সংগ্রামী জীবন।
♥️আসসালামু আলাইকুম প্রিয় ভাইয়া ও আপুরা আশা করছি সবাই ভালো আছেন ।আমিও আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো আছি। আমি আপনাদের কাছ থেকে কিছু সময় চেয়ে নিব আশা করছি সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
🙏 প্রথমেই শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি যিনি আমাকে এখনও বাঁচিয়ে রেখেছেন। সে জন্য আপনাদেরকে আমি কিছু লিখতে পারছি। আমার মনের কথা প্রকাশ করতে পারছি। কোটি কোটি শুকরিয়া মহান রাব্বুল আলামিনের প্রতি।
🙏 ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের সবার প্রিয় আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ দেখানোর দিশারী জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি। যার অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা পেয়েছি এত সুন্দর একটি পরিবার কৃতজ্ঞতা স্যারের প্রতি।
✍️ আজকে আমি আমার নিজের কিছু কথা আপনাদের শোনাবো যে সুযোগটা করে দিয়েছেন আমাদের সবার প্রিয় স্যার। আশা করছি ধৈর্য্য নিয়ে একটি সবাই পড়বেন।
🌹 আমি ছোটবেলা থেকেই বেশ শান্ত শিষ্ট স্বভাবের ছিলাম আমরা চার ভাই বোন তিন বোন এক ভাই আমি বোনদের ভেতরে ছোট ভাই আমার ছোট পরিবারে আমি বেশ আদরের ছিলাম আমার আত্মীয় স্বজনের খুব ভালোবাসতো আমাকে পাড়া-প্রতিবেশী সবাই ভালোবাসতো। আমি পড়াশোনায় অনেক ভালো ছিলাম কিন্তু পড়াশোনাকে কোনদিন সিরিয়াস ভাবে নেই নি। নতুন কিছু দেখলে সেটা করতে খুবই আগ্রহ দেখাতাম হোক সেটি রান্না, কোনো হাতের কাজ, কোন কিছু বোনা তৈরি করা। ভালই কাটছিল আলাউদ্দিন আমি একটু সৌখিন টাইপের মেয়ে, সাজগোজ করতে টিপটাপ থাকতে খুব পছন্দ করতাম। আমি এমন একটি মেয়ে যে পড়তে বসলে মঞ্চায়িত জানি এখন শাড়ি পড়বো তখনই আমি শাড়ি পড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়াতাম। একটু সেজেগুজে কিছু সময় আয়নার দিকে তাকিয়ে আবার খুলে ফেলতাম তারপর আবার পড়াশোনা শুরু করতাম। আমি যখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি তখন আমার ছোট ভাই প্রেম করে বিয়ে করে ফেলে, আমিও এক সময় দাঁড়িয়ে থেকে আমার ছোট ভাইয়ের বিয়ে দেই। শুরু হয়ে গেল আমার জীবনে উথাল পাথাল ঝড়ো হাওয়া। গ্রামের ভেতর আমাদের অবস্থা বেশ ভালো ছিল সম্মান ছিল এলাকায় অনেকে অনেককিছু সামনাসামনি বলতে সাহস পেত না কিন্তু ওপাশ থেকে অনেক কথা কানে আসতো ছোট ভাই বিয়ে করে ফেলেছে আমি বিয়েতে পরি বুড়ি হয়ে গেছি হয়তো প্রেম করে ছ্যাকা খেয়েছি নানান ধরনের কথা। অনেক আত্মীয় আছে ইয়ার্কি ছলে সত্য কথাটা বলে ফেলতেন। আমার ইচ্ছে ছিল আমি নিজের পায়ে দাড়াবো হয়তো চাকরি করব তারপর ভালো লাগলে বিয়ে করব। কিন্তু মানুষের কথা এবং বাড়ির পরিবেশ সব মিলায় মনে হতে লাগলো বিয়ে করা টাই মনে হয় ভাল। বাড়িতে ইতিমধ্যে পাত্র দেখাদেখি হত আমি রাজি হতাম না তবে হঠাৎ করে আমি রাজি হয়ে গেলাম ঠিক আছে বিয়ে না হয় করেইনি। আমি তখন বি এ পাস কোর্সে ফাইনাল ইয়ারে। ফাইনাল পরীক্ষার এক দেড় মাস আগে আমার বিয়ে হয়।
