ভাই তখন আমাকে অগ্রিম 500 টাকা দিয়ে বলল যাওয়ার সময়
#বিসমিল্লাহির_রহমানির_রাহিম
#আসসালামু_আলাইকুম
❤️সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন ও এই করোনা মহামারীর মধ্যে সুস্হ রেখেছেন। শান্তি বর্ষিত হোক নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর।❤️
❤️কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রিয় শিক্ষক জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি। যার অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা একটি নিজের বলার মত গল্প প্লাটফর্ম পেয়েছি। যেখানে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা ভালো মানুষ।❤️
>>প্রত্যেকের জীবনের একটি গল্প আছে, তেমনি আমার জীবনের একটা গল্প আজ আপনাদের শোনাতে চাই<<
>>প্রতিটি সন্তানের কাছে তার বাবা-মা শ্রেষ্ঠ। আমার কাছেও আমার বাবা-মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা মা।<<
পাবনা জেলার আমিনপুর থানার নগরবাড়িতে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম। পরিবারে ছিলেন আমার মা-বাবা এবং আমার বড় দুই বোন। পরিবারের সবচেয়ে ছোট ছেলে হওয়াতে আদরের অভাব ছিল না। ছোটবেলা থেকেই অনেক শান্ত স্বভাবের, মিতভাষী এবং অন্তর্মুখী ছিলাম। চুপচাপ থাকাটাকেই বেশি পছন্দ করতাম। কোন ঝগড়া ঝামেলার মধ্যে জরাইতাম না। আমার মনে পড়ে আজ অব্দি আমার বাসায় কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি আমার বিরুদ্ধে। ছোটবেলা থেকেই অনেকটাই ধার্মিক ছিলাম। ছোট থেকেই নামাজ কালাম ঠিকমতো আদায় করার চেষ্টা করতাম এখনো তারই ধারাবাহিকতা বজায় আছে আলহামদুলিল্লাহ। এভাবে আস্তে আস্তে সুখে-শান্তিতে কাটছিল দিনগুলো।
আমার বাবা তখন কাঁচা তরিতরকারির ব্যবসা করতেন। তখন সবেমাত্র আমার কিছুটা জ্ঞান বুদ্ধি হয়েছে। আমার বাবা ব্যবসায় তাগিদে মোকাম করতে গিয়ে ট্রাক থেকে পড়ে যায় এবং তখন তার একটি পা ভেঙ্গে যায়। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হয়ে যায় একদম অচল। তখন থেকেই শুরু হয় আমাদের দুর্দিন। পুরো একটা বছর আমার বাবা কোন কর্ম করতে পারেনি। অনেক টাকাপয়সা আমরা ঋণ হয়ে যাই। এমনকি ভিটেমাটির ঘরটাও বিক্রি করে দিতে হয় আমাদের। 😭 নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আমার মা সংসারটাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। বাড়ি বিক্রি করে দেয়ার পর আমরা তখন কাশিনাথপুরের একটি বাসাতে ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস শুরু করি। এরপর আমার বাবা যখন একটু সুস্থ হয় তখন সে বাসের কন্ডাক্টর হিসাবে নতুন কর্মজীবন শুরু করে। এভাবেই অনেক দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে আমাদের জীবন চলতে ছিল।
এর পরে আসি আমার শিক্ষা জীবনের শুরু,,,
আমরা যখন কাশিনাথপুরে বাসা ভাড়া করে থাকি, আমাদের বাসার পাশেই আমার ছোট খালা মনির বাসা ছিল। মাঝে মাঝে যেতাম খালামনির বাসায়। সেখানে আমার ছোট খালু একদিন আমাকে অফার করে যে, আমি যদি প্রতিদিন একটি করে অক্ষর শিখে যাই তাহলে সে আমাকে দুই টাকা করে দিবে। তখন দুই টাকায় যে সুখ ছিল-আনন্দ , এখন হাজার টাকা তেও সেই সুখ নেই। দুই টাকার জন্য আমি প্রতিদিন একটি করে নতুন নতুন অক্ষর শিখে যেতাম আর গিয়ে ছোট খালু কে খুজতাম পড়াশোনার জন্য। আমার ছোট খালু তখন ছিলেন একটি হাইস্কুলের শিক্ষক এবং আমার ছোট খালা ছিলেন একটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। ছোট