হার না মানা মেঘলা আমি🙋♀️
হার না মানা মেঘলা আমি
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পরিবার। আমি আপনাদের আদোরের মেঘলা সুলতানা। আজ বলবো আমার জীবন এর কিছু চড়াই-উতরাই এর গল্প। আশা করি সবাই পড়বেন।
গতো ২০ সালের জুলাই মাস এ আমার জীবনে এক দমকা হাওয়া আসে। এক অসৎ নারী ও আমার মেয়ের বাবা আমার ও আমার মেয়ের জীবনটা মাঝ নদীতে ভাসিয়ে দেয়
অনেক চেষ্টা করেছিলাম সংসারটা ধরে রাখার। কিন্তু তাঁর অসৎ কার্যক্রম এর সাথী না হতে পারায় ৮ মাস এর দুধের শিশুকে কোলে দিয়ে তাড়িয়ে দেয় আমায়। সব সয়ে যখন দেখলাম যে আমাকে সে আর তাঁর জীবন এ রাখবেই না তখন শেষ পর্যন্ত আমি পুরো পৃথিবীর কাছে তাঁর পাপকে প্রমাণ করে দিলাম। আমি প্রতিবাদ করলাম অন্যায় এর।
শেষ পর্যন্ত আমি মাননীয় আদালতের কাছেও বিচার চাইলাম৷ দূর্ভাগ্য আমার,, আজ ১০ মাস চলে আজও এক বিন্দু বিচার পাইনি আমি। সেই থেকে থাকা শুরু করলাম বাবার বাড়ি। বাবা-মা দুজনই অসুস্থ, হাঁটতেও পারেননা। বড়ো ভাই চান আমার বাচ্চাকে দিয়ে দেই, আমি আবার বিয়ে করি। কিন্তু সেটা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। তাই অনেক অশান্তিতে এতোদিন বাবার বাড়ি থাকলেও গতো ৩ মাস আগে বাড়ি থেকেও বেড়িয়ে এসেছি। বাবার বাড়ি থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে একজন হাজি আঙ্কেল এর বাসায় ভাড়া থাকি।
আমি গতো নভেম্বর থেকে অনেক চেষ্টা করেছিলাম একটা চাকরির জন্য। কোনোভাবেই মানসম্মত একটা চাকরি পাচ্ছিলাম না,, কারণ বাচ্চা ছোট যে কোনো চাকরি পেলেই সেটা করা পসিবল ছিলো না। শেষে ২০ সালের নভেম্বর এ একেবারে শূন্য হাতে আমি চিন্তা করলাম আমি নিজে কিছু একটা করবো। তখন আমি কাছের একটা এনজিও থেকে ১০ হাজার টাকা লোন তুলে মহিলাদের কিছু গার্মেন্টস আইটেম গোপালগঞ্জ থেকে এনে বাড়িতে বিক্রি করা শুরু করলাম। তারপর ধিরে ধিরে একসময় ফোন কিনলাম। একদিন দেখি আমার একজন শ্রদ্ধেয় প্রফেসর আমাকে আমার এই প্রিয় প্লাটফর্ম... "নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন" এ ইনভাইট দিয়েছেন। আমি এক্সেপ্ট করি। মাঝে মাঝে পোস্ট পড়তাম। বাট কিছু লিখতাম না বা কিছু বুঝতামও না গ্রুপ সম্বন্ধে।
তারপর কিছু মাস পরে আমি একদিন ভাবলাম আমি অনলাইনে কিছু শুরু করি, আমি যে বিজনেস করছি এটাতো শুধু গ্রামের মানুষ জানে। সবাইকে জানাতে পারলে বেশি ভালো হবে। তখন আমি ভাবলাম কি নিয়ে শুরু করা যায়.... একদিন ভাবলাম আমি একবার মরিঙ্গা / সজিনার ব্যাপারে একটা ট্রেনিং করেছিল ২০১৭ সালে। ভাবলাম এটা তো সুপার ফুড, ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার, থাইরয়েড, ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ সহ প্রায় ৩০০ রোগের প্রতিরোধক । অনেকের উপকারে আসবে। তখন একদিন আমার প্রোফাইলে পোস্ট করলাম। ভাবলাম,,, দেখি কি হয়। দেখি অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করছে। নিতে চাচ্ছে। এরপর আমি আস্তে আস্তে এগোই.... এবং এটা এখন আমার সিগনেচার প্রডাক্ট
একদিন ভাবছি আমি তো একটা গ্রুপে ছিলাম,, খুব ভালো সেটা কই
