অনেক ভয় নিয়ে আজ আমার জীবনের গল্প বলবো আপনাদের,,, "শুনুন আমার জীবনের গল্প বলছি"
🕋বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম🕋
🤝আসসালামু আলাইকুম🤝
প্রথমে কৃতজ্ঞতা জানাই মহান আল্লাহর দরবারে যিনি আমাদের এই মহামারী করোনা কালীন সময়ে ভাল রেখেছেন এবং প্রান খুলে নিশ্বাস নিতে দিচ্ছেন।
শত কোটি দূরুদ ও সালাম হযরত মোহাম্মদ ( সাঃ)এর রওজা মোবারকে।।
তারপর কৃতজ্ঞতা রইলো মা বাবার প্রতি, যাদের উছিলায় আমরা এই সুন্দর পৃথিবীতে আশার আলো হয়ে জন্ম গ্রহন করেছি।।।
এর পর কৃতজ্ঞতা জানাই,,লক্ষ প্রানের স্পন্দন,হাজার মানুষের আইডল অন্ধকারের পথ প্রদর্শক,সকলের বুকে সপ্ন দান কারি, সপ্ন হারা মানুষের সপ্ন দেখানোর চোখ, আলোর মশাল হাতে নিয়ে ছুটে চলা এক নক্ষত্র,,
"জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি,,
অনেক ভয় নিয়ে আজ আমার
জীবনের গল্প বলবো আপনাদের,,,
"শুনুন আমার জীবনের গল্প বলছি"
🙋♀️আমার জন্ম ও শৈশব🙋♀️
মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম,বাবা ছিলেন সরকারি চাকুরীজীবী, চার বোন দুই ভাই দাদা-দাদি, মা-বাবা,আর ছিলেন আমার এক ফুপু ছোট ছেলে রেখে মারা যান সেই ছেলেকেও আমার মা-বাবাই মানুষ করেন এই আমাদের সংসার। বাবা নাকি ছোট বেলা থেকেই নিজের ইচ্ছে মতো চলতেন।বাবা ছিল একা,সেই হিসাবে সংসার দেখার দায়িত্ব ছিল আমার দাদার।
খুবই কম বয়সে,দাদি বাবাকে বিয়ে দিলেন,আমার মায়ের বিয়ে হয় ১২বছর বয়সে।আমার বাবা তখন এস এ সি পরীক্ষা দেন। আমার মা তখন নতুন বউ তার মধ্যে ছোট........! তাই দাদা দাদি মাকে খুবই গুরুত্ব দিতেন।আমার বাবাও মাকে খুব ভালোবাসতো..........! তবে আমার বাবার পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন..............!এবং
পড়াশোনা কমপ্লিট করেন। মায়ের বিয়ের ৩বছর পড়ে আমার বড়ো আপু পৃথিবীতে আসেন তার ৩বছর পড়ে আমি পৃথিবীতে আসি আমার দাদা দাদি এবং বাবা সবাই খুবই খুশি হয়েছে কারন আমার বাবার কোনো ভাই বোন নেই তাই।।এতখন আপনাদের যেই টুকু বললাম সবই আমার মায়ের মুখে শুনেছি।।
👩💻শুরু হলো পড়ালেখা👩💻
আপুর সাথে আমি ও স্কুলে যাই.........!ছাত্রী হিসেবে খুবই ভালো ছিলাম আমি,
কারণ আমাদের টিচার ছিলেন আমাদের মা, কিন্তুু আমি মাকে খুবই ভয় পেতাম
কারন ইংলিশ দেখে খুবই ভয় পেতাম, তাই মা খুব বকা দিতো।।সেই ভয় টাকে আজও জয় করতে পারিনি।।তাই লেখা পড়া আমার কাছে বেশি ভাল লাগতো না। কিন্তুু স্কুলে যেতে খুবই ভাল লাগতো,,প্রতিদিন স্কুলে যেতাম।।যদিও ইংলিশে কাঁচা ছিলাম, কিন্তু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিলাম খুবই পাকা।। তেমনি আরবীতেও খুব ভাল ছিলাম।। খুবই কম বয়সে কোরআন খতম দিয়েছি। হুজুর আমায় খুব ভালবাসতো।