আমার জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প সেই জীবনের অনুপ্রেরণার গল্প নিয়েই আজকের এই লিখাটি।
বাস্তব জীবনের গল্প
শিশু কাল
আমার জন্ম ১৯৮৫ সালের ১০ অক্টোবর।
আমরা ২ ভাই, ৩ বোন। দুই বোনের পরে আমার
জম্ম অনেক আদরের ছিলাম কারণ দুই বোনের পরে আমি ছেলে সন্তান হয়েছি । বাবা চাকুরী করতেন ঢাকায় টঙ্গীতে একটি মিলে নিশাত জুট মিল। সেখানে আমাদের নিজেস্ব ছোট একটি বাড়ি ছিল।সেই সুবাদে আমার শিশু কালের বেশি সময় কাটে ঢাকাতেই, 1919 সালের
শেষের দিকে আমার বাবা চাকুরী ছেড়ে এবং বাড়ি বিক্রি করে আমরা স্বপরিবারে দেশের বাড়ি শরীয়তপুরে চলেআসি। বাড়ি বিক্রি এবং বাবার চাকুরী ছাড়ার কারণ ছিল আমার বাবা যেই বাড়িটি কিনে, কিনার পরেই আমরা খুব সুখেই বসবাস করতে থাকি, ঠিক দুই থেকে আড়াই বছর পরে এক লোক এসে দাবি করে এইটা তার বাড়ি তিনিও তার কাগজপত্র দেখায়, আমর বাবাও আমাদের কাগজপত্র দেখায় পরে স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যান নিয়ে সালিশ বসায় সালিশে বলে দুইজনেই যখন কিনেছেন কী আর করবেন ভাগকরে অর্ধেক অর্ধেক নিন, আমার বাবা রাজিই ছিল, কিন্তু তিনি রাজি নন তিনি কেইচ কলকশনে চলে গলেন, আমার বাবা আমাদের গ্রামের মুটামুটি সব জায়গা বিক্রি করে তার সাধ্য খ
নাম- মাএ দামে বিক্রি করে ও চাকুরী ছেড়ে স্বপরিবারে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন।
শুরু হলো শিক্ষা জীবন
1992 তখন আমার বয়স ৭ বছর,তখন আমাকে আমাদের গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন। প্রাইমারিতে একেবারে আমাকে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করলেন যেহেতু আমার বয়স ৭ বছর । আমি খুবই ভালো ছাত্র ছিলাম পড়ালিখায় খুবই মনোযোগী ছিলাম।
এবং খুবই ভালো বলতে মিশতে পারতাম সবার সাথে। ক্লাসের সবাই আমাকে ভালোবাসত এবং আমাকে খুবই মানতো কারণ আমি ঢাকা থেকে আসছি এছাড়াও পড়ালেখায় ছিলাম দুরন্ত ও কথাবার্তি ভালো গুছিয়ে বলতে পারতাম এবং খেলাধুলায়ও ছিলাম দুরন্ত, এগুলো দেখে স্কুলের স্যার ও ম্যাডাম আমাকে খুবই ভালোবাসতো তাদের চোখে পরে গেলাম আমাকে করে দিলো ক্লাসের কেপ্টিন এখন তো সবাই আরও বেশি মানে আমাকে, এভাবে এগোতে থাকি এসে গেল বার্ষিক পরীক্ষা পরীক্ষায় তো খুবই ভালো রেজাল্ট ছয় ছাবজেক্টের পাচঁটাই একশ করে একটায় আটানব্বই ক্লাস ফোরে হলো আমার রোলনং ১, এভাবেই চলতে থাকলো ক্লাস ফোরে বার্ষিক পরীক্ষায় ও ভালো করলাম