খালুর হাত ধরেই আমার হাতে খড়ি শেখা। এরপরে গ্রামের একটি প্রাইমারি স্কুলে আমি ভর্তি হই। প্রথম বছরেই আমি প্রথম হয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। প্রাইমারি স্কুলে আমার রোল 1 থেকে 3 এর মধ্যেই ছিল। স্কুলের প্রতিটা শিক্ষক আমাকে অনেক ভালবাসত। পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজন সবাই আমাকে অনেক ভালবাসত। সেই সময়ে আমার বড় দুই বোন এবং আমার, আমাদের তিনজনের পড়াশোনার খরচ এবং পরিবারের সকল খরচ বহন করতে আমার বাবা অনেক হিমশিম খাচ্ছিলেন। তার এই সামান্য রোজগার দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। তবুও নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আমার বাবা মা অনেক সংগ্রাম করে আমাদের তিন ভাই বোনের পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। আমার বড় বোন মাস্টার্স কমপ্লিট করেছেন, ছোট বোন ডিপ্লোমা কমপ্লিট করেছেন এবং আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর ডিপ্লোমা শেষ করে বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তেছি। আমাদের শিক্ষার ব্যাপারে সম্পূর্ণ অবদান রেখেছেন আমার মা❤️। যার ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারব না। শত বাধা বিঘ্নতার মধ্য দিয়েও কখনো আমাদের পড়াশোনার হাল ছাড়তে দেননি। আমার মামা খালারা আমাদেরকে পড়াশোনা করার জন্য অনেক অনুপ্রাণিত করেছেন অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তাদের কাছেও চির কৃতজ্ঞ হয়ে থাকব। জিবনে মায়ের পরে যদি কারো মায়ের সমতুল্য মনে করি, তাহলে সেটা হল আমার ছোট খালামনি। অনেক আদর, শাসন, ভালবাসা পেয়েছি তার কাছ থেকে। অনেক বেশি ভালবাসে আমাকে সে। মায়ের কাছে গল্প শুনেছি, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন প্রতি বৃহস্পতিবার খালা আমাকে দেখতে আসতো। এখনো আমার প্রতিটা জন্মদিনে সে আমাকে উয়িশ করে, সবাই ভুলে গেলেও সেই মানুষটার কখনো আমার উয়িশ করতে ভুল হয় না। আমার নামটাও আমার ছোট খালাই রেখেছিলেন। এর পাশাপাশি অনেক বড় অনুপ্রেরণা ছিল আমার ছোট মামা। আপনাদের সুপরিচিত ৭ম ব্যাচের মোঃ বুলবুল আহমেদ। যার মাধ্যমেই এই প্ল্যাটফরমে আমার আসা। যার জীবনেও রয়েছে এক অক্লান্ত পরিশ্রমের অনুপ্রেরণা মূলক গল্প। যে গল্পটা আপনাদের সকলেরই জানা। যে আমাকে প্রতিটা সময় ভাল কিছু করার অনুপ্রেরণা জোগায়। এছাড়া অন্য মামা-খালারাও অনেক ভালবাসেন। মামারা কোনো দিন আমাদের নাম ধরে ডাকে না, সব সময় আমাদের মামা বলেই ডাকে। তবে বিশেষ করে ছোট খালার থেকে অনেক আদর পেয়েছি আমি। আচ্ছা যাইহোক এভাবে পরিবারে অনেক দুঃখ কষ্ট করে বড় হয়েছি আমরা তিন ভাইবোনই সঙ্গে আমার বাবা-মা। নানা বাড়ির আত্ময় স্বজন মোটামুটি সচ্ছল হউয়ায় অনেক সহযোগীতা পেয়েছি, তাদের পক্ষ থেকে। আমার নানা একজন সরকারি চাকুরীজীবী ছিলেন। তিনি আমাদের জন্য অনেক কিছুই করেছেন। আল্লাহ আমার নানা-দাদাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুক।
