হতাশা আমায় গ্রাস করে নিচ্ছে।
আসসালামু আলাইকুম।
নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনের গর্বিত সদস্যরা সবসময় পজিটিভ থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু জীবনে নানা পরিস্থিতি আছে কষ্ট সামলিয়ে উঠতে অনেক কষ্ট হয়।
আলহামদুলিল্লাহ। আমি মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আমাকে সৃষ্টি করার জন্য আমি কোটি কোটি শুকরিয়া আদায় করছি আমার সৃষ্টিকর্তার প্রতি।
আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শুরু করছি আজকে লিখা।
আজ আমি আমার জীবনের ব্যর্থতার গল্প লিখতে বসেছি। ব্যর্থতার গল্প লিখতেও অনেক সাহস লাগে। এই প্লাটফর্ম এ এসে তাই লিখতে পারছি নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা।
আমি প্রথম ব্যর্থ হয়েছি আমার স্কুলজীবনে। খুব ভালো না হলেও মোটামুটি ভাল স্টুডেন্ট ছিলাম। যখন ক্লাস নাইন উঠব তখন ফ্যামিলির সবাই বলতে শুরু করল আমাকে আর্টস বা কমার্স নিয়ে পড়তে। কিন্তু আমি সায়েন্স নিয়ে পড়বই এটাই আমার একমাত্র জিদ। বাবার আর্থিক অবস্থার কথা চিন্তা করে করে সবাই বলাবলি করল যে সায়েন্স এ পড়লে তিন চার জায়গায় কোচিং করতে হয়, অনেক খরচ ইত্যাদি তবুও আমার এক কথা পড়লে সায়েন্স নিয়েই পড়ব।
নাইনে রোল ছিল ০৬। মোটামুটি স্যারদের প্রিয় একটা স্টুডেন্ট ছিলাম। ভালো রেজাল্ট করে স্কুলে স্যারদের কাছে পড়ে মোটামুটি ভালো নাম্বার পেয়ে আমি টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। এবং কোচিং বলতে দুইটা স্যারের কাছেই পড়তাম। একজনের কাছে ইংরেজি। আরেক জনের কাছে গণিত আর সায়েন্স সাবজেক্ট গুলো।
আমার ফাইনাল পরীক্ষার আগে আব্বু চেয়েছিলেন কোচিং এ দিতে কিন্তু আমি রাজি হই নি। মেধাবী ছিলাম কিনা জানিনা তবে কখনও রাত জেগে পড়তে হতো না। যাইহোক ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হল।সবচেয়ে খারাপ পরীক্ষা হল বায়োলজি। এবং সবচেয়ে ভালো পরীক্ষা হল ফিজিক্স। কি বলব কি কপাল আমার, আমার বাবা মিষ্টি কিনার টাকাও জমিয়ে রেখেছেন। কিন্তু পরীক্ষায় আমি বায়োলজিতে এ + পেলেও ফিজিক্সে পেয়েছি এ-। তাই টোটাল ৪.৮ পেয়েও খুব কেঁদেছি। বাবা আমাকে দেখে খুব ভয় পেয়েছে, তাড়াতাড়ি আমার এক কাজিনকে ফোন দিয়ে বলে বাসায় আসতে, আমাকে বুজানোর জন্য। কিন্তু পরে বাবার চাপা কষ্টে সিদ্ধান্ত নিল আমাকে আর পড়াবেনা। আমি খুব ভেঙে পড়ি। আমি নিজেই কলেজের ফরম আনি। সেবার পয়েন্ট এর মাধ্যমে কলেজে ভর্তি নেয় হয় এবং কোন ভালো কলেজে আসিনি। যদিও গ্রুপ চেঞ্জ করে ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া যেত তবুও আমি গ্রুপ চেঞ্জ করিনি।