ক্লাস ফাইভেও আমি প্রথম হলাম। স্যার ও ম্যাডাম দের আশা বেড়ে গেল আমাকে নিয়ে আমাকে ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পরীক্ষা দিতে হবে আমাকে সহ আরও কয়েক জন প্রস্তুত করলো, কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার পরীক্ষা আগে আমি খুবই অসুস্থ হয়ে যাই তারপরেও পরীক্ষা দিছি কিন্তু সবগুলো দিতে পারিনি। শেষ প্রাইমারি শিক্ষা। শুরু হলো হাইস্কুল জিবন।ক্লাস সিক্স, সেভেন, এইট ও নাইনেও ছিলাম আমি ফাস্ট বয়। আমি ক্লাস এইটে থাকতেই আমাদের সংসারে আস্তে আস্তে অভাব আসতে থাকে। কারণ আমরা ঢাকা থেকে দেশ আসার পরে আমার বাবা তেমন কোন বড়ো কাজ করেন নি টুকি টাকি কৃষি কাজ করতো। এরই মধ্যে আমার বড়ো বোনের বিয়ে তার দুই বছর পরে মেঝো বোনের বিয়ে দিয়ে বেশ টাকা খরচ হয়ে যায়। আমরা যখন ঢাকা থেকে আসি তখন আমার বাবার কাছে বেশ টাকা ছিলো প্রায় আট লক্ষ টাকা,1991সালের দিকে আটলক্ষ টাকা মানে মোটামুটি অনেক গুলো টাকা যাই হোক কথায় আছে না বশে খেলে জমিদারের জমিদারিও ফুরিয়ে যায় ঠিক তাই হলো 5/6 বছরের মধ্যে আমার বাবার হাত একেবারেই শুন্য হয়ে যায়। বড়ো দুই বোনের বিয়ে হয়েছে তারপরেও আমি ছোট ভাই ছোট বোন আর মা ও বাবা মোটা ৫জনের সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম, এর মধ্যে আবার বাবা ডায়বেটিস রোগি, ডায়বেটিসে খুবই কাবু করে ফেলছে তাকে, দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে কর্ম অক্ষম হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে আরও অসুস্থ হয়ে যায় তখন ডাক্তার বলে তাকে তাড়াতাড়ি ঢাকায় সাহা্বাগ ডায়বেটিস হাসপাতালে নিয়ে যান। ঠিক ডাক্তার যাবললো তাই করলাম নিয়ে গেলাম সাহাবাগ ডায়াবেটিস হাসপাতালে। নিয়ম অনুযায়ী ডাক্তার ব্লাড ও ইউরিন টেস্ট করতে দিলো খুবই তাড়াতাড়ি টেস্টের রিপোর্ট গুলো হাতে পেলাম এবং রিপোর্ট গুলো ডাক্তার কে দেখালাম রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বললো রুগী কে মেরে এখন আর আনছেন কিকরতে এখন তো তার সময় প্রায় শেষ তার পরে ও ভর্তি করে দিলো, দিয়ে স্যালাইন লাগিয়ে দিলো চললো টানা এক সপ্তাহ চিকিৎসা পরে ডাক্তাররা মিটিং করে, এক মাসের যাবতীয় ঔষধ ও ইনসুলিন দিয়ে রিলিজ দিয়ে দেয় হাসপাতাল থেকে, দিয়ে বলে একমাস পরে আবার যোগাযোগ করবেন কিন্তু ডাক্তার বলে দিলো তার সময় শেষ আল্লাহ্ যতোদিন রাখে।কিন্তু ডাক্তারের সাজেশন অনুযায়ী ঔষধ ও ইনসুলিন চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তু তার অবস্থা উন্নতি না হয়ে অবনতি হতে থাকলো তার পরে ৪ থেক৫ মাস পরে আল্লাহ্ ডাকে সারা দিয়ে আমাদের ৫ভাই বোন কে এতিম করে ও আমার "মাকে" বিধবা করে চলে গেলেন না ফিরার দেশে।
