শুধু স্বপ্ন দেখিনা স্বপ্ন দেখাতেও এখন খুব ভালোবাসি।
মানালী খুবই শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে।
খুব ভালো মনের অধিকারী।
আমার সাথে একটা ভালো সম্পর্কই রয়েছে।
কিছু কিছু সম্পর্ক আছে না আত্মার সম্পর্ক ঠিক তাই😍😍
মেয়েটা আমার মনের গহীনে নিজেরই অজান্তে একটা জায়গা করে নিয়েছে তার মুগ্ধ ব্যবহার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে❤️❤️ কেনো জানি ভালো মানুষ দের সাথেই ভালো কিছু সচারাচর ঘটেনা।
এত মিষ্টি একটা মেয়ের প্রশান্ত হাসির ভিতরে লুকায়িত আছে হাজারো কষ্টের ভীড়😢
মাঝে মাঝে এই বিশাল পৃথিবীতে নিজেকে খুবই ছোট মনে হয়। খুবই দুঃখিনী মনে হয়,,,কিন্তু যখন কিছু মানালীদের সাথে দেখা হয়,,খুব কাছ থেকে তাদের দেখার সৌভাগ্য হয়,,তাদের সাথে চলার সৌভাগ্য হয় তখন নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হয়। সৃষ্টিকর্তার কাছে লাখ কোটি শুকরিয়া আদায় করি আমার নিজ অবস্থানের জন্য। আমরা কিনা এত এত ভালো থাকার পর ও মাঝে মাঝে হতাশাগ্রস্ত হই যেখানে কিনা হাজারো মানালী শুধুমাত্র একটু বেচে থাকার লড়াই করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। দুবেলা দুমুঠো খাবার খেতে হলে ও তাদের শুনতে হয় নানান কথা,, পেতে হয় অজস্র লাঞ্চনা😢
ও এতক্ষণ যার কথা বললাম আমার পরিচিত একটা মিষ্টি মেয়ে মানালী ❣️
তার মায়াবী মুখের এক চিলতে প্রশস্ত হাসি দেখে সহজেই বুজার উপায় নেই সে যে কতটা দুঃখীনি। বয়স কতই বা আর বড়জোর ১৬/১৭ নিম্নবিত্ত পরিবারে তার বড় হয়ে ওঠা। বাবা ছিলেন দিনমজুর,, মা- বাবা ও ৪ ভাই বোনের সংসারে মানালীই বড় এবং একটি মাত্র মেয়ে। বাকি ৩ জনই ভাই,, মানালীর কোন বোন নেই।
পড়া লিখা বেশীদূর এগোতে পারেনি। তার দিনমজুর বাবার রোজগারে যেখানে তিনবেলা খাওয়াটাই ছিলো কষ্টসাধ্য,, সেখানে পড়ালিখা তো বিলাসিতাই বটে। তাই প্রাইমারি স্কুলের গন্ডি ফেরিয়ে আর হাইস্কুলে উঠা হলো না মানালীর। এরপর ছোট ভাই বোন দের দেখাশোনাই করতো। তার মাও মানুষের বাসায় বাসায় কাজ করতো।
তাই ১০/১১ বছর বয়স থেকেই মানালীই সংসারের সকল কাজকর্ম ছোট ভাই বোন দের লালন পালন নিজে একাই করতেন।
এভাবেই চলছিল নানান টান পোড়নের মধ্য দিয়ে মানালীদের জীবন যাপন। মানালী মাঝেই মাঝেই আমার বাসায় আসতো,,আমাকে অনেক সময় অনেক কাজেই হেল্প করতো। বিশেষ করে যখন কোন পিঠার অর্ডার পড়ে তখন সে আমাকে অনেক টা হেল্প করে দেয়।এরপর ২০২০ সালে করোনার থাবায় মানালীদের সংসার তছনছ হয়ে গেলো। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানালির বাবা মারা যান😢
