নিজের ধৈর্য স্যারের দোয়া থাকলে হয়তো একদিন সফলতার দরজায় পৌঁছে যাবো
🙏🙏লেখার শুরুতে ধন্যবাদ জানাই আমার পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তা রাধা মাধবকে।যার অসীম দয়ায় আমি পৃথিবীর আলো উপভোগ করতে পারছি। ঈশ্বর সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করে আমাকে এবং আমার পরিবারের সবাইকে সুস্থ এবং সুশৃংখল জীবন দান করেছেন।
🙏🙏 ঈশ্বরের পরে বাস্তব জীবনের ঈশ্বর আমার বাবা-মা। যাদের বিনম্র শ্রদ্ধা ও প্রণাম না জানালে আমার জীবনের সব শুরুতেই ভুল হয়ে যাবে। তাদের ঋণ শোধ করার ধৈর্য শক্তি যেন ঈশ্বর আমাকে দান করেন।
🙏🙏শ্রদ্ধা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি প্রিয় মেন্টর মহান শিক্ষক, সমাজের নিবেদিতপ্রাণ, বর্তমান প্রজন্মের জীবন্ত কিংবদন্তী, লাখো তরুণ-তরুণীর সুন্দর ও উজ্জ্বল পথের দিশারী ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি।
🌿☘️নিজের জীবনের গল্প ________লিখার চেষ্টা করছি কিন্তু চেষ্টা করলে কি হবে আমার জীবন নিয়ে তো বলার মত একটা গল্প গড়ে তুলতে পারেনি। তবে বাস্তব জীবনের আংশিক কিছু ঘটনা শুধুমাত্র শেয়ার করার চেষ্টা করছি।,আপনাদের যদি পড়তে বিরক্ত লাগে তবে আমাকে কিঞ্চিৎ ভালোবেসে চোখ বুলাবেন।
🌿☘আমার শৈশবকাল কেটেছে আমাদের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলায়। খুব আদরে যত্নে আহ্লাদে আমার ঠাকুমা, কাকা,পিসি আমাকে মানুষ করেছে।
🌿☘️যখন বড় হলাম তখন ঢাকার সকুলে ভর্তিহলাম। বরাবর ভালো রেজাল্ট করতাম।
🌿☘️ও বলা হয়নি আমরা তিন বোন এক ভাই।আমার বাবার বিভিন্ন ধরনের ফ্যাক্টরি ছিল। সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা যেভাবে মানুষ হয় সেভাবে বড় হয়েছে। অভাব, হিসেবে করে চলা এসব কখনো বুঝতাম না।
🌿☘️এমনি করে দিন -মাস-বছর পার হয়ে যায়।আমি যখন ইন্টারমিডিয়েট পাশ করি, তখন বাবা আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়, কথা হয় পড়াশোনা করাবে, চাকরি করতে দিবে।শ্বশুরবাড়ির সবাই চাকরিজীবী সুশিক্ষিত, তাই কোন সমস্যা হয়নি।
🌿☘️ভালই কাটছিল জীবন, অনার্স পড়া অবস্থায় বড় সন্তান পৃথিবীতে আসলো। দুই পরিবার ই আনন্দে আত্মহারা।
🌿☘️আমাদের একটা পুজোতে আমি বাবার বাড়ি বেড়াতে আসি।একদিন কাকডাকা ভোরে আমার বাবা ব্যবসার কাজে বাইরে চলে যায়। ঠিক ঘন্টাখানেক পরে বাসায় খবর আসে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা না ফেরার দেশে চলে গিয়েছে আমাদের অসহায় এতিম করে।শোনার সাথে সাথে মনে হচ্ছিল হে ঈশ্বর তুমি কেন আমাকে নিলে না। কি যে হৃদয় বিদারক একটা মুহূর্ত ছিল তা বোঝানো যাবে না। যার আপন যায় সেই বুঝে আপন হারানোর বেদনা।
যেহেতু বাবার মৃত্যু ছিল দুর্ঘটনায় তাই আমরা কেউ জানতাম না টাকা পয়সা কোথায় কি আছে। ভাই তখন ক্লাস সেভেন এর ছাত্র।বাবার ব্যবসা দেখার মত কেউ ছিলনা।বানের জলে ভেসে গেলো কোটি কোটি টাকা।
🌿☘️