মানুষকে আল্লাহ অফুরন্ত নিয়ামত দান করেছেন। সেই অসাধারণ সুন্দর নিয়ামতের একটি সন্তানের জন্য তার মা-বাবা। বাবা সন্তানের মাথার ওপর যার স্নেহচ্ছায়া বটবৃক্ষের মতো, সন্তানের ভালোর জন্য জীবনের প্রায় সবকিছুই নির্দ্বিধায় ত্যাগ করতে হয় তাঁকে, আদর-শাসন আর বিশ্বস্ততার জায়গা হলো বাবা। বাবার তুলনা বাবাই। যার কল্যাণে এই পৃথিবীর রূপ, রং ও আলোর দর্শন। বাবা শাশ্বত, চির আপন, চিরন্তন। বাবাকেই আদর্শ মনে করে সন্তানেরা। বাবা সন্তানকে শেখান কীভাবে মাথা উঁচু করে পৃথিবীতে টিকে থাকতে হয়।বাবা তোমার জন্য করি অনেক অনেক দোয়া প্রতি ওয়াক্ত নামাজে,আল্লাহ্ তোমাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক দান করুক জান্নাতের উচ্চ মাকাম। আমিন।
আর হলো না আমার পড়ালেখা হলো না আমার স্বপ্নের বাস্তবায়ন অনেক স্বপ্ন ছিল আমি ডিফেন্সে চাকুরী করবো হবো আরমির বড়ো অফিসার। শুরু হলো কর্ম জীবন
স্বপ্নছিল কেইক পেস্টির কাজ শিখবো, ঠিক তাই করলাম। কথা বললাম
আমাদের পাশের বাড়ির আমার স্কুল ফ্রেন্ড তাদের ছিলো কেইক বিস্কিটের ফেক্টরী আমাদের উপজেলায়। শুরু করলাম কাজ খুবই মনোযোগ দিয়ে কাজ করি এবং আমার বন্ধুর সহযোগিতায় এবং ওই ফেক্টরির কারিগরের সহযোগিতায় দশ মাসের মধ্যেই শিখে গেলাম মোটামুটি বেশ কাজ।
মাশাআল্লাহ্ পেয়েগেলাম একটি অফার ভালো কাজ ও ভালোই বেতন কিন্তু ফেক্টরী সিলেট শহরে।
ছোট একটি ফেক্টরীতে একজন লোক লাগবে হোমমেইড কেক পেস্টি ও বিস্কিটের কাজ জানা,
কনর্ফাম করে ফেললাম আমি যাবো ৫ হাজার টাকা বেতনে। জীবনের প্রথম চাকুরী করার জন্য চলে গেলাম অন্য জিলায়,ঠিকঠাক মতো পৌঁছালাম ওখানে পৌঁছানোর পরে ওই ফেক্টরীতে যেই কারিগর ছিলো উনি আমাকে আস্তে আস্তে সব বুঝিয়ে দিয়ে পনের দিনপরে তিনি চলেগেলো ছুটিতে,
ছুটিতে গিয়ে আর ফিরত আসেননি। পরে আমিই
দক্ষতার সহিত পালন করলাম কারিগের দায়িত্ব আমারও কাজের অভিঙ্গতা বেড়েগেলো দিন দিন, বেতন ও বাড়িয়ে দিলো। এরমধ্যে আমার ছোট ভাইকেও নিয়ে আসলাম সাথে দুই ভাই মিলে সংসারের হাল ধরলাম এবং ছোট বোন পড়ালিখায় খুবই ভালো ছিল ওকে পড়ালেখা করালাম ছোট বোন অনার্স দ্বিতীয় বছর পড়ার সময় বিয়ে হয়ে যায় ওরও আর অনার্স কমপ্লিট করা হয়নি আলহামদুলিল্লাহ্ ও সংসারজীবনে ভালো আছে।
একবছর কাজ করার পরে পেলাম আরও একটি অফার শোনামগঞ্জ নতুন একটি ফেক্টরী ওপেন করবে বেতন ও এখানের চেয়ে অনেক ভালো। চলে গেলাম এখানে চাকুরী রিজাইন দিয়ে নতুন ফেক্টরীতে। ভালোই কাজ চলছে করছি প্রায় বছর পেরিয়ে গেল মনের ভিতর স্বপ্ন দেখতে থাকলাম বড়ো কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করবো। যেমন বনফুল, শেরাটনের বা সোনারগায়ে, আস্তেআস্তে নেটওয়ার্ক বাড়াতে থাকলাম বিভিন্ন মানুষের সাথে মিশে ফোন করে চাকুরীর খোঁজ খবর নিতে থাকি অবশেষে শেরাটনে সোনারগাঁয়ে না হলেও চাকুরী হলো বনফুলের ঢাকার ব্রান্সে, ওখানে রিজাইন দিয়ে জয়েন্ট করলাম বনফুল কম্পানিতে
