প্রবাস জীবনে নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন এর ছায়া
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
❤️আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের কে এবং আমাদের পরিবারকে এই করোনা মহামারীর মধ্যেও সুস্থ রেখেছেন। তারপর দুরুদ ও সালাম পেশ করছি মানবতার মুক্তিদূত আমাদের শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যার উপর নাযিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কুরআন। যার জীবনাদর্শ আমাদের প্রত্যেকের জীবনে অনুসরণ করা উচিত। ❤️
🌹🌹অশেষ শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমাদের প্রিয় শিক্ষক, প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যিনি আমাদের জন্য তৈরি করেছেন এই ভালোবাসার প্রিয় প্ল্যাটফর্ম ।উনার অশেষ রহমতে আমরা পেয়েছি বিশাল এই পরিবার। এখানে পেয়েছি অসংখ্য ভালো মানুষের দেখা, অসংখ্য উদ্যোক্তাদের দেখা, নিজের জীবনের গল্প লেখার সুযোগ, নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির সুযোগ ইত্যাদি। ❤️❤️
আমার জীবনের গল্প
🛀🛀জন্ম:- একদম অজ পাড়াগাঁয়ে নিম্নবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম। আমি শুনেছি আমার যখন জন্ম হয়েছে তখন অনেক দুঃখ কষ্ট দুর্দশা ছিল আমাদের। পরিবারে মা-বাবা কোন একবেলা খেয়ে কাটিয়েছেন আবার কোন এক বেলা হয়ত না খেয়ে কাটিয়েছেন। আমার বড় বোন আছে উনি ওই সময়টাতে অনেক কষ্ট করেছেন বাবা-মার কাছে সাহায্য করা, জমিতে কাজ করা, মাছ ধরা, বাবার ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করা সবি উনি করেছেন। তখন আমাদের ঘর ছিল দুই চালা বিশিষ্ট( আমি দেখি নাই) । ঘর থেকে পানি পড়তো। আমার বাবা অন্যের জমিতে কাজ করতে পারত না ( বেশি পরিশ্রম করতে পারত না)। যার ফলে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকার কাজ করতো কোন সময়ে মাস ধরে মাছ বিক্রি করতো, কোন সময়ে চাল বিক্রি করতো, কোন সময়ে মুড়ি বিক্রি করতো। এই সব কাজেই সহযোগিতা করত আমার বড় বোন এরকম কোন মতে চলতো আমাদের পরিবার।
শৈশব ও কৈশোর :-আমরা তিন ভাই আমি মেঝ আমার বড় ভাই পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে কওমিয়া মাদ্রাসায় যায় কারণ আমার বাবা-মার স্বপ্ন ছিল তার একটা সন্তান আলেম হবে। তখন আমি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি তার দু'বছর আগে আমার বড় বোনের বিয়ে হয়ে যায়। ঘরে থাকি বাবা-মা আমি আমার ছোট ভাই। সব কাজ তখন আমার বাবার নিজেরই করতে হয়। এরপর থেকে বাবার যেকোনো কাজে আমার সাহায্য করতে হতো। ইস্কুল ছুটি হওয়ার পরে বাবার সাথে হাটে যেতে হতো। হাঁটছিল তিন কিলোমিটার 5 কিলোমিটার দূরে দুরে। ওই সময়ে হেঁটে হেঁটে যাওয়া লাগত। প্রত্যেকটা দিন এভাবে স্কুল শেষে যেতে হতো। যেখানে আমার বন্ধুরা স্কুল ছুটির পরে খেলাধুলা করত, একসাথে টিভি দেখতো, ঘোরাফেরা করত। কিন্তু আমি এই সুযোগগুলো পাইতাম না।যদি একদিন বলতাম হাটে যাব না তাহলে ওই দিন বাড়ি থেকে বকা ঝকা খেতে হতো। এভাবে চলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। অনেকের কাছ থেকে পুরানো বই সংগ্রহ করে, ধার করে, পুরনো বই কিনে পড়াশোনা করতাম ।তারপর আমার ভাই মাদ্রাসায় পড়া বাদ দিয়ে ঢাকা চাকরি করতে চলে যায়। বলে যে বাবা বৃদ্ধ হয়ে গেছে আমাদের ভাইদের কে পড়াশোনা শেখাবে। এই উদ্দেশ্য নিয়ে চাকরি করে। পরিবারের সব কাজ আমি করতাম ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে। বাবাকে কিছু করতে দিতাম না কারণ বাবার বয়স হয়েছে। তারপরও মাঝেমধ্যে জমিতে গিয়ে আমাদের কাজ দেখিয়া শুনিয়া দিতেন। পাশাপাশি পড়াশোনা টা ও চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। এভাবে পড়াশোনা করি পাশাপাশি দুই চারটা টিউশনি করাতাম বাড়ির পাশে। এভাবে এসএসসি পরীক্ষা দেই মোটামুটি ভালো রেজাল্ট করে স্থানীয় একটি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হই। বাড়ির কাজবাজ করি টিউশনি করি চলতেছিল আলহামদুলিল্লাহ ভালই।
