জীবনের গল্প
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম,
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ্।
🏵️প্রথমে শুরু করছি মহান সৃষ্টিকর্তা পরম করুণাময় মহান আল্লাহর নামে যার অপার কৃপায় এই পৃথিবীতে এসেছি। সকল প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য। লাখো কোটি দরুদ ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ) এর প্রতি ।
🏵️কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার মা ও বাবার প্রতি যারা আমাকে জন্ম দিয়েছেন, লালন পালন করেছেন এবং শিক্ষিত করে পৃথিবীর বুকে বড় করে তুলেছেন।
🏵️ সেই সাথে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এই শতাব্দীর অন্যতম সেরা মানুষ, লাখো তরুণ তরুণীর আইডল প্রিয় মেন্টর, প্রিয় শিক্ষক জনাব, Iqbal Bahar Zahid স্যারের প্রতি, যার অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে "নিজের বলার মতো একটা গল্প" ফাউন্ডেশনের মতো একটা সুবিশাল প্লাটফর্ম।
🌷 আজ আপনাদের একটা গল্প শোনাব। আমার "জীবন থেকে নেয়া জীবনের গল্প"। আশা করি সময় করে সবাই ধৈর্য্য ধরে পড়বেন ও শুনবেন। এটা ঠিক গল্প নয় আমার জীবনের সত্য ঘটনা অবলম্বনে।
🙇ছেলেবেলাঃ-
আমার জন্ম ১৯৮৮সালের ২৮জানুয়ারী।
আমরা ২ ভাই, এক বোন। আমার বাবা নারায়ণগঞ্জে একটা মুদি দোকানের হিসাব রক্ষক হিসেবে চাকরি করতেন। আমার ছেলেবেলা নারায়ণগঞ্জ এবং শরিয়তপুরে কাটে, তবে শরিয়তপুরে বেশি কেটেছে।
🌷 শিক্ষা জীবনঃ-
যখন আমার বয়স ৬ বছর তখন শরিয়তপুরে আমার গ্রামের একটা প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হই। ঐ প্রাইমারিতে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করি। এরপরে আমরা নারায়ণগঞ্জ চলে যাই, যেহেতু আমার বাবা ওখানে চাকরি করতেন। নারায়ণগঞ্জে এক বছর থাকার পরে আমার বাবা প্রবাস জীবনে পাড়ি দেয়, সেই সুবাদে আমরা বাড়িতে চলে এসে গ্রামে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হই। এরপরে শিধলকুড়া উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি কমার্স থেকে পাস করি। শামসুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি কমার্স থেকে পাশ করি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, এমবিএ পাস করি।
🌷স্বপ্নঃ-
আমার স্বপ্ন ছিল এসএসসি পাশ করার পরই ডিফেন্সে চাকরি করবো। অনেক শখ ছিল কিন্তু কয়েকবার ট্রাই করে মেডিকেলে বাদ পরে গিয়েছিলাম। এরপরে স্বপ্ন ছিল অনার্স-মাস্টার্স কমপ্লিট করে সরকারি একটা চাকরি করব সেটা হয়নি। আর কোম্পানি চাকরি আমি কখনোই ট্রাই করিনি, আমার এটা পছন্দ হতো না। শেষে বাবার ব্যবসা কে ধরে রেখে আজকে বড় ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখি।
🌷 টানাপোড়েনের দিন গুলোঃ-
পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আমার পড়ালেখা ভালো ছিল। যখন বাবা প্রবাসজীবনে থাকত তখন বাবাকে খুব মনে পরতো। তখন আমাদের গ্রামের অনেকে ঢাকা থাকতো এবং যখনই কেউ ঢাকা থেকে আসতো মনে হতো যে আমার বাবা বিদেশ থেকে চলে আসছে। শুধু ভাবতাম বাবাকে পেলে একটু জড়িয়ে ধরবো, খুব মিস করতাম বাবাকে। বাবা যখন ফোন দিত তখন কান্নায় দুজনই কথা বলতে পারতাম না। বাবার সাতটা বছর প্রবাস জীবনে কান্না ব্যতীত অন্য কোন কথা বলতে পারিনি। তখন আমার বুকটা ফেটে যেতো। শুধু বলতাম বাবা তুমি দেশে এসে পরো। পড়ালেখায় মন বসতো না। যখন আমি দশম শ্রেণীতে পড়ি তখন আমার বাবা বাংলাদেশে চলে আসেন। আমার বাবা সিঙ্গাপুর টুরিস্ট ভিসায় গিয়েছিল ,তাই একবার এসে আর পরবর্তীতে যেতে পারেননি।