অবশেষে আমি চট্টগ্রামে আগ্রাবাদ মহিলা কলেজে ভর্তি হই। বাসা থেকে অনেক দূরে। বাসে করে আসা যাওয়া হত। জোয়ারের পানি উঠলে শুকনোর দিনেও কলেজে আশপাশে পানি উঠত। খুব হতাশায় কোন রকম কোন কোচিং ছাড়া আমি ফাস্ট কমপ্লিট করি। আসলে এসএসসির রেজাল্ট আমাকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করে আর আমি সেটা কাটাতে পারিনি। আমার কোন ভাই বোনও নিয়ে কারো সাথে শেয়ার করব তার মধ্যে মা ছিল মানুসিক অসুস্থ। তারপর টেস্ট পরীক্ষার আগে আমার বিয়ে হয় একদমই হঠাৎ করে পারিবারিক ভাবে।
আমার বিয়ের পর আমি টেস্ট পরীক্ষা দিই। আমাদের ইন্টার ফাইনাল পরীক্ষা ছিল অবরোধ এর বছর।এইদিকে আমি কনসিভ করি। হাসবেন্ড এর অনুপ্রেরণায় আমি ইন্টার পরীক্ষা দিলাম। আমার হাসবেন্ড ছিল প্রবাসী। সে বলে এত বছর কষ্ট করেছ সামন্য কয়দিন আরও কষ্ট করে পরীক্ষা দাও। তবে পরীক্ষার হলে এত সময় বসে থাকায় আমার অনেক প্রবলেম হত। এবং অনেক কমন থাকলে ও ফুল আনসার করতে খুব কষ্ট হত। আমার উচ্চতর গণিত প্র্যাকটিকালের দিন আমি তো তেমন কিছুই লিখতে পারিনি। সেটা অপশনাল ছিল বলে পাস করেছি। এবং এবার কোন কোচিং না করে পাস করেছি। পরীক্ষার এক মাস পর আমার বড় মেয়ে হয়। তখন আমার মা প্রচুর অসুস্থ ছিল। ও আমি কিন্তু বিয়ের পরও আমার বাবা মায়ের কাছেই ছিলাম, যেহেতু হাসবেন্ড বিদেশে ছিল। তখন মা এর মানসিক রোগ খুব বেড়ে যায়। এবং আমি যে কি কষ্টে দিনাতিপাত করেছি এক আল্লাহই জানে। শেয়ার করব তো কার সাথে। এদিকে বেবীর কেয়ারিং ও জানতাম না। এবং নানান মানুষ নানা কুসংস্কার এর কথা বলে। আমার মনে আছে তিন মাস আমি আমার রুমের জানালা ও খুলতাম না। ঘুমাতাম না জেগে থাকতাম তাও জানিনা। আর মা এর রোগ বেড়েছে ওনাকেও কিভাবে সমলাব।এত চিন্তা এত খারাপ লাগা।
এরই ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা দিই। কিন্তু মেয়ের চিন্তায় সব গুলো MCQ তে টিক মার্ক দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আসি কারণ এসে বাচ্চার কি কান্না দেখে খুব খারাপ লাগে।
এবার গ্রুপ চেঞ্জ করি এবং এবার চট্টগ্রাম সিটি কলেজে ডিগ্রীতে ভর্তি হই। কিন্তু আর পারিনি কন্টিনিউ করতে মা, বাচ্চা, সংসার সামলাতে ব্যস্ত আমি ছেড়ে দিলাম সব। খুব মিস করি ভাবি মা সুস্থ থাকলে হয়তো পড়াশোনা আরও করতে পারতাম। আর ভাবি প্রতিটা কলেজে যদি আমার মত ইয়ার গ্যাপ দেওয়া মানুষদের আরেকটু সুযোগ দিত।
তবে আফসোস তখন ইকবাল বাহার স্যারের মত একজন
মেন্টরের খুব দরকার ছিল।