আমি প্রাইমারি শেষ করে হাই স্কুলে উঠি, তখন আমার আপুর বিয়ে হয়,, আমাদের হাইস্কুল ছিলো বাড়ির কাছেই।।যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি ২০০২ সাল তখন বাবা টান্সফার হয় চলে আসেন চট্টগ্রাম।।ঠিক তখনই আমাদের আর্থিক কিছু সমস্যা দেখা দিল,, চারিদিকে অন্ধকার দেখতাম,, মনের সাহস হারিয়ে গেল,,শুধু মনে হত বাবাকে ছাড়া কেমনে থাকবো আমি বাবা কে খুবই ভালোবাসি তাই খুব ভেঙ্গে পড়ি,, আল্লাহ্ ধৈর্য দিল।।দিন চলছে কোন রকম লেখা পড়ার প্রতি খুব একটা ভালোবাসা ছিলোনা শুধু একটাই কারন, ইংলিশ বুঝিনা তাই লেখপড়াও আমায় ভালোবাসেনি।সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমিই প্রথম হতাম............! এইভাবেই দিন কাটছে, মাস বছর কেটে গেছে। আর একটা কথা বলি আমার মা ছিলেন খুবই দায়িত্বশীল ও হিসাবি তাই খুব তারাতাড়ি সব ঠিক হয়েছে ইনশাআল্লাহ্।।
💖🌹প্রেম+বিয়ে🌹💖
যেই মানুষ টাকে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগেছিলো তার সাথেই আমার প্রেম হয়, সে আমার খুবই কাছের মানুষ আমার হাসবেন্ড আমাদের লাভ মেরেজ, তার মুখের দিকে তাকাতেই বুকের ভেতরটা কেমন যেন একটা ভালোবায় পরিপূর্ণ হয়ে গেল।তার আগমনে জীবনটা সাত রঙ্গে রঙিন হয়ে গেল।আপনাদের কি মনে হয় তাকে দেখে আমার এমন লাগার কারনটা কি ছিল.....শুনুন তাহলে, দীর্ঘ ছয় মাস মোবাইলে তার সাথে শুধু ঝগড়া ছিলো কারনটা ছিলো তাকে আমি চোখে দেখিনি বাট সে আমায় প্রেমের অফার করলো কিন্তু সে আমায় দেখেছিল আমি দেখিনি তাই আমার এটা ভালো মনে হয়নি।। ছয় মাস পর সে ডিসিশন নিল আমার সাথে দেখা করবে।তাই দেখা করার পরে আমার মনে হয়েছে তাকে মেনে নেয়া যায়।। সে একটা কথা ধরে নিয়েছে যেভাবেই হোক আমার মনকে সে জয় করবেই।।প্রথম দেখাতেই মনে হচ্ছিল আমি বুঝি তার জন্যই অপেক্ষায় ছিলাম,আমার জন্ম হয়েছে তার জন্য,, আমি তাকে দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি,আমি চুপ হয়ে গেছিলাম।কথা হলো তার সাথে ভাল লাগা থেকেই ভালবাসা হয়ে গেল। এখন আমার কাছে কোনো উপায় নাই এখান থেকে বের হওয়ার। তারপর আমার বাবার সাথে কথা বলে এক বছর সময় চায় আমার বাবাও তাকে সময় দেয়।সেই এক বছর তার সাথে প্রেম করেছি মনের মত করে ভালোবেসেছি,হৃদয়ের গহীনে স্থান দিয়েছি।
অনেক সপ্নো ছিল যার সাথে বিয়ে হবে তাকেই ভালবাসবো,তার সাথে জান্নাতে যাব,, তারপর এক বছরের ভেতরে 2010 সালের মে মাসের 9 তারিখ আমাদের বিয়ের দিন ধার্য হয়।আলহামদুলিল্লাহ্ সকলের দোয়ায় ও আল্লাহর রহমতে এই 11 টি বছর সুখে-দুখে একসাথেই আছি।
👨👩👧👦এবার শুরু মা হওয়ার যাত্রা👨👩👧👦
কিন্তুু ভাগ্য বড়ই নির্মম
কি হলো শুনতে হলে শেষ পর্যন্ত সাথে থাকবেন তো??
