এক অনাবিল শান্তির মাঝে একা একা বাবা আমার পাাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে......
" বাবা এক অটল আস্থার নাম"
বাবা যেভাবে বাড়িটা বানান কেউই তা বানায় না..... …
হ্যাঁ এটি একটি বিজ্ঞাপনের কথা,জানিনা এর নির্মাতা কে?আমি শ্রদ্ধা জানাতে চাই সে ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে যিনি বিজ্ঞাপন টি তৈরি করেছেন।
কারণ মাত্র দুটি লাইনের মাধ্যমে বাবাদের প্রকৃত প্রতিচ্ছবিই যেনো ফুটিয়ে তুলেছেন এখানে!
বাবাদের সম্পর্কে এক গভীর অনুভূতির প্রকাশ সহ,অনেকখানিই যেনো বলা হয়ে গেছে।
বাবার মত করে সন্তানদের জন্য আর কেই বা ভাবেন? বলতে পারেন?
এ দুটি লাইন নিয়ে যদি বিশ্লেষণ করতে বলা হয়,তা অনেক দীর্ঘ লিখনিতে শেষ হবেনা।
"বাবা"
ছোট্ট একটি শব্দ!কিন্তু এর গভীরতা বুঝানো কিংবা বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের সাধারণ লিখনিতে প্রকাশ সত্যি অসম্ভব!
তবু বাবা শব্দটার সাথে যেহেতু অস্তিত্বের বন্ধন আত্মার যোগাযোগ তাই একটু বলার দুঃসাহস!
❤️জন্মের মাধ্যমে এ পৃথিবীর আলো দেখার জন্য, বাতাস উপভোগের জন্য,অক্সিজেন গ্রহনের জন্য ঋনী আমি আমার বাবার কাছে।
❤️ঋনী প্রথম অ,আ,ক,খ হাতে খড়ির জন্য।
❤️ঋনী আমাদেরকে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে আমাদের অন্ন বস্ত্রসহ যাবতীয় প্রয়োজন মিটিয়ে বড় করে তোলার জন্য।
ঋনী আমাদেরকে নিজের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, রক্ত পানি করা পরিশ্রম দিয়ে পড়ালিখা করে মানুষ করার জন্য।
তপ্ত শ্বাস, ছূয়েছে আকাশ!
মাটি ভিজে গেছে ঘামে...
জীবনের প্রতিটি রাত্রিকে তিনি
কিনেছেন অল্পদামে..... 😞😞😞
হ্যাঁ বাবা আমাদের জন্য এমন অক্লান্ত আর ঘাম ঝারানো শ্রম দিয়ে ছয় ভাইবোনকে শিক্ষিত করেছেন, মানুষ করছেন।
আসলে সেই দিন গুলিকে বড় বেশি মিস করি সারাদিনের পরিশ্রম শেষে কর্মক্লান্ত শরীরেও আমাদের পাশে থেকে পড়াশোনার দায়িত্বটি সঠিকভাবেই পালন করেছেন।
এমন কি বিশ্রাম কালীন সময়েও বাবা আমাদের ভুলক্রটি গুলি ধরিয়ে দিতেন আরবি,বাংলা,ইংরেজী সব বিষয়ে।
অথচ আমার আব্বার বড় কোন ডিগ্রি ছিলোনা কিন্তু অনেক জ্ঞানী,বুদ্ধিমান ও দূরদর্শি ছিলেন।
ছোট কালে বড় বেশি আশ্চর্য হতাম দুরে থেকে না দেখে কিভাবে আব্বা আমাদের ভুল ধরিয়ে দিচ্ছেন?
এখন সন্তানদের ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার সময় বড় বেশি মিস করি প্রিয় বাবা কে।
বাবার দীর্ঘ সংগ্রামের জীবনে বাবাকে দেখেছি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের জীবনকে পরিচালিত করতে। হার না মানা এক সংগ্রামী মানুষ । তাঁর জীবনের ঘটনা দূর্ঘটনা গুলো এক এটি সিমেমার কাহিনীকে হার মানায়!
শৈশবে পিতৃহারা হয়ে এতিম হয়ে যান। এতিম হয়ে জায়গা জমি রক্ষার্থে দাদু যখন দিশেহারা! সদ্য বিধবা অল্প বয়স্ক মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আমার বালক বাবা। সম্পদ রক্ষর্থে আস্তে আস্তে শিখতে থাকলেন দলিল পত্রসহ যাবতীয় কার্যক্রম!
এক সময় অত্যন্ত দক্ষ করে তুলেন নিজকে উদ্ধার করেন নিজের সম্পদ।নিজের বিধবা মাকে দেখাশুনা আর সংসারে বেখেয়ালী বড় ভাইয়ের পড়াশুনার দায়িত্ব!
