জীবনের কিছু বাস্তবতা
আমি আমার জিবনে এই শহরের অনেক হসপিটালে রাত কাটিয়েছি, কখনো নিজেকে নিয়ে, কখনো বা নিজের ভাই বোন। আবার কখনো বা আত্মীয় স্বজন কে নিয়ে। কারন আমি হসপিটাল ডাক্তার এই বিষয়গুলো মোটামুটি একটু ভালো বুঝি,। তাই সবাই আমাকে নিয়েই ছুটে বেড়াত হসপিটালে। আবার কেউ বা আমাকে তার স্বার্থের জন্য ব্যবহার করত। কিন্তু আমি কিছু মনে করতাম না, কারন আমি এই কাজগুলো হাসিমুখে করে বেড়াতাম। এখনও করি।। আলহামদুলিল্লাহ। এটা আমাকে এক ধরনের আনন্দ দেয়।
এই মহামারীর পেন্টামিক সিচুয়েশনে কত মানুষ কে নিয়ে আমি হসপিটালে গিয়েছি, আমি জানি, আর আমার আল্লাহ জানে, যাদেরকে নিয়ে গিয়েছি, তারা জানে,। আমি এমন রোগী দেখেছি' সামান্য জ্বর, কিন্তু তাকে কেউ ধরে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছে না, ইভেন তার আত্মীয়স্বজন কেউ আসছে না। ভয়, যদি করোনা হয়?, আমি সাহস করে তাদেরকে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে আনছি। আলহামদুলিল্লাহ। অনেক মানুষ কে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে আসছি, কই আমার তো কিছু হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমার প্রতি সহায়তা ছিলো। কত রাতের আধারে ছুটে যেতাম। তাই কত মানুষের কত কথা শুনতাম?. আমি পাগল। আমি এটা, আমি সেটা। সেই কথা গুলো আমি হাসি মুখে হজম করেছি। আলহামদুলিল্লাহ।
এমনো হয়েছে, আমার বাসার একটা ছেলের খুব জ্বর, সে বিছানা থেকে উঠতে পারছেনা, আমি দেখলাম কেউ তার রুমে যাচ্ছেনা ভয়ে, যদি করোনা হয়, এইটা কোনো মানুষত্ব বোধ? যাইহোক আমি সাহস করে তার রুমে গেলাম। জরিয়ে ধরলাম, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কেমন লাগছে, সে আমায় ধরে চিৎকার করে কান্না করে দিলো। বলতেছে নিরব ভাই কেউ তো আমায় সারাদিন একটু দেখতে আসলোনা। আপনি আসলেন। আমি তাকে নিয়ে হসপিটাল গেলাম, তখন রাত ১০ টা সম্ভবত, আমি ডাক্তার ডাকলাম, যদিও কোনো ডাক্তার প্রথম পেলাম না।, অবশেষে আসলো একজন ডাক্তার, সেই করোনা টেষ্ট, দিলাম, আসলো পজেটিভ। তাও আমি ভয় পাচ্ছি না। মনে সাহস আছে। ওরে ভর্তি করলাম, সারারাত হসপিটালে কাটালাম। কখনো হসপিটালের ভিতর, কখনো বা বাহিরে, কখনো বা ইমারজেন্সি গেটে।তারপর দিন সকালে ছেলেটার মা, বাব, ভাই আসলো। তাদের কে বুঝিয়ে দিয়ে আমি বের হলাম হসপিটাল থেকে,।
সারারাত হসপিটাল কাটালাম, আমার তো এখন গোসল করে একটু রেস্ট নেয়া দরকার, বাসার যাওয়ার জন্য গারিতে উঠতে না উঠতেই বাসার রুম মেট এর ফোন, বলে নিরব ভাই, আপনি বাসায় আইসেন না, কেনো? বলে আপনি ওরে নিয়া গেলেন, ওর করোনা পজেটিভ, আপনি ধরেছেন, যদি কোন ভাবে আপনার শরীরে ভাইরাস থাকে, তাহলে তো বাসার সবার হবে।। ভাবলাম, খুব ভাবলাম। আমি হাসি মুখে বললাম ঠিক আছে,। এখন আমি কি করবো? বুঝতে পারতেছিনা। কোনো আত্তিও স্বজনের বাসায় যাব? যদি তাদের কোন ভাবে এটি হয়! তাহলে তো তারা আমাকে দোষারোপ করব। চোখে ঘুম, গোসল দরকার ।
আমার একটা ছোট ভাই ছিলো, আপন না, তবে আপন কেমন আপন হয়?? তার চাইতে বেশি আপন। সে খুব অসাধারণ ভালো মনের মানুষ। সে যে কতোটা ভালো মনের মানুষ তা বলে বুঝাতে পারবোনা। তাকে ফোন দিলাম, বললাম, ভাই এই এই ঘটনা, সে কোনো রকম ভাবনা ছাড়াই আমাকে বলল ভাইয়া তাড়াতাড়ি আমার বাসায় আসেন। আমি গাড়ি থেকে নেমে সজা তার বাসায় গেলাম, গোসল করলাম, দেন কিছুক্ষণ ঘুমালাম। ভালো লাগলো। আসলে আমরা সবাই মানুষ, সত্যি কি আসলে মানুষ?? হ্যাঁ কিছু কিছু মানুষ এখনো আছে, না থাকলে এই দুনিয়া এতো সুন্দর হতো না। তার উদাহরণ স্বরূপ আমার এই ছোট ভাই।।।
আমি যতবার হসপিটালে রাত কাটিয়েছি, ততবার আমার চোখ দিয়ে পানি পড়েছে, কিছু কিছু মানুষের হাহাকার দেখে, কিছু কিছু মানুষের কষ্ট দেখে,। আসলে হসপিটাল না গেলে বুঝাই যায়না, আল্লাহ তালার দেয়া সুস্থতা কত বড় নিয়ামত। এত বড় নিয়ামত পেয়েও আমরা আল্লাহর দরবারে সাধারণ শুকরিয়া আদায় করতে ভুলে যাই। আমরা আবার শিকার করি তার বান্দা? কেমন বান্দা?? বুঝে আসেনা৷ আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহি বুঝ দান করুক।।