কেইক পেস্টি ও ফাস্টফুড সেকশনে, কাজ করলাম টানা চার বছর এরি মাঝে মনের ভিতরে স্বপ্ন উকিঝুকি মারে বিদেশ যাবো। আমার বাবাও একবার বিদেশে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করে অনেক জমিজমা বিক্রির টাকা দিয়ে মাইর খায়, তাই বাবার ও স্বপ্ন ছিল আমাকে বিদেশে পাঠাবে, কিন্তু বেচে
থাকতে স্বপ্ন আর পুরণ হয়নি হয়েছে পুরণ মৃত্যুর পরে। আমারও অনেক স্বপ্ন বিদেশে যাবো সেই লক্ষ্যে চেষ্টা করলাম এক এজেন্টের সাথে কথা বললাম তিনি জিগ্গেস করলো তোমার বয়স কতো আমি বললাম একুশ উনি বললো পঁচিশ বছর দিয়ে পাচর্পোট করেফেলো ঠিক তাই করলাম পাচর্পোট করে ফেললাম পচিঁশ বছর বয়স দিয়ে।
শুরু হলো বিদেশ যাওয়ার অপেক্ষা ও দিনক্ষন গোনা ও টাকা জোগাড় করার পালা। প্রথমে চেষ্টা করলাম সৌদিআরব যাওয়ার জন্য কিন্তু হলোনা তারপর চেষ্টা করলাম মালোয়শিয়ার জন্য মাশাআল্লাহ্ মালোয়শিয়ার ভিসা হয়ে গেল। কিন্তু টাকা তো সব জোগাড় হয় নাই কি করি খুবই চিন্তায় পরে গেলাম আমাদের তেমন কোনো জমিজম ছিল না শুধু একটুকরো জমি ছিলো। জমিজমা ছিলো অনেকই কিন্তু আমার বাবা সব বিক্রি করে দিয়েছে কারণ বিদেশে যাওয়ার জন্য বেশকিছু জমি বিক্রি করেছেন আর বাকি সব জমি আমাদের ঢাকার বাড়ি রক্ষার্থে বিক্রি করেছেন করণ আমাদের ঢাকার বাড়িতে ঝামেলা ছিল, যাইহোক জমিটুকু বিক্রি করে কিছু টাকা ঋন করে চলে আসলাম মালোয়শিয়া।
শুরু হলো প্রবাস জীবন মালোয়শিয়া 02/12/2007
আমরা এক গ্রুপে ছিলাম ১০জন আমাদের ভিসা ছিল আউটসোর্সিং একটি কম্পানির নামে যারা বিভিন্ন কম্পানির কাছে লোক ছাপ্লাই দিতেন
তেমনি আমাদের কেও একটি ফার্নিচার কম্পানিতে দেয়।
ভেবেছিলাম প্রবাসে মনে হয় অনেক সুখ আর টাকা বাতাসে ওড়ে। তাই বাতাসের উড়ন্ত টাকা ধরতে চলে এলাম প্রবাসে; আর আমার নাম হয়ে গেল প্রবাসী। প্রবাসে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বুঝে গিয়েছিলাম জীবন কী জিনিস।
যেদিন এসেছিলাম তার পর দিন থেকেই কাজ শুরু করেছিলাম। ভালো প্যান্ট-শার্ট পরে যখন গাড়িতে করে কাজের স্থানে নিয়ে গিয়েছিল, তখন মনের সব স্বপ্ন চোখ দিয়ে বের হয়ে ওড়ে গেল ওই নীল আকাশে- যেখানে স্বপ্ন দেখতাম চেয়ার-টেবিলে বসে অফিস করব।