এরপর হাই স্কুল জীবনে পদার্পণ করি আমি। আমার মায়ের খুব ইচ্ছা ছিল আমি যেন এসএসসিতে এ প্লাস নিয়ে পাস করি। ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসতাম আমার সাথে সাথে আমার মাও উঠে শীতের মধ্যে বসে থাকতো। খুব চেষ্টা করেছি মায়ের স্বপ্নটাকে পূরণ করার জন্য। যেদিন এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট হয়, আমার খালাতো ভাই যখন মোবাইল করে বলল যে আমি এ প্লাস পেয়েছি। আমার মা এতটাই খুশি হয়েছিল যে, সে আনন্দে কান্না করে ফেলেছিল এবং আমার কপালে চুমু খাচ্ছিল। লাখ লাখ শুকরিয়া আল্লাহতালার কাছে যে আমার এবং আমার মায়ের স্বপ্নটাকে পূরণ করেছিল। সেদিন আমি এতোটা খুশি ছিলাম যে সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। মায়ের ইচ্ছা ছিল আমাকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াবে এবং আমারও ইচ্ছা ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বো। এরপরে আমি পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ চান্স পাই। সেখানেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। সেখানে আমি ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশুনা করতে থাকি। বাসা থেকে এই প্রথম বাহিরে গিয়েছি। নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে একটু কষ্ট হচ্ছিল। এরপর বিভিন্ন জেলার বন্ধুদের সাথে পরিচয় হই। সবার সাথে সব মিলিয়ে দিনগুল ভালই কাটছিল। হঠাৎ করে একদিন জানতে পারি যে আমাদের পড়াশোনার খরচ এবং সংসার খরচ চালাতে গিয়ে আমার বাবা মা অনেক টাকা পয়সা ঋণ হয়ে গেছে। যার পরিমাণ সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না। আর আমাদের পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটবে জন্য, তারা কখনো আমাদের সাথে বিষয়টা শেয়ার করে নাই। নানান চিন্তা ভাবনায় পড়ে যাই আমরা সবাই। আমার মধ্যে অনেক টেনশন হচ্ছিল তখন। মনে হচ্ছিল জীবনটা কি এখানেই থেমে যায় কিনা? তখন ভেবে দেখলাম পরিবারের উপর আর কোনো চাপ দেয়া যাবে না, নিজেকে কিছু একটা করতে হবে। এরপরে আমিও অনেক কাজ খোজা শুরু করি। পাবনায় কিছু স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থাকায় টিউশনি পাওয়াটা আমার মতো একজন ডিপ্লোমা পড়া ছাত্রের জন্য অনেক কঠিন ছিল। কোথাও কোন টিউশনি না পেয়ে আমি বিভিন্ন কাজ খোজা শুরু করি। কোথাও কোনো কাজ পাচ্ছিলাম না। আমাদের বাসার পাশের এক কাকা, পাবনা বড় বাজারে তার মুদিখানার দোকান ছিল। তার কাছে গিয়ে আমি বৃত্তান্ত সব কিছু খুলে বলি এবং তার কাছে কোন একটা কাজের ব্যবস্থা করার কথা বলি। তিনি অনেক চেষ্টা করেন। অবশেষে এক মুদি দোকানের কর্মচারী হিসেবে থাকতে পারবো, প্রতিদিন সকাল আটটার আগে আসতে হবে এবং রাত নয়টার পরে যেতে হবে। মাসে সে আমাকে 5000 টাকা বেতন দিবে। তখন চিন্তা করে দেখলাম আমি যদি এই কাজটা শুরু করি তাহলে আমার পড়াশোনা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে। এরপরে কোন ব্যবস্থা না পেয়ে আমি আবার বাসায় চলে যাই। আমাদের এলাকাটা একটি বাণিজ্যিক এলাকা। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য শ্রমিকের কর্মস্থল নগরবাড়ি ঘাটে। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম যে ঘাটে সারের বস্তা ভরতে যাব। আমার বাসার কিছুটা ফাঁকে এক কাকা কাজের তদারকি করতেন। তাকে গিয়ে বললাম আমি কাজ করব আমাকে আগামীকাল আপনার সঙ্গে নিয়ে যাবেন। পরের দিন তিনি আমাকে তার সঙ্গে নিয়ে যান। জীবনে কোনদিন 10 কেজি বাজার নিয়ে বাসায় যাইনি আর সেই আমি গিয়েছি জাহাজে সার ভরতে। জাহাজের ভিতর অনেক গভীর মাথার উপরে খারা সূর্যের প্রখর তাপ, ভিতরে একটুও বাতাস ঢুকে না। বলতে গেলে এক ধরনের আজাবের মধ্যে কাজ করা। কি আর করার জীবিকার তাগিদে সে কাজটাও করার অভিজ্ঞতা আছে। কাজ করতে করতে দুপুর দুইটার দিকে আমি মাথা ঘুরিয়ে জাহাজের মধ্যে পড়ে যাই, সবাই ধরে উপরে নিয়ে আসে, জাহাজে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে, মোট্মুটি সুস্থ হলে আমি বাসায় চলে আসি। সেদিন আমার পারিশ্রমিক দিয়েছিল 250 টাকা। এরপর পরের দিন আবার যায় সেই কাজটাই করতে। সেদিন আবহাওয়াটা কিছুটা ভালো থাকায় সবার সাথে অনেক কষ্টে পুরো দিনটাই কাজ করি এবং আমার পারিশ্রমিক দেয় 450 টাকা। সেখানে যারা কাজ করে সবার মন মানসিকতা একরকম ছিল না। