জীবন বড়ই বৈচিত্র্য ময়!জীবন সেতো ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়!!
জীবন বড়ই বৈচিত্র্য ময়!জীবন সেতো ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়!!
জীবন সেতো বর্ষার আকাশের মতো এই রোদ তো ক্ষণিকেই তা কালো মেঘে ভরে যায়,ক্ষণিকেই আবার প্রবল বর্ষনে প্লাবিত করে সবকিছু!!
প্রকৃতির নিয়ম,প্রকৃতির খেলা!আমরা চাই বা না চাই প্রকৃতি নিজ নিজ নিয়মে আবর্তিত হবে।প্রকৃতি নিজ রহস্যম্যতায় আচ্ছন্ন করে রাখে পুরো পৃথিবী,প্রকৃতির খেলা মানতেই হবে।
১৯৯৯ সাল,১৯ মার্চ মানব জীবনের পূর্ণগুরুত্ব বাপের বাড়ি থেকে বিদায় নেয়ার পর আর কিছু মনে নেই শুধুমনে আছে দুপাশে সারি সারি সুপারি গাছে সজ্জিত সুদৃশ্য একটা বাড়িতে প্রবেশ করছি
আমি তখন ফেনী সরকারি কলেজের বি এস এস তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী, বাড়ির সবাই শিক্ষিত পারিপাশ্বিক পরিবেশ অত্যন্ত ভালো তাই পারিবারিক ভাবে বাধার সম্মুখিন হতে হয়নি তাই কলেজে যাওয়া পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া সমস্যা হয়নি।
ইতিমধ্যেই আমি কনসিপ করি, পরীক্ষা ঘনিয়ে আসছে দুশ্চিন্তা বাড়ছে.......
শেষ রক্ষা হলো না পরীক্ষাটা আর দিতে পারলামনা
কিন্তু আমার মনে প্রচন্ড জিদ চেপে ধরে,আমি ঠিক করলাম প্রতিজ্ঞা করলাম, যেকোন ভাবে যেকোন মূল্যই আমি পড়াশুনা চালিয়ে যাবো ডিগ্রিটা কমপ্লিট করবো।
কিন্তু বিষয়টা অত সহজ ছিলো না যৌথ পরিবার, চোট বাচ্চা লালন-পালন, ইতিমধ্যেই হাসব্যান্ড দেশের বাইরে। সব মিলিয়ে অবস্থা মারাত্বক প্রতিকূল!
কিন্তু সিদ্ধান্তে অটল আমি সু্যোগ খুঁজতে থাকি সবসময়।প্রতিনিয়ত মন আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় আমার প্রতিজ্ঞার কথা আমার স্বপ্নের কথা!
ছাত্রী হিসেব খুব একটা খারাপ ছিলাম না ১৯৯৪ সালে সাইন্স গ্রুপ থেকে এস এস সি ফাষ্টডিভিশনে পাশ করি। ভর্তি হই ফেনী সরকারী কলেজে। বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব প্রায় ৮ মাইল তাই বড় ভাইয়দের সিদ্ধান্তে আর্টস এ ভর্তি হই।কারণ সাইন্সে পড়তে গেলে প্রাইভেট ইত্যাদি ঝামেলা।
অনেক হাসি, আনন্দ, আড্ডা, খাওয়া,পড়াশুনা কি যে দূর্দান্ত চলছিলো বলে বুঝানো যাবে না।
সকালে এক মাইল পথ হেঁটে ষ্টেশানে তারপর ট্রেনে করে কলেজে আসা । রিকসা ভাড়া লাগতো না কারণ কলেজের পিছনে একটা গেট ছিলো সরাসরি ষ্টেশান থেকে কলেজে ঢুকা যেতো এখন অবশ্য আর গেটটি নেই।বিকেলে আবার ট্রেনে করেই বাড়ি ফেরা!
দুর্ভাগ্যজনক ভাবে একটি বছর আমার লস হয় পরবর্তিতে ৯৭ সালে ফেনী সরকারী কলেজ থেকেপাশ করে বের হই।আাবার বি এস এস গ্রুপে ফেনী কলজেই এডমিশন।
পরের কাহিনি তো জেনেছেন ইতিমধ্যেই।আসলে কলেজ জীবনটা এত সুন্দর এত চমৎকার ভাবে উপভোগ করেছি যে আজও মাঝে মাঝে স্মৃতির পাতায় জমে থাকা ধূলোর প্রলেপ সরিয়ে দেখি সেই দিনগুলো.. আজও জ্বল জ্বল করছে হৃদয়ে!!
