পরিবারের কাউকে না পেয়ে নিরুপায় হয়ে তার বাড়িতে নিয়ে যায়
আলহামদুলিল্লাহ
ঢাকা থেকে ৮বছরের শিশু হারিয়ে যাওয়ার পর ৯দিন পর কুমিল্লাতে ফিরে দিলাম পরিবারের কাছে।
যেভাবে ৯দিনপর সন্ধান পেলাম হারিয়ে যাওয়া ফয়সালের পরিবারের।
গত ৩০শে আগষ্ট কুমিল্লা নাঙ্গলকোট বাজারে পাওয়া যায় পান্জাবী পরা একটি ৭/৮ বছরের ছেলেকে।
তাকে জিজ্ঞেস করা হলে পরিচয় যা বলছে।
নামঃফয়সাল
পিতাঃহৃদয়(আনন্দ বাস চালক)
মাতাঃফেরদৌসী
বাসাঃমানিকনগর,ঢাকা
নানার বাড়ীঃকুমিল্লা লাকসাম থানা(গ্রামের নাম জানে না)
তার ভাষ্যমতে বাবা ৫০০ টাকা দিয়ে বলছে নানার বাড়ী লাকসাম যেতে।তাই আসার সময় আধা কেজী আপেল ও কমলা সংঙ্গে করে নিয়ে আসে।
পরনে পান্জাবী(বোতাম খোলা)পায়ে ছেড়া জুতা,হাতে পলিথিন ব্যাগ(ভিতরে কিছু আপেল ও কমলা)পকেটে ২০ টাকা ছিল।
নাঙ্গলকোট বাজারে একটি দোকানের সামনে দাড়িয়ে আছে অটো চালক মাসুদ দেখতে পেয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞেস করে অটো নিয়ে খোঁজে থাকে এলাকায় তার বাবা মা বা সাথের কাউকে পায় কিনা।
পরিবারের কাউকে না পেয়ে নিরুপায় হয়ে তার বাড়িতে নিয়ে যায়।
ঐ অটো চালকের বাড়িতে নেওয়ার পর শুরু হয় ফয়সালে দুষ্টামীর চরম সীমা।
যা আমাদের সবাইকে বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে পেলে দেয়।
পরে আমি বিস্তারিত তথ্য যুক্ত করে ছবি ও ভিডিও করে স্যাসাল মিডিয়া ফেসবুকে বিস্তারিত লিখে ভিডিও সহ পোস্ট করি,স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়েছি,তারাও পোস্ট করেছে।
ইন্টারভিউ নিয়েছে ছেলের,আমার এবং ঐ রিক্সা চালক মাসুদের।
এরিমধ্যেও চলছে দুষ্টামী এদিক ওদিক ছুটাছুটি।
পরবর্তীতে গত ৩ সেপ্টম্বর কুমিল্লা নাঙ্গলকোট থানায় গিয়ে ডিউটি অফিসার এবং নারী,শিশু,বয়স্ক প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক দ্বায়িত্বরত অফিসারের নিকট নিয়ে যাই।
থানার অফিসারগন হারিয়ে যাওয়া ফয়সালের থেকে শুনতেছে বিস্তারিত ঘটনা এবং নোট করতেছে।
কিছু বলে কিছু এদিক ঐদিক যায়,থানার ভিতরও চলে তার চঞ্চলতা ও দুষ্টামী।
পরিশেষে নোট করে আমাদের ৩জনের ছবি তোলে ঠিকানা লিখে রাখে।
এবং কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার আমার সাক্ষর রেখে আমার জিম্মায় রাখতে বলে,এ ও বলা এই ছেলের পরিবার খোঁজে না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের কাছে থাকবে এবং ভালোমন্দ রিক্স আমরা।
