কর্ম জীবনের একটি দিনের গল্প
গল্পে গল্পে #সেলপোস্ট
কর্ম জীবনের একটি দিনের গল্প
জীবনের কোন কিছুই সহজ ভাবে অর্জন করা যায় না। সেটার জন্য নিরালস ভাবে পরিশ্রম করতে হয় এবং ধৈর্য সহকারে লেগে থাকতে হয়। আজকে আপনাদের সাথে আমি আমার কর্ম লাইফের একটা দিনের কথা শেয়ার করব। আপাতদৃষ্টিতে অনেকের কাছে মনে হতে পারে সাফলতা হয় তো ছেলের হাতের মোয়া, যা ইচ্ছা করলেই হয়তো পাওয়া যায়, আসলেই কি তাই!!? সফলতা কি এতটাই সহজ!!?? কখনোই না। যারা আজকে সফলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তাদের প্রত্যেককেই রয়েছে অনেক ঘাত- প্রতিঘাত, অনেক ঝড় -ঝাপটা, অনেক উঁচু-নিচু পথ পাড়ি দেওয়ার গল্প।
বেশ কিছু দিন আগে প্রডাক্ট সোর্সিংয়ের জন্য আমি ঢাকা গিয়েছিলাম। এই একদিনের গল্প আপনাদের কাছে শেয়ার করছি। স্বভাবতই খুব ভোরে আমাকে রওনা হতে হবে দেখে রাতেই হাতের সব কাজ গুছিয়ে রাখি। কোন কোন প্রোডাক্ট গুলো সংগ্রহ করতে হবে তার লিস্ট তৈরি, রিজেক্ট প্রোডাক্টগুলো এক্সচেঞ্জ করতে হবে, বেঁচে যাওয়া প্রোডাক্টগুলো চেঞ্জ, বিভিন্ন দোকানের মেমো সংগ্রহে রাখা, কি পরিমান প্রডাক্ট সংগ্রহ করবো সে অনুযায়ী টাকার হিসেবটা করে সঙ্গে নেওয়া, বাসের টিকিটটা ঠিকমতো ব্যাগে উঠিয়েছি কিনা সেটা দেখে নেওয়া, প্রয়োজনীয় জিনিস হিসাবে মোবাইল ফোনের চার্জারটা ও সঙ্গে নেওয়া, সবকিছু দেখে যখন ঘুমাতে গেলাম তখন রাত তিনটা বাজে। আমাকে আবার ভোর ৫ টার সময় উঠতে হবে, কারন আমার বাসের টিকিট কেটেছি ৬ টায়। তাই ঘুম বলতে মাত্র ২ঘন্টা। তাও খুব ভালোভাবে ঘুমাতে পারিনি জার্নি করার টেনসনে।
নিদিষ্ট সময় বাস ছাড়লো আর আমি ছুটে চলেছি নির্দিষ্ট গন্তব্যের পথে। বাস জার্নিতে খুব অসুবিধা হয় আমার তাই বমির ট্যাবলেট খাওয়া সত্বেও দুই-দুবার বমি হয়ে গেল। জার্নি পথেই অনেকটা ক্লান্ত হয়ে গেলাম। অনেকটা দুর্বল শরীর নিয়েও চলছি তবুও মনের কোথাও মনোবলের ঘাটতি নেই আমার। বাস থেকে নেমে সিএনজি নিয়ে রওনা হলাম প্রডাক্টস সংগ্রহের পথে পথিমধ্যে আবারো একবার বমি করে ফেললাম। এবার আমি অনেকটাই দুর্বল একটা মানুষ। তবুও যেন মনে এতোটুকু মনোবলের ঘাটতি নেই।
যখন নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছালাম তখন ১১ টা বাজে। তখন পর্যন্ত আমি একদমই না খাওয়া। স্বভাবতই আমরা যারা বাইরে থেকে প্রোডাক্ট সোর্সিংয়ে যাই তাদের সেলার মালিকরা খুবই রেস্পেক্ট করেন। আমার মুখের দিকে তাকিয়েই মালিক-কর্মচারী কে ডেকে বলল আপার জন্য খাবারের ব্যবস্থা কর। আপা প্লিজ একটু বসেন আপনাকে দেখে খুব ক্লান্ত লাগছে। বলতে বলতেই দেখি কর্মচারী খাবার নিয়ে হাজির। সকারের নাস্তা হিসেবে পরোটা নিয়ে এসেছে সাথে বুটের ডাল এবং ডিম ভাজি। আমি তাদের আপ্যায়ন মনোভাব দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কিন্তু আমাকে আবারো ফিরতে হবে আবারও জার্নি করতে হবে তাই আমি খাবার খেতে পারবো না কথাটা বুঝিয়ে বলতেই তারা খাবারটা প্যাক করে আমার হাতে দিয়ে বললেন আপনার সুবিধা মতো সময় খাবেন আপা।
