জীবনের উত্থানপতন
_----------- বিসমিল্লাহহির রহমানির রহিম --------
_--------আসসালামু আলাইকুম --
💢💢সকলকে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
🤲🤲🤲সর্ব প্রথম শুকরিয়া আদায় করছি মহান আল্লাহর যিনি আমাদের সৃষ্টির সেরা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।আমার জন্য হালাল খাবার রিজিকে রেখেছেন। সুস্থ রেখেছেন।
বিশ্বে যেখানে মহামারি চলছে,লাশের মিছিল । সেখানে আমার দেশ অনেক ভালো পজিশনে আছে। তার জন্য আমরা সবাই শুকরিয়া আদায় করছি কারন এ আল্লাহর রহমত,করুনা।
🤲🤲🤲আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (স)প্রতি দূরূদ পাঠ করি যার ওছিলায় আমরা এ পৃথিবীতে এসেছি।
🤲🤲🤲আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই আমার শ্রদ্ধেয় স্যারকে যার জন্য আমার মত পথহারা,দিশেহারা অসহায় তরুণ তরুণী রা একটি সুস্থ প্লাটফর্ম পেয়েছি। যিনি বিনামূল্যে আমাদের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সাহস দিচ্ছেন, অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন। এতেও তিনি ক্ষান্ত হননি। বিজয়ী যোদ্ধাদের নিয়ে লাইভ করে যাচ্ছেন যেন আমরা হাল ছেড়ে না দেই।
তিনি যেন বার বার আমাদের মাঝে ফিরে আসেন।
👉👉আজ আমি আমার জীবনের অনেক সুখ ও, কিছু পাওয়া না পাওয়া,হাসি খেলা আপনাদের সবার মাঝে শেয়ার করব।বলব আমার ছোট জীবনের গল্প।
💢💢💢আমার ছোট বেলা💢💢💢
সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন আমার বাবা।তাই অনেক মানুষের সাথে মেলামেশা এবং বেড়ানো হয়েছে আমার।
প্রচন্ড রকমের জেদি ছিলাম আমি।যা চাইতাম তাই দিতে হতো আমাকে। ঠিক তেমনি ভালো ছিলাম পড়ালেখা ও খেলায়। কত যে প্রাইজ পেয়েছি আমি।চ্যাম্পিয়ানও হয়েছি।তাই বাবা মা ও টিচারদের আদরটাও পেতাম অনায়াসে। ফ্রেন্ডের অভাব ছিল না আমার।সবাই আমাকে আদর করত।আত্মীয় থেকে শুরু করে বাবার অফিসের আংকেলরা ও আমাকে আদর করত।
যখন যে স্কুল ভালো লাগতো সেই স্কুলেই আমি ভর্তি হতাম।আল্লাহ আমার সহায় ছিলেন। খুব সুখের দিন কাটিয়েছি আমি।
💢💢নিজেকে গুটিয়ে ফেলা💢💢
বাবার চাকরি শেষে আমরা সবাই গ্রামে চলে আসলাম। আর্থিকভাবে আস্তে আস্তে বাবা খারাপ পজিশনে চলে যাচ্ছে। কারণ চাচা ফুফুরা ছোট থাকতে দাদা দাদী মারা যান। সবার সমস্ত খরচ বাবার কাঁধে ছিল। তাই তিনি বেশি কিছু করতে পারেন নাই। আমার মাও বড় মনের মানুষ। তিনি বাবার সংসারের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন।কখনও মুখ ফোটে কিছু চাননি বাবার কাছে।আমি বুঝতে পারছি। তাই হোস্টেলে থাকাটা নিজের কাছে খারাপ লাগলো। আমি গ্রামে থাকতে পারি নি।তাই শহরে আমাকে পড়াশোনার জন্য হোস্টেলে পাঠানো হয়েছিল।আমরা পাঁচ বোন। আমার জন্য অন্য বোনদের কষ্ট হচ্ছে। সবসময় এ চিন্তা হতো।প্রাইভেট ও তেমন পড়তে পারিনি। যাইহোক ভালো রেজাল্ট নিয়ে এসএসসি পাস করলাম। বাবা আবার শহরে পাঠাতে চাইল কিন্তু আমি না বলে দিলাম।কারন বলিনি।গ্রামের নতুন মহিলা কলেজে ভর্তি হয়ে গেলাম যেটা ছিল আমার প্রথম মনের বিরুদ্ধে যাওয়া। এখানে ও সবার আদর পেলাম স্যাররা আমাকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতো আমাকে সব ধরনের সুযোগ দিতে। কারণ স্যাররাও আমাকে জানত।এইচএসসি পাশ করলাম কলেজের সর্বপ্রথম ছাত্রী হিসেবে কারন কেউ তখনও কলেজ থেকে পাশ করতে পারে নাই।