নিয়ে আসলাম থানা থেকে এসে দিন রাত বিভিন্ন আইউি পেইজে নক দিয়েছি,মুগদা মানিকনগরের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করি,এবং মানিকনগরের সেচ্ছাসেবী সংগঠনের কয়েকজনের সাথে ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করে কথা বলি,তাদের সাহায্য করতে বলি।
এভাবে ফেসবুকে অসংখ্য পোস্ট হয়,পার হয় ৫দিন।কোন খোঁজ পেলাম না।
টেনশন বাড়তে থাকে,ছেলে যে দুষ্টামী করে না জানি এর মধ্যে কোন বিপদ বা ভালো মন্দ হলে নিজেরা ফেঁসে যাবো কিনা।
অটো চালক মাসুন সারাক্ষণ সাথে রেখে এদিক ওদিক নিয়ে দেখে কেউ চিনতে পারে কিনা এলাকার,কিন্ত না।
বাড়ীতে রাখা যায়না না জানি কোনদিকে চলে যায় সেই ভয়ে।
সিদ্ধান্ত নিলাম যেখানে যাই তাকে সাথে রাখতে হবে।হাত ছাড়া করা যাবে না।
যেই কথা সেই কাজ মাসুদ চলতে থাকে তাকে নিয়ে।
হঠাৎ ৪ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় অপরিচিত নাম্বার থেকে আমার নাম্বারে কল আসে,ঐ প্রান্ত থেকে একলোক বলে আপনি যে ছেলেকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন আমি তার বাবা।
যাক কথা শুনে খুশি হলাম,পরে ধীরে ধীরে সব জিজ্ঞেস করলাম। বলছি আপনার ছেলে আমার কাছে আছে নিরাপদে আছে,আপনি চিন্তা করবেন না।
ফয়সালের বাবার সাথে সামান্য কথা বলে বুঝতে পারলাম,ফয়সাল হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা কিছু কথা মিথ্যা বলেছে এবং কিছু কথা গোপন করেছে আমাদের কাছে।
ফয়সাল ছোট হলেও চালাক আছে মোটামুটি।
এটা কি আপনার নাম্বার?
ওনি বলে না,আমি ওনার মোবাইল নাম্বার ও ওনার ছবি চেয়ে নিয়েছে।
ফয়সালের কয়েকদিনের ওঠানো ছবি ও দুষ্টামির ভিডিও পাঠিয়েছি ফয়সালের বাবার ইমু নাম্বারে।
যেন দেখে শান্তি পায়,চিন্তা মুক্ত থাকে।
ওনি রাতে ঢাকা থেকে রওনা দিতে চেয়েছে আমি বলছি ঢাকা থেকে আসতে অনেক রাত হবে বরং আপনি সকাল ভোরে রওনা দিন,সাথে প্রমান যোগ্য পরিচয় পত্র ও প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে আসবেন,যদি জিডি করে থাকেন ওটার কপিও আনতে হবে।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোট থানায় যেতে হবে,আইনী কাজ শেষ করে প্রমান হলে আপনাদের নিকট হস্তান্তর করা হবে।
এই বলে কথা শেষ করলাম।
অপেক্ষায় রইলাম কখন ভোর হবে.....
বিভিন্ন জায়গায় আপডেট দিতে দিতে রাত বেজে গেলো ২ঃ৩০.ভোরে উঠে ফজর নামাজ পড়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলাম ফয়সালের পরিবার কল দেওয়ার কথা দিয়েছে কিনা?ঢাকা থেকে আমার কাছে আসার লোকেশন জানতে চাইবে হয়তো।
কিন্তু না।
সকাল ৮টায় কল দিয়ে জানতে চাইলাম আপনারা কোথায়?