মাথার ছাদ হারিয়ে মানালির মা পাগলপ্রায়।
৪ সন্তান নিয়ে তার অবস্থা মুখে বলে বুঝানোর মত নয়😭
এদিকে যাদের বাসায় কাজ করতো করোনার কারণে তো কেউ কারো বাসায় এলাউ করছেন না।
এদিকে আমাদের বাড়ি জনবহুল হওয়ায়,, করোনায় বাহিরের কাউকে বাড়ির ভিতর ঢুকতে দেয়া হয়না।
আর এম্নিতেও তো করোনার সময় আমরা কেউ কারো বাসায় যাই নি। সবাই যথেষ্ট সর্তকতা অবলম্বন করে নিজ গৃহেই অবস্থান করছি
হঠাৎ একদিন সন্ধায় দড়জার নক হলো,,, একটু ভয় ও সংকোচ নিয়ে লক খুললাম।
যেহেতু সচারাচর কেউ আসেনা তাই একটু সংকোচ বোধ করছিলাম।
দেখি মানালী ওকে দেখেই হাসি মুখে বললাম কিরে হঠাৎ তুই এখানে।
ও কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। আমি ভাবলাম হয়তো বাবার জন্য মন খারাপ তাই তাকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করলাম। তারপর তাকে বসতে দিলাম।
সে অনবড়ত কান্না করে যাচ্ছে। কান্নার ভিতর হঠাৎ করেই বলে উঠলো আপা আমারে এক কেজি চাউল দিবেন মা পাঠাইছে😢আজ চারদিন ঘরে চাউল নাই 😭ছোট ভাই গুলো খিদার চোটে অনবরত কেদে যাচ্ছে😭 মা তাদের আশে পাশের ঘর থেইকা ভাতের মাড় আইনা লবন দিয়া খাইতে দিছে😭
ওর কথা শুনে আমার মুখ দিয়ে আর কথা বের হচ্ছেনা😭
কিছুক্ষণ পর নিজের চোখের পানি মুছে ওকে হালকা নাস্তা দিলাম খেতে। । খেতে খেতে বললাম আরো আগে আসলানা কেনো। বলে যে আপা আব্বা মারা যাওয়ার পর ঘর থেকে তেমন বের হতে পারিনা। বের হলেই কলোনীর সবাই অনেক গালিগালাজ করে,,আমগো ঘরে করোনা রোগী ছিলো এখন আমরা সবাই অপরাধী। আপা আল্লাহয় চাইছেন তাই এই রোগে আমার বাপ গেলো আমরা তো এখন সুস্থ আছি। আজ আর টিকতে না পাইরা সন্ধ্যায় চুপিচুপি আম্মার বোরকা পইরা বের হইছি ঘর থেইকা। ওর কথা গুলো শুনেই গেলাম,, কিই বা বলবো কিছুই যে বলার নেই আমার।
বরং ও যে আমার ঘরে আসছে কেউ তা দেখলে আরো খারাপ বিহেভ করবে।
আসলে আমরা সবাই করোনায় আতংকে এতটাই নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম যে কার কি হলো না হলো তা জেনে দুঃখ প্রকাশ করার চেয়েও নিজেকে নিয়ে আরও বেশী ভয় কাজ করতো।
এরপর ওকে কিছু চাউল,, ডাউল,,আর জিনিস পত্র দিয়ে বাসায় পাঠালাম, বললাম যখন যা লাগে আমার কাছে আছিস।
দিনে তো আসতে পারবিনা,, সন্ধ্যা বা একটু রাত করেই আসিস। দেখতে দেখতে ২/৩ মাস শেষ এখনো করোনা থাকলেও স্বাভাবিক অবস্থায় আছে সবাই।মানালী প্রায় আসা যাওয়া করতো আমার বাসায়। হঠাৎ একদিন আবার মানালী এসে কান্নাকাটি করা শুরু করলো। আমি ভাবলাম ঘরে বুজি বাজার নেই তাই,, জিজ্ঞেস করার পরে বলবো আপা মায় আমার বিয়া ঠিক করছে। আমি হতবাক ক বলিস?