2011 সালের জুলাইয়ের 1 তারিখে আমার কোল জুড়ে আসে আমার কন্যা সন্তান আলহামদুলিল্লাহ্ মেয়ের মুখ দেখে সবাই খুশি "আহা কি আনন্দ আকাশে,,,,,,,,।। বাতাসে,,,,,,,৷। মেয়ের বয়স যখন ৫ বছর ফ্যামিলি থেকে চাপ দিলো দ্বিতীয় সন্তানের জন্য, তারপর শুরু হলো আমার জীবনের পিছুটান দুই দুইবার কনসেপ্ট হয়, বাট একবার ২মাসের এবং একবার ৩মাসের বেবি মিসক্যারেজ হয়ে যায়। তারপর থেকে আমার সন্তান নেয়ার ইচ্ছেটা আর ছিলোনা তারপর অনিচ্ছাকৃতভাবে ৯বছর পড়ে আমার কোল জুড়ে আসে আমার পুত্র সন্তান। আমার দুই ছেলে,মেয়েই সিজারে হয়েছে।ছেলে হওয়ার তিন দিন পরে, ডক্টর রিলিজ দেয়। মা ছেলে আলহামদুলিল্লাহ্ ভালোই ছিলাম......।বাসায় আসার পরে ৫ দিনে ছেলের আকিকার অনুষ্ঠান কমপ্লিট করলাম।এক সপ্তাহ পরে সব আত্মীয়-স্বজনরা চলে যায়। শুধু আছেন আমার মা,এর পরে নেমে আসে অন্ধকারে ঘেরা এক কালো ছায়া,,,,,,,।।তা আমাকে একেবারে গ্রাস করে ফেলে,হঠাৎ আমার ছেলের প্রসাব বন্ধ হয়ে যায় খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে।শিশু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই ডক্টর এক সপ্তাহ অবজারভেশনে রেখে অনেক টেস্ট করায় টেস্টের রিপোর্ট খুবই খারাপ আসে। ডক্টর বললে ৪টা সার্জারি করতে হবে খুবই ইমিডিয়েটলি, হাতে সময় খুবই কম,, তখন আমার ছেলের বয়স ২১ দিন। ক্যানোলা পরানো দেখেই আমি জ্ঞান হারাই,,,,,,,, আমার সেন্স আসার আগেই ছেলেকে অটিতে নিয়ে যায়, আমার এবং ছেলের বাবার কান্নায় আকাশ,, বাতাস বাড়ি হয়ে গেল,, পুরো হসপিটাল কাঁপতে শুরু করল,,আমারদের মনে হলো পায়ের নিচের মাটি যেনো সরে যাচ্ছে। সাড়ে তিন ঘন্টা পরে অপারেশন সাকসেস হলো। ছেলেকে আইসিউতে নিয়ে গেল।। বিকাল ৪টা ছেলের জ্ঞান ফিরলো। সেন্স আসার পড়ে শুধু খাওয়ার জন্য কান্না করতেছে কিন্তু খাবার দেয়া নিষেধ ছিল, আমি মা হয়ে তা মেনে নিতে পারিনি,, এখানেই শেষ নয়,,,,,,ক্লিনিকের বিল আসে 90 হাজার টাকা,,এরপরে ৭দিন পরে যখন ব্যান্ডেজ খুলতে যাই সেদিন আরো একটা টেষ্ট দেয় এবং বলে ১৫ দিনের মধ্যে করিয়ে রিপোর্ট দেখাতে,,,,,,,,,,,,, সেই টেষ্ট করানোর পরে যানতে পারি আমার ছেলের একটা কিডনির সমস্যা দেখা যাচ্ছে,, সেই থেকে ডক্টরের পরামর্শ ছাড়া আজ পর্যন্ত এক ফোঁটা পানিও ওর মুখে দেইনি। অক্টোবরের 3 তারিখ দুই বছর পূর্ণ হবে,দুই বছর পূর্ণ হলে ফুলবডি আবার চেকআপ করাতে