আমার স্বামী নিজের ভবিষ্যত উন্নতির জন্য ছোট চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করত। তার আয় এতো সামান্য ছিল যে আমাদের সংসার চালালে পড়াশোনা হবে না। খুব সমস্যায় পড়ে গেলাম। চারদিকে অন্ধকার বাবার অভাব খুব মিস করছিলাম।
🌿☘️
কথায় আছে অভাগি যেদিকে যায় সাগর শুকিয়ে যায়। একটা স্কুলে জয়েন করলাম।কাজের মেয়ের কাছে ছেলেটাকে রেখে যেতাম। ছেলেটা শুধু অসুস্থ হয়ে পড়তো। বুঝতে পারতাম না কেন। একদিন ফেরার পথে বাসার বাইরে থেকে ছেলের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে দৌড়ে এসে ছেলেকে কোলে নিয়ে কাজের মেয়েটাকে বলি খাবার রেডি করতে। তখন ছেলেকে চালবাটা দুধে জাল করে খাওয়াতাম। খাবার মুখে দেওয়ার সাথে সাথে সে কি চিৎকার! ছেলে আমার কেন কাঁদে কেন কাঁদে বলতে বলতে খাবার মুখে দিয়ে দেখি এত ঝাল আমারি চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।
কারণ কাজের মেয়ে চাল বেঁটেছে মরিচের পাটায়। কত নিষ্ঠুর! এতোটুকু দুধের বাচ্চার প্রতিও মায়া দয়া নেই। সেই দিনের কষ্টের কথা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মনে থাকবে। ছেলের জন্য স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম।
🌿☘️
কয়েক বছর পর একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি হলো। শ্বশুরকে বললাম আপনারা আমাদের কাছে চলে আসেন উনি বললেন বাড়ি ছাড়া কোথাও গিয়ে থাকতে পারবেন না।
# # সকল বোনদের প্রতি আমার অনুরোধ যদি নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ইচ্ছা থাকে তবে আগে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুন। তারপর আরেকটা প্রাণ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করবেন। পারিবারিক সাপোর্ট না থাকলে দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা যায় না।
🌿☘️
বড় ছেলের সাত বছর পরে ছোট ছেলে পৃথিবীতে আসলো। স্বামী নিজের কাজ নিয়ে এতব্যস্ত হয়ে পড়ল যে সংসার খেয়াল রাখার তার সময় নেই। ২টা বাচ্চা পড়াতাম তাও ঠিক ভাবে যেতে পারতাম না।
~~আমি কে? আমার নিজস্ব পরিচয় দেবার মত পথগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।নিজেকে খুব অসহায় লাগতো।
🌹🌹
তারপর আরেকটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম --নিজের জীবন শেষ, সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করব। কতটুকু পেরেছি জানি না তবে ছেলেরা থানা,জেলা, জাতীয়, আন্তঃজাতীক সব পর্যায় থেকে ১ম/২য়/৩য় পুরস্কার নিয়ে আসে। অনেকেই আমাকে বলে রত্নগর্ভা মা। আমি বলি না, যেইদিন বাবা মায়ের পাশাপাশি সমাজের সাধারণ মানুষের সেবা করবে মন থেকে সেদিন নিজেকে গর্বিত মা মনে করব।
🌿☘️🌱
আমার উদ্যোক্তা জীবনের স্বপ্ন ~~~~~~
