চিঠি| বাবা-মা পত্রের শুরুতেই আমার সালাম নিবেন,আসসালামু আলাইকুম |
"বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম "
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,চিঠি,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
প্রিয়,,
বাবা-মা পত্রের শুরুতেই আমার সালাম নিবেন,আসসালামু আলাইকুম ।আপনারা দুইজন কেমন আছেন? জানি আপনারা আমাকে/আমাদেরকে চেড়ে মোটেও ভালো নেই।নিশ্চয়ই আমার পত্রটি পেয়ে আপনারা আমার দেওয়া জরাজীর্ণ ব্যাতীত কষ্টকে ভুলে গেছেন। কারন আপনারাই পৃথিবীর সবচেয়ে দরদী পুরুষ ও নারী।
পৃথিবীর আলোর মুখ দেখার আগ মুহূর্তেও আপনাদের অনেক জালাতন করেছি।পৃথিবীতে আসার পরও সে জালাতনে ক্ষান্ত ছিলামনা আমি।আমি বড়ই অপরাধী, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপরাধী আমি।আমি দুনিয়াতে আসার পর আপনারা যেমনটা খুশি ও আনন্দে ছিলেন,ঠিক তেমনটা কষ্ট,দুঃখ ও আমি আপনাদেরকে দিয়েছি।জানিনা এমন অপরাধের ক্ষমা আমি পাবো কিনা।
জন্মের পর থেকে কতো আদর যত্নে আমাকে লালন করেছেন।শতো কষ্টের মাঝেও কোনো অভাব আমাকে বুঝতে দেননি।আপনাদের দুইজনের ভালোবাসা জুড়ে ছিলাম আমি।
আমাদের কতোইনা অভাব ছিলো বাবা কতো কষ্ট করতেন সারা দিন মাঠে রোধে বৃষ্টিতে ভিজে খাবারের জোগাড় আমার পড়াশোনার যাবতীয় খরচ জোগাড় করতেন।মা তার মায়া মমতা দিয়ে আমাকে আগলে রাখতেন আর বাবাকে সবসময় বলতেন আপনার এমন কষ্ঠ একদিন আমাদের সন্তান দুর করবে।কথা গুলো আমি বড় হয়ে ভুলেই গেছি।আমাকে কতো কষ্ট করে গ্রেজুয়েশন করাইছেন আপনারা।পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে কতো খুশিইনা হতেন আপনারা, বাড়িতে আত্নীয় স্বজনদের মিষ্টি খাওয়াইতেন খুশিতে অথচ ঘরে ভাত আন্তে পান্তা পুড়াইতো।সেদিন গুলোর কথা আজ বড্ড বেশি মনে পড়ছে।
আমার চাকরি হওয়ার পর দুইজনেই খুব খুশি হয়েছেন,আমার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করিয়েছেন।আপনারা ছেলের বউকে পেয়ে খুবই আনন্দিত হয়েছেন,আমাকে যেমনটা ভালোবাসতেন তাকেও তারচেয়ে কম ভালোবাসেননি আপনারা।আমি মাসে বেতনের টাকা পাঠাইতাম সে টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতো বলে বাবা বৃদ্ধ বয়েসেও মাঠে কাজ করেছেন।
যখন আপনাদের নাতিন দুনিয়াতে আসলো তাকে পেয়ে আপনারা মহা খুশি হয়েছেন,সে দিনের সে খুশির কথা আমার এখন খুব মনে পড়ছে।তাকে নিয়ে আপনারা সবসময় খেলা করতেন।তার মায়ের চেয়েও আপনারা তাকে বেশি যত্ন করেছেন, যেমনটা ছোট বেলায় আমাকে করেছেন।
চাকরির প্রমোশনে আমাকে চলে আসতে হলো বিদেশে,ভালো মাইনে পাই এখন সংসারে এখন আর অভাব নেই। তোমাদের ছেলে এখন বড় কোম্পানির বড় অফিসার, মাসে এখন লাখ টাকা কামাই করছে। কিন্তু তারপরেও যেনো কোনো বরকত নেই, মনে শান্তি পাচ্ছি না।মনে ভীষন শুন্যতা কাজ করছে।