এভাবে একের পর এক দোকানে ছুটে চলা। লাঞ্চের সময় ও অনুরূপ আরেকটি খাবারের প্যাকেট পেলাম অন্য আর একটা দোকান মালিকের কাছ থেকে। অনেক বার বমি করেছি শুনে সে ঝাল খাবার না দিয়ে ফালুদার একটা বক্স এনে হাতে দিয়ে বললেন এটা খেলে আপনার ভালো লাগবে, শরীরে শক্তি পাবেন। অনাদের কাউ কেই আমি ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাইনা। পারস্পরিক সহযোগিতায় এভাবেই যুগ যুগ ধরে সামনে এগিয়ে চলেছে আমাদের সমাজ। সব কাজ শেষ করে যখন প্রোডাক্ট গুলো সব বুঝিয়ে দিয়ে আসলাম দোকান মালিকদের কাছে ট্রান্সপোর্টে দেওয়ার জন্য তখন ঘড়ির কাটায় সময় বাজে ৪ টা।
দ্রুত সেখান থেকে বের হয়ে রওনা দিলাম কমলাপুর রেল স্টেশনের দিকে। যে করেই হোক আমাকে ৫ টা ট্রেন ধরতে হবে, যেটা সিরাজগঞ্জ শহরে এসে তার শেষ বিরোতি দেয়। আমি যখন ট্রেনে এসে বসলাম তখন আর মাত্র ১০ মিনিট আছে ট্রেনটা ছাড়ার। কিছু সময়ের মধ্যেই ট্রেনটা ছেড়ে দিলো। এবার কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বা ফেললাম আমি।এই সারাদিনের দৌড়াদৌড়ির মধ্যে আমি কিন্তু এখনো অভুক্ত। ট্রেনটা ছেড়ে দেবার পর এবার চোখেমুখে কিছুটা পানি দিয়ে নিজেকে একটু ফ্রেস করলাম। ট্রেনে জার্নি টা আমি খুবই কম্ফোর্টেবল ফিল করি। এটাতে আমার তেমন কোন পবলেম হয় না।তাই এবার খাবারের প্যাকেট টা খুলে কিছুটা খাবার খেয়ে নিজেকে একটু শক্ত করলাম।
আমি যখন বাসায় পৌঁছাই তখন বাজে রাত ৯ঃ৩০ মিনিট। বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে রাতের খাবার খাওয়ার পর যখন সারাদিন পর নেট অন করলাম সঙ্গে সঙ্গেই দেখলাম আমাদের শ্রদ্ধেয় স্যারের বন্ধু উদ্যোক্তাদের ট্রেইনার মনির খান ভাইয়ের জুম মিটাআপে অংশগ্রহণের লিংক। কালক্ষেপন না করে সঙ্গে সঙ্গেই এড হলাম অনাদের সাথে। এখানে অনেক সফল ব্যক্তিদের বাস্তব অভিজ্ঞতা মনোযোগ সহকারে শুনলাম। অনেক কিছু শিখলাম অনাদের থেকে।মিটআপ শেষ হতে হতে রাত ১২ টা পার হয়ে গেলো। শরীর আমার ভীষণ ক্লান্ত কিন্তু মনোবল এখনো আগের মতোই অটুট।
বেডে যখন শুতে আসলাম হাত দুটোর ব্যথায় আমি কাতর। এদোকান থেকে ওদোকানে যেতে দুহাতে যে ভারী ব্যাগ টেনে বইয়েছি তার ফলস্বরূপ এবং দীর্ঘ সময় নেটে থাকার ফলে ততক্ষণে আমার মাথা এবং হাত দুটোই প্রচন্ড ব্যথা করছে যার জন্য আমি ঘুমাতে চেয়েও ভালো ভাবে ঘুমাতে পারছি না। তার মধ্যে মাথায় তো এক্সটা একটা টেনশন আছেই প্রডাক্ট গুলো ঠিক মতো হাতে পাবো তো !সব মিলিয়ে খুব একটা ভালো ঘুমাতেও পারলাম না......এতোকিছুর পরেও সফলতার ধারের কাছেও কিন্তু যেতে পারিনি তবে ইচ্ছা, মনোবল, প্রচেষ্টা সব কিছুই এখনো অব্যাহত আছে। ইনশাআল্লাহ হয়তো একদিন এর সুফল পাবো।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে--৬১০
Date:31/08/2021
বন্যা পারভেজ
ওনার অফ Orthi Fashion House
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার এম্বাসেডর।
কমিউনিটি ভলেন্টিয়ার।
রেজিষ্ট্রেশন টিম মেম্বার।
ব্যাচঃ ৮ ম।
রেজিঃ১৩৮৬৩।
জেলাঃ সিরাজগঞ্জ।