পারিবারিক সদস্যের দিকে আমরা ২ ভাই ৫ বোন। আমার বাবা একা এবং আমার ফুফু ৩ জন। আমার বাবা একদম সহজ সরল সাদা মনের মানুষ ছিলেন। কোন রকম খেয়ে দেয়ে বেচে থাকার অল্প একটু হুশ ছিলো তাঁর
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহু
গল্পে গল্পে সেল পোস্ট
আমার নিজের জীবনের গল্পের শুরুতে শুকরিয়া আদায় করছি মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের দরবারে, যিনি এই অসুস্থ বিশ্বের মধ্যে আমাকে এবং আমার পরিবারকে অনেক সুস্থ্য রেখেছেন- আলহামদুলিল্লাহ
আমি গর্ববোধ করছি এই বিশ্বের মহা মানব যার জন্যই সৃষ্টি হয়েছে এই পৃথিবীর, আমাদের বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর উম্মত হতে পেরে।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রিয় মেন্টর জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যারের প্রতি, যার অক্লান্ত পরিশ্রম ও সুদক্ষ মেধাশক্তির বিনিময়ে আমরা পেয়েছি “জীবনে বলার মতো একটা গল্প” ফাউন্ডেশন নামক একটি ভালোমানুষের পরিবার।
এবার আসি আমার জীবনের গল্পে...
পারিবারিক সদস্যের দিকে আমরা ২ ভাই ৫ বোন। আমার বাবা একা এবং আমার ফুফু ৩ জন। আমার বাবা একদম সহজ সরল সাদা মনের মানুষ ছিলেন। কোন রকম খেয়ে দেয়ে বেচে থাকার অল্প একটু হুশ ছিলো তাঁর। অন্য দিকে রুজিরোজগার করার মতো কোন অভিজ্ঞতা কিংবা জ্ঞান বুদ্ধি কিছুই ছিলো। আমার দাদা আবার আমার বাবার জন্মের আগেই মারা যান। কিন্তু আমার বাবার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ রেখে গিয়েছিলেন। এদিকে আমার বাবা সহজ সরল এবং অক্ষর জ্ঞানহীন হওয়ায় নিজের আত্মীয়দের মধ্যে কিছু খারাপ এবং চালাক লোকজন আমার বাবার জায়গা জমি ঠকিয়ে নিয়ে যায়, অন্যদিকে বাবা রোজগারে অক্ষম হওয়ায় বসে বসে খেতে খেতে বাকি সম্পদ টুকুও আর ঠিকে রইলো না।
এভাবে বাবার জীবন চলার একপর্যায়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার ৩ ফুফুর মধ্যে মেজো ফুফু চলে যান লন্ডনে। আরো কয়েকবছর যেতে না যেতেই আমার ছোট খালাও চলে যান লন্ডনে। আগেকার মানুষ স্বামী ভীরু ছিলেন বেশি। তাই ফাঁকে ফাঁকে আমার বাবা-মাকে অল্প অল্প করে আর্থিক সহযোগিতা করতেন। যা দিয়ে আমাদের পরিবার চলতো। কিন্তু ছিলো না কোন আয়-উন্নতি।
এবার শুরু আমাদের ভাই-বোনদের দুনিয়ার আলো দেখা। ১৯৮২/৮৩ তে আমার বড় বোনের জন্ম। ১৯৮৫/৮৬ তে দ্বিতীয় বোনের জন্ম, ১৯৮৭/৮৮ তে তৃতীয় বোনের জন্ম, ১৯৯০/৯১ তে চতুর্থ বোনের জন্ম। অনেক আশা আকাঙ্ক্ষার পর সকলের স্বস্তির নিশ্বাস হয়ে ১৯৯৪ সালে আমি জন্মগ্রহণ করি। আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে ভয়ে যায় আনন্দের বন্যা। এর প্রধান কারণ আমার বাবার দুনিয়াবি জ্ঞান ধারণা ছিলো প্রায় অচল। আবার ১৯৯৭ সালে জন্মগ্রহণ করে আমার ছোট ভাই এবং ২০০০ সালে জন্মগ্রহণ করে আমাদের সবার ছোট ও বোনদের মধ্যে পঞ্চম বোন।
যেহেতু বড় বোনের জন্ম ১৯৮৩/৮৩ সালে, তাই ২০০০ সাল থেকে আমার লন্ডন প্রবাসী ফুফুর সহযোগিতায় একে একে বড় চার বোনদের বিয়ে হয়। আর আমার খালা হয়ে যান একদম অসুস্থ। নিজ পরিবারের ননদ-দেবরের জাদুটুনার অত্যাচারের শিকার তিনি। দেশে আসেন নি একটানা প্রায় ২০ বছর