হবে,,,,,, আমার খুবই ভয় লাগে ওর জন্য সবার কাছে দোয়া চাই, আল্লাহ্ রাব্বুল আলা-মিন যেন ওর সব সমস্যার সমাধান করে দেন,,,,৷৷ আলহামদুলিল্লাহ্ সকলের দোয়ায় ও আল্লাহর রহমতে এখন মোটামুটি ভালো আছে। তবে অপারেশনের পর থেকেই তার তেমন একটা ঘুম ছিল না কখনোই। জীবনে বড় কোন সপ্ন দেখতে নেই,তাহলে নাকি কষ্টটাও বড় পেতে হয়,এটাই সত্যি কথা,, কারন আমার শ্বশুর বাড়িতে ছেলে সন্তান ছিল না,,, আমার ছেলে নিয়ে সবাই খুব সপ্ন দেখেছিলো,, এই ছেলেকে নিয়ে আমি দিন রাত এক করেছি,খুবই কষ্টে দিন গুলো পার করেছি। তখন আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না এবং খুবই বড়ো একটা ডিপ্রেশনে চলে যাই,,,,,,,,,,,,, সেই ডিপ্রেশন থেকে বের হওয়ার জন্যই আমার এই উদ্যোক্তার পথ বেঁচে নেয়া,, আলহামদুলিল্লাহ্ অনলাইন অফলাইন সব মিলিয়ে একটু একটু করে এখন সফলতার দিকে হাটছি এই গ্রুপে আমি নতুন আশা করি সবাইকে আমার পাশে পাবো ইনশাআল্লাহ্।।মানুষের ভাগ্য বড় নির্মম,নিয়তি বড়ই নিষ্টুর,,,,,,,,কখনো কেউ চিন্তাও করেনি যে সেই পরিস্থিতির সময় এই উদ্যোগ নিয়ে আজ আমি সফলতা পথে হাটবো কতো জনে কতো রকম টিটকারি ও করেছে এবং তারাই এখন আমাকে নিয়ে গর্ব করছে সবই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা,,,,,,,৭হাজার টাকার বিজনেস এখন লাখ টাকায় পরিণত হচ্ছে,,,,,,,,, সবাই দোয়া করবেন এই বিজনেস কে যেনো কটি টাকায় নিয়ে যেতে পারি,,,,,,,,,,।।
সন্তান নিয়ে সপ্নো দেখা
এখন সংসার জীবন ও উদ্যোগক্তা সব কিছু মিলিয়ে খুবই ভালো আছি,,,,,,,,,,,, আলহামদুলিল্লাহ্ আর একটা কথা বলি আমার হাসবেন্ড খুবই সুন্দর ও নিখুঁত ভালো মনের একজন মানুষ।। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন..........!যেনো মৃত্যু পর্যন্ত মিলে মিশে সুখে-দুখে এক সাথে থাকতে পারি।। আমার বিজনেসটা যখন শুরু করেছি কাউকে আমার পাশে পাইনি এক পর্যায়ে যুদ্ধ করে শুরু করেছিলাম মাত্র ৭হাজার টাকা নিয়ে মহিলাদের ড্রেস নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ এখন আমার অনেক অনেক প্রাপ্তি,,
ধন্যবাদ সবাইকে আমার গল্পটা কষ্ট করে পড়ার জন্য
সত্ত্বাধিকারী- Bithi's Collections.
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬২৯
Date:- ২৬/০৯/২০২১
নাম - বিথী হোসাইন
জেলা-চট্টগ্রাম
থানা - পতেঙ্গা
ব্যচ নং -১৫ তম
রেজিষ্ট্রেশন নং - ৭২৮৯১