সে দিনটা আমার ভিতরে এক ভয়ংকর খারাপ মানুষ এসে বস করেছিলো,সমাজের কালো ছায়া গুলো আমাকে চারদিক থেকে গ্রাস করেছিলো। আমি অন্ধকারে উতলা হয়ে মেতে উঠেছি,চারপাশের কান কথা গুলো আমাকে তীব্র ভাবে আঁকড়ে ধরেছিলো।সেদিনের সে ভুলটা ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।আমি ভুলেই গিয়েছিলাম বাবা মা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নেয়ামত, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম বাবা মা আমার জান্নাত,আমি ভুলেই গিয়েছিলাম বাবা মায়ের অতীতের সে কষ্টের দিনগুলোর কথা, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আজকের আমার এমন ভালো অবস্থানের পিছনে বাবা মায়ের সবচেয়ে বড় অবদান।আপনাদেরকে দুরে সরিয়ে দিয়েছি,বিদ্যাশ্রমের মতো মহা শুন্যতায় পাঠিয়ে দিয়েছি।সত্যি আমি বড়ই পাপিষ্ঠ, আমার এমন পাপের ক্ষমা হবে কিনা জানিনা।
আমাকে ক্ষমা করে দিও বাবা-মা।আজ আমি আমার ভিতরের অন্ধকারের কালো অসুভ অমানুষটাকে জ্বালিয়ে দিয়েছি।আমি বুঝতে পেরেছি তোমরাই আমার ইহকাল ও পরকালের সুখ।আমি শিগ্রই বিদেশ থেকে আসছি তোমাদের কাছে,তোমাদের কোলে আবার সেই আগের মতো ঘুমাতে চাই।তোমাদের বউমাও তার ভুল গুলো বুঝতে পেরেছে তাকেও তোমরা ক্ষমা করে দিও।সন্তানেরা যতো বড় অপরাধই করুকনা মা বাবা কখনো তাদেরকে বদদোয়া দেয় না ক্ষমা করে দেয়।
মা-বাবা আমি সত্যিই তোমাদেরকে অনেক ভালোবাসি তোমাদেরকে ছাড়া প্রতিটা মুহূর্ত এখন আমার ভীষন খারাপ কাটে।
অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাদের-
মা-বাবা তোমাদের চেলে আজ সুশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে, ভালোমানুষি চর্চা করছে, Iqbal Bahar Zahid স্যারের নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের শিক্ষালয়ে।আমার ভুল গুলো আমি বুঝতে পেরেছি এ শিক্ষালয়ে যুক্ত হয়ে,আজ তোমাদেরকে ভালোবাসি এ কথাটি বলার অনুপ্রেরণা পেয়েছি ইকাবাল বাহার স্যারের থেকে।আজ তোমাদেরকে চিঠি লিখতে বসেছি স্যারের শিক্ষা থেকে সাহস নিয়ে।আমাদের স্যারের জন্য দোয়া করবেন।
আমি খুব দ্রুত আসতেছি, তোমাদের বউমার সাথে বাড়িতে যাবেন।আজ আর লিখতে পারছিনা চোখ দিয়ে অজস্র্রে কান্না আসতেছে, আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
ইতি,,,,
আপনাদের আদরের সন্তান -সবুজ।
বিঃদ্রঃ আমাদের দেশে এমন হাজারো মা-বাবা আছেন অবহেলিত,বিদ্ধ্যাশ্রমে।চিঠিটি সমাজের সকল বাবা-মায়ের আদরের সন্তানদের উদ্যেশ্য লিখেছি।
আসুন আমরা অন্ধকারকে বেচে না নিয়ে আলোর পথকে বেচে নিই।পিতা-মাতাকে স্বর্বচ্ছটা দিয়ে ভালোবাসি। প্রতিদিন তাদেরকে ভালোবাসি কথাটি বলি।অনেক অজানা মানুষকে ভালোবাসি এ কথাটি বলে পেলি আমরা অথচ যারা আমাদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী ভালোবাসেন তাদেরকে আমরা ভালোবাসি কথাটি বলতে পারিনা।
আমি আমার বাবা-মাকে অনেক বেশি ভালোবাসি কথাটি বলেছি এবং প্রতিদিন বলবো,,,ইনশাআল্লাহ..
চিঠিটি যারা সম্পুর্ন পড়েছেন সবার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা। চিঠিটি ছিলো সম্পুর্ন আমার গল্পের বাহিরে।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬২৩
Date:- ১৭/০৯/২০২১
নাছির মির্জা
জেলা প্রতিনিধি-লক্ষীপুর
৮/৫১৪১
সৌদি আরব -আবহা