এভাবেই প্রতিটা প্রবাসী একদিন তার নিজ স্বপ্নগুলোর কথা নিজের অজান্তেই ভুলে যায়। যতই দিন যায় ততই চাহিদা বাড়ে; কিন্তু বেতনবাড়ে চাহিদার ১ শতাংশ।
একটা প্রবাসীর কাঁধের ওপর ভর করে কয়েকটা জীবন স্বপ্ন সাজায় ভালো থাকার। প্রবাসী ছেলেটা হাজারো কষ্টের বিনিময়ে পরিবারের জন্য মাস শেষে টাকা পাঠায়, বসের কাছে প্রতিদিন কত কথা শুনতে হয় তা শুধু যারা প্রবাসে থাকেন তারাই জানেন।
সারা দিন কাজ করে বাসায় ফিরে কাপড় পরিষ্কার করতে হয়, রান্না করতে হয়, গোসল করে বাড়িতে ফোন দিয়ে সবার খোঁজখবর নিতে হয়- তাও হাসিমুখে।
কিন্তু বাড়ি থেকে শুনতে হয় শুধু চাহিদার কথা। এই মাসে এত লাগবে, এই খরচ ওই খরচ শুধু খরচ আর খরচ। আর সেই চাহিদার বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুমাতে যাই, তখন আর ঘুম আসে না চিন্তায়।
রাত শেষ হয়ে ভোর হয়। আবার কাজ শুরু সকাল ৮ থেকে রাত ৯টা-১০টা। এভাবেই চলতে থাকে তিন বছর, হঠাৎ একদিন আমাদের ফেক্টরীতে ইমেগ্রেশনে ব্লক দিয়ে আমাদের এজেন্টের ৩২জন কে ধরে নিয়ে যায় আমাদের অপরাধ ছিল আমাদের এজেন্টের সাথে কম্পানির এগ্রিমেন্ট ছিলনা, ৯০দিন জেলে ছিলাম এজেন্ট আর আমাদের ছাড়িয়ে নিতে আসেনি শুনেছি অনেক টাকা জরিমানা হয়েছে এজেন্টের,
এজেন্ট পালাতক শুনেছিলাম মালোয়শিয়ার জেলখানায় অনেক কষ্ট, আমি নিজেই তার বাস্তুব প্রমান। একটা টিশার্ট আর একটা টাউজার পরে 93দিন বিনাঅপোরাধে মালোয়শিয়ার জেলে ছিলাম।
৯০দিন পরে ইমেগ্রেশন থেকে ডিক্লার আসলো নিজ নিজ খরচে টিকেট কেটে দেশে যাওয়া যাবে
ঠিক তাই করলাম দেশ থাকে টাকাএনে ইমেগ্রেশনের টিকেট কাটার দায়িত্বে যারা ছিল তাদেরকে দিলাম তারা টিকেট কেটে দিলো ৩দিনের মধ্যে দেশ চলে আসলাম আলহামদুলিল্লাহ্।
আমার চিন্তার দিন শুরু হলো কি করা যায় কিন্তু একদিনও বসে থাকিনি কারণ আমাদের একটি বেকারি বা বিস্কুট ফেক্টরী ছিল ওইটা ছোট ভাই ওপেন করছে ভালোই চলছিল, ওখানেই কাজ শুরু করলাম কিন্তু কিছুইতে কাজে মন বসছেনা, কিছু দিন পরেই মনের ভিতরে ঘুরপাক খেতে লাগলো আমাকে আবার বিদেশ যেতে হবে, আলহামদুলিল্লাহ্ এরইমধ্য ফোন আসলো আমাদের সাথে দেশে আশা একজন তিনি বললো আমি তো মালোয়শিয়া চলে আসছি, আমি জানতে চাইলাম কিভাবে গেলেন? তিনি বললো আমাদের আগের ভিসা ইমেগ্রেশন থেকে কেনসেল করে নাই ওইটাই দিয়েই চলে আসছি তোমরা আসতে পারবা,আমি অল্প কিছুদিনের মধ্যে আবার দেশে আসতেছি, আমি এসে তোমাদের যাওয়ার প্রসেজিং করে দিবো ঠিক তাই হলো তিনি দেশে এসে আমাকে বললো তুমি পচিঁশ হাজার টাকা দাও আমি তোমাকে সব রেডি করে দিবো ঠিক তাই করলাম তাকে টাকা দিলাম তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে আমাকে বললো তোমার সব রেডি আগামী অমুক তারিখে তোমার ফ্লাইট, আলহামদুলিল্লাহ্ আবারও চলে আসলাম মালোয়শিয়া, এসে ভালো একটা কম্পানি দেখে কাজ নিলাম ওই কম্পানির নামেই নতুন ভিসা করলাম আলহামদুলিল্লাহ্ খুবই ভালো দিন চলছে।