চাকরি ও উদ্যোক্তা:- ইন্টারমিডিয়েট শেষ করি। শেষ করার পরে চিন্তা করি পরিবারের জন্য কিছু একটা করতে হবে। শুধু পড়াশোনা করলে হবে না। ছোট একটা চাকরিতে জয়েন করি। পাশাপাশি অনার্সে ভর্তি হই। রাত 9 টা পর্যন্ত ডিউটি করার পরে বাসায় গিয়ে কিছুক্ষণ পড়াশোনা করতে হতো। কারণ যে চাকরিটা করতে ছিলাম এটা শুধুমাত্র আমার পড়াশোনা এবং নিজের খরচ চলত। দুর্ভাগ্যবশত আমার অনার্স ভর্তি হতে হয় খুলনায়। বছর শেষে যখন পরীক্ষার সময় হত, তখন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে পরীক্ষা দিতাম দুই মাস পরে আবার চাকরিতে জয়েন করতাম। এভাবে চলে প্রায় দুই বছর। তারপরে চিন্তা করলাম এই স্বল্প বেতনে কিছু সম্ভব না একটা লোকের কাছ থেকে ব্যবসায়ের বিভিন্ন আইডিয়া গ্রহণ করলাম। কিন্তু আমার কাছেও রকমের কোন মূলধন ছিল না। পরে উনি বললো বেশি টাকা দরকার নাই স্বল্প টাকা দিয়ে শুরু করো। ছয়টা পর্যন্ত অফিস করে কিছু প্রোডাক্ট কিনে ফুটপাতে সেল করার চেষ্টা করি। দেখি মোটামুটি ভালই প্রফিট পাওয়া যায়। এভাবে করি প্রায় তিন থেকে চার মাস। তারপর চিন্তা করি আমাদের স্থানীয় এলাকায় পাইকারি দামে এই পণ্য গুলো বিক্রি করলে মোটামুটি ইনকাম করা সম্ভব। কিছু টাকার পণ্য কিনে বৃহস্পতিবার রাত্রে অফিস ছুটি হওয়ার পরে বাড়িতে যাই শুক্রবার স্থানীয় দোকানগুলোতে সেল করার চেষ্টা করি। মোটামুটি ভালই বিক্রি হয়ছিল। কিছু প্রডাক্ট থেকে যায় বিক্রি হয় না ।বাড়ি থেকে এগুলো দেখে যে সব পণ্য বিক্রি করতে পারতেছিনা।বলে তোর ব্যবসা করার দরকার নাই চাকরি কর আর পড়াশোনা চালিয়ে যা। আমি চেয়েছিলাম ব্যবসাটা ভালোভাবে শুরু করার জন্য কিন্তু বাড়ি থেকে বলে তুই পারবি না যেটা করছিলে সেটাই কর ব্যবসা পরে করিস। এর মধ্যে আবার পরীক্ষার সময় চলে আসে । পরীক্ষা দিতে যাই পরীক্ষা শেষ করে একটা ক্যাটারিং সার্ভিসের জব করি। ওখানে প্রায় এক বছর পরে অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিতে যাই। পরীক্ষা শেষ করে কি করবো বুঝতে পারতেছিলাম না অনেক খোঁজার পরে একটা মার্কেটিং চাকরি শুরু করি ।ওখানে চাকরি করতেছিলাম। চাকরি করা অবস্থায় একদম প্রথম যে অফিসে চাকরি করতাম সেখানে যোগাযোগ রাখতাম কথা বলতাম ভালো সম্পর্ক ছিল স্যারদের সাথে। এরপরে চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়ে যায় তার পর একদম বেকার।
🛫প্রবাস জীবন✈️
আমার কোনদিন ইচ্ছা ছিল না, টাকা পয়সাও ছিল না যে আমি বিদেশ করব। আগের অফিস দের স্যারদের সাথে কথা বলে একটা চাকরির ব্যবস্থা হয় মার্কেটিং চাকরি। মার্কেটিং চাকরি করা অবস্থায় প্রথমে যে জায়গায় চাকরি করতাম ওখানে বসদের সাথে কথা বলতাম মাঝেমধ্যে অফিসে যাইতাম। একদিন ঐ অফিস এক বিশ্বস্ত স্যার ফোন দিয়ে বলে যে সৌদি আরবে লোক নিতেছে কম টাকার মাধ্যমে ওখানে ইন্টারভিউ দিয়ে দেখতে পারো। আমি বললাম ঠিক আছে চেষ্টা করে দেখি যদি হয়তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। উনার কথার পরে আমি ওখানে ইন্টারভিউ দেই। ইন্টারভিউতে সিলেক্ট হয়। সিলেক্ট হওয়ার পরে উনারা যে টাকার কথা বলেন প্রথমজন বলার মধ্যে বিশাল ব্যবধান। এতো টাকা