১৫ তম ব্যাচ থেকে আমার শিক্ষার্জন
আসসামুআলাইকুম
আজ ১৫ তম ব্যাচ শেষ করলাম। আসলে কি শিখেছি বলতে পারবো না। কি শিখিনি তাও পারবোনা বলতে।
এই ফাউন্ডেশনের আগে যুক্ত ছিলাম অনেক গ্রুপে কিন্তু শান্তি পাচ্ছিলাম না। কিছু শিখতে চাই কিছু করতে চাই কিন্তু মন ভরছিলো না।
মহান আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া এমন একটা নেয়ামত সরুপ এতো সুন্দর জীবন দিয়েছেন। দিয়েছেন জীবনে বেচে থাকার জন্য এতো এতো নিয়ামত দিয়ে ডুবিয়েে রেখেছেন শোকর আলহামদুলিল্লাহ
কৃতজ্ঞতা জানাই #নিজের_বলার_মত_একটা_গল্প ফাউন্ডেশনের মেন্টর জনাব Iqbal Bahar Zahid Sirকে যিনি আমাদের কে এতো সুন্দর প্ল্যাটফর্ম আমাদের কে দিয়েছেন যেখানে প্রতিনিয়ত নিজেকে ভালোমানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত।।
আমার বিয়ের বয়স ১৭ হলো। বেশ তো আল্লাহর রহমতে ভালো আছি সুখে আছি।
বিয়ে হয় ২০০৪ এ ফেব্রুয়ারিতে। বিয়ের ৩ বছর আগে শশুর মারা যান। তাই শশুরকে দেখিনি। আমার শশুর দুটো বিয়ে করেন। বড় মা মারা যাওয়ার পর আমার বর্তমান শাশুড়ী কে বিয়ে করেন। ওদিকে শাশুড়ীরও দুই বিয়ে আগের সংসারে স্বামী মারা যাওয়াতে শশুরের সাথে বিয়ে হয়।
দুজনের তিন সংসার ভাই বোন মিলে নজন কেউ বিশ্বাস করবে না এই ন জন ভাই বোনের সম্পর্ক অনেক মধুর অনেক চমৎকার।। শাশুড়ীর বড় মেয়ে আমার বড় ননাস দুটো কিডনি নষ্ট হয়ে মারা যান।। আপা অসুস্থ অবস্থায় আমার বাসায় থাকতেন আমার কাছে থাকতে আপার খুব ভালো লাগতো। আপা আর কোথাও যেতে চাইতেন না। আপা প্রায়ই বলতেন তোরে কষ্ট দিচ্ছি আমি মরে গেলে তোর কষ্ট কমে যাবে।। আপা টানা দুমাস আমার বাসায় এর মাঝে আপা বাড়ী যাবে আপার বাড়ী যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি যেতেই হবে। আপা বাড়ী গেলেন শরীর আবার খারাপ হলো। দুলাভাই আর তার মেয়ে সহ এম্বুলেন্স নিয়ে ফেনী থেকে
চট্টগ্রাম মেডিকেল রাস্তায় আপা দুলাভাই আর মেয়ের সাথে কথা বলছেন। এরপর চোখ বন্ধ সবাই ভাবলো হয়তো ঘুমাচ্ছেন। মেডিকেল পৌছে ডাক্তার চেকআপ করে বললেন আপা আর নেই। দুলাভাইর পায়ের নিচে মাটি সরে গেলো।।
দুলাভাই কোনো ভাবে আমার বরকে ফোন দিলেন। ফোন পেয়ে আমরা আর অপেক্ষা না করে চলে যাই মেডিকেল।
১লা রমজানে আপা চলে গেলেন তারাবিহ পড়ে আপাকে দাফন করা হলো। দুলাভাই দিশেহারা ৪ সন্তান কে নিয়ে। তিন ছেলে এক মেয়ে। মেয়েটা মাত্র ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়েছে আর ছোট ছেলে টা মাত্র ক্লাস টু তে।।
দুলাভাই কাউকে কিছু বলেন না কারও সাথে তেমন যোগাযোগ ও করেন না একাকি জীবন বেছে নিলেন।
দুলাভাই কাপ্তাই ফরেষ্ট এ তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী। দুলাভাইর গ্রামে ঘর করার জন্য পরে আবার আপার অসুস্থতার জন্য ভাইয়া লোন নিয়েছেন। সব মিলিয়ে ভাইয়া এলোমেলো
এরমাঝে ননাসের মেয়ের বিয়ের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনেক জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসে কিন্তু মেয়ের মা নেই এই দোষ দিয়ে আর কেউ আগায় না।।।
অবশেষে মেয়ের ছোট মামা আমার বর তার অফিস কলিগের ছোট ভাইর জন্য প্রস্তাব দেয়। ১ লা বৈশাখ ফেনী ৪/৫ জন আসেন আমার বাসায় মেয়ে দেখতে।। আলহামদুলিল্লাহ ছেলে মেয়েকে দেখে পছন্দ করে।।
সাল ২০০৯ তখন হাতে বাটন মোবাইল। ছেলে প্রায় ফোন দেয় এদিকে মেয়েও কথা বলে। আমি প্রায়ই মোবাইলের রিচার্জের কার্ড কিনে রাখতাম। মা হারা মেয়ে যেনো কোনো ভাবে নিজেকে অসহায় না মনে করে।।
আমার ভাগনী আর আমি প্রায়ই সমবয়সী তাই সবকিছু শেয়ার করতো। আমি মনখুলে কথা বলি।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো আমাদের টেনশন বেড়ে গেলো।। কি হবে পারবো তো সব ঠিকঠাক করতে??