আমি কত দেখেছি মানুষের হাহাকার, দেখেছি আপনজন হারাবার কষ্ট, এমনো দেখেছি কারো, বাবা মা, বা ভাই, বা কোন বোন ক্যান্সারে আক্রান্ত তার চিকিৎসার জন্য তার ফ্যামিলি তাদের সর্বোচ্চ হারিয়েছে,৷ শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পারেনি, সেই লাশ নিয়ে গ্রামে যাবে, সেই লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য কত অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার জিম্মি করে রেখেছে তাদেরকে, কোন ড্রাইভার 10000, কোন ড্রাইভার 5000, কোন ড্রাইভার 8000, এমনো দেখেছি। যার আপনজন হারিয়েছে, সে কোনো এম্বুলেন্স ড্রাইভার এর সামনে গিয়ে আঁচল বিছিয়ে ভিক্ষা চাচ্ছে তার আপনজনের লাশটা গ্রামের বাড়ি পৌঁছে দেয়ার জন্য,? একবারের জন্য আমরা ভবেছি কি হৃদয়বিদারক দৃশ্য হতে পারে?? না ভাবিনি,? কোনো সিনেমা নয় এটা, এটা বাস্তবতা বলছি।
হ্যাঁ আমি যতবার এমন দৃশ্য দেখেছি, কিছু না কিছু করার জন্য চেষ্টা করেছি তাদের কে। আলহামদুলিল্লাহ। আমি পেরেছি৷ এটা আমার মানুষত্ব বোধ। আমার জীবন দিয়ে হলেও আমি সেই মানুষ গুলো কে করেছি। এখনো করে যাই। আল্লাহ আমার ভিতরে সেই মানুষত্ব বোধ দিয়েছে,। আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ প্রতিটা মানুষকে মানুষত্ব বোধ দিয়ে বানিয়েছেন, কেউ কাজে লাগায়, কেউ বা লাগায় না।।
এখন না হয় আমার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছে। আমার বিজনেস চলে গিয়েছে। আমার অর্থনীতি পড়ে গিয়েছে, আমার অর্থনীতি অবস্থা বিজনেস সেগুলো পড়ে যাওয়ার মধ্যে কিছু কুৎসিত মানুষ নামে অমানুষের হাত ছিল। তাদের জন্য আমি কখনো বদ দোয়া করি না, তাদের জন্য দোয়া করে যাই এখনো। আল্লাহ তাদেরকে অনেক বড় করুক অনেক বড় বানান। অনেক ধনী বানান।
যখন আবার অনেক কিছু ছিল। তখন ২ হাতে টাকা ইনকাম করতাম। তখন মানুষের জন্য অনেক কিছু করতাম। ইনশাল্লাহ এখনো যতটুকু পারি করে যাই, করি, বা করার চেষ্টা করি, এই মন মানসিকতা টা সবার মধ্যে হয়ে ওঠে না। এই মানুষত্ব বোধটাও জাগানোর জন্য মনের সবচেয়ে বড় শুধু মনের সাহস টা দরকার হয়। আর কিছু নয়।।
,, আমি জীবনে অনেক শিক্ষা অর্জন করেছি। অনেক শিক্ষা গ্রহণ করেছি। সেই শিক্ষা থেকে আমি আবার ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করতেছি এবং সেটা নিজের জন্য নয়, এ পৃথিবীর আশেপাশের প্রতিটা মানুষের জন্য।। তার জন্য আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই। সবার ভালোবাসা চাই।। সবার ভালোবাসায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটা মানুষের সবচেয়ে বড় পথ। বড় রাস্তা।
এই আমাদের নিজের বলার মত একটা গল্প প্লাটফর্ম এ কত কত ভালো মানুষ তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আলহামদুলিল্লাহ। এ যেনো আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। উদ্যোক্তা পরের কথা, সবচেয়ে বড় কথা একজন ভালো মানুষ হওয়া।। আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর শিক্ষা গ্রহণ করে এবং প্রতিনিয়ত ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।।
শেষ করবো। কিছু কথা বলে, আমি নিজেকে দার এবং কিছু মানুষের পাশে দারাবার জন্য, জন্য আমাদের প্রিয় প্লাটফর্ম এ কিছু পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছি। সবাই আমাকে ভালোবেসে, মানুষের জন্য কিছু করার জন্য, আমায় অনেক অনেক সাপোর্ট দিবেন।
এই প্লাটফর্ম থেকে আমার অনেক কিছু পাওয়া। অনেক কিছু ভালোবাসি এই প্লাটফর্ম টাকে। এবং এই সাদা মনের মানুষটাকে। যে আমাদের ভালোমানুষ হোওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত শিখিয়ে যাচ্ছেন।
*📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬২৩*
Date:- ১৮-১৯/০৯/২০২১
Md. Nirob Hossain
ব্যাচঃ 11
রেজিষ্ট্রেশনঃ 20519
জেলাঃ মুন্সিগঞ্জ
বর্তমানঃ ঢাকা
কমিউনিটি ভলান্টিয়ারঃ নিজের বলার মত একটা গল্প প্লাটফর্ম।
মেম্বারঃ নিজের বলার মত একটা গল্প প্লাটফর্ম।