হসপিটালে আছি আজ ৪ দিন।এত এত রোগীর মাঝে শুরুতে অস্বস্তি ও ভয় লাগছিলো।কোভিড রোগী আর সাধারণ রোগীর মেলা যেন এই জাতীয় হসপিটালটা।
গল্পরাজ্যের অবস্থানকৃত অনেকগুলো গল্পের মাঝে হৃদয়স্পর্শী একটি বাস্তব গল্পঃ
আসসালামু আলাইকুম। আশাকরি সৃস্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে সকলে সুস্থ আছেন,ভাল আছেন।
আজ ৪দিন যাবত মনে হচ্ছে আমি কোন এক গল্পরাজ্যে বাস করছি।চারপাশে এত এত গল্পের মাঝে নিজের গল্পটা ম্লান হয়ে আছে।কোনটা ছেরে কোনটা লিখবো আমি নিজেই কনফিউজড। তাছারা চাইলেও লিখতে পারছিনা,কেননা হাতে ক্যানেলা,টাইপ করা বড়ই মুসকিল।
কিন্তু তাই বলে কি গল্প লিখা বাদ থাকবে?
এতগুলো গল্প মাথায় জট লেগে বিশ্রি কান্ড ঘটবে,আর আমি হয়তো বিতাড়িত হবো এই গল্পরাজ্য থেকে
যাই হোক।মূল প্রসংগে আসি।হসপিটালে আছি আজ ৪ দিন।এত এত রোগীর মাঝে শুরুতে অস্বস্তি ও ভয় লাগছিলো।কোভিড রোগী আর সাধারণ রোগীর মেলা যেন এই জাতীয় হসপিটালটা।শারীরিক অবস্থায় অবনতি ও ডাঃ ও নার্সের অদ্ভুত কথাতে মানিয়ে নিতে একটু কস্ট হচ্ছিল। একটা একটা করে সব টেস্ট গুলো করছি আর চারপাশে ভর্তি রোগীগুলোর গল্প শুনছি।এটাই আমার কাজ এখন।কেননা শুয়ে শুয়ে স্যালাইন নিয়া ছাড়া আরতো কোন কাজ নেই আমার😁😁😁
আমার বেডের ঠিক উল্টোদিকেই একজন বয়স্ক রোগী ভর্তী প্রায় ১মাস যাবত।২দিন যাবত লক্ষ করছিলাম তাদেরকে। রোগীর বয়স ৬০+ হবে,আর ওনার স্বামী ৮০+ তো হবেই।দুজনই বয়স্ক।তবে অবাক করা বিষয় হলো হসপিটালে কেবলমাত্র তারা দুজনই থাকে।না কেউ তাদের দেখতে আসে,না কেউ যোগাযোগ করে।
আংকেল খুব কস্ট করে আন্টির সেবা করে।বাথরুমে নেয়া, বিভিন্ন টেস্ট করাতে ধরে ধরে বাইরে নেওয়া,সবকিছু আংকেল একা একাই করে।যতটুকু খাবার দেয় হসপিটাল থেকে ২জনে মিলে খায়।এসব দেখে বেশ কৌতুহলী হয়েই তাদের সাথে কথা বলি।
পরে জানতে পারি তাদের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে ইন্জিনিয়ার,মেয়ে বিয়ের হয়েছে ঢাকাতেই,মেয়ের জামাই বড় ব্যবসায়ী।ছেলে মেয়ের ২জনের অবস্থানই বেশ ভাল।কিন্তু বৃদ্ধ মা বাবাকে দেয়ার মত সময় তাদের নেই।তাদের সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত করেনা।
পরে আন্টি জানালো, গ্রামে তাদের বাসা।এই ছেলে মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে এত বড় জায়গায় পৌছে দিয়াতে তাদের সেই শ্রমের গল্প।নিজে না খেয়ে তাদের খাওয়ানো, নিজে খারাপ কাপড় পরে তাদের কাপড় পড়ানো,যা প্রায় সব মা বাবারই চেনা পরিচিত গল্প।অথচ সেই মা বাবাকে তারা চেনেও না একটা সময়😥😥😥
আংকেল জানালো,এতে তাদের কোন আক্ষেপ নেই।তাদের ছেলে মেয়ে যে ভাল আছে এতেই তারা খুশি।তারা যোগাযোগ নাই রাখুক তাদের সাথে।
খুব খারাপ লাগছিলো তাদের কথা শুনে।আমরা কতটা অমানবিক হলে বৃদ্ধা মা বাবাকে ভুলে থাকতে পারি,যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমাদের এই উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরী হয়েছে।
আংকেল আন্টির একটা ছবি তুলতে চেয়েলাম।আংকেল যা বললো তাতে তো আমি আরো বিস্মিত হলাম।আংকেল ছবি তুলতে দিবেনা।কেননা তিনি জানেন তাদের এই ছবি আমি নেটে ছারবো,এতে অনেকেই জানতে পারবে তাদের বিষয়ে।এতে যদি তার কোন পরিচিতরা দেখতে পায় তাহলে তাদের ছেলে মেয়েকে বলবে,এতে তারা অসম্মানিত হবে।
তিনি তার ছেলেমেয়েকে এইরকম পরিস্থিতিতে ফেলতে চান না।তাই ছবি নিতে না করলো।
তার এই কথা শুনে মুগ্ধ হলাম।পরে জানতে চাইলাম তাদের গল্পটি সেয়ার করতে পারবো কি না? এতে তারা সম্মতি দিলো।তাই সেয়ার করলাম।
সত্যি আমরা চাইলেই পৃথিবী বদলাবে।নয়তে পৃথিবীই আমাদের বদলে দিবে।আমরাও বৃদ্ধ হবো।কে বলতে পারে আজ আমরা মা বাবার সাথে করছি তা আমাদের ছেলে মেয়ে আমাদের সাথে করবে না?
মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। দুনিয়াতে থেকেই যেন সেই বেহেশত আমরা দোজখে পরিনত না করি।
সকল মা বাবার প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে-৬১৮
Date:- ০৮/০৯/২০২১
সোনিয়া সালমান
ব্যাচ নংঃ১৩
রেজিষ্ট্রেশন নংঃ৫৭২১৪
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
লাইভ সাপোর্ট টিম মেম্বার
কেরানীগঞ্জ জোন
নবাবগঞ্জ ঢাকা
কাজ করছি " ইসলামিক গিফট প্যাকেজ"ও Luttow currier নিয়ে।