নিজের পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে
হিমিসম অবস্থা।পড়াশুনার ফাঁকে নিজের জমিজমা চাষ করে ফসল ফলানোর এবং এর দ্বারা সংসারের চালানোর মত কঠিন দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন।
বাবার কাছ থেকে জীবনে অনেক কিছু শিখেছি।জীবন চলার পথে প্রতিটি বাঁকে বাঁকে বাবার শিক্ষা, নির্দেশনা গুলো আজ পথচলার নিত্য সঙ্গী।
আমাদের ঘরটা বেশী বড় ছিলো না তাই আমাদের পড়াশুনায় যাতে ব্যঘাত না হয় সে জন্য পড়ার ঘর আলাদা করে দিয়েছিলেন।
ঘরে মেহমান আসলে বা আশে পাশের লোকজনের পড়ার ঘরে যাওয়ার অনুমতি পেতোনা।কেউ ওখানে গেলে কথা বলবে আমাদের পড়াশুনার ডিসটার্ব হবে।
যদিও কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল ছিলো আমার বাবার সংসার। কিন্তু এক কাপ চা বানানোর মত ছোট কাজও করতে দিতেন না আমার বাবা।এমন কি কখনও একটা প্লেট ধুতে দেখলেও আম্মাকে বকা দিতেন।
জানিনা আমার কৃষক বাবা পড়াশোনার গুরুত্ব কিভাবে বুঝেছিলেন?
কিভাবে ছেলে এবং মেয়েকে সমান তালে পড়াশুনা করানোর চিন্তা করেছিলেন?
ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদেরকে ও ৮/১০ মাইল দূরবর্তী ফেনী জেলা শহরের কলেজে পড়ানোর মত সাহস করেছিলেন?
অনেক শিক্ষিত মানুষকে দেখেছি ছেলে মেয়েতে বিভেদ করতে পড়াশুনা করাতে অনিহা প্রকাশ করতে!
এমন কি আমাদের বোনদেরকে সরকারি বিধি লংঘন করে অল্প বয়সে বিয়েও দেন নি, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগে।
স্কুল কলেজ জীবনে পত্রমিতালী করতাম বাড়ির ঠিকানায় কত চিঠি আসতো বাবা কখনও কিছু বলতো না। খুলে দেখতো নঅ এমন কি আমি না থাকলেও চিঠিগুলো জমে থাকতো বাবার লোহার সিন্দুকটার উপর।
আমাদের মানুষ করতে গিয়ে অনেক সোনালী হাতছানি পদদলিত করে মাটির মানুষ মাঠ, ঘাট আর কৃষি কাজ নিয়ে পড়েছিলেন।পাসপোর্ট করেও বিদেশ যাওয়া ক্যানসেল করেছিলেন।
ঢাকার মিরপুরে দোকান নিয়েছিলেন১৯৮৯ সালে তখন আমার বড় ভাই ফাস্ট ইয়ারে আর মোঝো ভাই ssc পরিক্ষার্থী।
কি মনে করে দোকান ছেড়ে দিয়ে বাড়ি চলে আসেন। বলেন আমি বাড়ি না থাকলে ছেলে মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাবে মানুষ হবে না।
আলহামদুলিল্লাহ বাবার আশা পূরণ হয়েছে।আমরা কেউই অমানুষ হইনি।আমরা ছয় ভাইবোন অনেক বড় কোন পরিচয় তৈরী করতে পারিনি সত্য, তবে মানুষ হয়েছি এটা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবো।
৯০ দশকে স্বাধিন ভাবে ঘুরেফিরে হেসে খেলে লিখাপাড়া করে বেড়ে উঠা আমরা বিপথে কখনই যাইনি।এ দিক থেকে আমার বাবা একজন সফল বাবা।
বাবা আমাদের ছয় ভাইবোনকে এমন ভাবে গড়ে তুলেছেন কারো একটা পাতা ছিঁড়ে আনার শিক্ষা জীবনে দেন নি।
তিন ভাইকে পছন্দমত বিয়ে করিয়েছেন।তিন জনই ঘর করেছেন সুন্দর করে। তিনজনই কর্মজীবন, সংসার সন্তান নিয়ে স্বস্ব অবস্থানে অনেক বেশি ভালো আছেন।
আমাদের তিন বোনকেও বাবার পছন্দ মতই বিয়ে দিয়েছেন।যদিও আমার প্রিয় বড় বোনটি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন অনেক বছর আগে😪😪😪
বাবা একটা কিছু শুরু করতে গেলে আম্মার সাথে আলাপ করতেন, আম্মা না সূচক কিছু বলতে গেলে বিরক্ত হতেন, রাগ করতেন।বাবা বলতেন কোন কিছুর শুরুতে না বলা কুলক্ষণ!