এরিমধ্যে ছোটভাই বিজনেসে লোকশান আর লোকশান ১২থেক১৫লক্ষ টাকা ঋণকরে ফেলছে বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক থেকে। বাড়ি থেকে বলতে থাকলো ওকে মালোয়শিয়া নিয়েযা ওকে দিয়ে বিজনেস হবেনা ঠিক তাই করলাম ওকে মালোয়শিয়া নিয়ে আসবো এবং নিয়েও আসলাম, এখন আমারা দুই ভাই মালোয়শিয়া আলহামদুলিল্লাহ্ ভালোই আছি ।।।।
বৈবাহিক জিবন 11/06/2014
মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোর অন্যতম হচ্ছে বৈবাহিক জীবন। যখন মানুষ অবিবাহিত থাকে, মনে হয় জীবন যেন নীড় হারা পাখি। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে জীবনসঙ্গী হিসেবে অপরিচিত একজন যুক্ত হয়। ... 'বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের দ্বারা মানুষের অর্ধেক দ্বীনদারি পূর্ণ হয়ে যায়।
এখন সে যেন বাকি অর্ধেকের পূর্ণতার চিন্তা করে।’ বৈবাহিক সম্পর্কের দ্বারা দু’জন মানুষের মনে যে প্রেম ভালোবাসা জন্ম নেয় তা তুলনাহীন। আমৃত্য সে বন্ধন নিবিড় থেকে আরো নিবিড় হতে থাকে।
আলহামদুলিল্লাহ্ আমাদের বৈবাহিক জীবনের ৭টি বছর কেটেছে সুখে দুঃখে হাসি কষ্টে একে অপরের পাশে ছিলাম,থাকবো সারাজীবন ইনশাআল্লাহ।
৮ই মে ২০১৫, আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন। কারণ এই দিনে আমি প্রথম সন্তানের বাবা হলাম। বাবা হওয়ার অনুভূতিটা আসলে লিখে ব্যক্ত করার মত নয়। এটা একটা অদ্ভুত স্বর্গীয় অনুভূতি। তারপরও এই অনুভূতিগুলো সবার সাথে শেয়ার করারও একটা আনন্দ আছে,
১সেপ্টেম্বর ২০১৪প্রথম দিকে যখন ডাক্তারের কাছ থেকে নিশ্চিত হলাম যে আমি বাবা হতে যাচ্ছি, তখন প্রচন্ড রকম এক উত্তেজনা কাজ করছিল মনের মধ্যে। তার পর থেকেই আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব আমি আমার স্ত্রীর দিকে খেয়াল রাখতাম ফোনের মাধ্যমে যেন গর্ভাবস্থায় তার যত্নের কোন ত্রুটি না হয়, একজন স্বামী হিসেবে সবারই এমন করা উচিৎ, কারণ এই সময়টায় মেয়েরা সবচেয়ে বেশী ফিল করে তার স্বামীর সাহচর্য কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি পাশে থাকতে পারিনি কারণ আমি প্রবাসী।
