যে বার বার পরবে সে জিতবে --- স্যারের সেশন ৩৬ থেকে আমি অনেক আশাবাদী
আসসালামু আলাইকুম
যে বার বার পরবে সে জিতবে --- স্যারের সেশন ৩৬ থেকে আমি অনেক আশাবাদী। হয়তো আমিও জিতবে।
🔹আজকে আমি আমার বার বার পরাটা তুলে ধরেছি । হয়তো একদিন সফলতার গল্প লিখবো।ইনশাআল্লাহ
আমি সোনিয়া বেগম। আমার গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ। আমার জন্ম হয়েছে ঢাকায়। আমরা পুরান ঢাকার লালবাগের বাসিন্দা।তাই আমি লালবাগ জোনে জয়েন হয়েছি।
আমার বাবা চাকুরীজীবি ছিলেন। আমার বাবা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন।আমার মা তেমন পড়াশোনা না করলেও তার পড়াশোনার প্রতি অনেক আগ্রহ ছিলো।তাই তার শত কষ্টেও আমাদেরকে পড়াশোনা করিয়েছেন।
আমার বাবার স্বপ্ন ছিলো আমি উচ্চপদস্থ চাকরি করবো।
আমারও খুব ইচ্ছে ছিলো যে,আমি সরকারি কোন বড় ধরনের জব করবো বা কোনো ব্যাংকে জব করবো।
এই তো গেলো স্বপ্ন দেখার কথা এবার আসি মূল কথায়। এবার শুরু হলো স্বপ্ন পূরণ করার জন্য বাস্তব যুদ্ধ
স্যারের কথায় আসি,স্বপ্ন দেখুন,লেগে থাকুন।ধন্যবাদ স্যারকে।প্রতিটি কথাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আমার বাবা মা আমাদেরকে দুই ভাইবোনকে কষ্ট কি জিনিষ কখনো বুঝতে দেই নি।আল্লাহর রহমতে সব পেয়েছি।
ভালো স্কুল থেকে পড়াশোনা করিয়েছে। আমি আজিমপুর গার্লস স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছি।আমাদের সময় অনেক সনামধন্য স্কুল। স্কুলেও ভালো রেজাল্ট করি এস এস সি তে।
কলেজ পড়েছি বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে।এইচ এস সি তে ও ভালো রেজাল্ট আসছে আল্লাহর রহমতে।
তারপর ইডেনে যখন ভর্তি তখন আমি সমাজবিজ্ঞানে অনার্স এ।
ভর্তি হওয়ার পর আমার প্রিয় দাদা আমার বিয়ে ঠিক করে।তখন আমি খুব একটু হতাশ হয়ে পরি।মনে হয় পড়াশোনা হবে না।
আমার শ্বশুড় বাড়ি খুব ভালো তারা আমার পড়াশোনা কোনো রকম বাধা তো দেয়নি বরং সাহায্য করেছে।এজন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
অনার্স প্রথম বর্ষে র ফাইনাল পরীক্ষায় আমি প্রেগনেন্ট হই।আমার মেয়ে যখন হসপিটালে তখন আমার রেজাল্ট আসে ফার্স্ট ক্লাস।
মেয়েকে নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেলাম।সব থেকে বেশি সাহায্য করছে আমার দুই মা।আমার নিজের মা আর আমার শ্বাশুড়ি মা।
আমার মা আমাকে সব সময় সব কাজে সাহায্য করছে।আমার শ্বাশুড়ি মার ও স্বপ্ন যোগ হলো আমার স্বপ্নের সাথে। সে সব সময় বলতো তুমি একটা ভালো চাকরি পাইতা আমি দেখতাম।
আমার প্রতিটা পরীক্ষায় আমার জন্য দোয়াও করতো।
অনার্স থার্ড ইয়ার এ এসে আমার হাসবেন্ড অসুস্থ হয়ে পরেছিলো। তাকে হসপিটালে এডমিট রাখতে হয়।তখন আমার ফাইনাল পরীক্ষা। মানসিক আর শারীরিক চাপে আমার অনার্সে সেকেন্ড ক্লাস আসে।তাও হাল ছাড়ি নি
মাস্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষার আগে আমার ছেলে হলো।কিন্তু এমন অসুস্থ হলো ডাক্তার তাকে বাঁচানোর আশা ছেড়ে দিয়েছিলো।তখন আল্লাহর রহমতে আসার ছেলে দীর্ঘ ১ মাস হসপিটালে থাকার পর ঘরে ফিরে আসে।তখন আমাদের বড় একটা টাকার ধাক্কা যায়। প্রাইভেট হসপিটাল গুলো খুবই ব্যায়বহুল।
২মাস পর আমার মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা হয়।এখন আল্লাহর রহমতে ফার্স্ট ক্লাস আসে।
তারপর জবের চিন্তা করি।আর আমার ডাচ বাংলা ব্যংকে জব প্রায় হয়েগিয়েছিলো।ছেলের কথা চিন্তা করে আর চাকরি করা হলো না।