এলাকার সবাই একসাথে আসতাম যেতাম, খেতাম আড্ডা দিতাম তবে ক্লাস মিস করতাম না কখনোই।সবাই আমাদেরকে ফাজিপুরের রত্ন হিসেবে চিনতো।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে এলো সেই সুবর্ণ সময়!
মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করালে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন একটি কলেজের লেকচারার,উন্মূক্ততে ক্লাস নিতেন। উনার সুবাদে ২০০২ সালে ভার্তি হই বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বি এস এস কোর্সে। কেউ জানতো না। না জানার কারণটা ছিলো কেউ একজনের উপর জিদ,বা প্রতিশোধ আমি দেখিয়ে দিতে চেয়েছি আমি পারি আমি পারবো!
কেউ জানতো না।না আমার পরিবার, না স্বামীর পরিবার এমন কি আমার স্বামীও! ওকে বলিনি কারণ জানালে আমাকে পরিবারের ভয়ে হয়তো অনুমতি দিতো না আর এটাও জানতাম পরবর্তী তে জানতে পারলেও এমন সমস্যা হবে না। তাছাড়া আমার মনে এ শক্তি টা ছিলো যে আমি কোন অন্যায় করছি না এতে কারও ক্ষতির আশঙ্কাও নেই।
এর পরের সময়টা আমার জন্য আরও কঠিন যায়, ইতিমধ্যে আমি দুই সন্তানের মা।তাদের সেবা- যত্ন পড়াশুনা স্কুল। তার মধ্যে পড়াশোনাটা পরিবারের অগোচরে... সব মিলিয়ে কঠিন একটাঅবস্থা!বাচ্চার সাথে পড়তে বসি আরেকটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে। ও হ্যাঁ আমি কিন্তু গ্রামেই ছিলাম নয় ভাইবোনের পরিবার ২০/২৫ জন সদস্যের বিশাল পরিবার!
টিউটরিয়াল ক্লাস গুলো চালিয়ে যাওয়া তখন খুবই কঠিন ছিলো। টিউটরিয়াল কেন্দ্র ছিলো শেখ শহীদুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজ,বক্তারমুন্সী।যা আমার বাড়ির দক্ষিন দিকে অবস্থিত।যেহেতু পরিবার জানেনা আমাকে তাই বাড়তি কিছু কষ্ট করতে হতো। টিউটরিয়াল ক্লাসগুলো হতো শুক্রবারে তাই প্রতি বৃহঃস্পিতিবার বিকেলে দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে চলে যেতাম বাড়ির উত্তর দিকে ফেনী পাঠানবাড়ি রোড়ে আপার বাসায়।
শুক্রবার বাচ্চাদের আপার কাছে রেখে চলে যেতাম আমার বাড়ি অতিক্রম করে বক্তারমুন্সী কলেজে। ক্লাস শেষে বাসায় ফিরে বাচ্চাদের নিয়ে আবার ফিরতাম বাড়িতে।কারন সকালে বাচ্চার স্কুল। তখন অনেক সেশন জট ছিলো এভাবে দুটো বাচ্চা নিয়ে খুবই দূর্ভোগের মধ্যদিয়ে কেটেছে ছয়টি বছর!!!
হেরে যাইনি লেগে ছিলাম।অবশেষে আমি পৌঁছে যাই নিজ লক্ষ্যে।পূরণ করি নিজ প্রতিজ্ঞা!!আমি জয়ী হলাম যুদ্ধে!!
২০১২ সালে আমি কাঙ্খিত ডিগ্রী অর্জন করি।
এখন আমার মিশন....
আমার উদ্যোগ। হেরে যাবো না ইনশাআল্লাহ লেগে থাকবো আর সফল হবো।
সবাই অনুপ্রেরণা হয়েপাশে থাকবেন
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৩০
Date:- ২৭/০৯/২০২১ইং
আমি নাছিমা ভূইয়া,
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার,
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন।
ব্যাচ নংঃ ১৫
রেজিষ্ট্রেশন নংঃ৭৩২৭২
যুক্ত আছি ফেনী থেকে
আমার উদ্যোগের নাম
"নীলপদ্ম"
কাজ করছিঃবাচ্চাদের পোষাক,বেডশিট, হ্যান্ড পেইন্টেড শাড়ী,থ্রিপিস আর বাকরখানি নিয়ে।