কোন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শেখার সুযোগ ছিল না।বাচ্চারা যখন ছোট তখন থেকে বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ শেখা এবং করার চেস্টাকরতাম। একটু একটু কর ব্লক, বাটিক, হ্যান্ড পেইন্টের কাজ শিখে ফেললাম। তৈরি করা শুরু করলাম নিজের কাপড় এবং বাসার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনরা দেখে খুশি হয়। ধীরে ধীরে বানানো কাপড় গুলো পড়ে বাইরে যাওয়া শুরু করলাম। ভাবীরা জিজ্ঞেস করে," কোথা থেকে কিনেছেন?" বলতাম," আমি নিজে তৈরী করি।" " বাহ! সুন্দর তো আমাকে একটা বানিয়ে দিবেন? " অবশ্যই দিব। " "দাম কত? " "আপনাদের কাছ থেকে বেশী আর কি নেব। "ওরে একজন-দুজন ভাবি ক্রেতা হতে হতে অনেকের সাথে পরিচয় হয়ে গেল।
## প্রচারেই প্রসার ঘটে।
অফলাইনে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। আমার স্বপ্ন উদ্যোক্তা হয়ে অনেক দূরে যাওয়া।
হঠাৎ একদিন ইউটিউবে দেখি কোচিং সেন্টারে ইংরেজি শেখায় একটি ছেলে স্যারের সাথে কথা বলছে।দেখে ভালো লাগলো। সাবস্ক্রাইব করলাম, সেশন পাঠ শুরু করলাম। সেশন পড়তে পড়তে একদিন গ্রুপে ঢুকে পড়লাম। এক ভাইয়াকে লিখলাম আমি রেজিষ্ট্রেশন করতে চাই। ভাইয়া আমাকে রেজিষ্ট্রেশন করিয়ে দিল।লাইক,কমেন্ট করতে থাকলাম। কিন্তু গ্রুপের কোন নিয়ম, কিভাবে কি করতে হবে তাজানতে পারছিলাম না। কোন একদিন ইসমত হাসান ভাই স্বর্গীয় দূত হয়ে আমাকে বলল আপনি তো একটিভ থাকেন গ্রুপে কাজ করবেন। হ্যা সূচক উত্তরে শুরু হলো নতুন যাত্রা।প্রতিদিন সেশন চর্চা, পোস্ট লেখা, লাইক, কমেন্ট করার মধ্য দিয়ে লেগে আছি গ্রুপে।
🙏🙏
আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই ইসমাত হাসান ভাইকে। উনি আমাকে উৎসাহিত না করলে সেশন, হাটবার,এমনকি একটা গ্রুপে কিভাবে লেগে তাও জানতে পারতাম না।
একদিন সেশনে পড়লাম স্যার বলছে ইউনিক কিছু নিয়ে কাজ করতে। ডাক্তার বান্ধবীদের পরামর্শে অর্গানিক তেল নিয়ে কাজ শুরু করি নতুন করে।
অনেকে আমাকে চেনে না,বুড়ি মহিলার সাথে কে বন্ধু তো করে।তবে করবে, আমি নিশ্চিত 🙏ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের উক্তিটি সবসময় মনে ধারণ করে চলছি -স্বপ্ন দেখুন
সাহস করুন
লেগে থাকুন
সফলতা আসবেই।
নিজের ধৈর্য স্যারের দোয়া থাকলে হয়তো একদিন সফলতার দরজায় পৌঁছে যাবো।আমার ভালো মানুষের পরিবারের ভাই-বোনদের দোয়া আমাকে দিক নির্দেশনা দিবে। এই গ্রুপে যুক্ত হয়ে আমি কতো কিছুই যে পেয়েছি তা বলে বুঝানো যাবে না। সেশন পড়া,জড়োতা কাটা,পোস্ট লেখা আর কত কি।
আমার মতো সামান্য নারীর গল্প লেখার সাহস যুগিয়েছে আমাদের 🙏ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার তার কাছে কৃতজ্ঞ এবং বিনম্র শ্রদ্ধা।
🌿☘️
আমার লেখার অভ্যাস নেই।আমার মনের অজান্তে যে ভুলগুলো আপনাদের চোখের সামনে ভেসে উঠবে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।
🌼🌸
আমি রিতা পোদ্দার শরীয়তপুরের মেয়ে,কাজ করছি মেয়েদের শাড়ি,সালোয়ার কামিজ ও অর্গানিক তেল নিয়ে। আমার পেইজের নাম কারু নিলয়। পেইজে ঘুরে এসে সাথে থাকবেন।
পেইজ লিংক : https://www.facebook.com/podderrita
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে - ৬৫৯
৩০/১০/২০২১
👉রিতা পোদ্দার
👉ব্যাচ ১৩
👉রেজি ৬১৬৫৩
👉জেলা শরীয়তপুরের
👉বর্তমান অবস্থান ঢাকা