আমার বাবা প্রবাস জীবন সাত বছর কাটিয়ে ২০০৩ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন।
২০০৪ সালে আমি এসএসসি পরীক্ষা দেই।
ইংরেজি তে ফেল করি ঐবার। ২০০৫/২০০৬ আবার একই সাবজেক্টে ফেল করে যাচ্ছিলাম।
তখনও বাবা-মা আমাকে পড়াবেন। তাঁরা বলেন তোমার এসএসসি পাশ করতেই হবে। নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন তিন বছর মেয়াদ থাকে, আমি শিক্ষা বোর্ড থেকে মেয়াদ বাড়িয়ে আনলাম। এরই মধ্যে ২০০৬ সালে একজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পরি। আমি প্রতিজ্ঞা করলাম বাবা মা'র আশা পূরণ করতে হবে, আমাকে পাশ করতে হবে। অতঃপর ২০০৭ সালে আমি এসএসসি পাস করি। তখন বাবার সাত বছরের সঞ্চয় এর টাকা দিয়ে আমরা কিছু জমি ক্রয় করি। কেননা আমার দাদার তেমন সম্পদ ছিল না।
দেশে পাঁচ বছর কৃষিকাজ করে এরপরে আমাদের উপজেলা বাজারে একটা গার্মেন্টসের ব্যবসা চালু করেন আত্নীয় স্বজন এর সহযোগিতায়।
আমি যখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়াশোনা করি তখনই আমাদের পরিবারে কালো মেঘ নেমে আসে। আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পরেন। এরপরে ঢাকা নিয়ে চিকিৎসা করার পরে ক্যান্সার ধরা পরে। তখন একটা জমি বিক্রি করে দেই তাঁর জন্য। চিকিৎসায় আমাদের তিন থেকে চার লক্ষ টাকা খরচ হয়। কিন্তু চিকিৎসায় কোন সুফল পাচ্ছিলাম না। ডাক্তার আমাদের অন্য কোথায় রেফার না করে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল। আবার দু'লক্ষ টাকার মতো খরচ হল, ঠিক এক বছর ভাল ছিল। এর মধ্যেই আমার বোনকে বিয়ে দেই ঢাকার মিরপুরে। পরে মিরপুরে রেখে বাবার চিকিৎসা চালিয়ে যেতাম বোনের জামাই ও আমরা। আমি আমাদের বাবার যেই গার্মেন্টস ব্যবসা ছিল সেখানে সময় দেওয়া শুরু করলাম। তখন আমি অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ি।
আসলে আমার বাবা থাকা অবস্থায় কখনো আমি সংসার নিয়ে ভাবতাম না। না ভাবাটাই অবশেষে আমার ঘাড়ে এসে বাসা বাঁধে। তখনই ২০১৪ সালে আমার বাবা মারা যায়! আমি ছিলাম সংসারের বড় ছেলে। সংসারের চাপ আমার মাথায় এসে পরে।
আমি বাবার ব্যবসার হাল ধরি। আসলে এই ব্যবসায় আমি নতুন। আমি ব্যবসা বুঝতাম না, আমি কখনো বাবার সাথে ব্যবসায় সময় দেই নি। তার মাঝে ২০১৫ সালে ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করে ফেলি। এভাবে করে দিনে দিনে ব্যবসা পরিচালনা করা এবং রাতে এসে পড়ালেখা করতাম। সংসার নিয়ে আমার অনেক চিন্তা হতো। এভাবে ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে পড়ালেখা ও ব্যবসা চালিয়ে মাস্টার্স কমপ্লিট করি। বিয়ের দের বছর পরে আমি প্রথম সন্তানের বাবা হই। সংসারের খরচ বেড়ে গেলো। তখনো আমার ছোট ভাইটা অনেক ছোট ছিল। দোকান চালিয়ে আমার সংসার, আমার ভবিষ্যৎ, আমার ছোট ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ হিমসিম খেতে হচ্ছিলো। ছোট ভাইয়ের এসএসসি পাশের পরে ওকেও দোকানে পার্ট টাইম সময় দিতে বলি। ২০১৯ সালে গার্মেন্টস ব্যবসার পাশাপাশি আমার এক বন্ধুর সাথে পার্টনারে চা পাতা ব্যবসা শুরু করি। সেখানেও সফল হতে পারিনি, তবে ব্যবসা শিখেছি। এরপরে শুধু ভাবতাম আর কী নিয়ে ব্যাবসা করতে পারি। আমার ভিতরে সবসময় হতাশা কাজ করতো।
২৯ আগস্ট ২০২০ সালে বন্ধু sukanto sawkot ও billal hossin mibu এদের মাধ্যমে ১১তম ব্যাচে, "নিজের বলার মত একটা গল্প" ফাউন্ডেশনের সাথে যুক্ত হই। আমি সবসময়ই ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রত্যেকটা সেশন ফলো করতাম।