তারপর বিবাহিত জীবনের নানা চরাই উৎরাই পেরিয়ে দ্বিতীয় বার মা হবার পর রিয়েলাইজ করলাম কিছু করতে হবে। আমি তখন সেলাই প্রশিক্ষণ নেই। কিন্তুু মেশিন কিনার ১০ দিনের মাথায় আমার ছোট মেয়ে অসুস্থ হয়ে যায়,তাকে হসপিটালাইজড হতে হয়। আমি আর আমার বাবা মা হসপিটালে সাথে বড় মেয়ে যার বয়স ৬বছর। যেদিন হসপিটাল থেকে আসি সেদিন আমার বড় মেয়ের খুব জ্বর সাথে আমারও। দুইদিন আবার ও বড় মেয়ে কে নিয়ে হসপিটালে। কিন্তু এবার সাথে যোগ দিল মায়ের অসুখ। তখন বড় মেয়ের ব্লাড ইনফেকশন দেখা গেল আর আমার টাইফয়েড।
হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরে আমি আবার সেলাই শিখি।
কিন্ত এরপর লকডাউন। হতাশা আমায় গ্রাস করে নিচ্ছে। লকডাউন পর তেমন কিছু আর করা হয়নি। খুব ভিডও দ
দেখতাম, মোটিভেশনাল একদিন স্যারের ভিডিও দেখি এবং খুঁজে বের করি এই গ্রুপ তখন ১১ ব্যাচ চলে কিছুই বুজিনি। ১২ ব্যাচে রেজিষ্ট্রেশন করি।কিন্তু জেলা মেসেঞ্জার এড হইনি। তখন আমাদের প্রিয় Sagar Banik ভাই কে নক করি বইয়ের জন্য। ভাইয়ের মাধ্যমে আমি তখন চট্টগ্রাম জেলা মেসেঞ্জার এ যুক্ত হই। তখন চট্টগ্রামে ছিলাম।
এবং এই সময় টাতে আমার হাসবেন্ড দেশে আসে। করোনায় তার বিদেশে অবস্থান এত ভালো ছিল না। আর আমিও অনেকটা জিদ করেই তাকে দেশে থাকতে বলি। বললাম একসাথে থাকব যা হবার হোক।
চলে আসলাম লক্ষ্মীপুর। আমার শ্বশুর বাড়ির এদিকে একটা বাসা ভাড়া করেই থাকি। বাবা মা থেকে আলাদা। এই খানে আসলে আমি কিছুই চিনিনা। আমি মার্চের শেষের দিকে কিছুই থ্রি পিস নিয়ে কাজ শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ ভালই সেল হয়েছিল । কিন্তু আবার লকডাউন আসার কারণে আমাদের লক্ষ্মীপুর এর রায়পুর উপজেলায় ভাল কুরিয়ার না থাকায় অনেক বিপাকে পড়েছি। আমি চেয়েছিলাম নারিকেল নিয়ে কাজ করতে, অনেক ভালো রেন্সপন্স পেয়েও আমি লকডাউন এর কারণে আমি ঠিকমত বাহির হতে পারিনি। কারণ বাচ্চাদের সাথে নিয়েই বের হতে হবে।
এর মাঝে একটা কোম্পানিতে চাকরির অফার করে। ভাবছি হয়তো ভাল কিছু হবে কিন্তু ফেক একটা এমএলএম কোম্পানি ছিল। যদিও আর্থিক কোন ক্ষতি হয়নি কিন্তু আমি আমার হাসবেন্ড এর সাপোর্ট টুকুও হারাই।তারপরও চেয়েছিলাম আমার অনলাইনে কার্যক্রম চালানোর পরবর্তীতে
লকডাউন শেষ হলে আমার এমন জ্বর হয় যে খুব দূর্বল হয়ে যাই।
এইতো কয়েক লাইনে লেখা আমার ব্যর্থতার গল্প কিন্তু অনেক কঠিন সময়ের গল্প।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে - ৬৫৪
২৪/১০/২০২১
খদিজা আক্তার
ব্যাচ ১২
রেজিষ্ট্রেশন নং৪৮৯০৪
নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনের গর্বিত সদস্য ও
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
রায়পুর লক্ষ্মীপুর।