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ না করতে পারায় অনেকে অনেক ধরনের কথা বলতো। এরপর সেই কাকা বলল এখানে আর আমার নাকি কাজ করা সম্ভব না। তবে সেদিন মনে হয়েছিল দুনিয়ায় যদি কোন হালাল রোজগার থাকে তাহলে এদের রোজগারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এরপর এখানে আর কাজ করার সুযোগ হলো না। চলে গেলাম আবার পাবনাতে। সেখানে আমার কিছু বন্ধু বান্ধব নিয়ে আবার বিভিন্ন কাজ খোজা শুরু করলাম। কোনোভাবেই এমন কোন কাজ পাচ্ছিলাম না, যে কাজ করার পাশাপাশি আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। কোন কাজ না পেয়ে অবশেষে পাবনার স্থানীয় আমার এক বন্ধুকে বলি কোন একটা অটো অথবা রিক্সার ব্যবস্থা করে দিতে যেগুলো ভাড়ায় চলে। ও প্রথমে রাজি হয়নি যে আমি এই কাজ করব। অনেক অনুরোধ করার পরে, ও খোঁজ নিয়ে আমাকে জানায় যে, আমি এখানকার স্থানীয় না এবং আমার কোন সিকিউরিটি নেই যার কারণে আমার কাছে তারা ভাড়ায় অটো অথবা রিকশা দিতে পারবে না। কোন কাজকে তখনই ছোট মনে করিনি। কিন্তু কিছুতেই কোন কাজের সন্ধান মিলাইতে পারতেছিলাম না। কাছে টাকা নেই মাথায় নানান টেনশন নিয়ে কত রাত যে না খেয়ে কাটিয়েছি সেটা পাবনার ছাত্রাবাসের শফিক ভাই খুব ভালোভাবে জানে। ক্ষুদার যে একটা যন্ত্রনা সেটা আমি হাড়েহাড়ে বুঝতে পেরেছি সেই সময়টাতে। প্রতিদিন দুপুরে মিল চালাইতাম, রাতে একটা পা-রুটি খেয়ে ঘুমাতাম এবং পরেরদিন দুপুরে আবার মিল চালাইতাম। যে কথাগুলো এখনও আমার পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনের কেউই জানেনা। আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আমার এই কঠিন বিপদের সময় গুলোতে সব সময় পাশে থেকেছে Sohanur Sayham নামের আমার এক বন্ধু। যার কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ হয়ে থাকব। প্রতিটা বিপদের সময় আমি তাকে পাশে পেয়েছি। আমার মনে সাহস জুগিয়েছে। বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছে।
যাই হোক এরপর আমি বিভিন্ন মানুষের কাছে যাই কাজ খোঁজার জন্য । হয়তো কোনো কাজ কেই ছোট করে দেখতাম না জন্যই, আল্লাহতালা আমার জন্য সম্মানিত কাজই কপালে জুটিয়ে ছিলেন। এর কিছু দিন পর আমি নেদারল্যান্ড এয়ারলাইন্সের একটি এনজিওতে ইয়ত অর্গানাইজার হিসাবে পার্টটাইম কাজ করার সুযোগ পাযই। কিছুদিন পর আমি দুইটা টিউশনি পাই, আমার ডিপার্টমেন্টেরই দুইটা ছোট ভাই। তাদেরকে আমি ম্যাথমেটিক্যাল সাবজেক্ট গুলো পরাইতাম। আর্থিক সমস্যার কারণে তারাও কিছুদিন পরে পড়া ছেড়ে দেয়। এর পর আমার এক বন্ধু Rahul Hafiz ফ্রিল্যান্সিং করত এবং পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং শেখাত। আমার এক বন্ধুর কাছে আমার কথা শুনে ও আমাকে ফোন করে, আমার সবকিছু শোনে। সে আমাকে বলে একটা ল্যাপটপ এর ব্যবস্থা করতে। কিন্তু তখন আমার কাছে কোন টাকা পয়সা কিছুই নেই। তখন চিন্তা করলাম কষ্ট যেহেতু করতেছি, জীবনে আরও একটা রিস্ক নিয়েই নেই। বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে টাকা ধার করা শুরু