বিয়ে হয় একটি বংশীয় বনেদি পরিবারে। পরীক্ষা শেষ হলে আমি শ্বশুর বাড়িতে আসলাম মাসখানেক বেশ ভালোই ছিলাম। আমার জীবনের সমস্ত অর্থই যেন পাল্টে যেতে লাগলো আমি যেখানে আমার বিয়ের আগে অনেক সম্মান পেয়েছি ।যেখানে আমার কথাই ছিল বাড়ির শেষ কথা সেখানে শ্বশুরবাড়ি এসে দেখি আমি যে বাড়ির বউ তার কোনো পাত্তাই নেই। আমাকে একজন মানুষ বলেই মনে করে না ।আমার শ্বশুর মারা গেছেন 22 বছর আগে আমার শাশুড়ি সব নিজের হাতে কন্ট্রোল করে আসছেন। আমার বর এবং ননদ দুই ভাইবোন। ননদ আমার বরের বড়। তার কথায় বাড়ির শেষ কথা। আমার বর খুব সরল সোজা মানুষ খুব ভালো মানুষ সে কোন ঝামেলায় যেতে চায়না যেখানে তার সংসারে কি হচ্ছে না হচ্ছে দুচোখ মেলে কোনদিন দেখিনি বা এখনও দেখেনা। সেই সুযোগে আমার ননদ এবং শাশুড়ি বাড়ির সবকিছু পরিচালনা করা থেকে শুরু করে আমি কি ড্রেস পডরবো না পরবো ,আমি কোথায় যাব এমনকি আমার বরের সাথে কোথায় যাব সেটাও তারা নির্ধারণ করে দিত। আমি বড়দের মুখের উপর কিছু বলতে শিখিনি। তাই নিরবতা পালন করতে করতে আমার মানসিক সমস্যা হয়ে যায়। অনেকবার চেয়েছি চলে যেতে কিন্তু ওই যে বললাম আমার বর খুব ভালো মানুষ তার মুখের দিকে তাকিয়ে যেতে পারি নাই। আমি স্নাতকে ফার্স্ট ক্লাস পাই। মাস্টার্সে ভর্তি হয়।আমার প্রথম বর্ষের পরীক্ষার সময় আমার মেয়ের বয়স ছয় মাস। আমি খুলনা বিএল কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। বয়রা মহিলা কলেজ এ ছিট পড়তো। দ্বিতীয় বছর ফাইনাল পরীক্ষার সময় আমার ছেলের বয়স ছয় মাস। আমার ছেলে এবং মেয়ে দুজনে 15 মাসের ছোট বড়। দুজনের বেলায় সিজার হয়। বাচ্চা নিয়ে মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হয় আমার। আমি তের মার্কের জন্য ফাস্ট ক্লাস পায়না। আমার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। কিছু তো করার নেই। তারপর ও ভাবি যে ব্যাংকে চাকরি করব। পড়াশোনা শুরু করি। কিন্তু এত ছোট দুইটা বাচ্চা সংসার সবকিছু মিলায়ে পড়াশোনাটা আমার কাছে খুবই কষ্ট হয়ে দাঁড়ায়। চাকরির চিন্তা তখন বাদ দিতে হয়। আস্তে আস্তে আমার ছেলের বয়স যখন চার বছর হয় তখন আমি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ি। এবং এমন একটা অসুস্থতা আমি কখনো কারো সাথে প্রকাশ করি নাই। এক মাসের মধ্যে আমার অসুস্থতা টা অনেক বেড়ে যায়। ডাক্তার দেখায় ডাক্তার আমাকে এফএনএসসি টেস্ট দেয়। রিপোর্ট মোটামুটি ভালো আসে। কিন্তু ডাক্তার অপারেশন করার কথা বলে। বাড়ি থেকে সবাই সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে ইন্ডিয়া নিয়ে গিয়ে অপারেশন করাবে। যেহেতু পাসপোর্ট ছিলনা পাসপোর্ট করতে দেয়া হয় 14 দিন মেয়াদে। কিন্তু পাসপোর্ট পাওয়ার আগেই আমার অসুস্থতা এমন দ্রুত বেড়ে যায় ইমার্জেন্সি অপারেশন করা লাগে। খুলনা মেডিকেল কলেজের সার্জারি সবচেয়ে বড় ডাক্তার জিনি তাকে দিয়ে সার্জারি টা করানো হয়। পনেরো-ষোলো দিন পরে আমার যে সমস্যা আবার একই সমস্যা হয়ে যায়। এক মাসের মাথায় ডাক্তার আবার অপারেশন করতে চাই। তখন অপারেশনের জন্য ভর্তি হয়েও কিছু সিস্টার এবং ডাক্তারদের পরামর্শে আমি অপারেশনটা না করিয়ে ইন্ডিয়া চলে যায়। সেখানে ডাক্তার দেখে আমাকে বলে এ কি করেছে আপনাকে। আমরা জীবনেও এমন অপারেশন দেখিনি। ডাক্তার তিন মাসের ওষুধ দেয় তিন মাস পর আমি আবার যাই ইন্ডিয়া।