এদিকে ২০০৩/৪ সালে আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় আমাকে লন্ডন নেওয়ার জন্য প্রিয় ফুফু আপ্রাণ চেষ্টা শুরু করেন। কাজ প্রায় সফলতার দিকে এমন সময় তিনিও প্রতি হিংসার শিকার, জাদুটুনায় অসুস্থ হয়ে ২০০৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন আমার আর লন্ডন যাওয়ার সৌভাগ্য হলো না
আবার কষ্টের ঝড় চলে আসে আমাদের পরিবারে। কিন্তু শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা দুই ভাই এবং ছোট বোন পড়ালেখা চালিয়ে যাই। এদিকে আমার লন্ডন প্রবাসী খালা কিছুটা সুস্থ হয়ে আবার আমাদের সহযোগিতা শুরু করলেন এবং ফুফাতো ২ ভাইও কিছুটা সহযোগিতা করতেন। কিন্তু এতে আমাদের আয়-উন্নতি হতো না। যেহেতু নিজ পরিবারের মধ্যে সে রকম বুঝদার কেউ নেই। আমার আম্মুও সহজ সরল মানুষ। একপর্যায়ে ২০১২ সালে আমি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হই। পাশাপাশি একটা হোমিওপ্যাথি ফার্মেসীতে প্রেকটিস করি। সেই সাথে ভর্তি হই “মির্জাজাঙ্গাল হোমিওপ্যাথিক হসপিটাল” সিলেটে ৪ বছর মেয়াদি ডিএইচএমএস কোর্সে। কোর্স কমপ্লেইট করার আগেই আমি প্র্যাক্টিক্যালি অভিজ্ঞতা নিয়ে হোমিওপ্যাথি ফার্মেসির ব্যাবসা শুরু করি। কিছুদিন যেতে না যেতেই আমি ব্যার্থ হই। এর প্রধান দুটি কারণ
(১) হোমিওপ্যাথিকে কাস্টমার কম।
(২) একজন রাজনৈতিক নেতা আমাকে প্রশ্ন করেন যে- তুমি এতো ছোট মানুষ, এখনও মুচ দাঁড়ি গজায়নি, তুমি ডাক্তার হলে কখন? উনি আমার বিপক্ষে চলে যায়। আর আমি মোবাইল কোর্টের ভয়ে ব্যাবসাও ছেড়ে দেই, সেই সাথে কোর্সের ২য় বছরের পর থেকে সেখানেও সমাপ্তি ঘটাই।
ততক্ষণে ২০১৪ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করি।
এবার চলে যাই ঢাকা নরসিংদী। বিভিন্ন টেক্সটাইলে চাকরি করি। পরবর্তীতে চলে যাই ঢাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। সেখানে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির “স্টোর কিপার” এর চাকরি করি এবং পাশাপাশি মহাখালী শহীদ তিতুমীর সরকারি কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হই।
২০১৬ সাল, আমার উপর চলে আসে এক ঝড়তুফান। বাবা স্ট্রোক করে মেডিকেলে ভর্তি। আমি চলে আসি সিলেটে। টানা এক সাপ্তাহ অজ্ঞান অবস্থায়। আত্মীয় স্বজন অনেকে বলছেন তোমার বাবাকে বাড়িতে নিয়ে এসো। আর কোন লাভ হবে। সবাই বাবার মৃত্যুর সংবাদের অপেক্ষায়। কারণ উনার বেঁচে উঠার কোন ভরসা নেই। এতোকিছুর পরেও এক সপ্তাহ পর বাবা ২য় জীবন ফিরে পান এবং একটানা দের মাস মেডিকেলের বিছানায় ছিলেন। তারপর যখন তিনি সুস্থ হয়ে বাড়িতে আসলেন, তার কয়েক মাস যেতে না যেতেই স্রষ্টার ডাকে সারা দিয়ে সুস্থ অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
এবার মা এবং ভাই-বোনকে নিয়ে আমার জীবন যুদ্ধ শুরু। ঢাকায়ও যাওয়া হয়নি, ডিগ্রিও সম্পন্ন করতে পারি নি। কর্ম সংস্থানের খোঁজে আমি হন্নে হয়ে উঠি।
এলাকায় যেহেতু কোন কলকারখানা কিংবা কোম্পানি নেই, তাই বেছে নিলাম সিএনজি অটোরিকশা ড্রাইভিং। ড্রাইভিং শিখতে গিয়ে আমাকে আমার অনেক বন্ধু বান্ধব বাধা দেয়। আমি না কি নিচে নেমে যাচ্ছি। আমি তখন জবাব দিলাম, আমার মা এবং ভাই-বোনকে নিয়ে আমার এখন ডালভাতের প্রয়োজন। এই যোগান কি তোমরা কেউ দিবা? তখন আর কারো জবাব নেই।