করলাম। কাছের কিছু আত্মীয় স্বজনের কাছে টাকা চেয়েছিলাম ধার হিসাবে। তাদের কাছে টাকা থাকা সত্বেও দরিদ্র বলে কোনোদিন ফেরত দিতে পারব কিনা এই ভয়ে আমাকে কোনো টাকা ধার দেয় না। আরো নানান অজুহাত শুনিয়ে দিয়েছিল আমাকে। এরপর কাছের কিছু বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ধার করে আমি 20500 টাকা দিয়ে একটি পুরাতন ল্যাপটপ কিনি। তখন যারা আমাকে সাহায্য করেছিল আমি কোনদিনও তাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারব না, সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব তাদের প্রতি। এরপরে আমার বন্ধুর কাছে কাজ শেখা শুরু করি। কিছুদিন কাজ শেখার পর ওর সেই সাইট বন্ধ হয়ে যায় এবং আমি প্রায় 18 হাজার টাকার মতো ধরা খাই। আমার সেই বন্ধু আমার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছে এবং বিভিন্ন ভাবে আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে, সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকবো তার কাছে। এরপরে আমার পরিচয় হয় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের Imran Ahmed ভাইয়ের সাথে। তিনিও ফ্রিল্যান্সিং করতেন। ভাইকে আমার সমস্যা গুলোর কথা বৃত্তান্ত বলি। এরপর ভাই আমাকে আশ্বস্ত করে কাজের ব্যাপারে। তখন ভাইয়ের হাতে একটি কাজ ছিল সেটি করার জন্য এক্সট্রা কিবোর্ড এর প্রয়োজন ছিল। ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করল তোমার কি আলাদা কি বোর্ড আছে? আমি বললাম না ভাই নেই। ভাই তখন আমাকে অগ্রিম 500 টাকা দিয়ে বলল যাওয়ার সময় একটি কিবোর্ড কিনে নিয়ে বাসায় যেয়ে কাজগুলো করো। সেদিন ভাইয়ের বিশ্বাস দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম। যার সাথে পূর্বে কোন পরিচয় নেই, সেই দিনই ছিল প্রথম দেখা, কাজটা আদৌ আমি সম্পুর্ন করতে পারব কিনা জানিনা। অথচ তিনি আমাকে বিশ্বাস করে অগ্রিম টাকা দিয়ে দিলেন এবং আমাকে এটাও বললেন তুমি কাজ করলে তোমাকে তো টাকা দিতেই হবে। তো তুমি টাকা নিয়ে যাও, যেয়ে কাজ শুরু করো। এরপর ভাইয়ের সাথে দীর্ঘদিন কাজ করার সুযোগ হয়েছে আমার এবং আলহামদুলিল্লাহ এখনো ভাইয়ের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। ভাইয়ের সাথে যতোদিন কাজ করেছি, প্রতিটা সময় ভাই আমাকে অনুপ্রেরনিত করত। ভাই এতো সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলত যে, সব সময় মনে হতো ভাইয়ের কথাগুলোই শুনি। সত্যি বলতে আমার এই একুশ বছরের জীবনে ইমরান ভাইয়ের মতো কোন মানুষ আমি দেখিনি। যদি একজন আদর্শ মানুষের উদাহরণ দেয়া যায় তবে আমার মনে হয় তিনি একটি উত্তম উদাহরণ। তার গুন, আচার-ব্যবহার, কথা বার্তা সবকিছু মিলিয়ে একটি অসাধারণ ব্যক্তিত্বের মানুষ তিনি। আমার জীবনের প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গুলো আমি ভাইয়ের সাথে আলোচনা করেই নেই। আজ পর্যন্ত তার কাছ থেকে আমি কোন ভুল সিদ্ধান্ত পাই নাই। এরপর ইমরান ভাইয়ের সাথে কাজ করে নিজের খরচ এবং বন্ধুদের থেকে যে টাকাগুলো নিয়েছিলাম সেগুলো আস্তে আস্তে পরিশোধ করা শুরু করি। এভাবেই শত দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল পাবনায় কাটানো জীবন।