তখন আমার সমস্যাটা অনেকটাই কমে গিয়েছিল। তখন আবার যায় ।এবার আবার ডাক্তার আমাকে এফএনএসি করতে দেয়। আমার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায় সবার ধারনা ছিল আমার ক্যান্সার হয়ে গেছে। যাই হোক রিপোর্ট ভালো আসে। আমি গত বছর যখন দেশে আসি তখন থেকে শুরু হয় করোনা। শুরু হয়ে যায় আমার জীবনের আর একটা অধ্যায়। কোথাও কোন ডাক্তার দেখানো যাচ্ছিল না ইন্ডিয়া যাওয়া যাচ্ছিল না। তিন-চারদিন করে খুলনায় গিয়ে বিভিন্ন ডাক্তার দেখাতে ব্যর্থ হয়ে বাড়ি ফিরি। কোন ডাক্তার দেখাতে পারি না। শেষমেষ আমি যাই আমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেখানকার আর এম ও আমাকে কিছু পরামর্শ দেয়। এবং একজন ডাক্তারের এড্রেস দেয় সেখানে রেফার করে। কিন্তু সেখানেও আমি দেখাতে পারি নাই। কারণ করণাতে ডাক্তারা রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছিল। প্রথম অপারেশন এর ছয় মাস পর এলাকার একজন সার্জারি ডাক্তার দিয়ে দ্বিতীয়বার আবার অপারেশন করানো হয়। এভাবে আমি খুব ভেঙে পরি। আমার বাচ্চা দুইটা খুব ছোট। ওদের কথা চিন্তা করে, আব্বা মা আত্মীয় স্বজন শাশুড়ি সবার কান্না দেখে আমিও খুব কাঁদতাম। মন খারাপ থাকতো সারাক্ষণ। যে আমি মারা গেলে আমার এতোটুকু বাচ্চাদের কি হবে। কিছু একটা করার ইচ্ছা আমার বরাবরই ছিল। শ্বশুরবাড়িতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা নিজের একটা পরিচয় তৈরি করা আমার আমি কে চেনো। আমার যে মেধা আছে সেটাকে যেন নষ্ট না হতে দেই এই ইচ্ছে টা তৈরি হয় আমার বিয়ের পর থেকে। তো আমার দু একজন শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে পরামর্শ দিলেন যে আমি যেন কিছু করি। তাহলে আর মন খারাপ থাকবে না। আমি কাজ নিয়ে বিজি থাকলে মন খারাপ করার সুযোগ থাকবে না। আমি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে দিনে রাতে সব সময় আল্লাহকে খুব ডাকি। আল্লাহকে সব সময় স্মরণ করি আল্লাহ যেন আমার বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে আমাকে সুস্থ করে দেয়।
🥲আমার হাজবেন্ড করোনার পথ থেকে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। যেহেতু পরিবারের অবস্থা মোটামুটি ভালো পরিশ্রম করার অভ্যাস তার নাই। সে কিছু ঘর ভাড়া পায় এতেই অনেক খুশি। আমি কখনো কিছু চাইলে না করে না কিন্তু কখন দিবে সেটা বলতে পারেনা অনেক ভাল মানুষ যে। বাজার করতে বললে সে খুব খুশি হাজার হাজার টাকার বাজার করে নিয়ে আসবে কিন্তু যেই আমাকে কিছু দিতে সেই বলবেঃ দিব কয়দিন পরে। এমন সময় আমার সরকারি চাকরির বয়স শেষ। ছোট বাচ্চা অসুস্থতা সবকিছু মিলায়ে দূরে যাওয়া সম্ভব নয়। খুঁজতে থাকি ঘরে বসে কি করা যায়। কথা হয় একটা প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি ব্যাপারে। কিন্তু করোনার পর থেকে তো স্কুল বন্ধ । সেটা আর হলো না।