একদিন চিন্তা প্রাইভেট জব করলে বেশি সময় দিতে হয়।তাহলে স্কুলে জব করি।বিভিন্ন মানুষের কাছে যোগাযোগ করতে থাকি।কেউ কোনো প্রকার সাহায্য করে না।আমার এক বোন এমপিও ভুক্ত স্কুলে চাকরি পায়।তাকে গিয়ে বললাম কিভাবে কি করা যায়,সেও কিছু বললো না।তার ভাই হটাৎ বলে ফেললো, ওতো বি,এড করেছে তারপর চাকরি পেয়েছে।
বিএড এ ভর্তি হলাম তাও প্রাইভেটে যেহেতু সংসার ও দেখতে হবে।তারপরেও ফার্স্ট ক্লাস আসে।
এর মধ্যে আমার হাসবেন্ড বিজনেসে বিশাল বড় লস হয়।যার বেগ আমাদের এখনও পেতে হচ্ছে। আমাদের অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেয় ধীরে ধীরে।
আমি বিভিন্ন রকম জব খুজতে থাকি।ইন্টারভিউ দেই।আমার শ্বাশুড়ি না ফেরার দেশে চলে যায়।সেই বছরই আমার স্কুলে জব টি হয়।আমাকে সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
আর একটি কথা বলা হলো না, আমি ক্লাস নাইন থেকে টিউশনি করি বাসায়।
আমার বাসার ব্যাচ আরও ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো ইনকাম করতে থাকি।
একদিন আমার খুব কাছের মানুষ বললো,ওই স্কুলে টিচার দরকার তাই তোমাকে নিয়েছে।শুনে মনে অনেক কষ্ট হলো।কাছের মানুষ খুশি হবে তা না সে হিংসা করছে।তারপর কঠোর পরিশ্রমের পর প্রিন্সিপালের পদ পাই
একদিন আমার হাসবেন্ড ব্র্যান স্ট্রোক করলো।তখন স্কুল আর সংসারের পাশাপাশি আমার হাসবেন্ডের প্রতিও এক্সট্রা কেয়ার নিতে হতো।আল্লাহর রহমতে কয়েক মাস পর ও সুস্থ হতে থাকে।কিন্তু আগের মত পরিশ্রম করতে পারে না।
২০১৭ সালে আমার ডেঙ্গু হলো অনেক দিন হসপিটালে থাকার পর বাসায় আসলাম।কিন্তু চাকরিতে জয়েন করলাম না।শরীর সাপোর্ট দিচ্ছিলো না।তার মধ্যে প্রাইভেট চাকরি যারা করেন তারানতো জানেন কি রক ম সমস্যায় পড়তে হয়।তাই আর মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম না।
যদিও সেই প্রতিষ্ঠান টা আমার ভালো লাগার জায়গা।ছাড়তে অনেক কষ্ট হয়।এখনও আমি সেখানে যাই।
কিছুদিন যাওয়ার পর দেখি আমি এতদিন কি পেলাম,কি করলাম,কিসের পিছনে দৌড়ালাম বুঝতে পারলাম না।
বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিতাম, ঘরে বাচ্চাদের সময় দিতাম কোনটাই আমার ভালো লাগত না।
একদিন ফেসবুকে এড আসে বিউটিফিকেশন কোর্সের। তখন সেখানে তিন মাস কাজ করি।সরকারি ভাবে শিখেছি।তারপর আমাদের সাথে আরেক আপু মিলে বিউটিপার্লার দিলাম।কিন্তু করোনার মধ্যে সব শেষ হয়ে গেলো।আর করা হলো না।
ভাবতে শুরু করলাম,কি যে করবো।একদিন আমি আমাদের এক পরিচিত জনের সাথে দেখা হয়।সে আমাকে বললো অনলাইনে কিছু কর। অনেকে বললো কাপড় বিক্রি করবা?
এতো পড়াশোনা কর কি লাভ?জামাইর কামাইতে হয় না? ইনকাম কমে গেসে??আরও কত কিছু।
আমি আমার জীবনটাকে এভাবে দেখতে চাই না।হয়তোবা আল্লাহর এটাই ইচ্ছে ছিলো।যাই হোক আমার শ্বশুর বাড়ির সবাই বিজনেস করে। তারা আমাকে সাপোর্ট করে। ভাসুরের দোকান থেকে থ্রিপিস,হাসবেন্ডের দোকান থেকে টিসার্ট,ভাইগ্নার দোকান থেকে টাইস এভাবে ৩৫,০০০/- টাকা নিয়ে বিজনেস শুরু করি।অফলাইনে ভালোই সারা পেয়েছি।
আমি পেজে এখনও বুস্ট করিনি। আমার পেজে যা আছে বন্ধুবান্ধবদের নেটওয়ার্ক থেকে হয়েছে।
এখন সফলতার আশায় আছি।আল্লাহ চাইলে স্যার আর আপনাদের সহযোগিতায় নিজের একটা সফল হওয়ার গল্প লিখতে পারবো ইনশাআল্লাহ
আমার পেজের নামঃDia ladies fashion bd
এতোক্ষণ ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন দয়া করে।জানি না কতটা ভালো লিখেছি।
ধন্যবাদ ইকবাল বাহার স্যারকে।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে - ৬৬০
৩১/১০/২০২১
আমি সোনিয়া বেগম
স্থায়ী ঠিকানা ঃ মুন্সিগঞ্জ
বর্তমান ঠিকানা ঢাকা লালবাগ জোনে
ব্যাচঃ১৪
রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার ঃ ৬৬৫০৭