জীবনের গল্প
আসসালামু আলাইকুম,
👉প্রত্যেকের জীবনের গল্প ভিন্ন।
👉আজ আমি আমার জীবনের গল্প বলবো।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রিয় অভিভাবক, প্রিয় শিক্ষক, প্রিয় মেন্টর জনাব " ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি। স্যারের জন্যই আজ নিজেকে সবার মাঝে উপস্থাপন করার সাহস পেয়েছি।
👨🏫শিক্ষা জীবন✍️
ক্লাস ওয়ান থেকে থ্রি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি টঙ্গী আরিচপুর "শাহাবুদ্দিন সরকার কওমী মাদ্রাসা" নামে একটা কওমী মাদ্রাসায়। বাবা-মা এবং আমি থাকতাম ঢাকায়। সালটা তখন ২০০৭। বাবার একটা ছোট্ট ব্যবসা ছিলো। বাবার ব্যবসার উপরই নির্ভর করতো আমাদের সংসার। ২ বছর বাদে বাড়ি থেকে ফোন আসলো। দাদি খুবই অসুস্থ উনার পাশে কেউ নেই। আমরা স্ব পরিবারে চলে গেলাম গ্রামে। আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে একটা কওমী মাদ্রাসা আছে ওখানে ভর্তি করানো হলো। আরো দু'বছর পড়লাম কওমী মাদ্রাসায়। হাফিজি নিয়ে ৭ পারা মুখস্থ করার পর আর পড়ার ইচ্ছে হতো না সারাদিন বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো ছিলো রোজকার কাজ। মাদ্রাসায় যাওয়ার জন্য শিকল দিয়ে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হতো। একদিন দু'দিন দেখতে দেখতে বাবা-মা বুঝতে পারলো আমাকে দিয়ে হাফিজি পড়া হবে না। মাদ্রাসা থেকে নিয়ে ভর্তি করা হলো "খাজা মঈনউদ্দীন চিশতি (রাঃ) দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায় (আলিয়া) । মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল বলেছিলো আমি যেনো ক্লাস-5 এ ভর্তি হই। প্রিন্সিপাল হুজুরকে ডিরেক্ট না করে দিলাম আমি 5 এ ভর্তি হবো না। ভর্তি হবো 4এ। ভর্তি হলাম ক্লাস-4 এ। এর পিছনে আমার এক বন্ধুরও হাত ছিলো। এক এক করে যুক্ত হতে থাকলো জীবনের রঙিন অধ্যায় গুলো।
পড়ালেখায় মেধা ভালো ছিলো। সবসময় ১/২ এর মধ্যে রুল থাকতো। হুজুর ও স্যার সবাই আদর করতেন অনেক।
ক্লাস-4 থেকে ক্লাস-10 পর্যন্ত ছিলাম "খাজা মঈনউদ্দীন চিশতি (রাঃ) দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায়। পড়ালেখার সমাপ্তি ঘটলো জীবনে😭
👉টাকা জন্য এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারিনি😭 এ গল্পটা অন্য একদিন শেয়ার করবো।
🌻👷♂️কর্ম জীবন👨💻🌻
আমরা ২ ভাই, ১ বোন, ভাই বোনদের মধ্যে আমি বড়। বাবা আর মা। ৫ জনের সংসার। বাবা একা চালিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছিলো। তখন আমি ক্লাস ৬ এ সবে মাত্র ভর্তি হলাম। সংসারের এ অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি করবো। হোসেনপুর বাজারে ফুফাতো ভাইয়ের এক বন্ধুর দোকান আছে। ভাইকে হাতে পায়ে ধরে রাজি করালাম বললাম ভাই আমার চাকরিটা খুব প্রয়োজন। ভাই উনার বন্ধুর দোকানে আমাকে চাকরি নিয়ে দিলো। কিশোরগঞ্জ থেকে হোসেনপুর চলে গেলাম বই খাতা নিয়ে।
সারাদিন কাজ করে রাতে পড়তে বসতাম। শুধু পরীক্ষার সময় গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আসতাম। পড়ালেখা+কাজ দুটোই ভালো চলছিলো। ৬মাস কাজ করার পর বাবা বুঝিয়ে সুজিয়ে আমাকে আর কাজ করতে দিলো না। ২ বছর পর আবার দেখতে পেলাম সংসারে অভাব শুরু হয়েছে।
ক্লাস-৮ এ পরীক্ষা দিয়ে চলে গেলাম নারায়ণগঞ্জ এক মামার কাছে। গিয়ে চাকরি নিলাম ডাইং কে ১ বছর করতে না করতেই বাবা ফোন দিয়ে কান্না-কাটি