এরপর পাবনায় ডিপ্লোমা পড়া শেষ হলে, ঢাকায় চলে আসতে হয় ইন্টার্নি করতে এবং এখানে সাব্বির ভাই নামের এক বড় ভাইয়ের কাছে ইন্টার্নির পাশাপাশি গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর কাজ শেখা শুরু করি। গ্রাফিক্সের কাজ ছিল একটু সময় সাপেক্ষ। সারা রাত জেগে কাজ করে ভোরে মাত্র 2 ঘন্টা ঘুমিয়ে সকাল সাতটায় আবার চলে গিয়েছি ইন্টার্নি করতে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ছিল ফার্মগেটে। 20 টাকা বাঁচানোর জন্য প্রতিদিন রামপুরা থেকে ফার্মগেট হেঁটে আসতাম আবার হেঁটে যেতাম। দুপুর দুইটার সময় বাসায় গিয়ে গোসল খাওয়া-দাওয়া করে আবার কাজে বসতাম, ধারাবাহিকভাবে সারাদিন রাত জেগে কাজ করে প্রতিদিনের ন্যায় আবার সকালে ইন্টার্নি করতে যেতাম। এভাবেই চলতেছিল সময়টা অনেক কষ্টের মধ্যে। এরপরে দীর্ঘ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে আস্তে আস্তে গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপর ফ্রিল্যান্সিং জীবন শুরু করি। কিছুদিন পর থেকে ইনকাম শুরু হয়, আলহামদুলিল্লাহ। দিন দিন ইনকামের পরিমাণটাও কিছুটা বাড়তে থাকে, কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। এভাবে যখন একটি প্রোজেক্ট কমপ্লিট করতাম টাকাগুলো রিলিজ হওয়ার পরে ঘুমোনোর আগে চিন্তা করতাম, একটা সময় এই টাকার জন্য কত রাত না খেয়ে ঘুমিয়েছি ক্ষুধার যন্ত্রণা নিয়ে। ভাবতে ভাবতে মনের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ত। আসলে সব কিছুই আল্লাহ তাআলার ধৈর্যের পরীক্ষা। আল্লাহ সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করুন। (আমিন) এভাবেই নিজের খরচ পাশাপাশি পড়াশোনার খরচ এবং যতটুকু সম্ভব পরিবারের জন্য খরচ করে থাকি, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া অনেক ঋণই আমরা পরিশোধ করে ফেলেছি। এখনো কিছু টাকা ঋণ আছি। সকলেই দোয়া করবেন প্রত্যেকের হকের টাকা গুলো যেন সঠিক ভাবে বুঝিয়ে দিতে পারি। জীবনের প্রতিকূল মুহূর্তগুলোকে পার করে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে পারি।
বর্তমানে আমি গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর ফ্রিল্যান্সিং করতেছি এবং শেখাচ্ছি। পাশাপাশি কিছু ফ্যাশন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছি। আমার পেজের নাম All Arranged, সবাই পেজটি কে লাইক ফলো করে পাশে থাকবেন।
জীবনের লক্ষ্য পড়াশোনা শেষ করে, একটি আর্কিটেকচারাল ফার্ম প্রতিষ্ঠা করা্র ইচ্ছা আছে। সকলেই আমার জন্য দোয়া করবেন আমার স্বপ্নটাকে যেন আল্লাহ বাস্তবায়ন করার তৌফিক দান করেন এবং দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করার তৌফিক দান করেন।
এই প্ল্যাটফরমে এসে অনেক ভালমানুষের সাথে পরিচত হয়েছি। অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। প্ল্যাটফরমের প্রতিটা মানুষ অসাধারণ বাক্তিত্ত সম্পূর্ণ। সৎ, ন্যায়পরায়ণ, সহযোগীমনোভাবপূর্ণ। অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা স্যার এর জন্য যে আমাদের এতো সুন্দর একটা প্ল্যাটফরম আমাদের উপহার দিয়েছেন। সব শেষে স্যারের জন্য অনেক অনেক দোয়া ও ভালোবাসা যেন তিনি আমাদের মাঝে যুগ যুগ বেচে থাকেন। স্যার এর একটি কথা °স্বপ্ন দেখুন, সাহস করু্ শুরু করুন, লেগে থাকুন °
সফলতা আসবেই ইন্নশাল্লাহ।❤️
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে - ৬৫৫
২৫/১০/২০২১
মোঃ মাহমুদুল হাসান মিতুল।
গ্রুপঃ নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন
ব্যাচঃ১২
রেজিষ্ট্রেশন নংঃ৪৫৩৫৯
মোবাইলঃ ০১৬২৪৬১২৯৪১
জেলাঃপাবনা
বর্তমানঃ সাভার,ঢাকা।
ব্লাড গ্রুপঃ ও(+)
>>আমার ব্যাবসায়িক পেজঃ- https://www.facebook.com/allarrangedbd