হুম,,আপা
এর কিছুক্ষণ পর দেখি মানালীর মায়ের আগমন। তিনি ও মানালীর বিয়ের সংবাদ দিতে এসেছেন,,,আর বিয়ের খরচের জন্য সবার কাছে কিছু সাহায্য চাইলেন।
আমি ওনাকে অনেক ভাবে বুজালাম,,না উনি আমার বুজ নিলেন না ,,তার ভাষ্যমতে মেয়ে মানুষ মানেই সংসারের বোঝা,, সমাজের বোঝা,,, তারে পার করতে পারলে নিজেদেরই শান্তি। খুব ঘৃণা হলো সেই মহিলার প্রতি।
যে কি না একজন মেয়ে হয়ে মেয়েকেই এভাবে বলছেন। শুধু মানালীর মা নয় আমাদের সমাজে এখনো অনেক মা আছেন যারা শুধু মেয়েদের তাদের বোঝা মনে করেন। কোন মতে কারো ঘাড়ে জুটিয়ে দিতে পারলেই যেনো শান্তি।
দেখতে দেখতে মানালীর বিয়ের ৭ মাস হয়ে গেলো।
৭ মাস খুব একটা বেশি নয়,, তারপরও এই ৭ মাসে মানালীর জীবন টা অতিষ্ঠ হয়ে গেলো। বিয়ের পরেও মানালী মায়ের বাসায় থাকতো।ওর স্বামী ওকে শ্বশুর বাড়িতে নিতোনা। ২ মাস পর মানালির মায়ের জোর জবরদস্তি তে ওকে শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে মানালী সব চেয়ে বড় শকড টা খায়🥺 সে দেখে যে তার স্বামী আগে থেকেই বিবাহিত আর ২ সন্তানের বাবা। এর চেয়ে বড় কষ্টদায়ক একটা মেয়ের জীবনে আর কিছু আছে বলে মনে হচ্ছেনা। যাই হোক মানালী ওখানেই মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো। কারণ তার মা যে তাকে আর গ্রহণ করবেনা সে তা ভাল করেই জানে। চলতেছে তার শ্বাশুড়ি,, ননদ আর সতীনের অত্যাচার।
তারা ভাবছিল তাদের ছেলেকে হাত করিয়ে মানালী বিয়ে করে নিছে। কিন্তু ঘটনা ঠিক তারই উলটো।
যখন মানালীর বাবা মারা যায়,, তখন মানালীর মাকে অনেক সাহায্য করে মানালীর স্বামী এবং তখনই সে মনে মনে প্ল্যাণ করে রাখে। তার মাকে ওয়াদা করায় মানালীকে বিয়ে দেয়ার। মানালীর মা একে তো মেয়ে কে বোঝা মনে করে তার উপর দুঃসময়ে সাহায্যের হাত পায়ে সেই সুযোগ টা ছাড়তে চায়নি।
গত ৪ দিন আগে মানালী আমার বাসায় আসলো,, বাপের বাড়ি আসছে তাই আমাকে দেখতে আসছে।
ওকে দেখে আমার খুব কান্না পাচ্ছে সারাশরীর জুড়ে অত্যাচারের চিহ্ন। আর মানসিক চিহ্ন তো দেখা যায় না,,তা কেবল বুজার জন্য একটা মন দরকার। ওকে এত কাছ থেকে দেখে আমার বুজার বাকি রইলো না যে সে কেমন আছে।
কথার ফাকে বললো আপা আপনার এখন অর্ডার পরে না।
আমি বললাম হ্যা পরে তো কালকেও কিছু নাস্তা বানাবো,,
আপা আমি তাইলে কাল আবার আমু,, আপনারে সাহায্য করার লাইগা।
আচ্ছা আসিস🤗
ঠিক সে পরদিন বিকেলে হাজির,,, নাস্তা বানাতে বানাতে বলছে যে আপা আমারে যদি এরকম ছোট খাটো একটা কাজ দিতেন,,, আমি যদি নিজের পেট নিজে চালাইতে পারতাম তাইলে আর ঐ বাড়িত যাইতাম না।
হেই মানুষ গুলো মানুষ না আপা,, ভয়ংকর রকম পশু😭😭😭😭😭😭
আম্মায় তো আমার কোন কথাই হুনেনা,,,কয় সতিনের ভাত কপালে করে আনছিস,,আমি কি করুম😭😭😭
আচ্ছা কান্না থামা দেখি তোর জন্য কি করতে পারি আমি।
আচ্ছা মানালী তুই তো ভালো কাথা সেলাই করতে পারিস,,আমার বাবুর জন্য সেলাই করছিলি না,, খুব সুন্দর হইছিল,, তুই তো এটা নিয়ে কিছু করতে পারিস।
আপা কেমনে কি করমু কেউ কি আমার থেইকা কাথা নিবো?