💢💢জীবনে সর্ব প্রথম সপ্নের সূচনা💢💢
এইচএসসি পাশের আগেই আমাকে স্যারেরা কোচিং এ টিচার পদে,বাবা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে, আর খালু প্রাইভেট টিচার হিসেবে যোগদান করিয়ে দেয়। আমি কারও আশা বিফলে যেতে দেইনি।সব জায়গা থেকে ভালো নাম এসেছে। কোচিং-এ ছাত্ররা অলরাউন্ডার বলত।প্রাইভেটেও নাম অর্জন করেছি।স্কুলের স্যার আমার ছাত্রকে পাঠিয়েছে তার ভালো রেজাল্টের জন্য ধন্যবাদ জানানোর জন্য। এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি ছিল। এখান থেকেই আমার সপ্ন শুরু হয় নিজেকে নিজের পরিচয় দেওয়ার জন্য।
💢💢💢সপ্ন ভেঙে যাওয়া 💢💢💢
বেশিদিন আমি আমার সপ্ন নিয়ে থাকতে পারিনি।তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যায় আমার। আমার সপ্ন ভেঙে যায়।আমার স্বামী আমাকে চাকরি করাবে না।সংসার ও বাচ্চা নিয়ে থাকতে হবে।কারণ তার পজিশন ভালো ছিল।
সে আমাকে কারও আন্ডারে কাজ করতে দিবে না এটাই তার কথা।
💢💢💢জীবনে সবচেয়ে কষ্টের কথা💢💢
বিয়ের নয় বছরের মাথায় যেতে ই আামার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা গ্রামে চলে আসলাম। শ্বশুর বাড়ি। চিনতে পারলাম টাকা জিনিসটার কত মূল্য। শ্বাশুড়ি কথায় কথায় খোটা। আমি খুব আদরে বড় হয়েছি তাই সহ্য করতে পারতাম না।গ্রামের কোন কাজ করতে পারি না তাই আরও কথা শুনতে হচ্ছে। প্রায় প্রতিবেলা আমাকে না খেয়ে থাকতে হতো।ঠিকমতো চাল দিত না শাশুড়ী।ভাত থাকে তো তরকারি নেই। তরকারি থাকে তো ভাত নেই। ক্ষুধার জ্বালা বুঝতে পারলাম। বাচ্চাদের কিছুই খাওয়াতে পারতাম না।তিনি বুঝতে চেষ্টা করতো না যে তারা শহরের খাবার খেয়ে অভস্ত।আমার জাল আমাকে নিয়ে খাবার দিত চুরি করে। কত যে জালদের কাছ থেকে আমি শাশুড়ী কে না জানিয়ে খাবার এনে বাচ্চাদের খাইয়েছি। মুখের জ্বালা সয় পেটের জ্বালা তো সয় না।একদিন আমি ওকে বলেই ফেললাম। শুরু হলো আরও সমস্যা। আর পারলাম না থাকতে। ও আমাকে আমার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিল।কারণ শ্বাশুড়ি ওকে ও টর্চার করতে শুরু করল।মেয়ে জামাইদের বলল আমি জানসলা ভেঙে ফেলছি। কাঁচের জিনিস ভেঙে ফেলছি।নানা অভিযোগ।। সবাই আমাকে বলেছিল তুমি এখানে থাকতে পরবে না।তাই সত্যি হলো।
ঘর ভর্তি মানুষের সামনে আমাকে অপদস্ত করতে লাগলো।
💢💢💢আবার নিজের পা শক্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা 💢💢💢