তখন নেগেটিভিটি শব্দটার সাথে পরিচিত ছিলাম না পজেটিভ চিন্তা কি তাও জানতাম না।এখন জানি আমার বাবা একজন পজেটিভ মানুষ ছিলেন।
আমার বাবা বিজনেস ম্যান ছিলেন না কিন্তু আমি যখন উদ্যোগ শুরু করি বাবা বলেছিলেন । ব্যাবসার বিক্রিতে লাভ করবে না লাভ করতে হয় কিনতে।
বাবা কখনও সেলাই কাজ করেন নি কিন্তু ৯৬ সালে মেশিন কিনে যখন নতুন
নতুন সেলাই করতে বসতাম সূতা লাগাতে পারতাম না,সূতা জড়িয়ে যেতো ছিঁড়ে যেতো, সেলাই উল্টা পাল্টা হতো। বাবা সে কাজ গুলো নিখুঁত ভাবে আমাদের দু বোনকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন।
বাবাকে দেখেছি জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতে কিভাবে ধৈর্য ধারন করতে হয়।
বাবাকে দেখেছি কিভাবে নিজেরটা নিয়ে নিজে সন্তুষ্ট থাকতে হয়? বাবাকে জীবনে কখনও কারো কাছ থেকে টাকা ধার নিতে দেখিনি এমন কি সংসারে প্রয়োজনীয় জিনিস গুলোর যোগান ঠিক রাখতেন ফলে আম্মাকে ও কখনও কোন কিছু ধার নিতে হয় নি।
নিজের সীমিত সাধ্যের মধ্যে সব কিছুূ ঠিক ভাবে পরিচালনা করতেন সুশৃঙ্খল
ভাবে।
২০০৬ সালে বাবার ক্যান্সার ধরা পড়ে আল্লাহর অশেষ রহমতে বাবা অদ্ভুত জীবনী শক্তি দিয়ে ক্যান্সারকে জয় করে সুস্থ হয়ে উঠেন।
২০১৯ সালের শেষের দিকে বাবা বার্ধক্যজনিত কারণে আস্তে আস্তে অসু্স্থ হতে থাকেন।
২০ সালের করোনা মহামারী কঠোর লকডাউন শার্ট ডাউন চলছিলো অনেক দিন বাবাকে দেখতে যাই না কিন্তু আমার মনের চোখে প্রতিনিয়ত বাবাকে দেখছি,স্পষ্ট দেখি বিছানায় শষ্যশায়ী বাবাকে!খুব মনে পড়তো বিদায় বেলায় বাবার হাতটি ধরে কান্নার দৃশ্যটি😪😪😪
২০ সালের একুশ রমজান রান্নার জোগার চলছে, খবর আসলো বাবার শরীর খারাপ! মূহুর্তেই সিদ্ধান্ত আর দেরী না এখনি যাবো।
প্রথমে একা যাওয়ার চিন্তা থাকলেও পরে সবাইকে নিয়ে চলে গেলাম। অন্য
বোনটিকে খবর দিলাম,ভাই -ভাবী ছেলে-মেয়েদের নিয়ে হাজির!
একঘন্টার ব্যাবধানে শুধু বড় ভাই (
প্রবাসে) বড় বোন ছাড়া সবাই হাজির!
তাড়াহুড়োর মধ্যেও গাছের আম আর কমলা নিয়ে গিয়েছিলাম।খেতে পারবেনঅ জেনেও রস করে দিলাম। একটা আমার রস ও একটা কমলার রস খেলো।
ভাই- ভাবীরা,নাতি- নাতনীরা,মেয়ে -জামইরা সবাই কোরআন তেলাওয়াত করছে,,,,,,,
আমার একটি হাত আব্বার বুকের উপর,,,,
অনেক্ষণ পর আবার নিঃশ্বাস ফিরে এলো......
আবার নিঃশ্বাস......
না আর ফিরে এলো না........
প্রিয় সব মানুষ গুলোর ভালোবাসার মাঝে
পৃথিবীর সকল মায়া ত্যাগ করে সকল বন্ধন ছিন্ন করে, সকল ভালোবাসা নিষ্ফল করে,সব প্রিয় মানুষ গুলেকে রেখে....এক অনাবিল শান্তির মাঝে একা একা বাবা আমার পাাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে........😪😪ইন্নলিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন.......
বাবা তুমি ভালো থেকো অনেক অনেক ভালো থেকেো😪😪
পৃথিবীকে আমাদের বাসযোগ্য করে যেতে নিজের সব সুখ বিসর্জন দিয়েছিলে!
সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।আল্লাহ আমার বাবার জীবনের সমস্ত গুনাগুলো মাফ করে দিয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন।আমিন।।।
🌷🌷অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি,যার কল্যানে আমার বুকের ভেতর জমে থাকা কষ্ট গুলো প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছি🌷🌷
স্টাটাস অফ দি ডেঃ৬৫৮
তারিখঃ২৯-১০-২১
নাছিমা ভূইয়া
একজন কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন
ব্যাচঃ১৫
রেজিষ্ট্রেশন নংঃ৭৩২৭২
জেলাও উপজেলা ঃফেনী
আমার উদ্যোগের নাম "নীলপদ্ম "
কাজ করছি 🎀বাচ্চাদের পোষাক, 🎀শাড়ী,🎀থ্রিপিস 🎀বেড়শিট🎀এবং ঢাকার ঐতিহ্য বাহী খাবার বাকরখানি নিয়ে।