আর এত টাকা কই পামু
আরে পাগলি এত টাকা কি লাগবে,,, আচ্ছা তোকে আমি ১০০০ টাকা দিবো তুই এটা দিয়ে কিছু কাপড় আর সুতা এনে কিছু বেবী কাথা সেলাই কর।সেল করার দ্বায়িত্ব আমি নিলাম। আর পাশাপাশি আমার প্রডাক্ট গুলো নিয়ে রিসেরাল হিসেবে ও কাজ করিস,,তাহলে এদিক দিয়ে ও তোর কিছু টা বাড়তি আয় হলো।
আফা আরেক খান কথা আম্নেরা যে একটা গ্রুপে এড আছেন,, কি স্যারের কথা যেনো সবসময় কইতেন তার গ্রুপে।আমারে একটু এড কইরা দেন না।
হুম এড তো করে দিতে পারবো কিন্তু তুই মোবাইল কই পাইবি।
আফা আমারে বিয়ের ১ মাস পরে একটা মোবাইল দিছে এই যে এইডা
ও আচ্ছা 🥰দেয় দেখি এড করে দিচ্ছি😍😍
আচ্ছা আমি তোকে ১৬ তম ব্যাচে রেজিষ্ট্রেশন করে দিচ্ছি। সামনেই ১৬ তম ব্যাচের কোর্স শুরু হবে।
যাক এটা আরো বেশী ভালো হলো,, তুই এখন গ্রুপ থেকে অনেক কিছুই শিখতে পারবি। অবশ্যই স্যারের শিক্ষা গুলো কে মনে প্রাণে ধারণ করবি। অনেক দোয়া রইলো তোর জন্য যেনো অন্তত তোর বেচে থাকার অবলম্বন তুই নিজেই হতে পারিস।
আর যারা নারীদের কে লাঞ্চিত করে প্রতি পদে পদে তাদের বুজিয়ে দিস নারীরা ও পারে।
এই সুন্দর ভুবনে তাদেরও মুক্ত ভাবে বেচে থাকার অধিকার রয়েছে😍
প্রিয় মেন্টর Iqbal Bahar Zahid স্যার আপনাকে মনের গহীণ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে আপনি এমন একটা প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছেন যেখানে নারীদের পযাপ্ত সম্মান দেয়া হয়। সমাজে এখনো কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ আছে যারা নারীর গর্ভে জন্ম নিয়েই নারীকে সম্মান করতে পারেন না। সেই বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ বিহীন এমন একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র তৈরি করেছেন যার চারদিকে পজিটিভিটির ছোয়া❣️❣️
স্যার আপনার জন্য মন থেকেই এমনিতেই দোয়া চলে আসে,,আপনার এই সুন্দর প্লাটফর্ম এর মাধ্যমে হাজারো মানালী জীবনে গভীর অন্ধকার কাটিয়ে আলোর সন্ধান পায়। স্যার আপনার শিক্ষাকে মনে প্রাণে ধারণ করে আমি আজ এতটাই সাহসী হয়েছি যে শুধু এক মানালী নয় এমন হাজারো মানালীর পাশে সাহস করে দাড়াতে চাই। এমন হাজারো মানালীর জীবনে আলোর মশাল টা আমিই জ্বালাতে চাই।
শুধু স্বপ্ন দেখিনা স্বপ্ন দেখাতেও এখন খুব ভালোবাসি।
স্যার আপনি সব সময় বলেন মানুষের জন্য কাজ করলে জীবীকার জন্য কাজের অভাব হয় না।আমি এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি স্যার আর এর প্রমাণ ও পেয়েছি আজ ও মানালী আমার জন্য ২ জন কাস্টমার নিয়ে আসছে।
মানালী কে শুধু একটা কথাই বলেছি যে যাই বলুক জবাব টা শুধু কাজেই দিব,, কথায় নয়।
স্যার আমি চাই মানালী আপনার সামনে দাড়িয়ে আপনারই মঞ্চে যেনো তার ঘুরে দাড়ানোর গল্প শেয়ার করতে পারে। সে যেনো দেশের বড় বড় সব উদ্যোক্তাদের সমতুল্য হতে পারে।
সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য,, আমি যেন নিজের উদ্যোগ পেয়ে পাশাপাশি এমনো হাজারো নারীকে সাহায্য করতে পারি।
স্টাটাস অফ দি ডেঃ৬৫৭
তারিখঃ২৭-১০-২১
নওশিন তারানুম
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
নবম ব্যাচ
রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ঃ১২৬২৮
জেলাঃ ফেনী
ব্যবসাঃ ফুড ও গার্মেন্টস আইটেম নিয়ে
পেজঃ Fashion Food BD