনা তাই বাধ্য হয়ে কিছুদিন পর আমার এক শহরের বান্ধবীকে আমার ফ্যামেলির অবস্থা বললাম তখন সে বুঝতে পেরে আমাকে একটা কিন্ডারগার্ডেনে চাকুরির ব্যাবস্থা করে দিল। আলহামদুলিল্লাহ কিছুদিন পর দুইটা টিউশনির ব্যাবস্থাও হয় যায় ফলে আমার খরচ আমি নিজেই ম্যানেজ করতে পারতাম এবং কিছু টাকা বাঁচিয়ে বাবাকে দিতাম।যেটা সংসারের জন্য একটু সাপোর্ট হত।তবে টিউশনি ইস্কুল চালিয়ে নিজের পড়াশোনা খুব একটা করতে পারতাম না। তাই ফলাফল ফাস্ট ইয়ার দুই সাবজেক্ট ফেল।পরের বছর পরিক্ষা দিয়ে ওভারকাম করতে হয় তারপরও চাকরি টিউশনি চালিয়ে যেতে হয়েছে।নাহলে পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হবে।যে সময়ে আমি কিন্ডারগার্ডেনে ও টিউশনি করিয়েছি সে সময়ে আমার বন্ধুরা কত আনন্দ খেলাধুলায় ব্যাস্থ থাকত যা দেখে আমারও খুব ইচ্ছে হত। কিন্তু সবার ভাগ্যত আর এক নয় তাই মেনে নিয়েছি। দ্বিতীয় বছর গেল তৃতীয় বছর আমি একটা কোম্পানিতে এপ্লাই করি এবং পরিক্ষায় টিকে যায়।চাকুরিতে জয়েন করার জন্য বাড়িতে মা বাবার সাথে পরামর্শ করি যে আমি চাকরিটা করতে চাই।তারা সম্মতি দিলেননা কারণ আমার পড়াশোনার ক্ষতি হবে।তারপরও আমি তাদের অনেক বুঝিয়ে রাজি করেছি।শুরু হল চাকুরি পড়াশোনা বুঝতেই পারছেন পরের কাজ করে কত সময় পাওয়া যায়।যাক যা হবার তাই হল তৃতীয় বছর আবার এক বিষয়ে ফেল।তৃতীয় বছরটা নিজের সাথে যুদ্ধ করে পড়াশোনা চাকুরি চালিয়েছি সাথে আমাকে নিজের জন্য প্রাইভেটও পড়তে হয়েছে।আলহামদুলিল্লাহ আমি পরের বছর ফাইনালি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করি।এবং চাকুরীটা এখনও চলছে যা আমার পরিবারকে অনেক কিছু দিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
🌷🌷🌷গ্রুপের সন্ধান ও গ্রুপ থেকে প্রাপ্তিঃআমি একদিন স্যারের একটা ভিডিও দেখতে পাই সেখানে স্যার একটা কথা বলেছিলেন যে সপ্ন দেখুন সাহস করুন শুরু করুন এবং লেগে থাকুন সফলতা আসবেই।এই কথাটা আমাকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।টিক সেই সময়ে আমি ফেসবুকে নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশন লিখে চার্জ দেই এবং রিকোয়েষ্ট পাটায় রিকোয়েষ্ট একসেপ্ট করা হয়েছে। তবে অনেক দিন পর আমার এক প্রিয় ভাই কাইসার আহমেদ ওনার বন্ধুর মাধ্যমে আমি রেজিষ্ট্রেশন করি ১২ তম ব্যাচে আলহামদুলিল্লাহ।একটা সময় আমি স্বপ্ন দেখতাম বিসিএস ক্যাডার হব, যার জন্য দিন রাত অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু হতে পারিনি।আমি ভাবতাম সরকারী চাকরি ছাড়া জীবনের কোন মুল্য নেই।কিন্তু আমি এই প্লাটফর্মে যুক্ত হওয়ার পর থেকে জীবনের পথ চলাকে অনেক টা সহজ করতে শিখে গেছি।এখন আমি স্বপ্ন দেখি বড় উদ্যোক্তা হব এবং সে পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছি আলহামদুলিল্লাহ।এটা একমাত্র ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের জন্যই সম্ভব হয়েছে।স্যালুট স্যার আপনাকে।
এই প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে👇👇👇
#স্যারের অনুপ্রেরণায় আমি সামাজিক কাজ হিসেবে এলাকায় একটি সংঘঠন করেছি।যেখানে গরীব অসহায় ভুমিহীন কৃষকদের কেটে খাওয়া মানুষদের সহায়তা করছি।করুনাকালীন সময়ে ত্রিশ জন গরীব অসহায় মানুষকে ত্রান দিয়েছি।এছাড়াও অসুস্থ দুইজন রােগিকে দুই হাজার করে টাকা দিয়েছি।রিসেন্টলি মসজিদে নগদ দশ হাজার টাকা দিয়েছি।এত সামাজিক কাজ এর আগে কখনও করিনি যেটা নিজের বলার মতো একটা গল্প থেকে শিক্ষা নিয়ে করেছি।
🌷🌷🌷পরিশেষে সবাইকে অনেক অনেক ভালবাসা ও শুভকামনা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি সাথে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যারা সময় নিয়ে গল্পটা পড়েছেন।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬১২
Date:- ০২/০৯/২০২১
মোঃ খাইরুল ইসলাম
জেলাঃ কিশোরগঞ্জ
রেজিষ্ট্রেশনঃ৪৩২৮০
ব্যাচঃ১২