করতেন বাড়ি যাবার জন্য। বাবার সাথে কথা বলে আর থাকতে পারলাম না। আবারো চলে গেলাম কিশোরগঞ্জ। আবার শুরু করলাম পড়ালেখা। মা-বাবা টাকা দিলেন গ্রাফিক্স কোর্স করার জন্য। ৬ মাসের কোর্স শেষ করে শিখে গেলাম গ্রাফিক্স ডিজাইন। সার্টিফিকেট ও দেয়া হলো। পড়ালেখার পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ থেকে জর্জ কোর্টে উকিল সহকারী হিসেবে কাজ করি। তখন ক্লাস 10 এ সবে মাত্র ভর্তি হয়েছি।
ক্লাস-10 এ পড়ার ৩/৪ মাসের মধ্যেই বাবা মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হন। গলার টনসিলে সমস্যা দেখা দেয়। অসুস্থ হওয়ার ৬ মাস পর্যন্ত বাবা ভাত খেতে পারেননি। এমন কি তরল জাতীয় কোনো খাবার ও খেতে পারতেন না। যা খেতেন তাও বমি করে বের করে দিতেন। অনেক ডাক্তার কবিরাজ ও দেখিয়েছি। ডাক্তারের দেয়া কিছু টেস্ট করানোর পর। বলা হলো বাবাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল ভর্তি করানোর জন্য। মা এবং আমার মেঝো ফুফু বাবাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল গেলেন। আমি কোর্টে কাজ করি তখন এজন্য যেতে পারিনি। হঠাৎ করে বাবাকে দেখার জন্য আমার মন ব্যাকুল হয়ে গিয়েছিল। বাবাকে দেখতে রওনা দিলাম ঢাকায়। ঢাকা পৌছাতে রাত হয়ে গিয়েছিল। বাবার পাশে গিয়ে বসলাম😭 বাবা আমাকে ইশারা দিয়ে বললো কাছে যেতে। কাছে গিয়ে বাবার কপালে চুমু খেয়ে মাথা মেসেজ করছি আর বাবাকে বলছি বাবা আপনার কিছু হবেনা😭 আমরা আছি আপনার সাথে। সেদিন বাবা কে মা ভাত কচলিয়ে খাইয়ে দিচ্ছিলো। বাবাও একজন সুস্থ মানুষের মতো ভাতগুলো খেয়েছে আমার সামনেই। ৬ মাস পর সেদিন এই ভাত খেয়েছিলো।
রাত তখন সাড়ে ১০ টা। শীতে রাত থাকায় মা বললেন এখানে তো সবার থাকা যাবেনা। তুমি তোমার ফ্রেন্ডের বাসায় চলে যাও। সকালে এসো। বাবাকে আদর করে চলে গেলাম নারায়ণগঞ্জ রিদয় এর কাছে। দুজন মিলে রাতে মুভি দেখে ঘুমালাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি মোবাইলে মার অনেকগুলো কল। দেখেই চমকে উঠলাম। বাবার কিছু হলো নাতো। তাড়াতাড়ি মাকে ফোন করলাম। মা কিছুই বলছে না। শুধু বলছে তোমার বাবা হাসপাতালে থাকতে চাচ্ছে না বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি 😭 তুমিও বাড়িতে চলে আসো😭 ফোন কেঁটে আমার কাকা-কাকিমা থাকতো কুড়িল বিশ্বরোড কাকিকে ফোন করলাম। কাকিমা ও একি কথা বলছেন😭 তোমার বাবাকে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি তুমিও চলে আসো। তখন কিছুটা অনুভব করতে পারছি যে বাবা আর নেই এ পৃথিবীতে 😭 রিদয় রবিন আমাকে কোনো রকম সামলে নিয়ে আমাকে নিয়ে রওনা হলো বাড়ির উদ্দেশ্যে বাসের মধ্যে বারবার হঠাৎ করে কেঁদে উঠছিলাম😭 রাস্তা জেনো শেষ হতে চাইছিলো না। দেরি হচ্ছিল দেখে বাস থেকে নেমে সিএনজি নিলাম। বাড়িতে যেয়ে পৌঁছালাম আসর আজানের সাথে সাথে পৌঁছিয়ে দেখলাম সবাই আমার জন্য বাবার লাশ নিয়ে অপেক্ষায় আছে। জানাযা শেষ করে বাবাকে চিরদিনের জন্য কবরে রেখে আসছিলাম😭
সালটা ছিলো ২০১৮। জীবনের সবটুকু কষ্ট একত্রে দিয়েছে এই অভিশপ্ত সালটা।
ছেলেরা সাধারণত মা পাগল হয়। কিন্তু আমি ছিলাম উল্টো। বাবা পাগল😍। বাবা একজন সৎ ও আদর্শবান ব্যক্তি ছিলেন। জীবনে কোনোদিন কারো কোনো ক্ষতি করেননি। বাবা আমাকে খুব ভালোবাসতেন। একরাতে আমি রাগ করে কিছু না খেয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। ঘুমের মধ্যে অনুভব করলাম কে যেন আমার কপালে চুমু খাচ্ছে। আর মাথা মেসেজ করছে। চোখ মেলে তাকাতেই দেখলাম বাবা বসে আছেন মাথার কাছে। আমাকে কাতুকুতু দিয়ে হাসানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অনবরত। অবশেষে সব রাগ অভিমান ভূলে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম। সেদিন রাতে বাবা আদর করে ভাতের নলা করে খাইয়ে দিয়েছিলো। এরকম হাজারো ঘটনা ঝড়িয়ে আছে বাবাকে ঘিরে😢 ২০১৮ জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখ বাবা মৃত্যু বরণ করলেন😭 তারপর থেকে জীবনে নেমে আসলো কালবৈশাখী ঝড়। বাবার মৃত্যু তে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।
কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না যে বাবাকে জড়িয়ে ধরে আর কোনোদিন বলতে পারবো না তোমাকে ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি বাবা😭😭
কত স্মৃতি এই মানুষটাকে ঘিরে জীবন খাতায় রয়ে গেছে। বলে শেষ করা যাবে না😢
🌼 নতুন জীবনের শুরু -🌻
গাউছিয়া মার্কেটে একটা প্রিন্টিং প্রেস এ গ্রাফিক্স ডিজাইনার হয়ে চাকরি নিলাম। কম্পিউটারে ফেইসবুক চালাচ্ছি হঠাৎ চোখের সামনে স্যারের ২য় ব্যাচের সেশন ক্লাসের একটা পোস্ট পড়লো। চাকরী করবো না চাকরী দেবো। এমন একটা কথা লেখা ছিলো। পোস্টটা মনযোগ দিয়ে পড়লাম। তারপর প্রাণের গ্রুপের আজীবন সদস্য হলাম নিজে নিজেই। এর পর থেকে প্রতিনিয়ত শিখছি। আমি সঠিক জানিনা কোন ভাই আমাকে প্রাণের গ্রুপে যুক্ত করেছেন⁉️ তার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। গ্রুপে যুক্ত হওয়ার পর থেকে নিজেকে ভালোমানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পারি সকলের মাঝে। আগে খুব অল্পতেই রাগ উঠে যেতো। রাগ থেকে জীবনে অনেক কিছুই হারাতে হয়েছে। স্যারের সেশন করে আলহামদুলিল্লাহ এখন ধৈর্য ধরতে শিখে গেছি। নতুন ব্যবসাও শুরু করে দিয়েছি। আপনাদের সকলের দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই বহুদূর পর্যন্ত। আপনারাও এক্টিভিটি বাড়ান নিজের ব্রান্ডিং বাড়বে ইনশাআল্লাহ। " নিজের বলার মতো একটা গল্প " ফাউন্ডেশনের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো সারাজীবন। গ্রুপের সকলের প্রিয় মেন্টর " জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ (স্যারের) সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আল্লাহ পাক প্রিয় স্যার কে নেক হায়াত দান করুক। আমিন।
বুকে হাত রেখে বলতে পারি "নিজের বলার মতো একটা গল্প " Foundation আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে।
চিরকৃতজ্ঞ থাকবো সারাজীবন প্রিয় "ইকবাল বাহার জাহিদ " স্যারের প্রতি। স্যার আমার অভিভাবক। স্যারের দেখানো পথ অনুসরণ করে। আজ আমি নতুন করে বাঁচতে শিখেছি। শুভাকাঙ্ক্ষী ভাই পেয়েছি বন্ধু পেয়েছি বড় বোন পেয়েছি 🥰 এ প্রাণের ফাউন্ডেশন থেকে। নিজে একজন ভালোমানুষ হতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ।
আমি ছোট মানুষ। মনের কিছু কষ্ট আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন🙏
যারা যারা সময় দিয়ে আমার জীবনের গল্পটা পড়েছেন সকলকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
কাজ করছি⏺️ মধু, ঘি, সরিষার তেল, কালোজিরার তেল ইত্যাদি নিয়ে।
ব্যবসায়িক পেইজ🔷 https://www.facebook.com/Organicfoods34726/
এছাড়াও কাজ করছি👉পোস্টার, ব্যানার, ভিজিটিং কার্ড, ক্যাশ মেমো ইত্যাদি নিয়ে
পেইজ🔷https://www.facebook.com/MistakeFunTROLL/
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬০৭
Date:- ২৬/০৮/২০২১
নাম➡️মোঃ মোজাম্মেল হক
ব্যাচ➡️২য়
রেজিষ্ট্রেশন➡️১০৮১
জেলা➡️ কিশোরগঞ্জ
বর্তমান➡️ কুড়িল বিশ্বরোড, ঢাকা
আজীবন সদস্য ➡️ " নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন "
ছবিতে - বাবা🖤এবং ছোট বোন🖤