যাই হোক, এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। ডাক্তারের পরীক্ষামতে আমাদের সন্তান পৃথিবীতে আসার সময় ছিল ৮ই মে২০১৫ ঠিক তার আগের সময়টাতেই থেকেই আমরা সেই মহেন্দ্রক্ষণ গণনা শুরু করেছিলাম। অবশেষে এলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ আমার স্ত্রীকে একটি হাসপাতালে ভর্তি করাই, ঐ হাসপাতালের গাইনী বিভাগের প্রধানের কাছেই আমি গত ৯ মাস যাবত আমার স্ত্রীকে দেখাতাম।
৮ই মে ২০১৫ সকালে আমাদের সেই ডাক্তার এসে আমার স্ত্রীকে পরীক্ষা করে মত দিলেন যে তাকে ঐ মুহুর্তেই সিজার করাতে হবে। এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার, আমার মা ও আমার শ্বশুড়-শাশুড়ী সবাই চাইছিলেন যেন নরমাল ডেলিভারী হয়, কারণ সিজার ডেলিভারীর পর অনেক জটিলতা হয় রোগীর জন্য। কিন্তু ডাক্তার বললো নরমাল ডেলিভারী সম্ভব না তাই নরমাল ডেলিভারী সম্ভব হয়নি। ৮ই মে ২০১৫তারিখ দুপুর ১২টায় যখন ফোনে খবর পেলাম যে তার সিজার করতে হবে, তখন থেকে মনের মধ্যে প্রচন্ড একটা ভয় কাজ করছিল, কারণ সিজার অপারেশনের এনেস্থেশিয়া এবং পরবর্তী অন্যান্য কার্যাবলী সম্বন্ধে আগে কয়েকজনের কাছ থেকে জানার পর আমার শুধু স্ত্রীর জন্য দুশ্চিন্তা হচ্ছিল, সবকিছু ঠিকঠাকমত হবে তো!
যাই হোক সম্ভবত ১টার কিছু পরে তাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানো হল। ১:৩০টার দিকে আমার স্ত্রীকে অপারেশন টেবিলে নেয়া হয়। ২টা ২০ মিনিটে আসে সেই মহেন্দ্রক্ষণ, আমাদের ছেলে প্রথম এই পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখে। আমার মায়ের কাছ থেকে প্রথম খবরটা শুনলাম, আমার প্রথম প্রশ্নটা ছিল মায়ের কাছে, “ছেলের মা সুস্থ আছে তো?” মা বললো “হ্যাঁ”দুইজনই সুস্থ আছে, তখন আনন্দের আতিশয্যে আমার দু’চোখ দিয়ে ঝরঝর করে অশ্রু ঝরছিলো। এটা একটা অসাধারণ অনুভূতি যা শুধু ঐ ব্যক্তির পক্ষেই বোঝা সম্ভব
যিনি নিজে এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যান, লিখে বা মুখে বর্ণনা করে এই অভিজ্ঞতা কাউকে বোঝানো সম্ভব না।
ঠিক একই ভাবে ২৫মে২০১৮ দ্বিতীয় ছেলে সন্তানের বাবা হলাম। আলহামদুলিল্লাহ্ এখন আমি দুই সন্তানের বাবা।
শেষান্তে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আপনারা যারা এতক্ষণ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে আমার লেখাটা পড়েছেন, প্রিয় ভাই ও বোনেরা আমি স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর আগামীর......
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬২৯
Date:- ২৬/০৯/২০২১ইং
মোঃ সাগর হোসেন
নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশনের গর্বিত আজীবন সদস্য।
ব্যাচ নং ১৪
রেজিঃ নং ৬৬৮৪৯
নিজ জিলা শরীয়তপুর
উপজেলা ডামুড্যা
বর্তমান অবস্থান মালোয়শিয়া প্রবাসী