স্যারের সেশন থেকে ব্যবসায়ীক জ্ঞান অর্জন করলাম।এভাবেই চলছে আমাদের সংসার, এরই মাঝে ২০২১ জুন মাসে আমাদের দ্বিতীয় অতিথি কন্যা সন্তান এই পৃথিবীতে আসে। এখন আমার পরিবারে আলহামদুলিল্লাহ্ ছয় জন সদস্য।
🌷উদ্দ্যোক্তা জীবন শুরুঃ-
প্রত্যেকটা সেশন থেকে ভালো করে শিক্ষা গ্রহণ করে, জ্ঞান অর্জন করে ডিলারশিপ ব্যবসা শুরু করলাম। আমার ব্যবসার বয়স ৮ মাস হল কন্টিনিউ চলতেছে।আজ আমি বলবো "নিজের বলার মত একটা গল্প" ফাউন্ডেশন আমাকে স্বপ্ন পুরণে সহায়তা করেছে।
🌷 ঘুরে দাঁড়ানোঃ-
বর্তমানে আমি অনেক বেশি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি "নিজের বলার মতো একটা গল্প" ফাউন্ডেশনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি Iqbal bahar Zahid স্যারের প্রতি। এবং গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি Jahangir khan ভাইয়া, ফজিলাতুন্নেছা রাবেয়া আপু, Ali akbar ভাইয়া, দুলাল আংকেল, সিরাজ আংকেল, সুকান্ত সৈকত, বিল্লাল হোসেন মিবু, মাঝি শওকত, আল আমিন, রিপন আলী, সুমাইয়া সুলতানা,সালমা,সান্তা আপু, ভাইয়া সহ শরিয়তপুর জেলা গ্রুপের সকলের প্রতি যারা আমাকে প্রতিদিন এতো এতো উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়ে সফলতার চূড়ায় নিয়ে যাচ্ছে।
এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হওয়ার পর থেকে সকল পথ আমার কাছে সহজ মনে হচ্ছে।
❤️এরকম একটা ভালো মানুষের প্লাটফর্মে আমি যে আসতে পারবো ও থাকতে পারবো এটা আমি কখনো ভাবতেই পারিনি। এই প্লাটফর্মের প্রত্যেকটা মানুষ অনেক ভালো। এখানে ভালো মানুষের চার্চা হয়।
এখন আমি আমার পণ্য বিক্রির জন্য একটা বিশাল প্ল্যাটফর্ম পেয়েছি। Love you 💓 নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন। Love you 💓 Iqbal bahar jahid sir.
স্যারের কথা হলো, আজকে যারা সফল তারাই গতকাল ব্যর্থ ছিলো। আমাদের মতোই হতাশ ছিলো হয়তো। তবে তাদের একটি গুণ ছিল, যা আমাদের নেই। লেগে থাকা, হাল ছেড়ে না দেওয়া। আজ হয়তো আপনি চাকরি পাচ্ছেন না, ভালো রেজাল্ট করতে পারেননি, সেমিস্টার গ্যাপ আছে কিংবা স্কুলের বারান্দাও মাড়াননি কোনোদিন; তাতে কী?
যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, হবেই হবে জয়। শেষ করছি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের গল্প দিয়ে। তার আত্মজীবনীতে তিনি লিখেন, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার পরও অভাব আমার পিছু ছাড়েনি। এমনকি বাস ভাড়াও অনেক সময় পকেটে থাকত না। দীর্ঘ পথ হেঁটে এসে ক্লাস করতাম"। পরবর্তীতে তিনিই হয়ে ওঠেন সফল ও তুমুল জনপ্রিয় লেখকদের মধ্যে একজন।
🌷পরিশেষে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আপনারা যারা এতক্ষণ পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরে আমার লেখাটা পড়েছেন। প্রিয় ভাই ও বোনেরা আমি স্বপ্ন দেখি একটা সুন্দর আগামীর।
🌻আমার জীবন চলার পথে আপনাদের দোয়া, ভালোবাসা এবং সহযোগিতা আমার ভীষণ প্রয়োজন
আশা করছি ভালোবেসে পাশে থাকবেন সবসময়। সবশেষে আপনাদের সবার সুখি ও সুন্দর জীবন কামনা করি। সুন্দর হোক আপনাদের সবার আগামী জীবনের প্রতিটি দিনের প্রতিটি ক্ষণ। শুভ কামনায় আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি, ভালোবাসা অবিরাম সকলের প্রতি।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬০৮
Date:- ২৯/০৮/২০২১
মোঃ আব্দুর রহমান সোহেল
ব্যাচঃ- ১১তম
রেজিঃ- ৩০০৩৩
জেলাঃ- শরিয়তপুর
উপজেলাঃ- ডামুড্যা
বর্তমান অবস্থানঃ- শরিয়তপুর
🥻🥻কাজ করছিঃ- সকল ধরনের পোশাক ,সি সি ক্যামেরা, আকাশ ডিটিএস নিয়ে।
❤️আমার ভালোবাসার প্রয়াসঃ- ADOR SHOP BD