দুলাভাইর এককথা আমি কিছু জানিনা। সব আমার কাধে আর আমার বড় জা।
আলহামদুলিল্লাহ সবাইকে সাথে নিয়ে সব অনুষ্ঠান সুনিপুণ ভাবে শেষ করলাম।।
সেই মেয়ে আজ স্বামীর সাথে ওমান থাকে দুছেলে নিয়ে সুখের সংসার।।
ভাগনীকে বিয়ে দেয়ার দু বছর পর দুলাভাইর শরীর খারাপ করছে বার বার এরমাঝে বড় ছেলে টা ২৬ বছর চলাফেরা এলোমেলো, ছোট দু ছেলে নিয়মিত স্কুলে যায়না। এদিকে দুলাভাই রান্না আর অফিস নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এরমাঝে আমি ফোন দিয়ে দুলাভাইর খোজ নিচ্ছি তখন দুলাভাইর কষ্টের কথা বললেন তখন আমি নিজ থেকে দুলাভাইকে বিয়ের কথা বললাম দুলাভাই আমাকে বললেন কেউ বুঝেনি তুমিও বুজলানা বোন আমার কষ্ট। আমার সংসার তো আর চলেনা। আপা মারা গেছেন তখন ৫ বছর পার হয়ে গেছে।
আমার বর অফিস থেকে আসবার পর বললাম সব খুলে। সে আমার আম্মুকে বললো আমরা গ্রামে খোজ নিলাম।
ঠিক ১৫ দিনের মাথায় এক আপুর খোজ পেলাম যিনি এক বাচ্চা সহ ডিভোর্স নিয়েছেন। আম্মু,আব্বু তখন বগুড়া থাকতেন।
আল্লাহর হুকুমে ১ মাসের মধ্যে সব রেডি করলাম। দুলাভাইর কাছে টাকা নেই একজনের থেকে ১০ হাজার
টাকা ধার নিয়ে বগুড়া গেলাম বিয়ের জন্য ২ টা শাড়ী আর টুকটাক কসমেটিক কিনে বাকি টাকা দুলাভাইর হাতে দিলাম।।
দুলাভাই তিনদিন ছিলেন বিয়ে করে বউ নিয়ে আবার চিটাগং ফেরত এলেন।
দুলাভাই আর আপা আজও দেখা হলে বুকে জড়িয়ে নেন দোয়া করেন।। দুলাভাই কেবল আপাকে বিয়ে করেন নি আপুর ছেলেকেও মেনে নেন। আলহামদুলিল্লাহ আপা দুলাভাই অনেক সুখে আছেন শান্তিতে আছেন।।
মৃত্যু আমার বড় ননাস কে কেড়ে নিলেও দুলাভাইর মতো ভালোমানুষের সাথে সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। দুলাভাই আমাকে কতোটা স্নেহ করেন সেটা না বললে নয়।।
ননাসের বড় ছেলে বিয়ে করেছে তার দুই ছেলেময়ে,মেঝোজন ওমান আছে আর ছোট ছেলেটা অনার্স শেষ করে জব করছে।
আমি বা আমার স্বামী সবসময় এই পরিবারের সাথে থাকতে চেয়েছি।।
মানবিক গুনগুলো আমাদের সবার মাঝে আছে কেউ বিকশিত করতে পারি কেউ করতে পারিনা।
একটা মানুষকে আরেকটা মানুষ বয়ে নিয়ে চলতে পারেনা। প্রয়োজন হয় একটু সাপোর্টের। ফাউন্ডেশনের কাছে আজ এটাই শিখছি।
নিজেকে ভালো গুনগুলোকে আরও বিকশিত করবো নিজের ভিতরের দোষগুলোকে দূর করবো। ভালোমানুষের চর্চা করবো।
এসব কিছু ফাউন্ডেশন আমাদের শিখাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।।
কৃতজ্ঞতা এই ফাউন্ডেশন কে নিজের পাশাপাশি সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাবো প্রতিনিয়ত।
স্টাটাস অফ দি ডেঃ৬৫৯
তারিখঃ৩০-১০-২১
Ferdous Ara Yeasmin
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার, ২৪/৭ লাইভ সাপোর্ট টিমের সদস্য
জেলাঃফেনী, থানাঃ সোনাগাজি
বর্তমান অবস্থানঃ চট্টগ্রাম
ব্যাচঃ১৪,রেজিষ্ট্রেশনঃ৬৪৬৯০
Ferdous's Closet