কিন্তু খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কিভাবে যেনো বেরিয়ে গেছিলাম। তখন একদিন স্যারকে কল করে আমাকে ইনভাইট দিতে বললাম, স্যার দিলেন। শেষে আমি ১৩ তম ব্যাচ এ রেজিষ্ট্রেশন করেছি। সেই মেঘলা আজ এই প্লাটফর্ম কে পেয়ে জীবন এর মোড় ঘুরিয়ে ফেলেছি আলহামদুলিল্লাহ। আমি পেয়েছি বিশাল এক পরিবার, পেয়েছি টিম টাইগার্স আপনজন পরিবার। পেয়েছি অসংখ্য মানুষ এর ভালোবাসা। পেয়েছি অসংখ্য সম্ভাবনাময় দ্বার।
জেনে খুশী হবেন যে সেই শূন্য থেকে শুরু করে আজ আমি বাগেরহাট টাইগার্স টিম এর ৭ জনে মিলে তৈরী হওয়া একটা যৌথ কোম্পানির একজন গর্বিত ওনার। আজ আছে আমার ১০০+ অর্গাণিক প্রডাক্ট ও বিভিন্ন পোশাকাদি। আমি #সৌদিআরবে ৩ জন ভাইয়ার সাথে কাজ করছি। প্রতি মাসে তাঁদের বিভিন্ন পোশাকাদি পাঠিয়ে চলেছি। আমিও স্বপ্ন বাস্তবায়ন এর লক্ষ্যে এগোচ্ছি, তাঁদেরও হেল্প করছি। আমি আমার ও আমার বাচ্চার সমস্ত খরচ চালিয়ে, ঘর ভাড়া দিয়ে, বাবা-মা এর ওষুধ খরচ চালিয়ে, ছোট ভাইটাকে হাফেজ করতে হেল্প করে চলেছি। কখনো একটা দিন এর জন্য ভেঙে পড়িনি। কখনো একটা মুহূর্তের জন্য ভাবিনি এক বিন্দু অসৎ পথ অবলম্বন করবো। শতো কষ্টেও চোখের পানি মুছে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ঘুরে দাড়িয়েছি। আজও সব কিছুই এক হাতে করি অন্য হাতে থাকে বাচ্চা। হ্যা ভেঙে পড়িনি কখনো তবে একদিনে চিনেছি অনেক আপনজনকে
আমি বিশ্বাস করি স্যারের এই মহতি উদ্যোগের জন্য আমার মতো লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষ এর হৃদয় নক্ষত্রের মতো জ্বলে থাকবেন চিরকাল। তিনি আমার পথপ্রদর্শক। নতুন জীবন পেয়েছি এই পরিবার পেয়ে। আমি জানি আমি পারবো। শুধু আমাকে সৎ থাকতে হবে, আমাকে পরিশ্রম করে যেতে হবে। আমি আজও প্রতিবাদী, আগামীতেও থাকবো৷ আমি আজ আর কাউকে দোষ দেই না। তবে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি তাঁদের প্রতি। কারণ,, তাঁরা যদি নির্মমভাবে আমাকে না ঠকাতো, তাহলে বোধহয় আমি জীবন এর অর্থই বুঝতাম না। আমি মিস করতাম অনেক কিছু। তাই আমি আজ মন থেকে কৃতজ্ঞ আমাকে জীবন চেনানোর জন্য
আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেনো সততা ও পরিশ্রম এর দ্বারা এগিয়ে যেতে পারি। মেয়েটাকে মানুষ এর মতো মানুষ করতে পারি। বাবা-মা কে হেল্প করতে পারি। কখনো যেনো হোটচ না খাই, কোনোদিন যেনো সততার সাথে বিন্দুমাত্রও কম্প্রোমাইজ না করি। খাঁটি পণ্য ও সেবা দিয়ে যেনো সকলের মন জয় করে নিতে পারি৷ চাকিরির জন্য যে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি... সেই কষ্টটা যেনো অন্য একজন নারী না করেন,,, অন্তত একজন অসহায় নারীর হলেও যেনো জীবন বদলাতে পারি। পৃথিবীর বুকে যতদিন আছি, প্রিয় প্লাটফর্মে ততদিন থাকবো ইনশাআল্লাহ। আমার পক্ষ থেকে সবার জন্য অনেক অনেক দোয়া ও ভালোবাসা অবিরাম
**📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬২৩**
Date:- ১৮-১৯/০৯/২০২১
কমিউনিটি ভলেন্টিয়ার
জেলাঃ বাগেরহাট
ব্যাচ নংঃ ১৩,
রেজিষ্ট্রেশন নংঃ ৫৮৬০২
মোবাইলঃ 01736466014
বিজনেস পেইজ