ছিলনা আমাদের কাছে। আমি বড় ভাইকে এসব কথা জানাই উনি বলে আমাদের এমনিতেও টাকা নাই। কিছু টাকা আছে যা বাড়িতে ঘর করতে হবে যদি আমাদের স্বল্প টাকা মার(ধরা) যায় তাহলে আমাদের কি অবস্থা হবে। কারণ শুনতাম অনেকে 5 থেকে 6 লাখ টাকা নিয়ে বিদেশে নেওয়ার কথা বলে নিতো না অনেক মারা মারির মতো ঘটনাও ঘটছে। পরে আমি ওখানে না বলে দেই। অন্য চাকরির জন্য চেষ্টা করতে থাকি একটা লোকের সুবাদে চাকরিটা পেয়ে যাই। ওই চাকরি করার অবস্থায় যে অফিসে ইন্টারভিউ দিসিলাম সৌদি আরবে আসার জন্য ওখানে যেয়ে আবার আবার কথা বলি। সব বিষয়গুলো বলার চেষ্টা করি পরে উনারা বলে তুমি যদি এখন যাইতে চাও তাহলে যাইতে পারো। প্রথমে যে টাকার কথা বলছিল ওই টাকার চেয়ে অনেক কম টাকা কথা বলে। আমিও রাজি হই। রিক্স নিয়ে ভাই কে না বলে অফিসে কিছু টাকা জমা করে দেই। ওখানে টাকা দিলাম ঘরে না বলে কাজবাজ শুরু করলাম পরে ভাইয়াকে বললাম। তারপর যে অন্যান্য কাজগুলো শুরু করি। ভাইয়া কে পরিবারের সবাইকে সব বিষয়ে খোলামেলা কথা বলি। (আরো অনেক না বলা কথা আছে)।
❤️ আলহামদুলিল্লাহ এক মাসের মধ্যে সৌদি আরব চলে আসি। ❤️
💯ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প 💯 তখন নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনের 11 তম ব্যাচ চলছিল, আমাদের এলাকার এক প্রবাসী ভাই আমাকে এই গ্রুপ সম্বন্ধে বলে উনি বলে যেহেতু তুমি ব্যবসার চিন্তা ভাবনা করছো সেহেতু এই গ্রুপের পেছনে সময় দাও অনেক কিছু শিখতে পারবা, জানতে পারবা, বুঝতে পারবা।তো সেই থেকেই আছি এই ভালবাসার গ্রুপে রেজিস্ট্রেশন করেছি 12 তম ব্যাচে। এখানে এসে যা পেয়েছি হাজার হাজার ভালো মানুষের দেখা, ভালো ভালো ব্যবসার আইডিয়া, ভালো ভালো সামাজিক কাজকর্ম জেলাভিত্তিক মেসেঞ্জারে এড হওয়া,সেশন চর্চা মিটাতে অংশগ্রহণ করা নেটওয়ার্কিং বৃদ্ধি করা। ইনশাআল্লাহ,অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করছি।
⏱️প্রবাস জীবনে তিন বছর শেষ হলো ভোর চারটা থেকে বিকাল 4 টা পর্যন্ত ডিউটি করতে হয়এর মূল উদ্দেশ্য পরিবার ভালো থাকুক, মা বাবা ভালো থাকুক। আলহামদুলিল্লাহ মা বাবার দোয়ায় বাড়িতে একটা ঘর করছি। বর্তমানে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি একমাত্র আমি। ছোট ভাই পড়াশোনা করছে। দোয়া করবেন আমার জন্য সবাই। আমার মা বাবার জন্য দোয়া করবেন। আমার মা বাবাকে আল্লাহ যেন হাজার বছর হায়াত দান করেন সুস্থ রাখেন। আমিন🕋
🙏ধন্যবাদান্তে🙏
@G M Shakil DA @M A saiful Islam @Abdullah Hassan @Imran Hossain @Salma Shamim @Sohel Rana @Ohida Moni এবং আরো অনেকে আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।।।আপনারা এভাবে যে যার যায়গা দিয়ে আমার পাসে ছিলেন, আছেন, থাকবেন, ইনশাআল্লাহ ।আমার পরিবারের বাইরে এটি একটি পরিবার। সবাইকে ধন্যবাদ🙏
❤️অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাদেরকে যারা এতক্ষণ ধৈর্য নিয়ে আমার জীবনের গল্পটা পড়েছেন। কোন ভুল-ভ্রান্তি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনাদের সবার জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন সবাইকে সুখে রাখে, শান্তিতে রাখে, সুস্থ রাখে। আমিন❤️
🕋জীবনের অন্যতম একটা প্রধান লক্ষ্য ওমরা করা। ইনশাআল্লাহ, আজ এগারোটা বারোটার দিকে ওমরা করার উদ্দেশ্যে রওনা হবো সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী🙏
স্টাটাস অফ দি ডেঃ৬৫৭
তারিখঃ২৭-১০-২১
নাম আজাদ রহমান
জেলা পিরোজপুর
উপজেলা নাজিরপুর
ব্যাচ নং 12
রেজিস্ট্রেশন নং 36656
বর্তমান অবস্থান সৌদি আরব
আল্লাহ হাফেজ