আবার চাকরির জন্য ওঠেপড়ে লাগলাম।এপ্লিকেশন করতে লাগলাম নিজের সার্টিফিকেট অনুযায়ী। জমানো টাকা দিয়ে বই কিনলাম।যার কাছ থেকে পাচ্ছি পড়াগুলো বুঝে নিচ্ছি।১১ বছর পর পড়ালেখা খুব টাফ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাকে পেতেই হবে তাই ঝাপিয়ে পরি। পরিক্ষা হলে গিয়ে সব শেষ হয়ে গেল। একজনকে উপকার করতে গিয়ে আমার খাতাটাই গেল।আপুর কান্নায় আমার খারাপ লাগলো তাকে সুযোগ করে বলে দিতে যেয়ে ধরা খেলাম। কানে ধরলাম আর কখনও এরকম করবো না।আবার আরও দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে লাগলাম।
কিন্তু বলে না।
ভাগ্যের লিখন যায় না খন্ডন।
আমার এবারের চেষ্টা ও বৃথা গেল করুনা মহামারিতে।
💢💢💢উদ্যোগতা হওয়ার অনুপ্রেরণা ও এ প্লাটফর্মে আসা 💢💢
মেয়েরা চাকরি ছাড়াও আরও অনেক কিছু করতে পারে আমার জানা ছিল না।আমার ছোট বোন আমাকে উদ্যোক্তা জীবনে প্রবেশ করাল। টাকা নেই কিভাবে৷ কি করব? বাচ্চাদের সেলামির টাকা দিয়ে শুরু করলাম।আমার বোন ই সব কিছু এনে দিত শিখিয়ে দিত। ।এ পথে এসেও বুঝতে পারলাম কোন কাজই সহজ নয়।আমি খুজতে লাগলাম কার সাহায্য নিয়ে আমি কিছু করতে পারব আমি আমার খালাতো ভাই কে বললাম আমি হাতের কাজের জামা বিদেশে পাঠালে সে যেন সেগুলো সেল করে দেয়। তখন তারা আমাকে এ প্লাটফর্মের খবর দেয়।মাহবুব ভাই আমাকে রেজিষ্ট্রেশন করতে বলে এবং করে দেয়।ধন্যবাদ আমার ভাই কে।কোন সমস্যা হলেই আমি ভাইয়ের কাছ থেকে সব জেনে নেই। ভাই না থাকলে আমি কিছুই জানতে পারতাম না।
💢💢💢এ প্লাটফর্মে এসে যা পেয়েছি💢💢💢
ভাই আমাকে বলল তিনমাস ট্রেনিং করাবে।আমি বললাম, ব্যাবসার মধ্যে আবার ট্রেনিং কেন?
এখন বুঝতে পারছি, কত দরকার এ ট্রেনিংয়ের।
👉এখানে আমি ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা পাচ্ছি।
👉নিজেকে সুশিক্ষিত করতে পারছি।
👉ভালো মানুষের দল পেয়েছি।
👉১১ টি স্কিল পেয়েছি যা খুব প্রয়োজন।
👉কিভাবে ব্যবসার মুলধন পাবো কোথায় পাবো, কিভাবে ব্যবসার আইডিয়া নিব।
👉ICT ট্রেনিং
সমস্ত দরকারী কথা গুলো যার কিছু ই আমি জানতাম না সব শিখতে পাচ্ছি তাও বিনামূল্যে।
💢💢আমার সফলতা💢💢
আমার উদ্যোক্তা জীবনে আর্থিক কোন সফলতা পায়নি।কিন্তু বড় সফলতা আমি পেয়েছি আমার মেয়ের মাঝে। তার চোখে মুখে আমি উদ্যোক্তা হবার সবকিছু দেখতে পাই। আমি হাল ছেড়ে দিলেও আমার মেয়ে আমাকে সাহস দেয়। বলে, একদিনে কেউ কিছু পারে না, আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।সে নিজেই আমাকে আমার উদ্যোক্তার আইডিয়া বের করে দেয়।যদি আমি এ পথে না আসতাম তাহলে আমার এ ছোট উদ্যোক্তা সম্পর্কে জানতাম না সৃষ্টি ও হতো না। আমার কাছে এটাই বড় সফলতা।তাই নয় কি?
🤲🤲🤲পরিশেষে আমি আমার ও আমার মেয়ের জন্য দোয়া চাইছি সবার কাছে। যেন আমি সফলতার একটি গল্প আপনাদের উপহার দিতে পারি।
🙏🙏ভুল ত্রুটি হলে অবশ্যই আমাকে ক্ষমা করবেন। 🙏🙏
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬০৯
Date:- ৩০/০৮/২০২১
ফারহানা পারভীন।
জেলাঃজামালপুর সদর।
ব্যাচঃ১৪
রে জি নংঃ৬৫৭৫৮
বর্তমান অবস্থানঃ জামালপুর, নান্দিনা।