বুটিকস এর ব্যাপারে আমার ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক ছিল তাই আমি এটি নিয়ে কাজ শুরু করে দিই। আমি একটি পেজ খুলি। পেজটি খোলা ছিল গতবছর ঠিক আজকের দিনে। আজকে আমার নিজের জন্মদিন আমার বিজনেস এর জন্মদিন। চলছে মোটামুটি আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ। আমিও অনেকটা সুস্থ আগের থেকে। চিকিৎসা চলছে আমার বিজনেস ও চলছে। আমি বিজনেসের কাজে একটু পিছিয়ে আছি কেননা আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি মাঝে মাঝে। সে সময় আমি কোথাও একটিভ থাকতে পারিনা। না পেজে না গ্রুপে না আমার পার্সোনাল আইডিতে না আমার কাজে। যাইহোক গতবছর আমার জন্মদিনে আমার পেজটি ক্রিয়েট করি কিন্তু কার্যক্রম শুরু হয় আরো পর থেকে।
এই এক বছরে আমি পেয়েছি হাজারো ভাই বোন। পেয়েছি অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী। পেয়েছি অনেক সৌভাগ্য বান ক্রেতা। পেয়েছি এত সুন্দর একটি প্ল্যাটফর্ম। যে কারণে আমি আজকে আমার মনের কথা লিখতে পারছি। আমি যেহেতু অসুস্থ ঠিকমতো কাজ করতে পারিনা তাও আমি আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া জানাই। আমার এই অল্পদিনে দেড় লাখ টাকার উপরে সেল হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
আগামী মাস থেকে আমি এবং আমার হাজব্যান্ড দুজনে মিলে একটি শোরুম চালু করতে যাচ্ছি। সবাই দোয়া করবেন আমার স্বপ্নটি এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি সেই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই একটু একটু করে আগাচ্ছি। আমি আশা করি আশা নয় বিশ্বাস আল্লাহ যখন আমাকে দ্বিতীয় জীবন দিয়েছেন আমার স্বপ্নটাকে আল্লাহ পূরণ করে দিবেন।
🙏আলহামদুলিল্লাহ শ্বামি , সন্তান, শাশুড়ি কে নিয়ে বেশ ভালো আছি। দোয়া চাই সবার কাছে।
লেখায় কোন ভূল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ। আপনাদের সময় নষ্ট করার জন্য দুঃখিত।
🎂 আজকে আমার এবং আমার উদ্যোক্তা জীবনের জম্মদিন।এত মানুষের কাছে এত ভালোবাসা পেয়েছি আমি আজকে ভাষায় প্রকাশ করে বোঝাতে পারবো না।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা সবাইকে।
🌿আমি কাজ করছি মেয়েদের পোশাক,ঘি,মধু, চুইঝাল, কসমেটিক নিয়ে। সিগনেচার প্রোডাক্ট হাতের কাজের থ্রিপিস শাড়ি বাচ্চাদের ড্রেস বা যাবতীয় বুটিকস আইটেম।
♥️ পেজ Apshara Boutiques And Fashion Collection
সবাই আমার পেজে একটু লাইক ফলো দিবেন প্লিজ। আপনাদের একটা লাইভ আমার কাজে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করবে।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬০৭
Date:- ২৬/০৮/২০২১
🌻ফারহানা আক্তার রিম্পা
🌻🌻কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
🌻🌻🌻ব্যাচ নং 12
🌻🌻🌻🌻রেজিস্ট্রেশন 43274
🌻🌻🌻🌻🌻উপজেলা ফকিরহাট
🌻🌻🌻🌻🌻🌻জেলা বাগেরহাট