যা-ই হোক, শিখে নিলাম ড্রাইভিং। কিন্তু বাধা আরেকটা! নতুন ড্রাইভার হিসেবে কেউ গাড়ি দেয় না। আমার এক কাছের বন্ধু যার সাথে দিনরাত এক করে চলাফেরা করেছি, সে একটি গাড়ির মালিক। কিন্তু সেও জবাব দিলো, “আমি নতুন ড্রাইভারের কাছে গাড়ি দেবো না”। যাই হোক, শত প্রতিকূলতা অবলম্বন করে অবশেষে এক বড় ভাই (পুরাতন ড্রাইভার) নিজে জামিনদার হয়ে অন্য একটি গাড়ি এনে দেন। মাসিক ভাড়ায় গাড়ি চালাই। ধীরে ধীরে এক পর্যায়ে তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকায় একটি গাড়ি নিজে ক্রয় করি। আমার বন্ধুকে আমি মুখে কোন জবাব দেই নাই। আরেকটা বিষয় পিছনে পেলে আসি। আরেক বন্ধু যে ড্রাইভিং শিখতে বাধা দিয়েছিলো, মাত্র ৬ মাস যেতে না যেতেই সে আমার কাছেই ড্রাইভিং শিখে। তার পরিবারে কিন্তু কোন অভাব ছিলো না।
এবার আসি বিবাহিত জীবনে। যেহেতু আমার বাবা নেই, তাই আমার আম্মু এবং আপুরা আত্মীয়তার সম্পর্ক ধরে রাখার পরিকল্পনার আমার বাবার আপন মামাতো ভাইয়ের মেয়েকে আমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান। কিন্তু তাদের কথা, তারা তাদের মেয়েকে লন্ডনি ছেলে দেখে বিয়ে দেবে। আর আমরা যেহেতু গরীব, সেহেতু তাদের মেয়ে এখানে অশান্তি করবে। আমার মা এবং বোনেরা অপমান বোধ করে সেখান থেকে চলে আসেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমি ২০১৮ সালে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে সুশিক্ষিত একটি মেয়েকে বিয়ে করি। দাম্পত্য জীবনে আমি এক ছেলে সন্তানের জনক।
কিন্তু, আমার বাবার মামাতো ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে হয়েছিলো এক ব্যাবসায়ী ছেলের সাথে। বিয়ের এক বছর পূর্ণ হয় নাই, তাদের সংসারের ইতি টেনে সে এখন বাবা-মার ঘরে। কোথায় গেলো তাদের সেই শান্তি? এটা কিন্তু আমি শুধু গল্পে লিখছি, উনাদের সরাসরি বলি নাই। কারণ কাজে কর্মেই তারা এখন অপমানিত। আমাদেরকে এখন তাদের মুখ দেখাতে লজ্জাবোধ করেন। তারা ভাব ছিলো তাদের সম্পদের উপর লোভ করে বোধহয় আমরা বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম।
যাই হোক, আল্লাহর দরবারে অশেষ শুকরিয়া, আমার গাড়িটা এখনও নিজেরই আছে। অন্য ড্রাইভার চালায়। যাকে আমি নিজে ড্রাইভিং শিখিয়েছি।
আর আমি কাজ করছি ছেলেদের পোশাক নিয়ে। Fashion Hut নামে আমার অফলাইনে একটা শোরুম আছে। অনলাইনেও একটি পেইজ আছে। সবাই আমার পেইজটি লাইক কমেন্ট করে সহযোগিতা করবেন, সবার প্রতি এই প্রত্যাশা করি।
সবার জন্য শুভ কামনা, শুভ হোক আপনাদের আগামীর পথচলা।
আমার নিজস্ব ব্রান্ডের লুঙ্গি পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করতেছি।
ব্রান্ডঃ আরব শাহ লুঙ্গি
কালারঃ ১০০% গ্যারান্টি
সাইজঃ ৬ হাত লুঙ্গি
খুচরা মূল্যঃ ৫৫০ টাকা মাত্র
পাইকারি নিতে যোগাযোগ করুন।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬১৭*
Date:- ০৭/০৯/২০২১
নামঃ- মোঃ আমিনুর রহমান
উপজেলাঃ বিশ্বনাথ
জেলাঃ সিলেট
ব্যাচ নং- ১৪ তম
রেজিঃ ৬৫৯২৫