এভাবে সারা পথে কিছুক্ষণ পর পর নিজ থেকে কল দিয়ে লোকেশন জানিয়ে দিচ্ছি।
এত দেরীর কারন জানতে চাইলে
ফয়সালের বাবা বললো আমাদের বাসায় পারিবারিক ঝামেলা হয়েছে ঝামেলা হয়েছে।
মায়ের অতিরিক্ত শাসন ফয়সালের ব্রেইনে বাসায় যাওয়া থেকে দূরে রাখে।
দুঃখজনক হলেও সত্যি ফয়সাল এই ৯ দিনে একবারও তা পরিবারের কাছে যেতে বলে নাই।
আজ যখন ওর বাবা আমার কাছে আসলো তাকে বলতে পারি নাই যে তাকে নিতে এসেছে।
যখন বাবা ছেলে দেখা হলো তার বাবা জিজ্ঞেস করলো যে চল বাসায় যাই,ফয়সাল তখনও বলছে যামুনা,আরো কয়েকদিন এখানে থেকে পরে যাবো।
আশেপাশের সবাই অবাক এই কথা শুনে
জানতে পারলাম ফয়সালের বাসা নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা থানার আলীগঞ্জে।
ফয়সালের আম্মু গত নাকি বেশী মারছে,এরপর মাদ্রাসা থেকে গত ২৮ আগষ্ট পালিয়ে ট্রেনে করে কুমিল্লা যায়,২দিন রাস্তায় ট্রেনে ঘুমিয়েছে,পথে লোকজন থেকে কিছু টাকা পেয়ে আধাকেজী আপেল ও কমলা কিনে বাসে নাঙ্গলকোট পর্যন্ত আসে।
২দিন পর বাবা মা খোঁজ করে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা থানায় হারানো জিডি করে ৩০ তারিখ।
থানা থেকে বলছে দেশের সকল থানায় নাকি হারানো সংবাদ পৌঁছে যাবে।
আসলে সত্যি কিনা?
দুপুর ২টা,নাঙ্গলকোট থানায় গেলাম বিস্তারিত বলে আইনী প্রক্রিয়া শেষ করে পুলিশের সামনে ফয়সালকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে আমি বিপদ মুক্ত থানার সাদা কাগজে সাক্ষরিত জিম্মাদার কাগজটি বাতিল করতে।
ভাবছি হয়তো ৫/১০ মিনিটের কাজ হবে হয়তো। এদিকে সবার খুদা লাগছে,কিন্তু কাঙ্ক্ষিত থানার অফিসার গন না থাকায় কল করে তাদের জন্য অপেক্ষা করে ৩টায় খেতে বসলাম,হাত ধুয়ে খাবার সামনে এখনো খাওয়া শুরু করি নাই এমন সময় থানা থেকে কল আসলে তাড়াতাড়ি ভিতরে আসুন অফিসার আসছে। না খেয়ে চলে গেলাম।
এর একরুম থেকে আরেক রুম,বিভিন্ন জায়গায় কল,নতুন করে আজ আরেকটি জিডি করতে হবে,এবং পরিবারের কাছে হস্তান্তর কাগজ পত্র লেখে সাক্ষীর মাধ্যমে ছবি তোলে এসব কাজ শেষ করে এরপর হস্তান্তর করতে হবে।
সব কাজ শেষ করতে করতে বিকাল ৫টা বাজলো।
এরপর সবাই মিলে একটি চা দোকানে কোনমতে বাধ্য হয়ে ভাত খেলাম।
পরে ফয়সাল সহ তার পরিবারকে গাড়ীতে তুলে দিয়ে বাসায় পৌছা পর্যন্ত কল করে খবর নিলাম।
সর্বশেষ কল রাত ১১টায় জানতে পারলাম পরিবারের সবার হাসিমুখে ফয়সালকে নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে,সবাই হাসিখুশি আছে।
নোটঃপুরো ঘটনা থেকে যা বুঝতে পারলাম।
অতিরিক্ত শাসন শিশুর জন্য ক্ষতি
লালন পালনে সীমাবদ্ধ ও শুধু শাসন নয় আদর মমতা দিতে হয়।
বাবা মা এবং সন্তানের উভয়ের আচারনে বুঝলাম উনাদের আন্তরিকতা কতই না অভাব।
থানায় জিডি করলে সেটার বাস্তবিক ফলাফল সবসময় কাজে আসে না।
হারানো কোন ব্যক্তিকে থানায় জমা নিতে চায় না।
হস্তান্তরের জন্য যত নিয়ম ও পদক্ষেপ নেওয়া তা যদি খোঁজার জন্য নেওয়া হতো অনেক ভালো হত ভিক্টিমের জন্য।
ছেলে পাওয়া পর বাবার মুখে ঘটনার বিবরন
হারিয়ে যাওয়ার ফয়সালের প্রাথমিক স্বীকারোক্তি
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬২০
Date:- ১২/০৯/২০২১